ইউটিউব থেকে টাকা আয়ের উপায়

বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্বে,ইউটিউব ব্যবহার করেননি এরকম মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না।সকলের হাতে হাতে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ সহ সকল প্রকার চতুর যন্ত্রের ব্যবহার এখন সর্বত্রই। ইন্টারনেট ব্যবহার করেন কিন্তু ইউটিউব একবারও ব্যবহার করেননি এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া গুলোর সবচেয়ে জনপ্রিয় সাইট গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ইউটিউব ।2005 সাল থেকে ইউটিউব এর পথ চলা শুরু হয় । 2005 এর মে মাসে পরীক্ষামূলক ভাবে ইউটিউব তা যাত্রা শুরু করে । এরপর থেকেই শুরু হয় ইউটিউবে জনপ্রিয়তার পথে হাটা । একই বছরের ডিসেম্বরে ইউটিউব সাইটটি আনুষ্ঠানিকভাবে তাৱ যাত্রা শুরু করে । কিন্তু এই স্বল্প সময়ে ইউটিউব তার দৈনিক ভিউ সংখ্যা 20 লাখের কোঠা পেরিয়ে যায় । বর্তমানে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বিবেচনায় ইউটিউব দ্বিতীয় বৃহত্তম সাইট । ইউটিউব মূলত গুগলের স্বত্বাধিকারী থাকা একটি প্রতিষ্ঠান । তবে গুগোল এর পরপরই অর্থাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইউটিউব । পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় , 18 বছর বয়স্ক কোন ব্যক্তি দৈনিক গড়ে 40 মিনিটের বেশি ইউটিউব ব্যবহার করেন ।

বিশ্বব্যাপী ২০০ কোটির বেশি মানুষ নিয়মিত ইউটিউবে ভিডিও দেখেন। প্রত্যেক মিনিটে এই প্ল্যাটফর্মে ৫০০ ঘণ্টা ভিডিও স্ট্রিম হয়। ইউটিউব এখন শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়। সে কথা এখন অনেকেরই জানা। আয়ের অন্যতম মাধ্যম ইউটিউব।

ইউটিউব এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই ধরনের ব্যবহাৱ ই দেখতে পাওয়া যায় । তবে ইউটিউব ব্যবহার করে কোন ব্যক্তি চাইলেই তার ব্যক্তিগত দক্ষতা উন্নয়ন ও আরেকটি চমৎকার উৎস হিসেবে লাভবান হতে পারেন । বিশ্বজুড়ে বিলিয়ন বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিজনেসেৱ প্লাটফরমটি বিশ্বব্যাপী তরুণ সমাজের আলোড়ন সৃষ্টি করেছে । বেকারত্ব দূর হয়েছে অনেক ছেলে মেয়ের । চাইলে আপনিও হতে পারেন একজন সফল ইউটিউবার এবং ঘরে বসে ইনকাম করতে পারেন বেশ ভাল অঙ্কের টাকা । এজন্য প্রয়োজন দক্ষতা এবং ইউটিউব বিষয়ে সঠিক জ্ঞান । তাই আজকে আমি আলোচনা করতে এসেছি ইউটিউব থেকে টাকা আয় এর উপায় নিয়ে বিস্তারিত খুঁটিনাটি সব ।

ইউটিউব থেকে টাকা আয় এর নিয়ম

আপনি যদি একজন উদ্যোক্তা হন এবং কোন বিষয়ে আপনার দক্ষতা ভিত্তিক জ্ঞান থেকে থাকে তবে খুব সহজেই ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করার মাধ্যমে ইউটিউব থেকে আপনি আয় করতে পারবেন । ইউটিউব থেকে আয়ের জন্য প্রথমে প্রয়োজন একটি নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল । ইউটিউব চ্যানেল খোলার জন্য গুগল অ্যাকাউন্ট থাকা আবশ্যক । কেননা ইউটিউব গুগলের একটি প্রতিষ্ঠান । প্রথমে গুগল অ্যাকাউন্ট থেকে ইউটিউবে লগইন করতে হবে । এক্ষেত্রে গুগোল একাউন্ট থেকে সাইন ইন এর মাধ্যমে প্রবেশ করলে স্বয়ংক্রিয় ভাবে ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করা যায় না । তাই ইউটিউব পূর্ণাঙ্গ ভাবে ব্যবহার করতে চাইলে গুগল অ্যাকাউন্ট থেকে লগইন এর মাধ্যমে ইউটিউবে প্রবেশ করতে হবে |

