বাক্য বাংলা ব্যাকরণ এর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আলোচিত বিষয় । তবে আমরা অনেকেই জানিনা যে বাক্য কাকে বলে । কতোগুলো পদ সুবিন্যস্ত হয়ে বক্তার মনোভাব সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করলে তাকে বাক্য বলে। আমরা যারা মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী রয়েছে তারা যদি দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে আসা বাক্যের সংজ্ঞা দিতে যাই তবে তা মোটেও গ্রহণযোগ্য হবে না ।
বাক্যের মূলত একটি সুনির্দিষ্ট সংখ্যা রয়েছে যেটি বাক্যের গঠনের উপর ভিত্তি করে দেয়া হয় । বলতো আজকের আর্টিকেলে আমরা বাক্যের বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে জেনে নিব যা আপনার কেরিয়ারে কখনো না কখনো কাজে লাগবে ।
বাক্য
বাক্য হল শব্দের একটি বিন্যাস যা একটি সম্ভব মানের ঘটনা, বিষয় বা ঘটনার সমস্ত বিবরণ সম্পন্ন করে। এটি ভাষায় বাক্য গঠনের একটি উপযোগী একক। প্রতিটি বাক্য অক্ষর, শব্দ এবং বাক্যের প্রধান অংশ থাকে। বাক্য অর্থ বা বোধ প্রকাশ করে এবং বাক্যের সাথে কোনও প্রকারের ধ্বনি বা লক্ষণীয়তা সম্পর্কিত হতে পারে।
কতগুলো সুসংগঠিত এবং অর্থবোধক শব্দ ব্যাকরণের নিয়মে একত্রিত হয়ে নির্দিষ্ট ভাব প্রকাশকারী শব্দ সমষ্টিকে বলা হয়ে থাকে বাক্য । অর্থাৎ বাক্য মূলত একটি শব্দসমষ্টি যেটি নির্দিষ্ট অর্থ সংবলিত এবং এটি মানুষের মনের সম্পুর্ণ অথবা অংশ ভাব প্রকাশ করতে সক্ষম ।
বাক্যকে ভাষার মূল উপকরণ বলা হয়ে থাকে । বাক্যের গঠনের ওপর ভিত্তি করে বাক্যকে বিভিন্নভাবে শ্রেণীবিভাগ এর আওতায় আনা যেতে পারে । যেহেতু আমরা জেনেছি বাক্য কাকে বলে, এবার আমরা বাক্যের প্রকারভেদ সম্পর্কে জানতে চলেছি।
বাক্যের ধরন
বাক্যের গঠন এবং বাক্যের ধরনের ওপর ভিত্তি করে বাক্যকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে ।
গঠন অনুসারে বাক্য কত প্রকার?
গঠন অনুসারে বাক্য কে তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে ।
- সরল বাক্য
- জটিল বাক্য
- মিশ্র বাক্য ।
সরল বাক্যঃ
যে বাক্যে কেবলমাত্র একটি সমাপিকা ক্রিয়া থাকে তাকে বলা হয় সরল বাক্য ।
চলুন উদাহরণ দেখে নেওয়া যাকঃ
- আমি প্রতিদিন আর্টিকেল লিখি।
- আমি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি না ।
- আমি তার সাথে কথা বলতে লজ্জাবোধ করি।
জটিল বাক্য
যে বাক্যে একটি সমাপিকা ক্রিয়া এবং অপরটি অসমাপিকা ক্রিয়া হয়ে থাকে তাকে বলা হয় জটিল বাক্য।
উদাহরণ দেখে নেওয়া যাকঃ
- যদিও সে গরীব তবুও তার প্রচুর টাকা-পয়সা রয়েছে ।
- যদি তুমি আসো তবেই আমি যাব ।
- যদিও আমি তাকে ভালোবাসি তবুও সে আমাকে ঘৃণা করে ।
মিশ্র বাক্যঃ
