পাইলস (piles) এর চিকিৎসা ঔষধ ও পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা

পাইলস (piles) একটি অতি পরিচিত স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি অর্শ রোগ নামেও পরিচিত। এটি আরও পরিচিত নাম হচ্ছে হেমরয়ডস। আজকের আলোচনার বিষয় পাইলস (piles) এর চিকিৎসা ঔষধ ও পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা । যদি আপনি পাইলস বা হেমরয়ডস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এবং চিকিৎসা পেতে চান, আপনার সম্পূর্ণ চিকিৎসা ইতিহাস ও সামগ্রীসমূহ পর্যালোচনা করে একজন চিকিৎসকে দেখানো উচিত।

পাইলস (piles) এর ঔষধ

পাইলস (piles) বা হেমরয়ডস রোগের চিকিৎসার জন্য কিছু ঔষধ ও চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করা হতে পারে। তবে এটি সমস্যার মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা নির্ধারিত হওয়া উচিত। নিম্নলিখিত কিছু প্রকার চিকিৎসা ও ঔষধ ব্যবহার করা হতে পারে:

পাইলোস্প্রে – পাইলস এবং ফিশার জন্য বিশ্বের প্রথম টাচ -ফ্রি স্প্রে ট্রিটমেন্ট

পাইলোস্প্রে হল পাইলস (piles) এবং ফিশার জন্য একটি যুগান্তকারী, টাচ-ফ্রি স্প্রে ট্রিটমেন্ট।পাইলোস্প্রে ব্যবহার করা সহজ, এবং এটি প্রয়োগে কোনও অস্বস্তি নেই।অস্বস্তি থেকে দ্রুত ত্রাণের জন্য এটি যে কোনও সময় এবং যে কোনও জায়গায় ব্যবহার করা যেতে পারে।

পাইলোস্প্রে ব্যবহারের মাধ্যমে পেশন্ত প্রচুর উপকৃত হবে,নিজের সাথে চিকিত্সা করা সহজ হয়ে যায়, সময়মতো চিকিৎসা এখন সম্ভব এবং ব্যথা, জ্বলন, চুলকানি, রক্তপাত এবং ফোলাভাবের মতো লক্ষণগুলি থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া কেবল একটি স্প্রে দূরে!

পাইলোস্প্রে পাইলস (piles) এবং ফিশার চিকিত্সার জন্য তিল অয়েল, দারুহলদি, লোধারা, মোচারাস, কাপুর, পুদিনা এবং কোকাম তেলের মতো ৭ টি নির্বাচিত ভেষধিগুলি সমন্বয়ে তৈরী করা হয়েছে।

এটিতে অ্যান্টি-হেমোরজিক, হেমোস্ট্যাটিক, অ্যান্টিসেপটিক, অ্যানালজেসিক, অ্যানাসথেটিক, অ্যান্টি-প্রুরিটিক, অ্যান্টি- ইনফ্লেমেটরি এবং ক্ষত নিরাময়ের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। পাইলোস্প্রে নিরাময় প্রক্রিয়াটিকে দ্রুত করে এবং পাইলস এবং ফিশার লক্ষণগুলি থেকে দ্রুত মুক্তি দেয়। পাইলোস্প্রে একটি ক্লিনিক্যালী গবেষণা, 100% নিরাপদ এবং প্রাকৃতিক, আয়ুর্বেদিক মেডিসিন। এটি হিলিং হ্যান্ডস ক্লিনিক, ভারতের বৃহত্তম পাইলস হাসপাতালের চেইনের সহযোগিতায় হিলিং হ্যান্ডস অ্যান্ড হার্বস দ্বারা বিকাশ করা হয়েছে।

পাইলস (piles) এর চিকিৎসা ঔষধ ও পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা

পাইলোট্যাব (PiloTab) ঔষধ

পাইলোট্যাব ট্যাবলেট পাইলস এবং ফিশার চিকিত্সার জন্য একটি প্রোপিয়েটারি ফর্মুলেশনের দ্বারা 4 টি নির্বাচিত ভেষধিগুলি, দুগ্ধিকা, দারুহালদি, নাগকেশর এবং লজ্জাবতী সমন্বয়ে তৈরী।

এটিতে অ্যান্টি- হেমোরজিক, হেমোস্ট্যাটিক, অ্যান্টিসেপটিক, অ্যানালজেসিক, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং ক্ষত নিরাময়ের বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

পাইলোট্যাব পাইলস (piles) এবং ফিশার লক্ষণগুলি যেমন ব্যথা, রক্তপাত এবং ফোলাভাব থেকে খুব তাড়াতাড়ি আরাম দেয় এবং এটি অভ্যন্তরীণ নিরাময় প্রক্রিয়া প্রচার করে।

