বর্তমান এই ইন্টারনেটের যুগে,উন্মোচিত হয়েছে নতুন নতুন সম্ভাবনার দুয়ার।কমে এসেছে ক্যারিয়ার বিষয়ক সনাতনী ধ্যান ধারনা।ইন্টারনেটের প্রচার ও প্রসারের ফলে অনলাইন সাইট গুলো হয়ে উঠেছে জীবিকা নির্বাহের অন্যতম উপায়।শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়েছে তাদের দক্ষতা গুলোকে অনলাইন প্লাটফর্মে তুলে ধরে।এখন ঘরে বসেই লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করছে ব্লগিং,ইউটিউবিং প্রভৃতি করে।অনলাইন থেকে টাকা উপার্জনের ক্ষেত্রে এলেই চলে আসে ব্লগিংয়ের কথা।ব্লগিং এতো বেশি জনপ্রিয় কারন অন্যান্য সব গুলো কাজের চেয়ে ব্লগিং করা অপেক্ষাকৃত সহজ যাদের লেখালেখিতে দক্ষ হাত আছে তাদের জন্য।
অনলাইনে ব্লগিং করে ঘরে বসে টাকা আয় নিয়ে আজ বিস্তারিত আলোচনা করবো।তার আগে অবশ্যই জানতে হবে ব্লগিং কি?তার আগে ব্লগ নিয়ে সংক্ষেপে কিছু জেনে নেওয়া যাক।
ব্লগ কি?
ব্লগিং নিয়ে জানতে হলে শুরুতেই মনে প্রশ্ন আসে,ব্লগ কি।ব্লগ বা ওয়েবসাইট নিয়ে প্রাথমিক ধারণা কম বা বেশি আমাদের সকলের ই আছে।ব্লগ মূলত এমন একটি ওয়েবসাইট যা শুরুর দিকে মানুষ ব্যক্তিগত ডায়েরি হিসেবে ব্যবহার করতো, দিনের কোন অংশে বা যখন ব্যক্তির ইচ্ছে সে অনুযায়ী কিছু লেখালেখি চর্চা করতো।এ ধরনের লেখালেখির ক্ষেত্রে বিষয়ের ব্যাপারে কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। তবে সময়ের সাথে সাথে ব্লগিং ধারাতেও এসেছে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। বর্তমানে ব্যক্তিগত ডাইরেক জায়গা থেকে সরে এসে ব্লগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে । যেহেতু ব্লগ মানুষের দ্বারা লিখিত হয়ে থাকে , তাই কোনো কনসেপচুয়াল তথ্যের জন্য মানুষ ওয়েবসাইটের তুলনায় ব্লগের প্রতি আস্থাশীল বেশি ।
ওয়েব সাইট ও ব্লগ এর মধ্যে পার্থক্য
ওয়েবসাইটগুলো বিভিন্ন ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়ে থাকে । যার ফলে এখানকার তথ্য ম্যানিপুলেটেড হতেই পারে । কিন্তু ব্লগ যেহেতু একজন মানুষের পার্সোনালাইজড চিন্তাভাবনার উপরে লিখিত , এজন্য এসব তথ্য মানুষের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য । এছাড়াও ওয়েবসাইটে ও ব্লগের মধ্যে বড় পার্থক্য হলো ওয়েবসাইট নিয়মিত আপডেট করা হয় না , কিন্তু ব্লগ গুলোতে নিয়মিত আপডেট করা হয়ে থাকে ।
ব্লগিং কি?
ব্লগ সম্পর্কে স্বচ্ছ একটি ধারণা আশাকরি আপনাদের দিতে পেরেছি । এখন জানি ব্লগিং কি । ব্লগিং হল , নিচের বা অন্যের মতামত ব্লগে লিখে প্রকাশ করাকে ব্লগিং বলা হয় । অর্থাৎ ব্লগে লেখালেখি করাকে ব্লগিং বলে । যিনি ব্লগে নিয়মিত লেখেন তাকে ব্লগার বলে সম্বোধন করা হয় ।
ব্লগিং কেন শিখব
ব্ল্যাক মতামত প্রকাশের জন্য অত্যন্ত শক্তিশালী একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে আপনি আপনার জীবন দর্শন মতামত বহুসংখ্যক অডিয়েন্সের সামনে তুলে ধরার সুযোগ পান অর্থাৎ আপনি আপনার কন্ঠ ছড়িয়ে দেয়ার একটি ভরসাযোগ্য জায়গা পান । ব্লগ যেহেতু বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিত্তিতে হয়ে থাকে , তাই আপনি যে বিষয়ে লিখছেন সে বিষয়ে টার্গেট অডিয়েন্স কে পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আপনার লেখা যোগের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করলে এবং গ্রহণযোগ্যতা পেলে আপনি হয়ে উঠতে পারেন সমাজের জন্য একটি শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের মানুষ ।
যদিও ব্লগে লেখালেখি করার চর্চাটি মনের খোরাক এর জন্যই , তবে অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মত যতক্ষণ সেবা ততক্ষণ পর্যন্তই উপার্জনের সম্ভাবনা ব্লগে ক্ষেত্রে ঠিক এমনটি নয় । এতে জড়িত অনলাইনে স্থায়ীভাবে থেকে যাবে তাই সপ্তাহের 7 দিন এ থেকে টাকা উপার্জন ও সম্ভাবনা থাকে । এ দিক বিবেচনায় ব্লগ লেখা বেশ লাভজনক ।
ব্লগিং থেকে কি পরিমান আয় হতে পারে ?