যে বাক্যে দুইটি সরল বাক্য থাকে তাকে বলা হয় মিশ্রবাক্য।
চলুন উদাহরণ দেখে নেওয়া যাকঃ
- রহিম আমার ছোট ভাই এবং করিম আমার বড় ভাই ।
- বাংলাদেশ একটি সুজলা সুফলা দেশ কিন্তু এই দেশের মানুষের মুখে হাসি নেই ।
- আমরা নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করেছি এবং আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি ।
সরল-জটিল-যৌগিক বাক্যের রূপান্তরঃ
বাক্যের অর্থ পরিবর্তন না করে বাক্যের প্রকাশভঙ্গি বা গঠনরীতিতে পরিবর্তন করাকেই বাক্য রূপান্তর বলা হয়। অর্থাৎ, বাক্য রূপান্তর করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, বাক্যের অর্থ যেন পাল্টে না যায়। বাক্যের অর্থ পাল্টে গেলে বাক্যটি অন্য বাক্যে রূপান্তরিত হয়ে যাবে। কিন্তু বাক্য রূপান্তরের ক্ষেত্রে আমাদেরকে বাক্যের প্রকাশভঙ্গি বা গঠনরীতি তথা রূপ (Form) পরিবর্তন করতে হবে, বাক্যের অর্থ পরিবর্তন করা যাবে না।
সরল থেকে জটিল বাক্যে রূপান্তর :
সরল বাক্যের কোন একটি অংশকে সম্প্রসারিত করে একটি খন্ডবাক্যে রূপান্তরিত করতে হয় এবং তার খণ্ডবাক্যটির সঙ্গে মূল বাক্যের সংযোগ করতে উপরোক্ত সাপেক্ষ সর্বনাম বা সাপেক্ষ অব্যয়গুলোর কোনটি ব্যবহার করতে হয়। যেমন-
সরলবাক্য : ভাল ছেলেরা কম্পিউটারে বসেও ইন্টারনেটে পড়াশুনা করে।
জটিলবাক্য : যারা ভাল ছেলে, তারা কম্পিউটারে বসেও ইন্টারনেটে পড়াশুনা করে।
সরলবাক্য : ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও।
জটিলবাক্য : যে ভিক্ষা চায়, তাকে ভিক্ষা দাও।
সরল থেকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর :
সরল বাক্যের কোন অংশকে সম্প্রসারিত করে একটি পূর্ণ বাক্যে রূপান্তরিত করতে হয় এবং পূর্ণ বাক্যটির সঙ্গে মূল বাক্যের সংযোগ করতে উপরোক্ত অব্যয়গুলো ব্যবহার করতে হবে। যেমন-
সরল বাক্য : দোষ স্বীকার করলে তোমাকে কোন শাস্তি দেব না।
যৌগিক বাক্য : দোষ স্বীকার কর, তাহলে তোমাকে কোন শাস্তি দেব না। (এক্ষেত্রে ‘তাহলে’ অব্যয়টি ব্যবহার না করলেও চলতো)
সরলবাক্য : আমি বহু কষ্টে শিক্ষা লাভ করেছি।
যৌগিকবাক্য : আমি বহু কষ্ট করেছি এবং/ ফলে শিক্ষা লাভ করেছি।
জটিল থেকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর :
জটিল বাক্যে কয়েকটি খণ্ডবাক্য থাকে, এবং সেগুলো পরস্পর নির্ভরশীল থাকে। জটিল বাক্যকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর করতে হলে এই খণ্ডবাক্যগুলোর পরস্পর নির্ভরতা মুছে দিয়ে স্বাধীন করে দিতে হবে। এজন্য সাপেক্ষ সর্বনাম বা অব্যয়গুলো তুলে দিয়ে যৌগিক বাক্যে ব্যবহৃত অব্যয়গুলোর মধ্যে উপযুক্ত অব্যয়টি বসাতে হবে। পাশাপাশি ক্রিয়াপদের গঠনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন-
