বাংলা ব্যকরণে কারক একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।কারক বলতেই আমরা মনে করি জটিল কোন বিষয়। আসলে তেমন কিছুই না,তবে কিছুটা সময় নিয়ে কারক বুঝতে চেষ্টা করা উচিত।আজ তাই আলোচনা করছি কারক কাকে বলে ও এর প্রকারভেদ নিয়ে।
প্রথমেই জেনে নিই,কারক কি?
কারক কাকে বলে?
বাংলা ব্যাকরণে ‘কারক’ একটি সুপরিচিত প্রসঙ্গ। ‘কারক’ শব্দটির অর্থ, যে কোনো কাজ বা ক্রিয়া সম্পাদন করে। বাক্যে কর্তাই ক্রিয়া সম্পাদন করে। সুতরাং কর্তাই কারক এ রকম মনে হতে পারে।
কিন্তু ব্যাকরণে শুধু কর্তাই কারক নয়। কর্তা কী করছে, কার সাহায্যে করছে, কোথায় করছে অর্থাৎ ক্রিয়া সম্পাদনের অবলম্বন, উপকরণ, হেতু, স্থান, কাল ইত্যাদি সবকিছুই এ ক্ষেত্রে বিবেচ্য। ক্রিয়া সম্পাদনে ক্রিয়ার সঙ্গে ঐ সব ব্যক্তি, বস্তু, স্থান, কাল ইত্যাদির যে সম্পর্ক রয়েছে, ব্যাকরণে তা কারক নামে অভিহিত।
‘কারক’ শব্দটি ভাঙ্গলে পাওয়া যায় কৃ + ণক (অক), এখানে ‘কৃ’ ধাতুর অর্থ হলো করা এবং ‘ণক’ বা ‘অক’ এর অর্থ হলো সম্পাদন। অতএব কারকের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হলো- যা ক্রিয়া সম্পদান করে। বাক্যের মধ্যে ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের যে সম্পর্ক, সেই সম্পর্ককে বলা হয় কারক।
বাক্যের অন্তর্গত ক্রিয়াপদের সাথে বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের যে সম্পর্ক, তাকেই বলা হয় কারক।
যেমন – জয়িতা বই পড়ে। এ বাক্যে ক্রিয়াপদ হলো ‘পড়ে’।
এই ক্রিয়াপদের সঙ্গে জয়িতার একটি সম্পর্ক রয়েছে। কারণ জয়িতা একটি নামপদ।
আরো জানুন ;- ঘর্ষণ কাকে বলে ? ঘর্ষণ বল কাকে বলে?
কারক কত প্রকার ও কি কি?
ক্রিয়াপদের সাথে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের সম্পর্কের ভিত্তিতে কারক মূলত ছয় প্রকারের হয়ে থাকে।যথাঃ
কর্তৃকারক,
২. কর্মকারক,
৩. করণ কারক,
৪. সম্প্রদান কারক,
৫. অপাদান কারক ও
৬. অধিকরণ কারক
নীচে একটি উদাহরণের সাহায্যে এই সম্পর্কের ব্যাখ্যা দেখানো হলো-
মহারাজ সুব্রত প্রত্যহ সকালে রাজকোষ হতে স্বহস্তে দরিদ্রদেরকে ধন দান করতেন।’
১. কে দান করতেন ? সুব্রত (কর্তৃকারক)
২. কী দান করতেন? ধন (কর্মকারক)
৩. কী দ্বারা দান করতেন? স্বহস্তে (করণ কারক)
৪. কাদের দান করতেন? দরিদ্রদের (সম্প্রদান কারক)
৫. কোথা হতে দান করতেন? রাজকোষ হতে (অপাদান কারক)
৬. কখন দান করতেন? প্রত্যহ সকালে (অধিকরণ কারক)
কোন ধরণের পদকে কি কারক হিসেবে চিহ্নিত করা যায় তা আরো ভালো ভাবে বুঝতে বিভিন্ন প্রকার কারক কাকে বলে তা জানা জরুরি।
নিম্নে এ সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হলোঃ
আরো পড়ুন ;- ব্যাসার্ধ কাকে বলে?
কর্তৃকারক কাকে বলে?
