ছাড়পত্র লেখার নিয়ম | ছাড়পত্র জন্য আবেদন লেখার নিয়ম

ছাড়পত্র লেখার নিয়ম ও নমুনা সম্পর্কে অবহিত থাকা উচিত কেননা, ছাড়পত্র যাপিত জীবনে কম সংখ্যক ব্যবহৃত হলেও এটি অন্যতম প্রাতিষ্ঠানিক গুরুত্বপূর্ণ কাগজ। শিক্ষাজীবন এবং কর্মজীবনে পরিস্থিতির প্রয়োজনে ছাড়পত্র লেখার প্রয়োজন হতে পারে।কোন প্রতিষ্ঠান হতে ছাড়পত্রের কাগজ পেতে ওই প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদনপত্র জমা দিতে হয়। আবেদনপত্র জমা দেবার পর কতৃপক্ষ হতে আবেদনকারীকে ছাড়পত্র সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাড়পত্রের প্রয়োজন হতে পারে। এমনকি কর্মস্থলে চাকরির অব্যাহতি প্রভৃতি কারণেও ছাড়পত্রের প্রয়োজন হতে পারে। তাই ছাড়পত্র লেখার নিয়ম ও নমুনা সম্পর্কে জানা সকলের জন্যই সম গুরুত্বপূর্ণ।

এই আর্টিকেলটিতে নির্ভূলভাবে ছাড়পত্র লেখার নিয়ম ও নমুনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

ছাড়পত্র লেখার নিয়ম ও নমুনা সম্পর্কে জানার আগে , আসুন জেনে নেয়া যাক ছাড়পত্র কি ?

ছাড়পত্র কি

ছাড়পত্র হল কোন ব্যক্তি দীর্ঘদিন কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত থাকার পর সে প্রতিষ্ঠান পরিত্যাগ প্রসঙ্গে লিখিত আনুষ্ঠানিক চিঠি । ছাড়পত্রের ব্যবহার সর্বত্রই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পরিলক্ষিত । স্কুল-কলেজ কর্মস্থল ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সর্বত্রই পরিত্যাগের প্রয়োজনে ছাড়পত্র রচনা করতে হয় । পরিত্যাগ প্রসঙ্গে কর্তৃপক্ষের অবগতির জন্য ছাড়পত্র এক ধরনের আনুষ্ঠানিক লিখিত নথি ।

আরো পড়ুন

ছাড়পত্র ব্যবহৃত হয় এমন ক্ষেত্র

কোন শিক্ষার্থী যদি তার পুরাতন স্কুলটি বদলে নতুন বিদ্যালয় ভর্তি হতে চাই সে ক্ষেত্রে তার পূর্বের প্রতিষ্ঠানটি হতে প্রদানকৃত ছাড়পত্রের প্রয়োজন পড়ে । এছাড়া চিকিৎসাধীন রোগীর চিকিৎসা শেষে তাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিতে ও হাসপাতাল কর্তৃক ছাড়পত্র প্রদান করার প্রয়োজন পড়ে । এছাড়া চাকরির ক্ষেত্রেও চাপে পড়ে থাকার সময় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ছাড়পত্র সরবরাহ করা হয় | যা পরবর্তীতে উক্ত ব্যক্তি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান কর্মী হিসেবে নিযুক্ত নয় এই সাক্ষ্য প্রমাণ করে । একইভাবে শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রেও নতুন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার সময় তার পূর্বের প্রতিষ্ঠান সাথে শিক্ষাসংক্রান্ত কোন সংশ্লিষ্টতা নেই এটির প্রমাণস্বরূপ ছাড়পত্র সকল প্রতিষ্ঠানে জমা নেওয়া হয় |

ছাড়পত্র প্রাপ্তির জন্য করণীয়

কোনো কারণবশত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান হতে ছাড়পত্রের প্রয়োজন হলে , উক্ত প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বরাবর একটি আবেদন পত্র লিখতে হয় । সুতরাং ছাড়পত্র প্রাপ্তির জন্য ছাড়পত্রের জন্য আবেদন পত্র লেখার নিয়ম টি সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ।

তাই ছাড়পত্র লেখার নিয়ম ও নমুনা সম্পর্কে জানার আগে আসুন জেনে নেয়া যাক ছাড়পত্রের জন্য দরখাস্ত লেখার নিয়ম সম্পর্কে :