কন্সটিট্যাব (ConstiTab) ঔষধ

কন্সটিট্যাব ট্যাবলেটটি প্রোপিয়েটারি ফর্মুলেশনের সাহায্যে 6 টি নির্বাচিত ভেষধিগুলি উপাদান, সোনামুখী, হরিতকি, বালহীরদা, নিশোত্তর, সাইন্ধব এবং এরানড অয়েল দিয়ে তৈরী করা হয়েছে।

কন্সটিট্যাব হজমে সাহায্য করে, মলকে নিয়মিত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য এবং এসিডিটি এবং গ্যাসের মতো রোগের নিরাময় করে। কন্সটিট্যাব শক্ত এবং গলদা মল তৈরিতে বাধা দেয় এবং মলের গতিকে মসৃন করে, যা পাইলস এবং ফিশার লক্ষণগুলি কম করতে সাহায্য করে।

পাইলস এর হোমিও ঔষধ ও নির্দেশনা

হোমিওপ্যাথিতে কিছুটা সময় বেশি লাগলেও রোগ নিরাময় হয় চিরতরে। হোমিওপ্যাথিতে এই রোগ চিকিৎসার জন্য রয়েছে বহু মেডিসিন।

  1. প্রথম ধাপের কিছু ক্ষেত্রে রোগের লক্ষণের উপর ভিত্তি করে ঔষধ প্রয়োগ করে থাকেন চিকিৎসকরা।
  2.  দ্বিতীয় ধাপের কিছু ক্ষেত্রে রেপার্টরী থেকে রুব্রিক নিয়ে রোগীর সর্বদৈহিক অবস্থার আলোকে ঔষধ প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। আবার চূড়ান্ত অবস্থায় রোগীর ভেতরে লুকিয়ে থাকা প্রকৃত রোগটিকে নিস্তেজ করার জন্য নির্বাচিত ঔষধ ধাপে ধাপে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।

এসিড নাইট্রিক ঔষধ

অন্ত্রে ছুরিকাঘাত এর মতো তীক্ষ্ণ ব্যথা (কোন কিছুর টুকরো শরীরের ভেতর থেকে যাওয়ার মত ব্যথা), মলত্যাগের সময় সংকোচনের অনুভূতি (সাথে মলত্যাগের পর ক্রমাগত ব্যথা অনুভূত হওয়া) এইসব ক্ষেত্রে কাজ করে।

এসকিউলাস হিপ ঔষধ

পায়ুপথের হেমরয়েড টিস্যুর ঝিলনীতে শুষ্কতা এবং জ্বালাপোড়া অনুভব হওয়া (কালচে লাল স্থানচ্যুত অর্শবলীর ক্ষেত্রে), ত্রিকাস্থি এলাকায় তীব্র ব্যথা, শিরার অকার্যকারিতা এইসব ক্ষেত্রে কাজ করে।

কলিনসোনিয়া ক্যান ঔষধ

নিতম্বের নিচের অংশের শিরার আবদ্ধতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ফাঁপা এইসব ক্ষেত্রে কাজ করে।

গ্রাফাইটিস ঔষধ

কোষ্ঠকাঠিন্য, চাকা চাকা মল (ডিমের সাদা অংশের মতো), পেট ফাঁপা, পায়ুপথের একজিমা, চুলকানি প্রভৃতি ক্ষেত্রে কাজ করে। বলি বড়, চেপে বসলে যন্ত্রণা, ছুঁলে ব্যথা হয়।

হেমামেলিস

অর্শ রোগের কারণে পায়ু পথ ফুলে যাওয়া এবং সেই সাথে রক্তপাত হলে উপকারী।

কেলি কার্ব ঔষধ

পিঠে ব্যাথা, পেট ফাঁপা, শক্ত মল, পায়ুপথের জ্বালাপোড়া (অর্শ হলে) এইসব অসুস্থতায় কাজ করে।

লাইকোপোডিয়াম ঔষধ

পেটে অতিরিক্ত গ্যাস জমা, পেট ফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্য সাথে পেট পরিষ্কার না হওয়া। অর্শ রোগের কারণে রক্তক্ষরণ, সাথে পায়ুপথের স্থানচ্যুতি ও মাংসপেশীর মোচড়ানো ব্যথা অনুভূত হওয়া। সাধারণত কোনো কারণ ছাড়াই মানসিক উৎকণ্ঠা ও বদহজম। পেটের রক্তাধিক্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে কাজ করে।

পিওনিয়া ঔষধ

ভেজা অর্শ, ব্যথাযুক্ত পায়ুপথের ফাটল রোগ। চুলকানি এবং ব্যথাযুক্ত অর্শ সাথে রক্তপাতের প্রবনতা। মলত্যাগের পর ক্রমাগত খোঁচানো ব্যথা এইসব রোগ লক্ষণের চিকিৎসায় কাজ করে।