শুধু একাউন্ট খুললেই কাজ শেষ সেরকমটা নয় । এটি মোটামুটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া । চ্যানেল খোলার পর আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধাপ সম্পাদনের পরে ইউটিউব থেকে টাকা আয়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

ধাপগুলো পাঠকের সুবিধার্থে ধাপগুলো ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরা হলোঃ

ইউটিউবে চ্যানেল খোলা

গুগল একাউন্ট থেকে youtube.com লিখে সার্চ করলে ইউটিউব সাইটটিতে প্রবেশ করা যাবে।তারপর নির্দেশনা অনুযায়ী ই-মেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করলে ইউটিউবের ইন্টারফেস টি দেখতে পাওয়া যাবে।এর পরবর্তীতে নিম্নোক্ত ধাপ গুলো সম্পাদন করতে হবেঃ

  • YouTube এ লগইন করার পর, আপনি ঠিক উপরে ডান দিকে শেষে একটি ছোট্টো “icon এর লোগো” দেখতে পাবেন। আইকন টিতে ক্লিক করতে হবে।
  • আইকন টিতে ক্লিক করার পর আপনি একটি ছোট্ট মেনু দেখবেন।
  • মেনুতে আপনার নাম ও “creator studio” বলে একটি অপশন দেখবেন।
  • আপনি Creator studio অপশন টিতে ক্লিক করুন।
  • Creator studio তে যাবার পর নিজের YouTube channel dashboard দেখবেন।
  • এখানে আপনি ওপরে নিজের চ্যানেলের নাম এবং চ্যানেলের সাথে জড়িত সবরকমের অপশনস পেয়ে যাবেন।
  • চ্যানেলের নামটি কন্টেটের সাথে প্রাসঙ্গিক হলে ভালো হয়।এতে করে সহজেই কি ধরনের সেবা পাওয়া যাবে তা অনুমেয় হবে।
  • ডেসক্রিপশনের জায়গায় আপনার নাম ও কাজের অঙ্গন সম্পর্কে আপনার পরিকল্পনা সংক্ষেপে তুলে ধরুন।কি ধরনের কন্টেন্ট আপনি বানাবেন সে সম্পর্কে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করুন।

এতোক্ষণ তো চ্যানেল ওপেনিং এর বিষয় গুলো জানলাম।কিন্তু,চ্যানেলের কার্যক্রম চালু করার জন্য প্রয়োজন চ্যানেল ভ্যারিফিকেশন।

চ্যানেল ভ্যারিফিকেশন

ইউটিউব থেকে আয় করতে চাইলে চ্যানেলের ভেরিফিকেশন অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। চ্যানেল ভেরিফিকেশন ছাড়া ইউটিউব থেকে আয় করা শুরু করতে পারবেন না।

  • চ্যানেল ভেরিফাই করার জন্য আপনি  Channel dashboard এ গিয়ে বাম দিকে থাকা অপশনগুলি থেকে “Channel” এ ক্লিক করুন।
  • Channel অপশনে ক্লিক করার পর আপনি উপরেই “Verify” লিংক দেখতে পারবেন।
  • আপনি verify লিংকটিতে ক্লিক করুন এবং নিজের চ্যানেলকে মোবাইল নম্বর বা ই মেইল আইডি দিয়ে ভেরিফাই করেনিন।
  • এরপর আপনি নিজের চ্যানেলে ভিডিও আপলোড করতে পারবেন আর  তাছাড়া ভিডিও তে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে টাকা আয় করতে পারবেন।

