সন্ধি কাকে বলে? সন্ধি কত প্রকার ও কি কি?

কথাকে মাধুর্যমন্ডিত ও শ্রুতি মধুর করাও ব্যকরনের অন্যতম উদ্দেশ্য।মানুষ কথা বলার সময় করার গতি বৃদ্ধি পায়। দ্রুত কথা বলার সময় কখনো কখনো দুটো শব্দের কাছাকাছি থাকা দুটো ধ্বনির উচ্চারণ একত্রিত হয়ে যায়। ব্যাকরণে একে সন্ধি বলা হয়।

ভাষার শ্রুতিমধুরতা বৃদ্ধির জন্য সন্ধি সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ। তাই আজকের এই আর্টিকেলে সন্ধি কাকে বলে ও সন্ধি সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

প্রথমেই জেনে আসা যাক,সন্ধি কাকে বলে?

সম্পর্কিত;- Letter কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?

সন্ধি কাকে বলে?

সন্ধি শব্দের অর্থ মিলন। দুটো ধ্বনির সন্ধিতে প্রথম শব্দের শেষ ধ্বনি এবং পরের শব্দের প্রথম ধ্বনির মিলন ঘটে। সন্ধির নতুন শব্দের সৃষ্টি হয়। কথোপকথনের সময় শব্দের উচ্চারণ সরল হয়। ভাষা সংকীর্ণ হয় এবং তা শুনতেও আমাদের ভালো লাগে।

যেমন: আমি বিদ্যা আলগ্নে যার। বাক্যটি বলার সময় আমি বিদ্যাল যার হয়ে যায়। এখানে বিদ্যা-এর ‘আ-ধ্বনি এবং আলম-এর ‘আ-ধ্বনি: মিলে গিয়ে সন্ধি উৎপন্ন হচ্ছে।

সন্ধি বা ধ্বনির মিলন নানা প্রকার হতে পারে।যেমনঃ

১.দুটি ধ্বনির আংশিক বা পূর্ণমিলন। যেমন শত + অধিক = শতাধিক

২. পূর্বধ্বনি বা পরধ্বনি লোপ | যেমন নিঃ + চয়= নিশ্চয়।

অর্থ্যাৎ,

পরস্পর পাশাপাশি উপস্থিত দুটি ধ্বনির একত্রিত হওয়ার ফলে যদি একটি নতুন ধ্বনি তৈরি হয়, তখন তাকে সন্ধি বলে।

পাশাপাশি অবস্থিত দুটি ধ্বনির মিলনকে সন্ধি বলে।

পরস্পর সন্নিহিত দুটি ধ্বনির মিলনের নাম পাচ্ছি।

উদাহরণের মাধ্যমে ব্যখ্যা করলে বিষয় টি আরো স্পষ্ট হবে

একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বোঝা থাক ‘নবান্ন’ শব্দটি যদি মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করা যায় তাহলে দেখা যাবে যে পরস্পর অবস্থিত নর এবং “অন এ দুটি শব্দ তারাতারি উচ্চারণের ফলে ‘নবান্ন’ শব্দটি তৈরি হয়েছে। এখানে নব শব্দের শেষে অ ধ্বনি এবং আর শব্দের প্রথম অবস্থিত ‘অ” ধ্বনি উভয়ে একত্রিত দিলে ‘আ’ ধ্বনি হয়েছে।

যেমন নব + অন্ন=নবান্ন

এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে আমরা যখন কথা বলি, তখন অনেক ক্ষেত্রে তারাতারি উচ্চারণের ফলে পাশাপাশি অবস্থিত দুটি শব্দের ধ্বনি ি এক হয়ে যায় কিংবা একটি ধ্বনির প্রভাবে অন্য খানি বদলে যায় বা বিলুপ্ত হয়ে যায়। পরস্পর উপস্থিত ধ্বনি তারাতারি উচ্চারণের ফলে যে মিলন বা পরিবর্তন বা বিলুপ্ত হয় তাই সন্ধি নামে খ্যাত।

সম্পর্কিত;- শব্দ কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?

সন্ধি কত প্রকার ও কি কি?

