একটা সময় ছিলো যখন মানুষ শখের বশেই ফটোগ্রাফি করতো।কিন্তু বর্তমানে,ফটোগ্রাফির দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে গড়ে উঠছে কর্মসংস্থান।আমাদের দেশে অসংখ্য তরুণ ছেলে মেয়ে শখের ক্যামেরা হাতে নিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে স্বপ্ন এবং সফলতার পথে।
বর্তমানে অনলাইন এবং অফলাইন উভয় প্লাটফর্মেই ফটোগ্রাফির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।ফেসবুক,ইন্সটাগ্রাম প্রভৃতি সোশ্যাল মিডিয়া সাইট গুলোর প্রভাবে তরুণ সমাজের একটি শখের কাজ হয়ে উঠেছে নিজের ছবি প্রোফাইলে পোস্ট করা।বিভিন্ন অনুষ্ঠান,বিশেষ সময় এমন কি নতুন কোন পোশাক পরা উপলক্ষেও ইদানীং মানুষ ছবি তুলে রাখতে চাইছে যত্ন করে।
আর ভালো ছবি তোলার জন্য যেমন ভালো ক্যামেরা প্রয়োজন তার সাথে আরো প্রয়ীজন দক্ষ হাত।ফটোগ্রাফি এইভাবেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে দিন দিন।তাই শুধু শখেই সীমাবদ্ধ নয় এখন একজন ফটোগ্রাফার।বরং দক্ষ ও মেধাবী হলে ফটোগ্রাফি করেই উপার্জন করা সম্ভব বেশ ভালো অংকের টাকা।আর তাই আজ ফটোগ্রাফি করে আয় শীর্ষক আলোচনাই করবো এ পর্বের আর্টিকেলে।
তার আগে অল্পবিস্তর ফটোগ্রাফি নিয়ে জেনে নিই।
ফটোগ্রাফি কি?
ফটোগ্রাফি মূলত গ্রিক দুটি শব্দ ফটো এবং গ্রাফোস থেকে এসেছে। ফটো শব্দের অর্থ হলো লাইট বা আলো। এবং গ্রাফ বা গ্রাফোস শব্দের অর্থ হলো আঁকা।অর্থাৎ ফটোগ্রাফি শব্দের শাব্দিক অর্থ দাঁড়ায় আলো দিয়ে আঁকা। এককথায় আলোকচিত্র।
আমরা প্রায়শই ভেবে থেকে ফটোগ্রাফি করতে হলে ভালো একটি ক্যামেরা অনিবার্য। এই ধারণাটুকু কিন্তু সত্যি নয়। ফটোগ্রাফি করতে চাইলে ক্যামেরা শুধুমাত্র একটি মাধ্যম যা কিনা আপনার মনে কোন দৃশ্য দেখে অবতারিত ছবিটি আলো ছায়ার খেলায় বন্দী করে ফেলে।অর্থ্যাৎ শুধু দামী ডিভাইস নয়, ফটোগ্রাফির জন্য প্রয়োজন অভ্যন্তরীণ দৃষ্টি যা নান্দনিকতাকে মুহুর্তেই খুঁজে ফেলে।
পেশা হিসেবে ফটোগ্রাফি কেমন
ছবি তোলার দক্ষতা থাকলে আপনি গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে বা পড়াশোনা চলাকালীন সময়ে হয়ে উঠতে পারেন একজন দক্ষ ও সফল ফটোগ্রাফার। এই পেশার জন্য কোন একাডেমিক সিজিপিএ বা জিপিএ প্রভাব ফেলবে না।এ পেশার জন্য মূল বুনিয়াদ হচ্ছে শৈল্পিক জ্ঞান এবং দক্ষতা। ফটোগ্রাফি শুরুর প্রথম দিকে হয়তো বা কিছুটা স্ট্রাগলের মধ্য দিয়ে একজন ফটোগ্রাফার কে যেতে হয়।তবে,পরিচিতির সময় টা পাড় হয়ে গেলেই,যে কেউ ফটোগ্রাফার হিসেবে মাসে ১৫-৩০০০০ টাকা আয় করতে পারবেন।বিভিন্নভাবে অনলাইন ও অফলাইনে নিজের কাজ তুলে ধরার মাধ্যমে বেশ ভালো অংকের টাকা আয় করা সম্ভব ফটোগ্রাফি থেকে।তাই বলাই যায়,পেশা হিসেবেও ফটোগ্রাফি অত্যন্ত স্মার্ট চয়েস।
সৃজনশীলতা ও দক্ষতার পাশাপাশি মানুষের সাথে সদ্ভাব রেখে চলার ক্ষমতা এই পেশা প্রয়োজন হয়ে থাকে । যন্ত্রপাতির মধ্যে প্রয়োজনীয় শুরুর দিকে এন্ট্রি লেভেলের একটি ক্যামেরা এবং একটি ট্রাইপড ই যথেষ্ট। পরে ধীরে ধীরে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন আপনার কোন ধরনের কি কি যন্ত্র প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া যন্ত্রপাতি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা আপনি নেট ঘেটেই পেতে পারেন কেননা অনেক সফল ও দক্ষ ফটোগ্রাফারের ফটোগ্রাফি নিয়ে দিকনির্দেশনা মূলক ভিডিও টিউটোরিয়াল ইউটিউব সহ বিভিন্ন মাধ্যমে আপলোড করা আছে।
ফটোগ্রাফি শিখবেন কোথা থেকে?