ছাড়পত্রের চেয়ে আবেদন লেখার নিয়ম

  • ছাড়পত্রের চেয়ে আবেদনের শুরুতেই তারিখ উল্লেখ করতে হবে ।
  • সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করতে হবে ।
  • বিষয় হিসেবে লিখতে হবে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন |
  • আবেদনের শুরুতেই সবিনয় নিবেদন এই যে , লেখার পর সংক্ষেপে বক্তব্য পেশ করতে হবে |
  • এ পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটির সাথে সংশ্লিষ্টতার মেয়াদ উল্লেখ করতে হবে |
  • এরপর প্রতিষ্ঠানটি ছাড়তে চাহিবার কারণ উল্লেখ করতে হবে ।
  • সবশেষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদয় বিবেচনার জন্য আর্জি পেশ করতে হবে ।

সম্পর্কিত আর্টিকেল

বিদ্যালয় হতে ছাড়পত্র চেয়ে আবেদনের নমুনা

তারিখ :
বরাবর ,
প্রধান শিক্ষিকা ,
রংপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, রংপুর
বিষয় : ছাড়পত্র চেয়ে আবেদন

জনাব ,
সবিনয় নিবেদন এই যে , আমি আপনার বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর বিজ্ঞান শাখার প্রভাতী সেকশনে অধ্যায়নরত একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী । আমার বাবা একজন সরকারি কর্মকর্তা । সেসু দীর্ঘ সাত বছর ধরে অত্র এলাকায় চাকরি রত ছিলেন । সম্প্রতি তার প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাকে রংপুর সদর শাখায় বদলি করা হয়েছে । অত্র এলাকায় আমার পরিবার ব্যতীত অন্য কোন আত্মীয়-স্বজন ও আশ্রয় না থাকায় আমাকেও আমার পরিবারের সাথে চলে যেতে হবে । আমার বাবা ইতোমধ্যে তার নতুন বদলিকৃত স্থানে যোগদান করেছেন । চলতি মাসের শেষে আমি এবং আমার পরিবার নতুন জায়গাটিতে চলে যাওয়ার কথা । এমতাবস্থায় নতুন জায়গায় নতুন বিদ্যালয় ভর্তি হতে , আমার অত্র প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদানকৃত ছাড়পত্রের প্রয়োজন ।

অতএব , মহোদয়ের নিকট আমার আকুল প্রার্থনা এই যে আমার পরিস্থিতি বিবেচনা করিয়া আমাকে একটি ছাড়পত্র প্রদানের বাধিত করিবেন ।

আপনার একান্ত অনুগত ছাত্রী
রেজওয়ানা আরেফিন
শ্রেণী :নবম
শাখা :বিজ্ঞান
সেকশন : প্রভাতী
রোল নং :

ছাড়পত্রের জন্য আবেদন এর নিয়ম তা শিখে নেয়া হলো । এবার আসুন আলোচনা করি ছাড়পত্রের নিয়ম নিয়ে ।

ছাড়পত্র লেখার নিয়ম

একেক উদ্দেশ্যে প্রদানকৃত ছাড়পত্র ফরমেট একেক রকম হতে পারে ।তাই,ছাড়পত্র লেখার নিয়ম ও নমুনা সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানা উচিত। তবে এ পর্যায়ে সাধারণ নিয়ম গুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো :

  • ছাড়পত্র শুরুর পূর্বেই বড় মোটা হরফে “ ছাড়পত্র “লেখা টি উল্লেখ থাকতে হবে ।
  • কোন কর্মস্থল হতে প্রদানকৃত ছাড়পত্র সাধারণত প্রেরক ও প্রাপক এর পূর্ণাঙ্গ নাম , পরিচয় এবং ঠিকানা উল্লেখ থাকে । তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে , শিক্ষার্থীকে প্রদানকৃত ছাড়পত্রে প্রেরক প্রাপক এর নাম পরিচয় থাকা গুরুত্বপূর্ণ নয় ।
  • ছাড়পত্রের বক্তব্য অত্যন্ত সাবলীল এবং সংক্ষেপ হওয়া বাঞ্ছনীয় ।
  • ছাড়পত্রের পরিত্যাগের অনুমতি সংক্রান্ত বক্তব্যের সুস্পষ্টতা গ্রহণযোগ্য ।
  • ছাড়পত্র পরিত্যাগের সময় উল্লেখ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
  • ছাড়পত্রের নিয়ম গুলি সংক্ষেপে জেনে নেয়ার পর , আসন আমরা বিভিন্ন বিষয়ে কিছু ছাড়পত্রের নমুনা পর্যবেক্ষণ করি | এ থেকে , ছাড়পত্র লেখার নিয়ম ও নমুনা সম্পর্কে আমাদের বিস্তারিত ধারণা জাগ্রত হবে বলে আশা রাখছি |

