নিমন্ত্রণ পত্র লেখার নিয়ম | আমন্ত্রণ পত্র লেখার নিয়ম ও নমুনা

নিমন্ত্রণ পত্র বা আমন্ত্রণপত্র যাই বলি না কেন এটা সামাজিকতা রক্ষার্থে গুরুত্বপূর্ণ একটি আনুষ্ঠানিকতা । মানুষ যেহেতু সমাজবদ্ধ প্রাণী , তাই সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখতে আমন্ত্রণ পত্র লেখার নিয়ম ও নমুনা সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান থাকা উচিত |

যেহেতু মানুষ ছাড়া মানুষের জীবন , আনন্দ , দুঃখ , সাফল্য সব কিছুই অপূর্ন , তাই বিশেষ মুহূর্তগুলোতে মানুষ চায় তার আশেপাশের মানুষ ও তার সাথে সেই বিশেষ মুহূর্ত উপস্থিত থাকুক । এরই ধারাবাহিকতায় , নিমন্ত্রণ পত্র লেখার প্রচলন শুরু হয় ।

অতীতে , যখন আধুনিক যোগাযোগ পদ্ধতি ছিল না তখন নিমন্ত্রণ পত্রের ব্যবহার ছিলো বর্তমানের চেয়ে অনেক বেশি | তবে হাতে লেখা নিমন্ত্রণ পত্রের জায়গা আজকাল ইলেকট্রনিক মেইল ব্যবহৃত হচ্ছে । তবে পদ্ধতি সনাতন হোক বা আধুনিক , নিমন্ত্রণ পত্রের আবেদন এখনো তেমনি উৎসবমুখর এবং অনুভূতি প্রাঞ্জল ।

নিমন্ত্রণ পত্র কাকে বলে ? বা আমন্ত্রণ পত্র কি?

সামাজিক সদ্ভাব ও সুসম্পর্ক রক্ষা করার জন্য কোন আয়োজিত অনুষ্ঠানে , অথবা ব্যাবসায়িক আলোচনার প্রয়োজনে কাঙ্খিত ব্যক্তির উপস্থিতির জন্য নান্দনিকভাবে অবহিত করার উদ্দেশ্যে লিখিত চিঠিকে নিমন্ত্রণ পত্রে বলা হয়ে থাকে | ধর্মীয়, সামাজিক ,রাজনৈতিক ,ব্যবসায়িক যে কোন অনুষ্ঠানে কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানাতে আমন্ত্রণ পত্র লেখা হয়ে থাকে | তাই নিমন্ত্রণ পত্র লেখার নিয়ম ও নমুনা সম্পর্কে উক্ত আর্টিকেলে কিছু আলোচনা করা হলো l

নিমন্ত্রণ পত্রের ব্যবহার

আমন্ত্রণ পত্রের ব্যবহার মূলত সামাজিক রীতি | বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও ধর্মীয় , রাজনৈতিক , ব্যবসায়িক সমাবেশে মানুষকে আমন্ত্রণ করতে আমন্ত্রণ পত্র লেখা হয়ে থাকে । যেমন বিয়ে , জন্মদিন , ইফতার মাহফিল , শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা , বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান , সামাজিক সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান , রাজনৈতিক দলের কর্মী সমাবেশ , বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের যেমন ঈদ দুর্গাপূজা নিকটাত্মীয় ও বন্ধু বান্ধবদের আমন্ত্রণের উদ্দেশ্য নিমন্ত্রণ পত্র ব্যবহার করা হয় ।

তাই ব্যক্তিগত ও সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান কে গ্রহণযোগ্য আনন্দঘন করে তোলার জন্য আন্তরিকভাবে নিমন্ত্রণ পত্র লেখার নিয়ম ও নমুনা সম্পর্কে সবারই জানা উচিত ।

আরো পড়ুন;-

নিমন্ত্রণ পত্র লেখার নিয়ম

নিমন্ত্রণ পত্রের গঠন শৈলী অন্যান্য দাপ্তরিক পাত্র হতে আলাদা | নিম্নে নিমন্ত্রণ পত্রের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য গুলো আলোচনা করা হলো :

পত্রের শুরু : নিমন্ত্রণ পত্রের শুরুতেই , অনুষ্ঠানের নাম এবং বিষয়সূচি উল্লেখ করতে হবে । নিমন্ত্রণ পত্র যেহেতু , জাতি ধর্ম বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে সকলকে নিমন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে লিখিত হয় সুতরাং এ জাতীয় পত্র বিশেষ কোন ধর্মীয় বা কল্যাণ ব্যঞ্জক শব্দ ব্যবহৃত হয় না । তবে বিয়ের নিমন্ত্রণ এর ক্ষেত্রে ,” পরম করুণাময়ের নামে ” অথবা ” শ্রীশ্রী প্রজাপতয়ে নম” লেখা যেতে পারে শুরুতেই উল্লেখ করেছি পত্রের শুরুতে অনুষ্ঠানের শিরোনাম উল্লেখ থাকে । যেমন , ” পিঠা উৎসব 2022 “