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোকচিত্র (ফটোগ্রাফি) নিয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। ঢাবির টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগে সম্পন্ন করা যেতে পারে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার মাধ্যমে এই বিভাগে পড়তে পারবেন।
তবে ফটোগ্রাফি ক্ষেত্রে ডিগ্রির চেয়ে সৃজনশীল কাজের দক্ষতা ও মনন ই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ফটোগ্রাফি বিষয়ক বিভিন্ন কোর্স করা যায় এরকম অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নিজে নিজে প্রাথমিকভাবে শিখে ফেলার পর আপনি আপনার দক্ষতাকে উন্নত করার জন্য এসব ইনস্টিটিউট থেকে ফটোগ্রাফির উপরে নতুন নতুন কোর্স করতে পারে।
ফটোগ্রাফি কোর্স কোথা থেকে করবেন?
রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চার বছর মেয়াদি বিএসএস (ব্যাচেলর অব সোশ্যাল সায়েন্স) ইন ফটোগ্রাফি কোর্স। এ ছাড়া পাঠশালায় রয়েছে এক মাস থেকে শুরু করে তিন বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদের ও বিভিন্ন ধাপের কোর্স।
রাজধানীর মিরপুরের প্রতিষ্ঠান কাউন্টার ফটোতে রয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এক বছরের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা কোর্স। এ ছাড়া আছে এক বছরের মেন্টরশিপ কোর্সসহ এক মাস, দুই মাস ও ছয় মাসের কোর্স।
এ ছাড়া বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের মাধ্যমে পাঠশালা ও কাউন্টার ফটোর শিক্ষার্থীরা দেশের বাইরেও আলোকচিত্র বিষয়ে পড়তে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন। আর ঘরে বসে শিখতে চাইলে অনলাইনে বিভিন্ন কোর্স তো আছেই।
এতক্ষণ ফটোগ্রাফি সম্পর্কে অনেক আলোচনায় তো করা হলো । এখন আসুন জেনে নেই , ফটোগ্রাফি করে কিভাবে আয় করা যায় অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে ।
অনলাইনে ছবি বিক্রয়ের মাধ্যমে
আপনার তোলা মানসম্মত এবং ভালো ছবিগুলো আপনি চাইলে অনলাইনে বিক্রয় এর মাধ্যমে আয় করতে পারেন । অনলাইনে কিছু ফটোগ্রাফি সাইট রয়েছে যেগুলোতে আপনার ছবি আপলোড এর মাধ্যমে আপনি অর্থ পেতে পারেন । এরকম কিছু অনলাইন সাইট হল :
- shutterstock.com
- Adobe stock
- can stock photo
- alamy.com
- istockphoto.com
- pexels.com
- pixabay.com
বর্তমানে ইন্টারনেটের যুগে প্রতিদিন প্রায় লাখ লাখ ওয়েবসাইট নতুনভাবে ইন্টারনেটে যুক্ত হচ্ছে । এসব ওয়েবসাইটের জন্য প্রয়োজন লক্ষ লক্ষ কপিরাইট ফ্রি ছবি। এসব ছবি যোগান দিতে আপনি একজন ফটোগ্রাফার হিসেবে আপনার তোলা প্রেমিয়াম কোয়ালিটি কিছু ছবি উল্লেখিত সাইট গুলোতে আপলোড করতে পারেন । যার বিনিময়ে অবশ্যই আপনি অর্থ আয় করতে পারবেন ।
প্রিন্স প্রিমিয়াম কোয়ালিটি ছবি গুলোর দাম মূলত ন্যূনতম 100 ডলার হয়ে থাকে । এসব ছবি একবারে বিক্রি করা যায় । আর যেসব ছবি বারবার বিক্রি করা হয় সেসব ছবির দাম 1 ডলার থেকে 10 ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে ।
ইউটিউব এর মাধ্যমে