আরো পড়ুন;-

বিদ্যালয় কর্তৃক প্রদানকৃত ছাড়পত্রের নমুনা

স্মারক নং :
তারিখ :
“ বিদ্যালয় পরিত্যাগের ছাড়পত্র “

এই মর্মে প্রত্যয়ন করিতেছি যে , আহমেদ সিয়াম , পিতা :মোঃ আব্দুর রহিম , মাতা : সুফিয়া আক্তার , উপজেলা রংপুর সদর , জেলা রংপুর | সে অত্র বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত একজন নিয়মিত ও মেধাবী ছাত্র , তা শ্রেণীর রোল নং : 5 | সে হাজার 9.05 .2021 তারিখ পর্যন্ত অত্র বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছিল । ভর্তি বহির অনুযায়ী , তার জন্ম তারিখ 11 ই মার্চ , 2005 । তাকে অত্র বিদ্যালয় হতে বিদ্যালয় পরিত্যাগের ছাড়পত্র প্রদান করা হলো ।

ছাড়পত্র প্রদানের কারণ
অভিভাবকের ইচ্ছা

স্বাক্ষর
প্রধান শিক্ষক
রংপুর জিল্লা স্কুল,রংপুর

ছাড়পত্র লেখার নিয়ম
ছাড়পত্র লেখার নিয়ম

চাকরিরত নিয়োগ প্রত্যাশী প্রার্থীদের প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ছাড়পত্রের ফরম্যাট

……………………….
নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের নাম উপরে লিখতে হবে
তারিখ :

প্রেরক : ………………
প্রাপক :…………….
বিষয় :………………( প্রতিষ্ঠানের নাম ) এর নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য বিভাগীয় ছাড়পত্র |

মহোদয় ,
ওপরে উঠতে বিষয়ে আদিষ্ট হইয়া জানাইতেছি যে , চাকরিরত ছাড়পত্রের আবেদনকারীর পরিচয় , কর্মরত বিভাগের নাম , পদের নাম , যোগদানের তারিখ ………………. হইতে অত্র প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন |( নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান নাম )…….. এর নিয়োগ পরীক্ষার জন্য তাকে অনুমতি প্রদান করা হলো | উক্ত পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে চাকরিরত কর্মী কোন পদের জন্য মনোনীত হলে, তাহাকে অব্যাহতি দিতে অত্র প্রতিষ্ঠানের কোনো আপত্তি নেই । উক্ত পরীক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ………….

কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর
পদের নাম
তারিখ
সিল সহ

সম্পর্কিত আর্টিকেল

ছাড়পত্র সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা

যেহেতু ছাড়পত্র আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খুব বেশি প্রয়োজন হয় এমন কোন কাগজ নয় , তাই প্রয়োজনের সময় এটি সম্পর্কে দু একটি প্রশ্ন আমাদের মনে চলে আসে ।

ছাড়পত্র কোথা থেকে সংগ্রহ করা যায় ?
ছাড়পত্র মূলত উদ্দেশ্য ভেদে বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহ করা যায় |

ছাড়পত্রের জন্য কি কোন রকম ফি প্রদান করতে হয় ?

প্রাতিষ্ঠানিক ছাড়পত্র যেমন চাকরিরত প্রতিষ্ঠান হতে অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হতে এসব ছাড়পত্র বিনামূল্যে সংগ্রহ করা যায় । তবে , এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম চিকিৎসা সেবা গ্রহণের পর হাসপাতাল কর্তৃক প্রদানকৃত ছাড়পত্র । এটি সংগ্রহের জন্য রোগীকে তার সকল চিকিৎসা ব্যয় পরিশোধ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে প্রদানকৃত ছাড়পত্র টি সংগ্রহ করতে হবে ।

উপসংহার

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হতে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করবার প্রয়োজন শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে যে কোন পেশার মানুষের হতে পারে | অপরদিকে প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ হিসেবে আবেদনের প্রেক্ষিতে ছাড়পত্র সরবরাহ করবার প্রয়োজন হতে পারে । তাই ছাড়পত্র লেখার নিয়ম ও নমুনা সম্পর্কে অবহিত থাকা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য উপকারী ।

আমাদের সর্বশেষ আপডেট

Leave a Comment