ইউটিউবে ভিডিও আপলোড

চ্যানেল খোলার পর পরবর্তী কাজ হল, অভিনব কনটেন্ট তৈরি করে তা চ্যানেলে আপলোড করা। এক্ষেত্রে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে, কনটেন্ট যেন সৃজনশীল হয়। অন্য কোন ইউটিউবার এর তৈরিকৃত ভিডিও থেকে ভিডিও তৈরি করা যাবে না।

এছাড়া ইউটিউব এর কিছু নিজস্ব নীতিমালা রয়েছে।আপনি যে বিষয়ে কনটেন্ট তৈরি করেন না কেন অবশ্যই এই নীতিমালাগুলো ভঙ্গ করা যাবে না। ইউটিউবের নজরদারিতে এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটলে , উক্ত কনটেন্ট টি ইউটিউব হতে রিমুভ করে দেয়া হতে পারে।

ইউটিউবের জন্য ভিডিও তৈরির ক্ষেত্রে মানুষের পছন্দ ও আপনার দক্ষতার বিষয় টি মাথায় রাখতে হবে।ভিডিও আকর্ষণীয় ও অভিনব হওয়াটা জরুরি কেননা,ইউটিউব বর্তমানে এতোটাই জনপ্রিয় যে এখানে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে কঠোর প্রতিযোগিতা করতে হয়।

ইউটিউবের কন্টেন্ট গুলোকে মানুষের চাহিদা অনুযায়ী বেশ কিছু ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যায়।নিচে কি ধরনের কন্টেন্ট তৈরি করা যেতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ

শিক্ষামূলক চ্যানেলঃ এ ধরনের চ্যানেলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা দারুনভাবে

অ্যাপ্লিকেশন রিভিউ চ্যানেল : প্রতিনিয়ত , নানা রকম নতুন নতুন অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ তৈরি ও ডেভলপ করা হচ্ছে । এসবের ব্যবহার আমাদের যাপিত জীবন কে ইতিবাচক ও নেতিবাচক যেমনই হোক না কেন বেশ ভাল রকমের প্রভাবিত করে । তাই , তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করতে পছন্দ করে এমন মানুষদের কাছে নতুন যে কোন অ্যাপ এর ব্যবহার করা বেশ আগ্রহের একটি বিষয় । তাই নতুন নতুন অ্যাপ সম্পর্কে ভালো-মন্দ আলোচনা করে রেটিং এর মাধ্যমে অ্যাপ সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রদান করে টিউটরিয়াল বানালে সেটি বেশ জনপ্রিয় হবার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে । তাই ইউটিউব কনটেন্ট তৈরি ক্ষেত্রে অ্যাপ রিভিউ কারী চ্যানেল সম্ভাবনাময় ।

দক্ষতা ভিত্তিক চ্যানেল : এ ধরনের চ্যানেলের কনটেন্ট মূলত একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপরে তৈরি করা হয়ে থাকে । একজন ব্যক্তি কিভাবে নতুন একটি বিষয়ে দক্ষ হবেন সেই বিষয়ে সম্ভব দিক নির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে ভিডিও তৈরি করা হয়ে থাকে । বিষয়গুলি হতে পারে নাচ , সংগীত, ছবি আঁকা , অ্যানিমেশন তৈরীর কাজ , ওয়েব ডেভলপমেন্ট , কম্পিউটারের খুঁটিনাটি , ভাষা প্রভৃতি । এ ধরনের চ্যানেলের কনটেন্ট ধারাবাহিক অনুসরণের মাধ্যমে দেখে দেখে যেকোনো ব্যক্তি নতুন কোন বিষয়ে দক্ষ হয়ে উঠতে পারেন |