সালফার ঔষধ

পায়ুপথ লাল হওয়া, চুলকানি, একজিমা, অস্বাস্থ্যকর ত্বক এসব ক্ষেত্রে ব্যাপক কার্যকরী একটি ঔষধ।

নাক্স ভমিকা ঔষধ

মলত্যাগ করার সময় বলি বের হয়। উদরাময়, কোমরে ব্যথা, অমিতাচার, মদ্যপান, বেশি তেল-চর্বি, ফাস্টফুড জাতীয় খাদ্য খাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, বার বার মলত্যাগের ইচ্ছা প্রভৃতি লক্ষণ থাকলে সুন্দর কাজ করে।

পাইলস এর চিকিৎসা সমূহ

পাইলস (piles) এর ঘরোয়া চিকিৎসা

পাইলস এর চিকিৎসা জন্য পাইলস হওয়ার কারণগুলো প্রতিরোধ করতে হবে। অর্শ রোগ সারানোর ৬টি কার্যকর ঘরোয়া উপায় নিচে তুলে ধরা হলো—

১. কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বাঁচতে বেশি বেশি আঁশ বা ফাইবারযুক্ত খাবার খতে হবে

এর মধ্যে রয়েছে শাকসবজি, ফলমূল, ডাল, লাল চাল ও লাল আটার তৈরি খাবার। সেই সাথে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। ফাইবার পানি শোষণ করার মাধ্যমে পায়খানা নরম করে, তাই ফাইবারকে কাজ করতে হলে সারাদিনে অন্তত দুই লিটার পানি পান করতে হবে।

এই দুটো কাজ করলে সাধারণত কয়েকদিনের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়, আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পাইলস এর সব ধরনের লক্ষণ উপশম হয়। ৬ সপ্তাহ অর্থাৎ দেড় মাস ধরে যদি খাবারে যথেষ্ট পরিমাণ ফাইবার নিশ্চিত করা যায়, তাহলে ৯৫ শতাংশ পাইলস রোগীর পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া কমে আসে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ইসবগুলের ভুসি একটি কার্যকর ঔষধ।

প্রতিদিনের খাবারে ফাইবারের পরিমাণ বাড়ানো নিয়ে বিস্তারিত জানতে নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন।

২. মলত্যাগের সময় খুব জোরে চাপ দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে

পায়খানা যাতে নরম হয় এবং সহজেই মলত্যাগ করা যায়, সেই উপদেশগুলো মেনে চলতে হবে।

৩. মলত্যাগে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা যাবে না

টয়লেটে বসে ম্যাগাজিন, পেপার, মোবাইল-এসবে মনোনিবেশ করা বাদ দিতে হবে।

৪. পায়খানার চাপ আসলে তা আটকে রাখা উচিত না

এতে পায়খানা আরও শক্ত হয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য  দেখা দেয়। চাপ আসলে দেরি না করে বাথরুমে চলে যেতে হবে।

৫. নিয়মিত ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করতে হবে

ব্যায়ামের মধ্যে ভারী ব্যায়াম বা প্রতিদিন দৌড়ানো বেছে নিতে হবে, তা নয়। শরীরকে চলমান রাখতে হাঁটাচলা, হালকা স্ট্রেচিং, যোগব্যায়াম ইত্যাদির মধ্যে যেকোনোটাই বেছে নেওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে হাঁটাহাঁটি বা হালকা শরীরচর্চাও কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

প্রয়োজনে অল্প অল্প করে শুরু করতে পারেন। দিনে ২০ মিনিট হাঁটুন। এক বেলা দিয়ে শুরু করুন, এরপর সকাল-সন্ধ্যা দুই বেলা করে হাঁটুন। প্রথমে সপ্তাহে তিন দিন এভাবে হেঁটে আস্তে আস্তে সেটা পাঁচ দিনে নিয়ে আসুন। 

৬. ওজন অতিরিক্ত হলে তা কমিয়ে ফেলতে হবে

ওজন বেশী হলে পাইলস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে, তাই পাইলস এর রোগীদের ওজন কমানোর পরামর্শ দেয়া হয়। ওজন কমানোর কার্যকর উপায় নিয়ে বিস্তারিত জানতে আমাদের এ সংক্রান্ত আর্টিকেলগুলো পড়তে পারেন।

পরিশেষে আশা করা যায় যে পাইলস (piles) এর চিকিৎসা ঔষধ ও পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা বিষয়টি সুন্দরভাবে বুঝতে পারছেন। এছাড়া বুঝতে সমস্যা হলে  নিচে কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে কমেন্ট করে সমস্যাটি জানানোর অনুরোধ রইলো। আর যদি এটি ভালো ভাবে বুঝে থাকেন তা হলেও মন্তব্য করতে পারেন।

সূচীপত্র

Leave a Comment