জটিলবাক্য : যদি সে কাল আসে, তাহলে আমি যাব।
যৌগিকবাক্য : সে কাল আসবে এবং আমি যাব।
জটিলবাক্য : যদিও তাঁর টাকা আছে, তবুও তিনি দান করেন না।
যৌগিকবাক্য : তাঁর টাকা আছে, কিন্তু তিনি দান করেন না।
যৌগিক থেকে জটিল বাক্যে রূপান্তর :
যৌগিক বাক্যে দুইটি পূর্ণ বাক্য কোন অব্যয়ের দ্বারা যুক্ত থাকে। এই অব্যয়টি তুলে দিয়ে সাপেক্ষ সর্বনাম বা অব্যয়ের প্রথমটি প্রথম বাক্যের পূর্বে ও দ্বিতীয়টি দ্বিতীয় বাক্যের পূর্বে বসালেই জটিল বাক্যে রূপান্তরিত হবে।
তবে, সাপেক্ষ সর্বনাম বা অব্যয়গুলোর পূর্ণ বাক্য দুটির প্রথমেই বসাতে হবে, এমন কথা নেই; উপযুক্ত যে কোন জায়গাতেই বসানো যেতে পারে। যেমন-
যৌগিকবাক্য : দোষ স্বীকার কর, তোমাকে কোন শাস্তি দেব না।
জটিলবাক্য : যদি দোষ স্বীকার কর, তাহলে তোমাকে কোন শাস্তি দেব না।
যৌগিকবাক্য : তিনি অত্যন্ত দরিদ্র, কিন্তু তার হৃদয় অত্যন্ত মহৎ।
জটিলবাক্য : যদিও তিনি অত্যন্ত দরিদ্র, তবুও তার হৃদয় অত্যন্ত মহৎ।
জটিল থেকে সরল বাক্যে রূপান্তরঃ
জটিল : কেহ কহিয়া দিতেছে না, তথাপি তপোবন বলিয়া বোধ হইতেছে।
সরল : কেহ কহিয়া না দিলেও তপোবন বলিয়া বোধ হইতেছে।
জটিল : শরাসনে যে শর সংহিত করিয়াছেন, আশু তাহার প্রতিসংহার কর।
যৌগিক থেকে সরল বাক্যে রূপান্তরঃ
যৌগিক : কন্যার বাপ সবুর করিতে পারিতেন, কিন্তু বরের বাপ সবুর করিতে চাহিলেন না।
সরল : কন্যার বাপ সবুর করিতে পারিলেও বরের বাপ সবুর করিতে চাহিলেন না।
যৌগিক : আমি ছিলাম বর, সুতরাং বিবাহ সম্বন্ধে আমার মত যাচাই করা অনাবশ্যক ছিল।
অর্থ অনুসারে বাক্য প্রকারভেদ
এছাড়াও বর্ণনা অনুযায়ী বাক্যকে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে।
বিবৃতিমূলক বাক্য
মূলত এই ধরনের বাক্যের মাধ্যমে একটি ব্যক্তির মনের ভাব প্রকাশ করা হয়ে থাকে। অথবা এর মাধ্যমে সাধারণ বিবৃতি প্রকাশ পায় । এটি হ্যা বোধক অথবা না বোধক হতে পারে । প্রতিটি বিবৃতিমূলক বাক্যের শেষে দাড়ি বিরাম চিহ্ন ব্যবহৃত হয় । বিবৃতিমূলক বাক্য শুধুমাত্র নিরপেক্ষভাবে একটি বিবৃতি প্রকাশ করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে পারে । এর মাধ্যমে ব্যক্তি মনের আবেগ সম্পূর্ণ রূপে প্রকাশ পায় না । উদাহরণঃ আমি প্রতিদিন স্কুলে যাই।
প্রশ্নবাচক বাক্য
যে বাক্য দ্বারা প্রশ্ন করা হয়ে থাকে সেই সকল বাক্য কে প্রশ্নবোধক বা প্রশ্ন বাচক বাক্য বলা হয় । এই সকল বাক্যের মাধ্যমে মূলত একটি ব্যক্তি মন কোন কিছু জিজ্ঞাসা করে থাকে এবং তার মধ্যে আকাঙ্ক্ষার সৃষ্টি হয় । অর্থাৎ আমরা বলতে পারি যে বাক্যের মাধ্যমে ব্যক্তি মনের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পেয়ে থাকে তাকে বলা হয় প্রশ্ন বাচক বাক্য । উদাহরনঃ আমি কি প্রতিদিন স্কুলে যাই না ?