প্রযুক্তি বিষয়কঃ প্রযুক্তি বর্তমানে এমন একটি বিষয় যার সম্পর্কে প্রতি মুহুর্তে অভিনব সব আপডেট পাওয়া যায়।তাই টেক চ্যানেল গুলো ইউটিউবে ভীষণ জনপ্রিয়।টেকনোলজি পছন্দ করেন এমন বিপুল সংখ্যার একটি মানুষ ইউটিউবে সময় ব্যয় করে এ ধরনের বিষয়ের উপর নির্মিত কন্টেন্ট গুলো দেখে থাকে।টেকনোলজিতে প্রতিমুহুর্তেই নতুন সংযোজনের কারনে কন্টেন্টে বিচিত্রতা বজায় থাকে যা চ্যানেলের মানকে সমুন্নত রাখে।

এ ধরনের চ্যানেলের জন্য অবশ্যই এ অঙ্গনে ভালো জ্ঞান ও দক্ষতা আছে এই দিকটি খেয়াল রাখতে হবে।টেকনোলজিকে সহজ ভাষায় ভেঙে উপস্থাপনের মাধ্যমে বুঝাতে হবে।এ ধরনের চ্যানেলের জন্য অধ্যবসায়ের প্রয়োজন রয়েছে।

টিউটোরিয়ালঃ আজকাল সবাই নিজেদের চ্যানেলে কিছুনা কিছু টিউটোরিয়াল ভিডিও আপলোড করে নিজের চ্যানেলকে সফল করে ফেলছেন। এর কারণ হলো, টিউটোরিয়াল ভিডিওস ইন্টারনেটে সবচেয়ে বেশি লোকপ্রিয় এবং তাই বিভিন্ন রকমের টিউটোরিয়ালস লোকেরা ইউটিউবে সার্চ করতেই থাকেন। টিউটোরিয়াল ভিডিওস বলতে, এমন কোনো বিষয়ে video বানানো যেখানে দর্শকদের সহজে কোন কিছু বানানোর বা করার ব্যাপারে ভিডিও তে দিকনির্দেশনা ও দেখানো হয়ে থাকে।

চ্যানেল তৈরি হয়ে গেলেই,আয় হতে শুরু করবে ইউটিউবের ক্ষেত্রে বিষয়টি এমন না।ইউটিউব থেকে আয়ের প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ধাপটি হলো “monetization”

চ্যানেল খোলা ও ভিডিও আপলোডের ব্যাপারে তো জানা হলো।আসুন তাহলে জেনে নেয়া যাক “monetization” নিয়ে এবং এটি কিভাবে চালু করতে হয় তা সম্পর্কে বিস্তারিত।প্রথমে জেনে নেয়া যাক, monetization কি।

“Monetization” কি?

আসলে, YouTube এর মাধ্যমে টাকা ইনকাম করার মূল বিষয়টাই হলো, “ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা video গুলোকে monetize করা”।

আপনার YouTube চ্যানেলের মধ্যে একটি বিশেষ feature রয়েছে যেটাকে বলা হয় “monetization”.

এই Monetization option টি যখন চালু করে দেওয়া হয়, তখন আপনার YouTube চ্যানেলে থাকা ভিডিও গুলোতে কিছু বিজ্ঞাপন দেখানো হয়।

আপনার ভিডিও গুলোতে দেখানো বিজ্ঞাপনের বিপরীতে, YouTube আপনাকে কিছু টাকা দিয়ে থাকে।

তাই, ইউটিউব মনিটাইজেশন মানে হলো এমন এক প্রক্রিয়া,

যার মাধ্যমে, আপনি ইউটিউবকে নিজের চ্যানেলের ভিডিও গুলোতে বিজ্ঞাপন দেখানোর অনুমতি দিচ্ছেন।

এখন, যখন আপনি YouTube কে বিজ্ঞাপন (ads) দেখানোর অনুমতি দিয়ে দিচ্ছেন,

তখন Google তার advertising partner গুলোর ads আপনার videos এর মধ্যে দেখাবে।

আপনার video গুলোতে যতটা টাকার বিজ্ঞাপন দেখানো হবে, তার ৪৫% গুগল নিজে রাখবেন,

এবং, ৫৫% আপনাকে দিয়ে দিবে আপনার Google AdSense account এর মাধ্যমে।

আর, পরে আপনি আপনার গুগল এডসেন্স একাউন্ট থেকে নিজের আয় করা টাকা bank account এর মধ্যে তুলে নিতে পারেন।

