ব্যাপন কাকে বলে |ব্যাপনের বৈশিষ্ট্য লিখ

ব্যাপন কাকে বলে: আমরা যারা সম্পর্কে পড়াশোনা করেছি তারা ব্যাপন সম্পর্কে নিশ্চয়ই জেনে থাকবো । মূলত ব্যাপন হলো এক ধরনের ভৌত রাসায়নিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে পদার্থের অনুগুলো এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরি ত হয় ।

চলুন জেনে নেওয়া যাক ব্যাপন কাকে বলে তার সম্পর্কে আরো বিস্তারিত ।

বলা যেতে পারে, দ্রাবকের অনুগুলো উচ্চ ঘনত্বের স্থান থেকে নিম্ন ঘনত্বের স্থানের দিকে ছড়িয়ে পড়ার প্রক্রিয়াকে ব্যাপন বলা হয়। 

বপন এমন একটি ভৌত রাসায়নিক প্রক্রিয়া যেটি আমাদের পুরো বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করছে। 

এটা আমরা সবাই জানি যে উদ্ভিদ মাটি থেকে পানি শোষণ করে থাকে। মূলত এই পানি শোষণের পেছনে অনেকাংশের ভূমিকা রয়েছে ব্যাপন এবং অভিস্রবণের। এছাড়াও ইনভাইটেশন নামের একটি প্রক্রিয়া রয়েছে তবে সেটা আপাতত আপেক্ষিক। 

ব্যাপন কাকে বলে সে সম্পর্কে আমরা জানতাম এবার চলুন আরো বিস্তারিত জানা যাক ।

ব্যাপন এর বৈশিষ্ট্য |ব্যাপনের বৈশিষ্ট্য লিখ

  • ব্যাপন প্রক্রিয়া পদার্থের অনু মাত্র উচ্চ ঘনত্বের স্থান থেকে নিম্ন ঘনত্বের স্থানের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। 
  • ধ্রুবক এবং দ্রাবকের ব্যাপন চাপের ঘাটতিতে ব্যাপন চাপ ঘাটতি বলা হয়। 
  • ব্যাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি চোষক শক্তির সৃষ্টি হয়। এর মাধ্যমে উদ্ভিদ সহজেই মাটি থেকে পাতায় পানি পরিবহন করতে পারে। 
  • তাপমাত্রা বাড়লে ব্যাপন হারের পরিমাণ বেড়ে যায় । এবং তাপমাত্রা কমলে ব্যাপন হারের পরিমাণ কমে যায়। সুতরাং বলা যেতে পারে তাপমাত্রা ব্যাপন হারের সমানুপাতিক। 
  • কঠিন, তরল ও বায়বীয় যেকোনো অবস্থাতেই যেকোনো মাধ্যমে যেকোনো অবস্থার বস্তুই ব্যাপিত হতে পারে । কঠিন পদার্থের ব্যাপন অনেকে ধীরে ধীরে হয়। তরল পদার্থের ব্যাপন কঠিন পদার্থের চেয়ে তুলনামূলক দ্রুত হয়। তবে বায়বীয় পদার্থের ব্যাপন সবচেয়ে দ্রুত হয় ।

এতক্ষণ আমরা জানলাম এখন কাকে বলে এবার আমরা জানব অভিস্রবণ সম্পর্কে। 

অভিস্রবণ কাকে বলে?

বৈষম্যপর্দা তারা দুটি দ্রাবকে আলাদা করা হলে, নিম্ন ঘনত্বের স্থান থেকে উচ্চ ঘনত্বের স্থানের দিকে প্রবাহিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে বলা হয়ে থাকে অভিস্রবণ ।

অভিস্রবণ ব্যাপক এর মতনই একটি নিয়ামক। অভিস্রবন প্রক্রিয়ার ফলে উদ্ভিদ মাটি থেকে পানি এবং খনিজ লবণ শোষণ করে থাকে। এখনই খনিজ লবণ ও পানি ব্যবহার করে উদ্ভিদ পাতায় খাদ্য উৎপাদন করে এবং পুনরায় অভিস্রবণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা উদ্ভিদের সারা দেহে প্রবাহিত হয়। 

এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক,

অভিস্রবণ এর বৈশিষ্ট্য

  • অভিস্রবণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রবণের পদার্থগুলো নিম্ন ঘনত্বের স্থান থেকে উচ্চ ঘনত্বের স্থানের দিকে প্রবাহিত হতে থাকে। 
  • অভিস্রবণ প্রক্রিয়া কঠিন,তরল এবং বায়বীয় এই তিন ধর্মের পদার্থের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। 
  • অভিস্রবণ প্রক্রিয়া চলমান থাকার জন্য অবশ্যই একটি বৈষম্যভেদ্য পর্দার প্রয়োজন হয়। 
  • বৈষম্যভেদ্য পর্দা ছাড়া অভিস্রবণ প্রক্রিয়া কোনমতেই সম্ভব নয়। 

ব্যাপন এবং অভিস্রবণ এর মধ্যে পার্থক্য:

ব্যাপন এবং অভিস্রবণ এর মধ্যে বেশ কয়েকটি পার্থক্য রয়েছে। মূলত একটি আরেকটির অল্টারনেটিভ বলা চলে । চলুন জেনে নেওয়া যাক ব্যাপন এবং অভিস্রবনের মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে। 

  • ব্যাপন হলো এমন এক ধরনের ভৌত প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে পদার্থের অনুগুলো উচ্চ ঘনত্বের স্থান থেকে নিম্ন ঘনত্বের স্থানের  দিকে প্রবাহিত হয়। 

অপরদিকে অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় ঘটে ঠিক তার উল্টো । এই প্রক্রিয়া পদার্থের অনু  নিম্ন ঘনত্বের স্থান থেকে উচ্চ ঘনত্বের স্থানের দিকে ব্যবহৃত হয় ।

  • অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় একটি বৈষম্য ভেদ্য পর্দা প্রয়োজন পড়ে। তবে ব্যাপন প্রক্রিয়া কোন ধরনের পর্দার প্রয়োজন পড়ে না  কেননা এটি একটি স্বতঃস্ফূর্ত প্রক্রিয়া ।
  • অভিস্রবণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পদার্থের অনূর ঘনত্ব বৃদ্ধি পেলেও ব্যাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পদার্থের ঘনত্ব হ্রাস পেয়ে থাকে ।
  • ব্যাপন একটি ভৌত প্রক্রিয়া,অভিস্রবণ ভৌত প্রক্রিয়া নয় ।
  • কোন পদার্থ ব্যতীত হতে তুলনামূলক কম সময়ের প্রয়োজন হলেও, অভিস্রবনের ক্ষেত্রে সময়ের পরিমাণ বেশি হয় ।

উদ্ভিদের পরিবহন বলতে কি বুঝায়? উদ্ভিদের পরিবহন কাকে বলে?

মাটি থেকে তরল পানি এবং কঠিন খনিজ লবণ শোষণ করার প্রক্রিয়াকে বলা হয়ে থাকে উদ্ভিদের পরিবহন। উদ্ভিদের পরিবহন এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে উদ্ভিদ তার খাদ্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান সমূহ নিজের ভেতরে সরবরাহ করে থাকে, বা সঠিকভাবে বলতে গেলে উদ্ভিদ এই সকল উপাদান তার পাতায় সরবরাহ করে নিয়ে যায়। তবে এখানেই উদ্ভিদের পরিবহনের কাজ সমাপ্ত হয়ে যায় না। 

পাতা হতে যে সকল খাদ্য উৎপাদিত হয় সেই সকল খাদ্য আবার পুনরায় উদ্ভিদের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বহন করার প্রক্রিয়া ও উদ্ভিদের পরিবহনের একটি অংশ । আশা করি বোঝা গিয়েছে উদ্ভিদের পরিবহন বলতে কি বুঝায়। 

উদ্ভিদ মূলত মাটি থেকে বিভিন্ন কৈশিক পানি সংগ্রহ করে থাকে। এই সকল পানি উদ্ভিদ মোট তিনটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাতায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়। 

প্রথমে ব্যাপন চাপ ঘাটতির মাধ্যমে উদ্ভিদ মাটি থেকে এ সকল কৌশিক পানি গ্রহণ করে থাকে। তবে ব্যাপনের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় এর সাথে জড়িত । সেটি হলো, ইমোবাইবেশন। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মূলত উদ্ভিদ পানিগ্রহি পদার্থ হওয়ার কারণে পানি শোষণ করতে সক্ষম হয় । স্টার্স, সেলুলোজ, জিলেটিন বা এই সকল পদার্থকে বলা হয়ে থাকে পানিগ্রাহী পদার্থ।  এরপর জাইলেম টিস্যুর  মাধ্যমে অভস্রবণ প্রক্রিয়া উদ্ভিদ এগুলোকে পাতায় পৌঁছে দেয়। 

উদ্ভিদের পরিবহন টিস্যু কোনটি ?