যে ক্রিয়া সম্পাদন করে, তাকে বলা হয় কর্তা। তাই ক্রিয়ার সঙ্গে কর্তৃসম্বন্ধযুক্ত পদকে বলা হয় কর্তৃকারক।
বাক্যস্থিত যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ক্রিয়া সম্পন্ন করে তা ক্রিয়ার কর্তা বা কর্তৃকারক।
অর্থাৎ কর্তৃকারক কাকে বলে? তা সহজ ভাবে বললে, ক্রিয়ার সঙ্গে ‘কে’ বা ‘কারা’ যোগ করে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তা-ই কর্তৃকারক।
কর্তৃকারকের উদাহরণ :-
খোকা বই পড়ে। (কে পড়ে? খোকা কর্তৃকারক)।
মেয়েরা ফুল তোলে। (কারা তোলে? মেয়েরা – কর্তৃকারক)।
কর্তৃকারক কত প্রকার ও কি কি :-
কর্তৃকারক বাক্যের ক্রিয়া সম্পাদনের বৈচিত্র্য বা বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী চার প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন –
১. মুখ্য কর্তা :
২. প্রযোজক কর্তা
৩. প্রযোজ্য কর্তা
৪. ব্যতিহার কর্তা:
অন্যদিকে বাক্যের বাচ্য বা প্রকাশভঙ্গি অনুসারে কর্তা তিন রকম হতে পারে। যেমন –
কর্মবাচ্যের কর্তা (কর্মপদের প্রাধান্যসূচক বাক্যে): পুলিশ দ্বারা চোর ধৃত হয়েছে।
২. ভাববাচ্যের কর্তা (ক্রিয়ার প্রাধান্যসূচক বাক্যে): আমার যাওয়া হবে না।
৩. কর্ম-কর্তৃবাচ্যের কর্তা (বাক্যে কর্মপদই কর্তৃস্থানীয়): বাঁশি বাজে। কলমটা লেখে ভালো।
সম্পর্কিত;- প্রত্যয় কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?
কর্মকারক কাকে বলে?
যাকে অবলম্বন করে ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে কর্মকারক বলে।
অর্থাৎ কর্মকারক কাকে বলে? তা বলতে ক্রিয়াকে ‘কি’ বা ‘কাকে’ জিজ্ঞেস করে যে উত্তর পাওয়া যায় তা কর্ম এবং ক্রিয়া পদের সঙ্গে কর্মের সম্বন্ধই কর্মকারক।
সে ফল কিনছে। সে কী কিনছে? ফল। সুতরাং ফল কর্মকারক।
সায়েমা অর্ককে মারছে। সায়েমা কাকে মারছে? অর্ককে। তাহলে অর্ক, কর্মকারক।
কোনো কোনো ক্রিয়ার দুটি কর্ম থাকে। এর একটিকে বলা হয় মুখ্য কর্ম অন্যটি গৌণ কর্ম। বোঝাই যায়, গৌণ কর্মের চেয়ে মুখ্য কর্মের গুরুত্ব বেশি। মুখ্য কর্ম দিয়েই ক্রিয়ার কাজ পূর্ণ হয়। সাধারণত মুখ্য কর্ম বস্তুবাচক এবং গৌণ কর্ম ব্যক্তিবাচক বা প্রাণিবাচক হয়ে থাকে। যেমন-
শিক্ষক ছাত্রকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেন। এই বাক্যে ‘প্রশ্ন’ মুখ্য কর্ম, ছাত্র গৌণ কর্ম।
কর্ম প্রধানত দুই প্রকার মুখ্য কর্ম এবং গৌণ কর্ম।
কর্মকারক কত প্রকার ও কি কি :-
ক) সকর্মক ক্রিয়ার : কর্ম রিমা ফুল তুলছে।
খ) প্রযোজক ক্রিয়ার কর্ম: ছেলেটিকে বিছানায় শোয়াও।
গ) সমধাতুজ কর্ম : খুব এক ঘুম ঘুমিয়েছি।
ঘ) উদ্দেশ্য ও বিধেয় : দ্বিকর্মক ক্রিয়ার দুটি পরস্পর আপেক্ষিক কর্মপদ থাকলে প্রধান কর্মপদটিকে বলা হয় উদ্দেশ্য কর্ম এবং অপেক্ষিত কর্মপদটিকে বলা হয় বিধেয় কর্ম। যেমন দুধকে (উদ্দেশ্য কর্ম) মোরা দুগ্ধ (বিধেয় কর্ম) বলি, হলুদকে (উদ্দেশ্য কর্ম) বলি হরিদ্রা (বিধেয় কর্ম)।
আরো পড়ুন ;- আয়নিক বন্ধন কাকে বলে? সমযোজী বন্ধন কাকে বলে?