আদেশসূচক বাক্য
–এ বাক্যের মাধ্যমে মূলত কোন আদেশ প্রকাশ পায় । তবে শুধু আদেশ নয় তার পাশাপাশি উপদেশ বা অনুরোধ প্রকাশ পেতে পারে । এই বাক্যে অনেক সময় কর্তা উহ্য থাকতে পারে । তবে যদি সরাসরি কর্তা থেকে থাকে,তাহলে সেটিকে আদেশসূচক বাক্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত না করে বিবৃতিমূলক বাক্য বলা যেতে পারে । উদাহরণঃ স্কুলে যাও!
প্রার্থনাসূচক বাক্য
এই বাক্যের মাধ্যমে ব্যক্তি মোহন আকাঙ্ক্ষাসূচক প্রার্থনা প্রকাশ করে থাকে । উদাহরণঃ সৃষ্টিকর্তা তোমার মঙ্গল করুক !
অনুজ্ঞাবাচক বাক্য
এই বাক্যের মাধ্যমে ব্যক্তি মনের আবেগের সম্পূর্ণ প্রতিফলন ঘটে । বাক্যের শেষে একটি আশ্চর্য বোধক বিরাম চিহ্ন ব্যবহৃত হয় । উদাহরণঃ হায় !আমি আর্টিকেলটি র্যাংক করাতে ব্যার্থ!
প্রকাশভঙ্গি অনুযায়ী বাক্যের শ্রেণীবিভাগঃ
বাক্যের প্রকাশভঙ্গির ভিত্তিতে বাক্যকে ২ ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
ক) অস্তিবাচক বাক্য/ হাঁ বাচক বাক্য :
যে বাক্যে সমর্থনের মাধ্যমে কোন কিছু বর্ণনা করা হয়, তাকে অস্তিবাচকবাক্য বা হাঁ বাচক বলে।
যে বাক্যে হাঁ বাচক শব্দ থাকে, তাকে হাঁ বাচক বা অস্তিবাচকবাক্য বলে।
যেমন- তুমি কালকে আসবে।আমি ঢাকা যাব।
[সদর্থক বা অস্তিবাচকবাক্য : এতে কোনো নির্দেশ, ঘটনার সংঘটন বা হওয়ার সংবাদ থাকে। যেমন :
বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা জিতেছে। দোকানপাট বন্ধ থাকবে
খ) নেতিবাচক বাক্য/ না বাচক বাক্য :
যে বাক্যে অসমর্থনের মাধ্যমে কোন কিছু বর্ণনা করা হয়, তাকে নেতিবাচকবাক্য বা না বাচক বলে।
যে বাক্যে না বাচক শব্দ থাকে, তাকে নেতিবাচকবাক্য বা না বাচকবাক্য বলে।
যেমন- তুমি কালকে আসবে না। আমি ঢাকা যাব না।
[নেতিবাচক বা নঞর্থকবাক্য : এ ধরনের বাক্যে কোন কিছু হয় না বা ঘটছে না- নিষেধ, আকাঙ্ক্ষা, অস্বীকৃতি ইত্যাদি সংবাদ কিংবা ভাব প্রকাশ করা যায়। যেমন :
আজ ট্রেন চলবে না।আপনি আমার সঙ্গে কথা বলবেন না।
অস্তিবাচক- নেতিবাচক বাক্যের রূপান্তরঃ