Monetization প্রক্রিয়া চালু করার নিয়ম

কিছুদিন আগেও ইউটিউবের monetization ফিচারটি চালু করা যেতো খুব সাধারণ ভাবেই।কিন্তু ২০২০ থেকে ইউটিউব monetization চালুর ক্ষেত্রে কিছু সাধারণ শর্ত আরোপ করে।অর্থ্যাৎ এখন আর চাইলেই যে কেউ monetization চালু করতে পারবে না তার চ্যানেলে।এজন্য তার নিম্নোক্ত শর্ত গুলো পূরণ করতে হবে

  • চ্যানেলটির সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা অন্তত ১০০০ জন হতে হবে
  • এক বছরে চ্যানেল টির ভিডিওগুলোর ওয়াচ টাইম ৪০০০ ঘন্টা হতে হবে।
  • অন্য কোন চ্যানেলের ভিডিও নিজের চ্যানেলে আপলোড করা যাবে না
  • ইউটিউবের শর্ত ও গাইডলাইন অনুযায়ী ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করতে হবে

যেহেতু ইউটিউবে monetization এর জন্য ইউটিউবের আরোপিত শর্তসমূহ রক্ষা করে কন্টেন্ট বানানো আবশ্যিক।এসব বিধিমালাকে বলা হয় ইউটিউব কমিউনিটি গাইডলাইন।আপনি যদি চ্যানেলের monetization চান তাহলে এসব নিয়ম সহ আপনাকে গুগল ও ইউটিউবের আরো বেশ কিছু নিয়ম মেনে কন্টেন্ট বানাতে হবে।এই নিয়ম গুলো গুগল পাবলিশার পলিসির অন্তর্ভুক্ত।নিয়ম গুলো মেনে কন্টেনাত তৈরি না করলে monetization প্রক্রিয়াটি বন্ধ ও হয়ে যেতে পারে কেননা,ইউটিউব ও গুগল এসকল শর্তের প্রতি কঠোর।

যেহেতু ইউটিউব monetization থেকে ভিডিওর ফাঁকে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে আয় করা যায়,তাই অবশ্যই কন্টেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচারের উপযোগী হতে হবে।চলুন জেনে নিই ইউটিউব কমিউনিটি গাইডলাইন সম্পর্কেঃ

ইউটিউব কমিউনিটি গাইডলাইন

  • কোন ধরনের অশালীন ভাষা ব্যবহার করা যাবে না
  • সেক্সুয়ালিটি সরাসরি প্রমোট করে এমন কন্টেন্ট বানানো যাবে না
  • ক্ষতিকারক কোনো কিছু দেখানো যাবে না ।একান্ত প্রয়োজন হলে,বিশেষ দ্রষ্টব্য সচেতনতা মূলক বার্তা তুলে ধরতে হবে।
  • কোন সম্প্রদায় বা জাতির উপর ঘৃণা বিদ্বেষ ছড়ায় এমন কিছু দেখানো যাবে না।
  • বিতর্কিত ও স্পর্শকাতর’ বিষয় এড়িয়ে চলতে হবে

ইউটিউব monetization চালু করার প্রক্রিয়া

  • YouTube এ monetization চালু করার জন্য আপনি নিজের YouTube channel থেকে “channel icon > creator studio > channel > monetization” এ ক্লিক করুন
  • monetization পেজে চ্যানেল monetization এর জন্য ৪ টি অপশন দেখতে পাবেন।
  • নির্দেশনা অনুযায়ী অপশন গুলো পূরণ করতে হবে
  • অপশনের ২ নম্বর স্টেপে আপনাকে গুগল এডসেন্সের জন্য একাউন্ট বানাতে হবে।