আপনি যদি চান আপনার ফটোগ্রাফির দক্ষতা মূলক একটি ইউটিউব চ্যানেল ওপেন করতে পারেন । সেখানে ফটোগ্রাফি শিখিয়ে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল কোর্স আকারে ভিডিও আপলোড করতে পারেন , এর ফলে একদিক থেকে যেমন আপনার কাজের প্রচারণা বাড়বে অন্য দিক থেকেই ইউটিউব মনিটাইজেশন এর মাধ্যমে আপনি বেশ ভাল অঙ্কের টাকা উপার্জন করতে পারবেন । এক্ষেত্রে আপনার ভিডিওগুলি দক্ষতা ও দিকনির্দেশনা মূলক হতে হবে , কিভাবে কাজ শুরু করা যায়, কি কি প্রয়োজন , বিভিন্ন টিপস এন্ড ট্রিকস এসব হতে পারে চ্যানেলটিতে আলোচনার মূল বিষয় ।
অনলাইনে ভিডিও কোর্স তৈরীর মাধ্যমে
অর্থাৎ আপনি যদি একটু ভিডিও করে তৈরি করেন , এবং সেটার সাথে ইংরেজিতে হয় তবে skillshare.com এর মত বিভিন্ন সাইটে ভিডিও কোর্সটি বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। বাংলাদেশের জন্য repto.com.bd একটি সাইট রয়েছে যেখানে বাংলা ভাষার ভিডিও কোর্স মানে আপনি আয় করতে পারবেন ।
ফেইসবুক ওয়াচ এ ভিডিও আপলোড করে
সম্প্রতি ফেইসবুক ঘোষণা দিয়েছে যে ফেসবুকের ইউটিউব এর মত মনিটাইজেশন প্রক্রিয়া চালু হবে । এক্ষেত্রে আপনি আপনার কাজের ভিডিও ফেইসবুক ওয়াচে আপ লোডের মাধ্যমে অর্থ আয় করতে পারেন । এক্ষেত্রে একটি সুবিধা হল আপনি যে ভিডিওটি আপনার ইউটিউব চ্যানেলের জন্য তৈরি করবেন তারই একটি ভার্সন ক্রিয়েট করে আপনি তো ফেসবুকে আপলোড এর মাধ্যমে আবার কিছু অর্থ উপার্জন করতে পারবেন ।
অনলাইনে ফটোগ্রাফির সার্ভিস বিক্রির মাধ্যমে
একটি বিজনেস ওয়েবসাইট ক্রিয়েট করার পর সেখানে বিভিন্ন ফটোগ্রাফি সার্ভিস যেমন : ওয়েডিং ফটোগ্রাফি , পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফি, প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি ইত্যাদি সার্ভিস অফার এর মাধ্যমে প্রচারণা চালাতে পারেন । তারপর সেখান থেকে আপনার সার্ভিস কারো পছন্দ হলে সে আপনাকে কাজের জন্য ডেকে নেবে এবং এর বিনিময়ে অবশ্যই আপনি কিছু অর্থ পাবেন ।
ফটোগ্রাফি ব্লগ সাইট তৈরি করে
আপনি একটি ব্লগিং ওয়েবসাইট খুলতে পারেন যেখানে আপনি মূলত ফটোগ্রাফির বিভিন্ন টিপস , এডিটিং এর কৌশল ইত্যাদি বিষয়টি নিয়ে কিছু ব্লগ আর্টিকেল লিখে ওয়েবসাইটটি প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমেও আপনি কিছু টাকা উপার্জন করতে পারেন । অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এবং গুগল এডসেন্স এর মাধ্যমে ব্লগ থেকে অর্থ আয় হবে ।
ফটো রিটাচিং এবং ফটো এডিটিং এর কাজ করে
আপনি যদি freelancing.com , upwork.com বিভিন্ন সাইটে যান তাহলে দেখবেন ফটোর রিটাচিং এবং এডিটিংয়ের বিপুলসংখ্যক কাজের সুযোগ সেখানে রয়েছে । আপনি একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনার অবসর সময়ে এ ধরনের রিটাচিং ,এডিটিং এবং ক্লিপিং সার্ভিস গুলোতে কাজ করে এই বিভিন্ন third-party ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলো থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারেন ।
আরো পড়ুন ;- অনলাইনে ইনকাম করার ৩১ টি উপায় – ২০২২
শেষ কথা
আপনার সাথে ফটোগ্রাফির প্রতি আগ্রহ এবং দক্ষতা দুটি থেকে থাকে তবে উল্লেখিত সাতটি মাধ্যমের মধ্যে একটি দুটি ব্যবহার করে অর্থ উপার্জনের উপায় হতে পারে আপনার লাইফ টাইম এর জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম । আশা করে ফটোগ্রাফি বিষয়ক আপনাদের প্রশ্নগুলির উত্তর এখানে দিতে পেরেছি । দক্ষতা থাকলে মূলত ঘরে বসে আয় করা সম্ভব । ফটোগ্রাফি থেকে আয় অদূর ভবিষ্যতে আরো জনপ্রিয়তা অর্জন করবে ।
সূচীপত্র