উদ্ভিদের পরিবহন টিস্যকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। 

জায়লেম টিস্যু বা জাইলেম কলা: 

জায়লেম টিস্যুর মাধ্যমে মূলত উদ্ভিদ পানি পরিবহন করে পাতায় পৌঁছে দেয় । জাইলেম টিস্যুতে জায়লেম ফাইবার, বস্ট ফাইবার, ও জাইলেম ফেরেনকাইমা অবস্থান করে। এবং জলজ উদ্ভিদে থাকে এরেন কাইমা । জায়লেম টিস্যুর প্রত্যেকটি কোষে নিউক্লিয়াস অবস্থান করে। 

ফ্লোয়েম টিস্যু বা ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা

এই কিশোর মাধ্যমে মূলত উদ্ভিদ পাতাতে প্রস্তুতকৃত খাদ্য উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে দেয়। অতঃপর শ্বসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভিদ এ সকল খাদ্য বস্ত্র গ্রহণ করে থাকে। এগুলো মূলত সবই শর্করা জাতীয় খাদ্য উপাদান। বা এপ্রক্সিমেটলি বলতে গেলে গ্লুকোজ ।

ব্যাপন ও অভিস্রবণ এর পরীক্ষণ

প্রত্যেকটি মাধ্যমিক পরীক্ষার জীববিজ্ঞান ব্যবহারিকে এই পরীক্ষাটি এসে থাকে । যেখানে মূলত ব্যাপক এবং অভিস্রবণ এর পরীক্ষণ দেখাতে হয়। 

ব্যাপনের পরীক্ষণ:

ব্যাপন এর পরীক্ষার জন্য একটি পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট ট্যাবলেট, একটি বিকার এবং বিকার ভর্তি জলের প্রয়োজন ।

একটি বিকারের মধ্যে প্রথমে একটি পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট ট্যাবলেট রাখতে হবে । যেমনটা কে আমরা সবাই জানি যে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট এর রং বেগুনি রঙের হয়ে থাকে। 

এরপর ধীরে ধীরে এতে পানি যোগ করতে হবে। কিছুক্ষণ পর দেখা যাবে সমস্ত পানি বেগুনি বর্ণ অথবা গোলাপী বর্ণ ধারণ করেছে। এরই মাধ্যমে মূলত ব্যাপনের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়ে থাকে। 

অভিস্রবনের পরীক্ষা:

একটি বাটিতে সামান্য পানি নিয়ে তার মধ্যে যদি কিছু কিসমিস ভিজিয়ে রাখা হয়, তবে কিছুক্ষণ পর সেই কিসমিস গুলো স্ফীত হয়ে ওঠে । ইতিপূর্বে আমরা জেনেছি অভিস্রবণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিম্ন ঘনত্বের পদার্থ উচ্চ ঘনত্বের দিকে প্রবাহিত হয়। 

পানি মূলত একটি নিম্ন ঘনত্বের পদার্থ। এবং কিসমিসের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে গ্লুকোস থাকার ফলে এটি তুলনামূলক উচ্চ ঘনত্বের পদার্থ । সে কারণে পানি কিসমিসের ভেতরের প্রবেশ করেছে। যার ফলে কিসমিস পানি শোষণ করে স্ফীত হয়ে উঠেছে। 

এই আরটি খেলার মাধ্যমে আমরা জানলাম ব্যাপন কাকে বলে অভিস্রবণ কাকে বলে ব্যাপন ও অভিস্রবণ এর মধ্যে পার্থক্য উদ্ভিদে পরিবহন বলতে কি বুঝায়, উদ্ভিদের পরিবহন টিস্যু কোনটি ইত্যাদি সকল কিছু সম্পর্কে বিস্তারিত। 

যদি আমাদের কোন পাঠক, শিক্ষার্থী অথবা শিক্ষক, আর্টিকেল এর মাধ্যমে বিন্দুমাত্র হলেও উপকৃত হয়ে থাকেন তবে স্টার্টআপ বাংলা ব্লগ হিসেবে সেটি শুধু আমাদের সার্থকতাই নয় বরং অনেক বড় সাফল্য । 

আরো পড়ুনঃ

আয়নিক বন্ধন কাকে বলে? সমযোজী বন্ধন কাকে বলে?

চিঠির খাম লেখার নিয়ম-সঠিক নিয়ম জেনে নিন!

Leave a Comment