সম্ভাষণ : নিমন্ত্রণ পত্রের শুরুতেই , প্রাপকের উদ্দেশ্যে সৌজন্যে সূচক অথবা স্নেহ মুলক কিছু শব্দ ব্যবহার করা হয় । শব্দগুলো মূলত আন্তরিকতা প্রকাশে সহায়ক । কিছু সম্ভাষণ হিসেবে ব্যবহৃত শব্দের উদাহরণ : সুধী , মহোদয় , শ্রদ্ধেয় , প্রিয়তমেষু , জনাব , সুজন প্রভৃতি । বয়স ও সম্পর্ক ভেদে সম্ভাষণ মূলক শব্দ নির্বাচনে সচেতনতা অবলম্বন করা শ্রেয় ।

পত্রের মূল অংশ : নিমন্ত্রণপত্রে অংশটি হয় তথ্য বহুল । সারসংক্ষেপে, অনুষ্ঠানের ধরন , সময়সূচী , স্থান প্রভৃতি উল্লেখিত থাকে পত্রের এই অংশে । তাই এটাকে পত্রের মূল অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয় । বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে , অনুষ্ঠানের বিষয় ও সময়ের পাশাপাশি উপস্থিত প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি ও দর্শক হিসেবে কারা উপস্থিত থাকবেন সংক্ষেপে এসব তথ্য ও উল্লেখ থাকে ।

বিয়ের নিমন্ত্রণ পত্রের ক্ষেত্রে , বর ও কনের পরিচিতি , কোন সময় শিক্ষাগত যোগ্যতা , ঠিকানা প্রকৃতি উল্লেখ থাকে । নিমন্ত্রণ পত্র লেখার সময় খেয়াল রাখতে হবে , পত্রের ভাষা যেন সহজ ও বোধগম্য হয় । প্রয়োজনীয় তথ্য যেন উল্লেখ থাকে । এছাড়াও এ ধরনের পত্রের ভাষায় বিনীত ভঙ্গি প্রকাশ পাওয়া জরুরি ।

পত্রের সমাপ্তি : পত্রের এই অংশে , প্রাপক কে বিনীতভাবে উপস্থিতির জন্য অনুরোধ জানানো হয় | এ অংশের শেষভাগে , বিনীত নিবেদক লেখার পর প্রেরকের নাম উল্লেখ থাকে ।

ঠিকানা ও তারিখ : নিমন্ত্রণপত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো , অনুষ্ঠানে তারিখ অনুষ্ঠানে উদ্দেশ্যে নির্ধারিত স্থান । প্রচলিত রীতি অনুযায়ী , নিমন্ত্রণপত্রে সর্ববামে তারিখ এবং নিমন্ত্রণের প্রেরণকারীর নামের নিচে ঠিকানা লেখার নিয়ম রয়েছে । তবে সময়ের সাথে সাথে , অধুনা এই যুগে এ নিয়মে কিঞ্চিৎ পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা যায় । বর্তমানে , তারেক এবং ঠিকানা নিমন্ত্রণ পত্রের বামদিকে লেখার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে ।

অনুষ্ঠানসূচি : নির্ধারিত দিনের বিশেষ আয়োজনে , কোন সময়ে কোন অনুষ্ঠান কত কতক্ষণ সময় ব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে তার উল্লেখ নিমন্ত্রণপত্রে দেয়া হয়ে থাকে । এতে , আমন্ত্রিত অতিথি গণ আয়োজিত অনুষ্ঠান কতক্ষণ ব্যাপী চলবে তা ধারণা করে নিতে পারেন ।

আমন্ত্রিত অতিথির ঠিকানা : নিমন্ত্রণ পত্রের এক পর্যায়ে , খামের উপর স্পষ্ট হরফে কাঙ্খিত ব্যক্তির ঠিকানা সম্ভব হলে ফোন নম্বর সংযোজিত করতে হবে যাতে করে সঠিক সময়ে পত্রখানা সঠিক ব্যক্তির নিকট পৌঁছাতে পারে ।

সম্পর্কিত

নিমন্ত্রণ পত্র পত্রে প্রকারভেদ:

বিষয়ের উপর ভিত্তি করে নিমন্ত্রণ পত্র নানা রকম হয়ে থাকে।নিম্নে কিছু অধিক ব্যবহৃত নিমন্ত্রণ পত্র তুলে ধরা হলোঃ