তাই ভালোকরে নিজের এডসেন্স একাউন্ট বানিয়ে নিজের YouTube চ্যানেলকে যুক্ত করে নিন।

মনে রাখবেন আপনার ভিডিও তে এই এডসেন্স একাউন্টের তরফ থেকে বিজ্ঞাপন দেখানো হবে এবং আপনার আয় করা টাকা এডসেন্স এই জমা হবে যেটা আপনি নিজের ব্যাঙ্ক একাউন্ট এ তুলে নিতে পারবেন ১০০ ডলার হবার পর।

রিভিউ সম্পন্ন হওয়া

Monetization চালু করার সব ধাপ শেষ করার পর আপনাকে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

কারণ, apply করার পর YouTube এর official team আপনার চ্যানেলকে review করবেন।

Review করে তারা সিদ্ধান্ত নেবে যে চ্যানেলের কন্টেন্ট গুলো বিজ্ঞাপনের আওতায় আনার উপযুক্ত কি না

সব ঠিক থাকলে আপনার চ্যানেলকে YouTube team monetization এর জন্য approve করবে।

approve করবার পরেই চ্যানেলের monetization শুরু হবে।এরপর কন্টেন্টের মান ধরে রেখে শুধু ভিডিও আপলোড করে যেতে হবে।

ইউটিউব থেকে আয়ের উৎস

বর্তমানে ঘরে বসেই ইউটিউব এর মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আয় করছে মানুষ । ইউটিউব থেকে কিভাবে এত এত টাকাৱ যোগান সম্ভবপর হচ্ছে সেটি বোঝা জরুরি । ইউটিউব থেকে টাকা আয় করতে চাইলে শুধু ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামের যুক্ত হলেই হবে এরকমটি নয় । বরং এ পার্টনার প্রোগ্রাম কিভাবে কাজ করে সেটি সম্পর্কে ধারণা থাকা আবশ্যক । জানতে হবে এই বিপুলসংখ্যক টাকার উৎস কি সে সম্পর্কেও । ইউটিউব থেকে আয় করার জন্য যে পার্টনার প্রোগ্রাম , এটি মূলত একটি বিজ্ঞাপন নির্ভর প্রক্রিয়া । এমনটি বলার কারণ হলো , ইউটিউব প্রত্যেকটি বিজ্ঞাপন কেন্দ্র । প্রতিদিন বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষ গুগলে তাদের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত নানা রকম বিজ্ঞাপন দিচ্ছে । ইউটিউবে মূলত , বানানো কনটেন্টের ফাঁকে ফাঁকে সেই সব বিজ্ঞাপন দেখানো হয় । যার ফলে বিজ্ঞাপন দাতা প্রতিষ্ঠানেৱ কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থের 55 শতাংশ ইউটিউবারদের কে প্রদান করা হয় । এবং বাকি 45 শতাংশ গুগলের মালিকানাধীন থাকে । এভাবেই মূলত ইউটিউব থেকে টাকা আয় করা হয় ।

ইউটিউব থেকে কেন টাকা পাবেন , সেটি বোঝার পাশাপাশি ইউটিউব আপনাকে কতটুকু টাকা দিবে এ সম্পর্কে ধারণা রাখা জরুরি । তাই এখানে আরপিএম এবং সিপিএম নিয়ে সংক্ষেপে কিছু আলোচনা করছি ।

আরপিএম এবং সিপিএম (RPM and CPM)

সিপিএম

সিপিএম বা CPM বলতে মূলত cost per mile অর্থ্যাৎ প্রতি ১০০০ বিজ্ঞাপনের জন্য বিজ্ঞাপন দাতা যে পরিমান অর্থ প্রদান করবেন।এটি cost per thousand নামে অধিক পরিচিত।এটি ইউটিউব ও বিজ্ঞাপনদাতার মাঝে লেনদেন।উদাহারন দিয়ে বললে,বিষয় টি সহজে বোঝা যাবে।ধরুন কোম প্রতিষ্ঠান তার প্রচারের জন্য গুগল বা ইউটিউবে বিজ্ঞাপন দিতে চায় এবং সেই বিজ্ঞাপন আপনার সত্ত্বাধিকারী চ্যানেলে দেখানো হবে।তাদের বিজ্ঞাপন আপনার ভিডিওতে প্রতি ১০০০ বার দেখানো হলে তারা ইউটিউবকে যে পরিমাণ অর্থ প্রদান করবে তাই হলো সিপিএম।

