রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক কে | আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক কে

রাষ্ট্রবিজ্ঞান একটি বিশেষ শাখা যা রাষ্ট্রের গঠন, ব্যবস্থাপনা, বিকাশ, সংঘাত, রাষ্ট্রের প্রশাসন, নীতি ও নীতিমালা, রাজনীতিবিদ্যা, প্রশাসনিক বিচার সংস্থা, পালিত বিচার পদ্ধতি, সংবিধান, আইন ও অপরাধ, সামাজিক ও আর্থিক বিবর্তন ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে চিন্তাভাবনা করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যয়নের মাধ্যমে মানুষেরা রাষ্ট্রগত কার্যকলাপের পেছনের লক্ষ্য, বিভিন্ন রাষ্ট্রের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক ভিত্তি, শাস্তি ও অপরাধ ব্যবস্থা, রাজনীতিবিদ্যা ও পালিত বিচার পদ্ধতির মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ করতে পারে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক

প্রশ্নটাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে । প্রথমটি হচ্ছে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক । দ্বিতীয়টি হচ্ছে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক । রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক হচ্ছেন গ্রীক দার্শনিক এরিস্টটল । তার জন্ম খ্রিস্টপূর্ব ৩৮৪ অব্দে। দ্বিতীয় অংশ: আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক হচ্ছেন নিকোলা ম্যাকিয়াভেলী।

এরিস্টটল রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক । এরিস্টটল (384 খ্রিস্টপূর্ব – 322 খ্রিস্টপূর্ব) প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক এবং বিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি একজন তিনি পদার্থবিদ্যা, জীববিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, নীতিশাস্ত্র, যুক্তিবিদ্যা, আধ্যাত্মিকতা, কবিতা, সঙ্গীত, নাটক সহ অনেক বিষয়ে রচনা করেছেন।। তাঁর মধ্যে রাজনীতি, নীতিবিদ্যা, প্রশাসন, সমাজবিজ্ঞান এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রধানত আলোচিত বিষয়গুলো ছিল।

এরিস্টটল একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিশ্লেষক হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তিনি একটি বিজ্ঞানমূলক পদ্ধতিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান চিন্তাভাবনা করতেন এবং এর মাধ্যমে রাষ্ট্রের স্বাভাবিক প্রশাসনিক ও নীতিমালা নির্ধারণ করতেন। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাধারণ সিদ্ধান্ত এবং মূলপ্রমাণ নির্ধারণ করেন, যার মধ্যে রাজনীতি, আইন, সরকার ব্যবস্থা, নীতি ও নীতিমালা উল্লেখযোগ্য।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক

এরিস্টটলকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক বলা হয় কেন?

এরিস্টটলকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক বলা হয় কারণ তিনি বিশ্বকে আদর্শ রাষ্ট্র, দাসত্ব, বিপ্লব, শিক্ষা, নাগরিকত্ব, সরকারের রূপ, সংবিধানের নীতি ইত্যাদি বিষয়গুলি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন।

তিনি বলেন, একজন মানুষ তার পারিপার্শ্বিক ও পরিবেশকে জানার জন্য এই বিষয়গুলো প্রয়োজনীয়। তিনি এমন অনেক রাজনৈতিক বিষয় ও আদর্শের কথা বলেছেন, তাই তাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক বলা হয়।

ই ক্যাপ (E Cap) 400 এর উপকারিতা | ই ক্যাপ 400 এর কাজ ও দাম

নিকোলা ম্যাকিয়াভেলীকে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক। নিকোলা ম্যাকিয়াভেলী (1469-1527) ইতালিয়ান রাজনীতি ও সামরিক রচনাকার ছিলেন। তিনি তাঁর প্রমাণ এবং বীজ প্রণালীর মাধ্যমে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর চিন্তাধারা প্রকাশ করেন।

নিকোলা ম্যাকিয়াভেলীর লেখা “রাজনীতির উপদেশ” (The Prince) তাঁর প্রধান কার্যক্রম হিসেবে পরিচিত। এই লেখাটিতে ম্যাকিয়াভেলী বিচার করেন কিভাবে একজন শাসক তাঁর সত্তার উপরে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন এবং রাষ্ট্র সংরক্ষণ করতে পারেন। তাঁর চিন্তাধারা বিশেষভাবে শক্তিশালী শাসকদের নীতিমালা, রাজনীতিক প্রক্রিয়া ও প্রশাসনিক পদ্ধতির উপর মনোযোগ দেয়।

ম্যাকিয়াভেলিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক বলা হয় কেন?

নিম্নে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার জনক হিসেবে ম্যাকিয়াভেলির অবদান উল্লেখ করা হলো-

(১) জাতীয় রাষ্ট্রের প্রথম প্রবক্তাঃ ম্যাকিয়াভেলি জাতীয় রাষ্ট্রের ধারণা দিলে তা সমগ্র ইউরােপে আলােড়ন সৃষ্টি করে। তিনি বহুধাবিভক্ত ইতালিকে একত্রিত করতে একটি শক্তিশালী জাতীয় রাষ্ট্রের রূপরেখা প্রদান করেন। তার এই রাষ্ট্রদর্শন আধুনিককালেও সর্বজনস্বীকৃত।

(২) অভিজ্ঞতাবাদীঃ অভিজ্ঞতার নিরিখে প্রতিটি বিষয় যাচাই করে দেখার মাধ্যমে তিনি সর্বদা সিদ্ধান্তে উপনীত হতেন। তার চিন্তাধারার পরিচয় মেলে তৎকালীন ইতালির আর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনা পর্যাবেক্ষণের মাধ্যমে।

(৪) সর্বাত্মকবাদীঃ ম্যাকিয়াভেলি রাষ্ট্রের প্রয়ােজনে শাসককে চরম ক্ষমতার অধিকারী করেছেন। তার মতে, শাসক ব্যক্তিকল্যাণ অপেক্ষা রাষ্ট্রের কল্যাণকে সর্বদা বড় করে দেখবে। আর রাষ্ট্রের এ ক্ষমতা সর্বাত্মকবাদের জন্ম দেবে।

(৫) রাজনীতির বৈজ্ঞানিক ভিত্তিঃ ম্যাকিয়াভেলি সর্বপ্রথম রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার চিন্তাধারায় এরিস্টটলের মতাে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মিল পাওয়া যায়।

(৬) আইনের শাসনঃ ম্যাকিয়াভেলি আইনের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী ছিলেন। ম্যাকিয়াভেলি মনে করেন, একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে শক্তিশালী আইন প্রণেতার প্রয়ােজন।

উপসংহার

পরিশেষে আশা করা যায় যে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক কে বিষয়টি সুন্দরভাবে বুঝতে পারছেন। এছাড়া বুঝতে সমস্যা হলে  নিচে কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে কমেন্ট করে সমস্যাটি জানানোর অনুরোধ রইলো। আর যদি এটি ভালো ভাবে বুঝে থাকেন তা হলেও মন্তব্য করতে পারেন।

Leave a Comment


Math Captcha
7 + 3 =