  • জন্মদিনের নিমন্ত্রণ পত্র
  • বিবাহ নিমন্ত্রণ পত্র
  • রাজনৈতিক সভায় আমন্ত্রণ জানিয়ে নিমন্ত্রণ পত্র।
  • সাংস্কৃতিক বা বিষয়ভিত্তিক সেমিনারে নিমন্ত্রণ পত্র

নিমন্ত্রণ পত্রের নমুনা

এখানে তিনটি নিমন্ত্রণ পত্রের নমুনা তুলে ধরা হলোঃ

  • বর্ষামঙ্গল অনুষ্ঠানে উপস্থিতি কামনা করে নিমন্ত্রণ পত্র।
  • স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিতি কামনা করে নিমন্ত্রণ পত্র।
  • শুভ বিবাহ উপলক্ষ্যে উপস্থিতি কামনা করে নিমন্ত্রণ পত্র।

সম্পর্কিত

বর্ষামঙ্গল অনুষ্ঠানে উপস্থিতি কামনা করে নিমন্ত্রণ পত্রের নমুনা

নিমন্ত্রণ পত্র লেখার নিয়ম
নিমন্ত্রণ পত্র লেখার নিয়ম

বর্ষামঙ্গল 1422

সুধী,
বরষামুখর দিনে,শ্রাবণের বিদায়ী আয়োজনে আগামী ১১ ই শ্রাবণ “বরষামঙ্গল” অনুষ্ঠিত হবে নগরের “টাউন হল ” চত্বরে।উক্ত আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিশিষ্ট জেলা প্রশাসক মহাদয়।উক্ত দিবসে বেলা ৩:০০ ঘটিকা হতে বর্ষাকালের স্তুতি মূলক আলোচনা ও বেলা 4 ঘটিকা হতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হবে । অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন স্বনামধন্য রংপুর জিলা স্কুল রংপুর এর সম্মানিত প্রধান শিক্ষক ।

অনুষ্ঠানটিতে সৌন্দর্যমন্ডিত করার জন্য আপনার উপস্থিতি আন্তরিক ভাবে কামনা করছি ।
নাফিউজ্জামান
সাংস্কৃতিক সম্পাদক
রংপুর জিলা স্কুল ছাত্র সংসদ
রংপুর

অনুষ্ঠানসূচি
3:00: অতিথির আসন গ্রহণ
3:05: বর্ষা নিয়ে রচিত রবীন্দ্রনাথের কবিতা পাঠ
3:30: প্রধান অতিথির বক্তব্য দান |
3:45: সভাপতির ভাষণ
3:50: মঞ্চ পুনর্বিন্যাস
4:00: সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
4:30: মঞ্চনাটক ” রক্তকরবী “
5:00: অনুষ্ঠানের সমাপ্তি।

সম্পর্কিত

বিবাহে উপস্থিতির জন্য নিমন্ত্রণ পত্রের নমুনা

পরিচিতি।।

বর: অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়              কনে: তাপসী রায়

পিতা: বাবুল চট্টোপাধ্যায়            পিতা: অটল রায়

মাতা: দিপা চট্টোপাধ্যায়             মাতা: রমা রায়

ঠিকানা: চৌধুরীবাড়ী          ঠিকানা: অলেখাচর

                  ।।অনুষ্ঠানসূচি।।

 বিয়ে                              বৌভাত

তারিখ:২০জুন, ২০২০ইং     তারিখ:২১জুন, ২০২০ইং

রোজ: শনিবার               রোজ: রবিবার

বরযাত্রা: সন্ধ্যা ৭ টা          প্রীতিভোজ: দুপুর ১২টা

শুভলগ্ন:রাত ৮টা ৪৫মিনিটে   স্থান:প কমিউনিটি সেন্টার 

প্রীতিভোজ: রাত ৮টা

বিবাহ আসর: রায়পুর অডিটরিয়াম

               শ্রী শ্রী প্রজাপতয়ে নমঃ

সুধী,

আগামী ২০ জুন ২০২০ ইং, রোজ শনিবার, আমাদের কনিষ্ঠ পুত্র মিঠুন পালের বিবাহের ও ২১ জুন ২০২০ ইং, রোজ রবিবার বিবাহোত্তর বৌভাত অনুষ্ঠানের দিন ধার্য করা হয়েছে।

উক্ত বিবাহের দিনে এবং বিবাহত্তোর বৌভাত অনুষ্ঠানে আপনি / আপনাদের সদয় উপস্থিতি ও আশির্বাদ একান্তভাবে কামনা করছি।

নিবেদক-
অটল ৱায় ও রমা ৱায়

অভ্যর্থনায়,
বাবুল চট্টোপাধ্যায় ,
অটল পাল।

সম্পর্কিত

নিমন্ত্রণ পত্র লেখার নিয়ম ও নমুনা pdf

সর্বশেষ আপডেট

Leave a Comment