বাক্যের অর্থ পরিবর্তন না করে বাক্যের প্রকাশভঙ্গি বা গঠনরীতিতে পরিবর্তন করাকেই বাক্য রূপান্তর বলা হয়। অর্থাৎ, বাক্য রূপান্তর করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, বাক্যের অর্থ যেন পাল্টে না যায়। বাক্যের অর্থ পাল্টে গেলে বাক্যটি অন্য বাক্যে রূপান্তরিত হয়ে যাবে। কিন্তু রূপান্তরের ক্ষেত্রে আমাদেরকে বাক্যের প্রকাশভঙ্গি বা গঠনরীতি তথা রূপ (Form) পরিবর্তন করতে হবে, বাক্যের অর্থ পরিবর্তন করা যাবে না।]
অস্তিবাচক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তরের কৌশল-
ক) বিশেষণ পদের বিপরীত শব্দ ব্যবহার করে অনেক অস্তিবাচক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তর করা যায়। যেমন-
অস্তিবাচকবাক্য : তুমি খুব ভাল।
নেতিবাচকবাক্য : তুমি মোটেও খারাপ নও। (ভাল- খারাপ)
খ) ‘না করলেই নয়’, ‘না করে পারবো না’ ইত্যাদি বাক্যাংশ যোগ করে অনেক অস্তিবাচক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তর করতে হয়। যেমন-
অস্তিবাচকবাক্য : তুমি কালকে আসবে।
নেতিবাচকবাক্য : তুমি কালকে না আসলেই নয়।
অস্তিবাচকবাক্য : ইডিপিডিবিডি ওয়েবসাইটটি এতো ভাল, তুমি আবার ঢুকবেই।
নেতিবাচকবাক্য : ইডিপিডিবিডি ওয়েবসাইটটি এতো ভাল, তুমি আবার না ঢুকে পারবেই না।
গ) নতুন কোন বিপরীতার্থক বা নঞর্থক (না বোধক) শব্দ যোগ করে। যেমন-
অস্তিবাচকবাক্য : সে বইয়ের পাতা উল্টাতে থাকল।
নেতিবাচকবাক্য : সে বইয়ের পাতা উল্টানো বন্ধ রাখলো না।
আরো কিছু উদাহরনঃ
অস্তি : উদ্যানলতা, সৌন্দর্যগুণে, বনলতার নিকট পরাজিত হইল।
নেতি : উদ্যানলতা, সৌন্দর্যগুণে, বনলতার নিকট পরাজিত না হইয়া পারিল না।
অস্তি : কণ্ব আশ্রমপাদপদিগকে তোমা অপেক্ষা অধিক ভালোবাসেন।
নেতি : কণ্ব আশ্রমপাদপদিগকে তোমা অপেক্ষা অধিক না ভালোবাসিয়া পারেন না।
বাক্য গঠনের উপাদান
বাক্য গঠণের জন্য যে সকল উপাদানের প্রয়োজন পড়ে তাদেরকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়।
- যোগ্যতা
- আসত্তি
- আকাঙ্খা
একটি স্বার্থক বাক্য গঠনের জন্য এই শর্তগুলোর প্রয়োজন পড়বে। যদি একটি বাক্য এই শর্তগুলো থেকে থাকে তবেই সেটিকে একটি স্বার্থক বাক্য বলা যেতে পারে।
চলুন বিস্তারিতভাবে বাক্যের এই উপাদানগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক !
যোগ্যতা-
একটি বাক্য গঠনের জন্য যোগ্যতা আবশ্যক। যদি বাক্যের যোগ্যতা না থেকে থাকে তবে সেটিকে স্বার্থক বাক্য বলা যাবে না। যেমনঃ মানুষ ভাত খায়।
এখানে বাক্যের যোগ্যতা বজায় রয়েছে। কেননা মানুষ প্রধানত ভাতই খেয়ে থাকে।
যদি লেখা হয়ঃ হাতি আকাশে উড়ে, তাহলে সেক্ষেত্রে বাক্যটি তার যোগ্যতা হারাবে,কেননা হাতি আকাশে উড়তে পারে না। মূলত এটিই যোগ্যতার মূল কনসেপ্ট। চলুন এবার জনে নেওয়া যাক আসত্তি সম্পর্কে।
আসত্তি-
বাক্যের প্রতিটি শব্দ পরপর সাজিয়ে যদি সেটিকে অর্থসঙ্গত করা হয়ে থাকে তবে সেটিকে বলা হয় আসত্তি। আসত্তি বাক্যের একটি আবশ্যক বৈশিষ্ট্য। যেটি না থাকলে বাক্য গঠিত হবেনা।
একটি উদাহরণের মাধ্যমে তা পরিষ্কার করা যাক ! যদি বলা হয়ে থাকে, সে আমার সাথে দেখা করেনি। তাহলে এটি একটা স্বার্থক বাক্য হবে, কেননা অর্থসঙ্গতি রক্ষার লক্ষ্যে বাক্যের প্রতিটি শব্দকে যথাস্থানে স্থাপন করা হয়েছে। তবে যদি বলা হয়ে থাকে,
“আমার সে সাথে করেনি দেখা” তাহলে বাক্যে একটি গোলোযোগ পেকে যাবে। যার ফলে বাক্য তার স্বাভাবিক রূপ হারাবে, এবং এটিকেই বলা হয়ে থাকে আসত্তীহানি। অর্থাৎ এখানে আসত্তির প্রয়োগ ঘটেনি।
আবার যদি বলা হয়, সে বাড়ি গিয়ে ভাত খেলো।তাহলে সেক্ষেত্রে এটি একটি স্বার্থক বাক্যে পরিনত হবে। তবে যদি বলা হয়ে থাকে সে ভাত গিয়ে বাড়ি খাবে, তাহলে এখানে আসত্তি লোপ পাবে। এবং শুধু আসত্তিই নয় তার পাশপাশি যোহ্যতাও অনেকাংশে লোপ পাবে।
আকাঙ্খা–
বাক্যে আকাঙ্খা হলো এমন একটি উপাদান যার মাধ্যমে বাক্য শ্রোতার বাক্য শোনার প্রতি আগ্রহ জন্ম নেয় এবং সেই আগ্রহ পূরণ হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারেঃ
তুই বাড়ি গিয়ে…। এখানে বাক্যটি সম্পূর্ণ হয়নি বিধায় এখানে বাক্য শোনার আগ্রহ পুরো হয়নি। যার ফলে এখানে আকাঙ্খা লোপ পেয়েছে। আকাঙ্খা লোপ পেলে বাক্য অসম্পূর্ণ থেকে যায় ফলে আমরা সেটিকে স্বার্থক বাক্য বলতে পারি না ।
যদি বিষয়টি এমন হয় যে , তুই বাড়ি গিয়ে ভাত খাবি । তাহলে সেক্ষেত্রে বাক্যটির একটি পূর্ণ ভাব প্রকাশ পেয়েছে যার ফলে আমরা এটিকে একটি স্বার্থক বাক্য বলতে পারি।
এছাড়াও একটি সার্থক বাক্য গঠনে আরো বেশ কিছু গুণাবলী প্রয়োজন পড়ে। তবে তার মধ্যে এই তিনটি প্রধান ।
আজকের আর্টিকেল এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল বাক্য কাকে বলে , বাক্য কত প্রকার ও কী কী সে সম্পর্কে ! আর্টিকেলটির মাধ্যমে যদি কোনো শিক্ষার্থী বিন্দুমাত্র উপকৃত হয়ে থাকো তবে,তোমাকে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিতে পেরে আমরা সার্থক ! শুভকামনা রইল !