সিপিএম বিভিন্ন কারনে কম বেশি হতে পারে।সব ইউটিউবারদের সিপিএম সমান ও নয়।স্থানভেদে,সময়ভেদে এমনকি কন্টেন্টের ধরন ভেদেও বিভিন্ন হতে পারে।

স্থানভেদে সিপিএম এ কারনেই ভিন্ন হয় কেননা,দেশভেদে মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বিভিন্ন।সে কারনে ভিডিও বা কন্টেন্টের খরচেও পার্থক্য দেখা যায়।বিগত বছরে সিপিএম সর্বাধিক ছিলো কানাডায়।তবে,বাংলাদেশ সহ এ অঞ্চলের দেশগুলোতে সিপিএমের পরিমাণ নগন্য।

সিপিএম নির্ভর করে বিজ্ঞাপন দাতার উপর।দেখা যায় বিভিন্ন উৎসব যেমন ঈদ পূজো বড় দিন প্রভৃতি উপলক্ষে সিপিএমের পরিমান বেড়ে যায়।

ফিটনেস,মেক আপ,রিয়েল স্টেট,ইন্সুরেন্স,মার্কেটিং প্রভৃতি বিষয়ক চ্যানেলের সিপিএম উচ্চ হয়ে থাকে।যদিও ভৌগোলিক অবস্থান ও সময়ের উপরে একজন ইউটিউবারের হস্তক্ষেপের কোন অবকাশ থাকে না,তবে চাইলেই অধিক পাবলিক ইন্টারেস্টের বিষয় গুলোর উপর কন্টেন্ট তৈরি করে উচ্চ সিপিএম আয় করতে পারে সব অঞ্চলের মানুষ ই।

আরপিএম

RPM হলো revenue per mile।সহজ কথায় বলতে হলে,প্রতি ১০০০ বিজ্ঞাপনের জন্য ইউটিউব থেকে একজন ইউটউবারকে যে পরিমান অর্থ দেয়া হয় তা ই হলো আরপিএম।বিজ্ঞাপন দাতা ১০০০ বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য ইউটিউবকে যে পরিমান অর্থ দিয়ে থাকে,তার ৪৫% শেয়ার কেটে ইউটিউব নিজেদের জন্য রাখে এবং একজন ইউটিউবারের ভিডিওতে সেই বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য তাকে ওই অর্থের ৫৫% প্রদান করে।

ইউটিউব থেকে আয়ের জনপ্রিয় উপায়

  1. Google Adsense এর বিজ্ঞাপন নিজের ভিডিও গুলোতে দেখিয়ে সহজেই ইনকাম করতে পারবেন। এটা সব থেকে সহজ, জনপ্রিয় এবং লাভজনক উপায়।এ সম্পর্কে বিস্তারিত পূর্বেই আলোচিত হয়েছে
  2. বিভিন্ন কোম্পানির products এবং services গুলোকে টাকা নিয়ে নিজের চ্যানেলের মাধ্যমে paid promotion করে ইনকাম করতে পারবেন।
  3. Affiliate marketing হলো YouTube থেকে income করার সাংঘাতিক লাভজনক উপায়। এখানে আপনি অন্যান্য কোম্পানির products গুলোকে নিজের চ্যানেলের মাধ্যমে promote / marketing করতে হবে। যদি আপনার প্রচার করা প্রডাক্ট কেউ কিনেন তাহলে সেই বিক্রির জন্যে কোম্পানির তরফ থেকে ভালো commission পাবেন। বর্তমানের সেরা business model হলো affiliate marketing.
  4. আপনি চাইলে নিজের products বা services গুলোকে YouTube চ্যানেলের মাধ্যমে প্রচার ও বিক্রি করিয়ে টাকা আয় করতে পারবেন।
  5. অধিক subscriber সহ থাকা নিজের ইউটিউবের চ্যানেল বিক্রি করে আপনি টাকা কামাতে পারবেন।