সন্ধির সংজ্ঞা ও ব্যবহার সম্পর্কে আশা করি ধারণা পাওয়া গেছে।

তাহলে জেনে আসা যাক,সন্ধি কতো প্রকারের হয়ে থাকে এবং উদাহরণের সাহায্যে বর্ণনা করা যাক।

সন্ধি কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি? আমরা উপরে সন্ধি কি বা কাকে বলে? তার ব্যাখ্যা সহজ উপায় নানা ভাবে আলোচনা করলাম। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে সন্ধি কয় প্রকার ও কি কি এর আলোচনা করবো। সন্ধিকে নানা দিক থেকে নানান ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-

বাংলা সন্ধি দুই রকমের। ঘা

১.স্বরসন্ধি

  1. ব্যঞ্জনসন্ধি।

বাংলা ভাষায় অনেক সংস্কৃত শব্দ কোনো রকম পরিবর্তন ছাড়া ব্যবহৃত হয়। এগুলোকে তৎসম শব্দ বলে। এসব তখন নিয়মেই হয়। তাই সংস্কৃতের নিয়ম মেনে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত তৎসম শব্দের সন্ধি তিন প্রকার। যথা-

1.স্বরসন্ধি

2.ব্যঞ্জনসন্ধি

3.বিসর্গসন্ধি

শব্দের উৎস দিক থেকে বিচার করলে সন্ধিকে দুটি শ্রেনীতে ভাগ করা যায়। যথা-

  1. তৎসম বা সংস্কৃতাগত সন্ধি:
  2. খাঁটি বাংলা সন্ধি

স্বরসন্ধি কাকে বলে?

স্বরবর্ণের বা ধ্বনির সঙ্গে স্বরবর্ণের বা ধ্বনির মিলনের নাম স্বরসন্ধি। অর্থাৎ, সন্নিহিত দুটি স্বরবর্ণ মিলে যখন একটি স্বরবর্ণে পরিবর্তিত হয়, তখনই আমরা তাকে স্বরসন্ধি বলতে পারি।যেমনঃ

সোনা + আলি = সোনালি

মিথ্যা + উক = মিথ্যুক

রূপা + আলি = রূপালি

মা + এর = মায়ের

আরো পড়ুন ;- পরাগায়ন কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?

ব্যঞ্জনসন্ধি কাকে বলে?

স্বরধ্বনির বা বর্ণের সঙ্গে ব্যঞ্জনধ্বনির বা বর্ণের, ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনির কিংবা ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে ব্যঞ্জনধ্বনির মিলনে যে সন্ধি হয়, তাকে ব্যঞ্জন সন্ধি বলে।

স্বরধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি উদাহরণ :-

আ + ছন্ন = আচ্ছন্ন।

প্রতি + ছবি = প্রতিচ্ছবি।

কথা + ছলে = কথাচ্ছলে।

পরি + ছল = পরিচ্ছদ।

ব্যঞ্জনধ্বনি + স্বরধ্বনি উদাহরণ :-

দিক্‌ + অন্ত = দিগন্ত।

তৎ + অন্ত = তদন্ত।

তৎ + অবধি = তদবধি।

সুপ্ + অন্ত = সুবন্ত।

ব্যঞ্জনধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি উদাহরণ :-

চলৎ + চিত্র = চলচ্চিত্র।

উদ্ + ছেদ = উচ্ছেদ।

উৎ + জ্বল = উজ্জ্বল।

বিসর্গ সন্ধি কাকে বলে?

বিসর্গের (:) সঙ্গে স্বরধ্বনি অথবা বিসর্গের (:) সঙ্গে ব্যঞ্জনধ্বনি মিলনে যে সন্ধি হয়, তাকে বিসর্গ সন্ধি বলে।

নিঃ + চল = নিশ্চল

নিঃ + চয় = নিশ্চয়

নিঃ + চিহ্ন = নিশ্চিহ

শিরঃ + ছেদ = শিরশ্ছেদ

নিঃ + চিন্ত = নিশ্চিন্ত

দুঃ + চিন্তা = দুশ্চিন্তা

বিসর্গ সন্ধিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে:

১. র্ – জাত বিসর্গ ও

২. স্ – জাত বিসর্গ।

১. র্ -জাত বিসর্গ সন্ধি কি :-

কোনো শব্দের শেষে র্ এর পরিবর্তে যদি : হয় তখন তাকে র্ -জাত বিসর্গ বলে।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় : পুনর-পুনঃ, অন্তর-অন্তঃ, প্রাতর-প্রাতঃ ইত্যাদি।

২. স্-জাত বিসর্গ সন্ধি কি :-

স্ এর জায়গায় যে : হয় তাকে স্-জাত বিসর্গ বলে।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় : নমস্-নমঃ, শিরস্-শিরঃ, পুরস্-পুরঃ, ইত্যাদি।

তৎসম সন্ধি কাকে বলে?

বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত তৎসম শব্দের দ্বারা কোনো সন্ধি হলে তাকে তৎসম বা সংস্কৃতাগত সন্ধি বলে। তৎসম সন্ধি স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি ভেদে দুই প্রকার :

১. তৎসম বা সংস্কৃতাগত স্বরসন্ধি

২. তৎসম বা সংস্কৃতাগত ব্যঞ্জনসন্ধি।

খাঁটি বাংলা সন্ধি কাকে বলে?

খাঁটি বাংলা সন্ধি বলতে বোঝায় যখন দুটি খাঁটি বাংলা শব্দ পরস্পর উচ্চারণের হয় তখন তাকে খাঁটি বাংলা সন্ধি বলে।

তবে খাঁটি বাংলা সন্ধির নিয়ম সংস্কৃত সন্ধির সঙ্গে মেলে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তৎসম সন্ধির নিয়ম প্রয়োগ করে ভিন্ন নিয়মে এ সন্ধি করা হয়। যেমন: পাঁচ + সের = পাঁশসের কাঁচা কলা = কাঁচকলা।

খাঁটি বাংলা সন্ধি দুই প্রকার। যথা :

১. খাঁটি বাংলা স্বরসন্ধি;

২. খাটি বাংলা ব্যঞ্জনসন্ধি।

আরো জানুন ;- ঘর্ষণ কাকে বলে ? ঘর্ষণ বল কাকে বলে?

সন্ধির প্রয়োজনীয়তাঃ

পাশাপাশি অবস্থিত দুটি ধ্বনি দ্রুত উচ্চারণের সময় সন্ধির ফলে উচ্চারণে স্বাচ্ছন্দ্য আসে এবং উচ্চারণ সহজতর হয়। সন্ধি ভাষাকে সংক্ষিপ্ত করে। যেমন ‘নব’ ‘অন্ন’ উচ্চারণে যে সময় প্রয়োজন লাগে, ‘নবান্ন’ উচ্চারণে তার চেয়ে কম সময় লাগে।

এ ছাড়া ‘নব’ ‘অন্ন’ বলতে যে ধরনের উচ্চারণের শ্রম প্রয়োজন হয়, ‘নবান্ন’ তার চেয়ে খুব কম পরিশ্রমে সহজেই উচ্চারিত হয়।

কেবল তা-ই নয়— আলাদাভাবে ‘নব’ ‘অন্ন’ উচ্চারণের চেয়ে একসঙ্গে ‘নবান্ন’ উচ্চারণ অনেক বেশি শ্রুতিমধুর। অর্থাৎ সন্ধি ভাষার ধ্বনিগত মাধুর্যও সম্পাদন করে।

সন্ধির ফলে নতুন নতুন শব্দও তৈরি হয়। শুদ্ধ বানান লিখতেও সন্ধি সহায়তা করে। সুতরাং উল্লিখিত দিকগুলো বিবেচনায় বাংলা ভাষায় সন্ধির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

সন্ধির উদ্দেশ্যঃ

১.

সন্ধির প্রধান উদ্দেশ্য উচ্চারণকে সহজ-সরল করা।

২. ধ্বনিগত মাধুর্যতা সম্পাদন করা।

যেমন- ‘আশা’ ও ‘অতীত’ উচ্চারণে যে পরিশ্রম প্রয়োজন, ‘আশাতীত’ তার চেয়ে অল্প পরিশ্রমে উচ্চারিত হয়। সেরূপ ‘হিম আলয়’ বলতে যেরূপ শোনা যায়, ‘হিমালয়’ তার চেয়ে সহজে উচ্চারিত হয় এবং শ্রুতিমধুরও শোনায়।

আরো পড়ুন ;- Letter কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?

এজন্য এমন কিছু ক্ষেত্রে উচ্চারণের পরিশ্রম কম হয় কিন্তু ধ্বনি-মাধুর্য লঙ্ঘিত হয়, সেই সব ক্ষেত্রে সন্ধি করার কোনো নিয়ম নেই অর্থাৎ সন্ধি করা নিয়ম লঙ্ঘিত হয় ।

যেমন :- কচু + আদা + আলু = কচ্চাদালু হয় না। অথবা কচু + আলু + আদা = কচ্চাল্বাদা হয় না।

রম্য পড়ুন;- পাদ কয় প্রকার ও কি কি? পাদের কবিতা ও রম্য রচনা

আমাদের সর্বশেষ আপডেট

Leave a Comment


Math Captcha
6 + 2 =