প্রফেশনাল ব্লগিং এর ক্ষেত্রে , আয়েৱ কোন বাঁধাধরা হিসেব নেই । এটি মূলত কিছু ক্রাইটেরিয়ার উপর নির্ভর করে । যেমন আপনি যে বিষয়ে ব্লগ করছেন সে বিষয়ে চাহিদা , একটি বিষয়কে কত সহজ ভাবে লিখতে পারেন সে বিষয়ে আপনার দক্ষতা , এবং লিখিত বিষয়টি যথাযথভাবে অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছে দেয়া অর্থাৎ মার্কেটিং । এই তিন বিষয়ের সমন্বয় ঘটিয়ে ব্লগিং থেকে মাসিক হারে কয়েকশো ডলার থেকে কয়েক হাজার ডলার পর্যন্ত আয় করা সম্ভব ।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি , বাংলাদেশে এখন ব্লগিং অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি পেশা । বাংলা ব্লগের জন্য আয় মাসিক হারে 300 থেকে 400 ডলার শুরুর দিকে এবং পরবর্তীতে তা কয়েক হাজার ডলারে গিয়ে থামে । ইংরেজি ব্লগ এর ক্ষেত্রে উপার্জন 25 হাজার ডলার থেকে শুরু করে কয়েক লক্ষ ডলার পর্যন্ত গিয়ে থামে । অর্থাৎ বুঝতেই পারছেন , ব্লগিং কতটা সম্ভাবনাময় একটি খাত।
এতক্ষণ তো আলোচনা হল ব্লগিং বিষয়ে খুটিনাটি নিয়ে । এখন ব্লগিং করে ঘরে বসে আয় এর উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় আসা যাক ।
ব্লগিং থেকে আয় করার উপায়
আপনি যদি ব্লগিং কোন সাইট শুরু করতে চান তাহলে,বলে রাখি অনলাইন থেকে ব্লগিং করে আয়ের সুযোগটি এখনো আপনার রয়েছে।
এ পর্যায়ে আমি ব্লগিং করে সবচেয়ে সহজে আয় করার উপায় গুলো নিয়ে আলোচনা করবো।
ব্লগিং করে মূলত নিম্নলিখিত ভাবে আয় করা যায়-
- ব্লগে বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে টাকা আয়
- এফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে
- অন্যকারো ব্যক্তিগত বা প্রতিষ্ঠানে ব্লগ লিখে আয়
- প্রোডাক্ট সেলের মাধ্যমে
- সাবস্ক্রিপশন
ব্লগে বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে
ব্লগিং ওয়েবসাইটকে গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে মনেটাইজ করে অনলাইনে টাকা আয় করা যায় বিজ্ঞাপন দেখানোর মাধ্যমে।যখন আপনি কোন বিষয়ে ব্লগিং করবেন আপনার ওয়েবসাইটে বা ব্লগপোস্টে বিভিন্ন আর্টিকেল লেখা বা পোস্ট করা থাকবে কেবল মাত্র তখন আপনি আপনার ওয়েবসাইটটিকে গুগল এডসেন্সের এডভারটাইজিং পলিসি মেনে মনিটাইজ করে, তারপর ওয়েবসাইটটিতে যখন ভিজিটর প্রবেশ করবে তাদের কাছে বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের বিনিময়ে আপনাকে অর্থ প্রদান করা হবে।এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম ব্লগিং করে টাকা আয় করার জন্য।
আপনার ব্লগে আবার কি ধরণের বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হচ্ছে তার উপরেও আয় নির্ভর করবে ৷ সুতরাং ব্লগসাইট থেকে ইনকাম কত হবে তা নির্ভর করছে তা দেখে নিন।
- ভিজিটর সংখ্যার উপর।
- বিজ্ঞাপনে ক্লিক সংখ্যার উপর।
- ভিজিটরের লোকেশনের উপর।
- বিজ্ঞাপণের ধরনের উপর।
- ব্লগসাইটের পপুলারিটির উপর।
- ব্লগসাইটের বয়সের উপর।
এফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে
এফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা আমাদের প্রায় সকলের ই আছে।এফিলিয়েট মার্কেটিং হলো বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটের প্রোডাক্টগুলোর এফিলিয়েট লিংক কপি করে ব্লগার ওয়েবসাইটের আর্টিকেলের ফাঁকে ফাঁকে সাজেস্টেড প্রোডাক্ট হিসেবে দিয়ে দেন এবং সেই লিংক এ ক্লিক করে কোন অডিয়েন্স যদি সেটা ক্রয় করে তবে সেখান থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন আপনি পেয়ে যাবেন।
উদাহরণ দিয়ে বললে হয়তো আরেকটু সহজ হয়।ধরুন আপনি চুলের যত্নের উপরে কোন ব্লগ তখন কোন চুলের তেল বা এমন কোন জিনিস যেটা ওই লেখার সাথে রিলেটেড সেটার লিংক দিয়ে দিলে,সেই পণ্যটি যদি কোন অডিয়েন্স আপনার আর্টিকেল পড়তে এসে ক্রয় করে তবে সেই পণ্যের জন্য আপনাকে অর্থ প্রদান করা হবে নির্দিষ্ট অংশের।
আশা করি,এখন বিষয় টি সম্পর্কে আপনারা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছেন
অন্যকারো সাইটে ব্লগ লিখে
আপনার নিজস্ব কোন সাইট প্রতিষ্ঠার ইচ্ছে না থাকে তাহলে আপনি অন্য কোন ব্যক্তির সাইটে যুক্ত হয়ে ব্লগার হিসেবে ব্লগে লিখে তার বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
আইটি নাট হোস্টিং, নেট কথা প্রভৃতি ওয়েবসাইটে ব্লগ লেখার মাধ্যমে খুব দ্রুত আয় করা সম্ভব।তবে একবার লিখে আর্টিকেল বেচে দিলে ওই আর্টিকেল থেকে আপনার আর কোন আয় আসবেনা।
পণ্য বিক্রির মাধ্যমে
আপনার ব্লগ সাইটে যদি কোন ধরনের নিজস্ব বা থার্ড পার্টি থেকে নিয়ে আসা কোনো পণ্য সেটা ডিজিটাল মাধ্যমে হোক অথবা অনলাইনে প্রোডাক্ট অর্ডার করে ফিজিক্যালি সেলের মাধ্যমে হোক আপনি কিন্তু এই পদ্ধতি অবলম্বন করে টাকা আয় করতে পারবেন। চাইলে এরই সাথে অনলাইন পেমেন্ট এর ব্যবস্থা যুক্ত করতে পারবেন। এতে করে আপনি আপনার প্রডাক্ট এর মার্কেটিং করে ব্লগার সাইটটিকে মনিটাইজ করার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
সাবস্ক্রিপশন
ব্লগ সাইট গুলো যে সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রিমিয়াম তথ্য বা লেখা অফার করে থাকে এ সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা।বিষয় টা অনেকটা এরকম যে আমরা বাসা বাড়ি বিভিন্ন পত্রিকা কিনে পড়ি।এজন্য মাসিক একটা টাকা আমাদের প্রদান করতে হয়।আপনার ব্লগ সাইটে যদি প্রিমিয়াম কোয়ালিটির কোন আর্টিকেল লেখা হয়ে থাকে তবে সাবস্ক্রিপশন সিস্টেম যুক্ত করে আপনি এ থেকেও ভালো পরিমাণে টাকা আয় করতে পারেন।
কোচিং করিয়ে
অনলাইনে কোচিং করিয়ে এখন অনেক অনলাইন প্লাটফর্ম বাংলাদেশের জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। আপনি যদি কোন বিষয়ে দক্ষ হন যেমন ফটোগ্রাফি গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এমনকি ম্যাপ কেমিস্ট্রি ইংরেজির মত বিষয় নিয়ে আপনার এক্সপার্টরা অন্যের সাথে অর্থের বিনিময়ে শেয়ারের মাধ্যমে অর্থাৎ কোচিং করিয়ে আপনি আয় করতে পারেন। আপনার ব্লগ সাইটে আপনার দক্ষতা বিষয়গুলোকে দিকে অথবা ভিডিও আকারে টিউটোরিয়াল হিসেবে বানিয়ে তা আকারে বিক্রি করতে পারেন।এর মাধ্যমেও আপনি বেশ ভাল অঙ্কের টাকা উপার্জন করতে পারেন।
সূচীপত্র