বাক্যের যোগ্যতার ক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলো জড়িত
ক) গুরুচণ্ডালী দোষ :
সংশিলষ্ট দুটি শব্দের একটি তৎসম ও একটি তদ্ভব শব্দ ব্যবহার করলে সেটি বাক্যের যোগ্যতা গুণ নষ্ট করে। কারণ, তাতে পদগুলোর ভাবগত মিল নষ্ট হয়। একে গুরুচণ্ডালী দোষ বলে।
যেমন- ‘গরুর গাড়ি’ শব্দদুটো সংশিলষ্ট শব্দ এবং দুটিই খাঁটি বাংলা শব্দ। আমরা যদি একে ‘গরুর শকট’ বলি, তা শুনতে যেমন বিশ্রী শোনায়, তেমনি শব্দদুটোর ভাবগত মিলও আর থাকে না। এটিই গুরুচণ্ডালী দোষ। এরকম- ‘শবদাহ’কে ‘মড়াদাহ’ কিংবা ‘শবপোড়া’, ‘মড়াপোড়া’কে ‘শবপোড়া’ বা ‘মড়াদাহ’, বললে তা গুরুচণ্ডালী দোষ হবে।
অর্থাৎ, বাক্যে তৎসম বা সংস্কৃত শব্দ ও তদ্ভব বা খাঁটি বাংলা শব্দ একসঙ্গে ব্যবহার করলে তাকে গুরুচণ্ডালী দোষ বলে।
খ) বাহুল্য দোষ :
প্রয়োজনের অতিরিক্ত শব্দ বা শব্দাংশ ব্যবহার করলে শব্দের অর্থগত যোগ্যতা নষ্ট হয়। ফলে বাক্যও যোগ্যতা গুণ হারায়।
শব্দকে বহুবচন করার সময় একাধিক বহুবচনবোধক শব্দ বা শব্দাংশ ব্যবহার করা একটি সাধারণ বাহুল্য দোষ। অধিক জোর দেয়ার জন্য অনেক সময় এই কৌশল প্রয়োগ করা হলেও সাধারণ ক্ষেত্রে একাধিক বহুবচনবোধক শব্দ বা শব্দাংশ ব্যবহার করলে শব্দটি বাহুল্য দোষে দুষ্ট হয়। যেমন- ‘সব মানুষেরা’ বাহুল্য দোষে দুষ্ট শব্দ। যোগ্যতা গুণ সম্পন্ন বাক্যে ‘সব মানুষ’ বা ‘মানুষেরা’- এই দুটির যে কোন একটি ব্যবহার করতে হবে।
গ) উপমার ভুল প্রয়োগ :
উপমা-অলংকার সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। এগুলোর প্রয়োগে কোন ভুল হলে বাক্য তার ভাবগত যোগ্যতা হারাবে। যেমন-
আমার হৃদয়-মন্দিরে আশার বীজ উপ্ত হল।
বাক্যটিতে উপমার ভুল প্রয়োগ হয়েছে। কারণ, বীজ মন্দিরে উপ্ত হয় না/ বপন করা হয় না। বীজ বপন করা হয় ক্ষেতে। সুতরাং বলতে হবে-
আমার হৃদয়-ক্ষেত্রে আশার বীজ উপ্ত হল।
ঘ) বাগধারার শব্দ পরিবর্তন :
বাগধারা ভাষার একটি ঐতিহ্য। বাংলা ভাষাতেও অসংখ্য বাগধারা প্রচলিত আছে। এসব বাগধারা ব্যবহার করার সময় এগুলোর কোন পরিবর্তন করলে বাগধারার ভাবগত যোগ্যতা নষ্ট হয়। ফলে বাক্য তার যোগ্যতা গুণ হারায়। সুতরাং, যোগ্যতা সম্পন্ন সার্থক বাক্য তৈরি করতে বাগধারা সঠিকভাবেই লিখতে হবে।
যেমন- যদি বলা হয়, ‘অরণ্যে ক্রন্দন’, তাহলে গুরুচণ্ডালী দোষও হয় না। কিন্তু বাগধারাটির শব্দ পরিবর্তন করার কারণে এটি তার ভাবগত যোগ্যতা হারিয়েছে। যোগ্যতা সম্পন্ন বাক্য গঠন করতে হলে প্রচলিত বাগধারাটিই লিখতে হবে। অর্থাৎ, ‘অরণ্যে রোদন’ই লিখতে হবে।
ঙ) দুর্বোধ্যতা :
অপ্রচলিত কিংবা দুর্বোধ্য শব্দ ব্যবহার করলে বাক্য তার যোগ্যতা গুণ হারায়। এই ধরনের শব্দ বাক্যের শব্দগুলোর মধ্যে অর্থগত মিলবন্ধন নষ্ট করে। যেমন-
এ কী প্রপঞ্চ!