ইউটিউব থেকে আয়ের পরিমাণের ধারণা

মনিটাইজেশন চালুর পরে ইউটিউব থেকে আয় প্রক্রিয়া শুরু হয়। ঘরে বসে ইউটিউব থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করা সম্ভব । তবে পরিশ্রম এবং সৃজনশীলতা এ ক্ষেত্রে মূলধন ।

ইতোমধ্যেই জেনেছি যে মনিটাইজেশন চালু হবার পর বিজ্ঞাপন দেখানোর মাধ্যমে আয়ের প্রক্রিয়া শুরু হয় ।

কিন্তু অবশ্যই আপনাদের মনে একটি প্রশ্ন এসেছে যে ইউটিউব থেকে কি পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা আয় করা সম্ভব ? শুধুমাত্র ইউটিউবিং করলেই কি চাকরি বা অন্য কাজ না করলেও চলবে ?

এ প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করে আপনার প্রদানকৃত প্রচেষ্টার উপর ।

প্রতি 1000 বিজ্ঞাপনের জন্য বাংলাদেশের ইউটিউবারদের মধ্যে পর্যালোচনা করে দেখা যাবে গড়পড়তা 2 থেকে 3 ডলার তারা আয় করে থাকেন । সহজ হিসেব করে বললে বলা যায় , আপনার চ্যানেলে যদি রোজ 1000 ভিউ আসে তাহলে প্রতিদিন আপনার ইনকাম হবে 2 থেকে 3 ডলার । বাংলাদেশি অর্থমূল্যে যা দেড়শ থেকে দুইশ টাকার সমপরিমাণ ।

অর্থাৎ , পাঁচ থেকে ছয় হাজার ভিউ এর জন্য ইউটিউব আপনাকে দিবে 7 থেকে 800 টাকা প্রতিদিন । মাস শেষে 20 থেকে 25 হাজার টাকায় গিয়ে দাঁড়াবে ।

তবে গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে আয় করার পরিমাণটি বিভিন্ন ইউটিউবাৱেৱ ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে ।

Google এডসেন্সের বিজ্ঞাপন দ্বারা টাকা কামানোটা অনেক কিছু জিনিসের ওপর নির্ভর করে।

এই জিনিসগুলির মধ্যে, “CPC”, “CTR” এগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

উপসংহার

ইউটিউবের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম গুলি অদূর ভবিষ্যতে আরো জনপ্রিয় হয়ে ওঠার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।অর্থ্যাৎ দক্ষতা ও আগ্রহ থাকলে ইউটিউবিং একটি সম্ভাবনাময়,ব্যতিক্রমধর্মী, থ্রিলিং ক্যারিয়ার চয়েস হয়ে উঠতে পারে সেটা বলার আর অপেক্ষা ই রাখেনা।তবে,অনেকের মনে সংশয় থাকে এক্ষেত্রে বলা যায় ইউটিউবিং এর সফলতা মূলত ইউটিউবারের হাতেই।ভালো এবং ইউনিক কন্টেন্ট বানালে অবশ্যই তা জনপ্রিয় হবে এবং চ্যানেলটি জনপ্রিয়তা অর্জন করলে সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যাও বাড়বে।যতো বেশি সাবস্ক্রিপশন ততো বেশি উপার্জন।তাই ইউটিউবে লাভজনক আয়ের জন্য ভালো কন্টেন্টের জুড়ি নেই।অনেকেই অধিক টাকা আয়ের আশায় নিম্ন মানের অনৈতিক নানা ভিডিও আপলোড করে থাকে।এর বিনিময়ে অল্প কিছু লাভ হলেও,ইউটিউবের তদারকিতে ধরা পড়লে উক্ত চ্যানেলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয় ইউটিউব।তাই শিক্ষা মূলক ও ইতিবাচক সুন্দর কন্টেন্ট যা সমাজের কল্যাণে কাজে লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

Leave a Comment