বাক্যটির প্রপঞ্চ শব্দটি অপ্রচলিত, একই সঙ্গে দুর্বোধ্য। তাই বাক্যটির অর্থ পরিস্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে না। ফলে বাক্যের পদগুলোর মধ্যের অর্থগত মিলবন্ধন বিনষ্ট হয়েছে। তাই এটি কোন যোগ্যতা সম্পন্ন সার্থক বাক্য হতে পারেনি।
চ) রীতিসিদ্ধ অর্থবাচকতা :
বাক্যে শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, শব্দগুলো যাতে তাদের রীতিসিদ্ধ অর্থ অনুযায়ী ব্যবহৃত হয়। শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক বা রীতিসিদ্ধ অর্থ ভিন্ন হলে, অবশ্যই রীতিসিদ্ধ অর্থে শব্দ ব্যবহার করতে হবে। নয়তো শব্দটির সঙ্গে বাক্যের অন্য শব্দগুলোর অর্থগত মিলবন্ধন নষ্ট হবে। যেমন-
‘বাধিত’ শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ‘বাধাপ্রাপ্ত’। আর ব্যবহারিক বা রীতিসিদ্ধ অর্থ হলো ‘কৃতজ্ঞ’। শব্দটি ব্যবহারের সময় কৃতজ্ঞ অর্থেই ব্যবহার করতে হবে। নয়তো তা অর্থ বিকৃত করবে। ফলে বাক্যটি যোগ্যতা গুণ হারাবে।
উদ্দেশ্য ও বিধেয়
প্রতিটি বাক্যের দুটি অংশ থাকে- উদ্দেশ্য ও বিধেয়।
বাক্যে যার সম্পর্কে কিছু বলা হয়, তাকে উদ্দেশ্য বলে।
বাক্যে উদ্দেশ্য সম্পর্কে যা কিছু বলা হয়, তাই বিধেয়।
যেমন- বইটি খুব ভালো।
বাক্যটিতে বইটি’ সম্পর্কে বলা হয়েছে। সুতরাং, এখানে ‘বইটি’ উদ্দেশ্য। অন্যদিকে, ‘বইটি’ সম্পর্কে বলা হয়েছে ‘খুব ভালো’। এই ‘খুব ভালো’ বাক্যটির বিধেয় অংশ।
উদ্দেশ্য অংশ একটি শব্দ না হয়ে একটি বাক্যাংশও হতে পারে। এবং সেই শব্দ বা বাক্যাংশটি শুধু বিশেষ্য-ই হবে, এমন কোন কথাও নেই। উদ্দেশ্য বিশেষণ বা বিশেষণভাবাপন্ন বাক্যাংশ, এমনকি ক্রিয়াভাবাপন্ন বাক্যাংশও হতে পারে।
উদ্দেশ্য বিধেয়
সৎ হওয়া খুব কঠিন। (এখানে ক্রিয়াভাবাপন্ন বাক্যাংশ উদ্দেশ্য)
সৎ লোকেরাই প্রকৃত সুখী। (এখানে বিশেষণভাবাপন্ন বাক্যাংশ উদ্দেশ্য)
আরো পড়ুনঃ
মৌলিক সংখ্যা কাকে বলে? ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত মৌলিক সংখ্যা!
অর্থনীতি কাকে বলে? অর্থনীতির জনক কে ?
ব্যাপন কাকে বলে |ব্যাপনের বৈশিষ্ট্য লিখ
সূচীপত্র