করণ কারক কাকে বলে?
ক্রিয়া সম্পাদনের যন্ত্র, উপকরণ বা সহায়ককেই করণ কারক বলা হয়।বাক্যস্থিত ক্রিয়াপদের সঙ্গে ‘কিসের দ্বারা’ বা ‘কী উপায়ে’ প্রশ্ন করলে উত্তরে করণ কারক পাওয়া যায়।
উদাহরণ:
নীরা কলম দিয়ে লেখে। (উপকরণ – কলম)
‘জগতে কীর্তিমান হয় সাধনায়।’ (উপায় – সাধনা)
১. যন্ত্রাত্মক করণ
চামচ দিয়ে খাই। হাত দিয়ে ধরেছি। দড়ি দিয়ে বেঁধেছি।
২: উপায়াত্মক করণ
টাকায় কী না হয়! কৌশলে কাজ করো।
৩. হেতুবোধক করণ
ছেলেটা ভয়ে কাঁদছে। লজ্জায় মাথা কাটা গেল।
৪: লক্ষণাত্মক করণ
পৈতায় বামুন চেনা যায়। শিকারি বেড়াল গোঁফে চেনা যায়।
৫: সহকার অর্থে করণ
সবজি দিয়ে ভাত খেয়েছি। ওষুধটা জল দিয়ে গিলে ফেলো।
৬. কালাত্মক করণ
ক্রিয়ার কাজ সম্পন্ন করতে যতটা সময় লাগে, সেই সময়কে কালাত্মক করণ বলে। এটি কালাধিকরণের থেকে আলাদা।
যেমন একদিনে বইটা শেষ করেছি। ঘণ্টায় দশটা ব্লাউজ সেলাই করে।
সম্প্রদান কারক কাকে বলে?
যাকে স্বপ্ন ত্যাগ করে দান, অর্চনা, সাহায্য ইত্যাদি করা হয়, তাকে (সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুযায়ী) সম্প্রদান কারক বলে। বস্তু নয় – বাক্তিই সম্প্রদান কারক।
(অনেক বৈয়াকরণ বাংলা ব্যাকরণে সম্প্রদান কারক স্বীকার করেন কারণ, কর্মকারক দ্বারাই সম্প্রদান কারকের কাজ সুন্দরভাবে সম্পাদন করা যায়।।
সম্প্রদান কারক চেনার উপায় কি?
সম্প্রদান কারক চেনার উপায় ক্রিয়াকে কাকে বা কার জন্য দ্বারা প্রশ্ন করু
সম্প্রদান কারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার
(ক) চতুর্থী বা কে বিভক্তি : ভিখারীকে ভিক্ষা দাও। (স্বত্ব ত্যাগ করে না দিলে কর্মকারক হবে। যেমন— ধোপাকে কাপড় দাও।
(খ) সপ্তমী বা এ বিভক্তি : সৎপাত্রে কন্যা দান কর। সমিতিকে চাঁদা দাও। অন্ধজনে দেহ আলো।
জ্ঞাতব্য: নিমিত্তার্থে ‘কে’ বিভক্তি যুক্ত হলে সেখানে চতুর্থী বিভক্তি হয়। যেমন- ‘বেলা যে পড়ে এল, জলকে চল।
অপাদান কারক কাকে বলে?
যা থেকে কোন কিছু গৃহীত, বিচ্যুত, জাত, বিরত, আরম্ভ, দূরীভূত, রক্ষিত, ভীত হয়, তাকে অপাদান কারক বলে।
অর্থাৎ, অপাদান কারক থেকে কোন কিছু বের হওয়া বোঝায়।
‘কি হতে বের হল’ প্রশ্নের উত্তরই অপাদান কারক।
উদাহরণ-
- গাছ থেকে পাতা পড়ে। (কি হতে বের হল/ পড়ল? গাছ থেকে): অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি
- শুক্তি থেকে মুক্তি মেলে। (কি হতে বের হল? শুক্তি থেকে) : অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি
- জমি থেকে ফসল পাই। (কি হতে বের হল? জমি থেকে) : অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি।
অধিকরণ কারক কাকে বলে?
যে স্থান, যে সময় বা যে বিষয়ে আশ্রয় করে ক্রিয়া সম্পন্ন
হয়, তাকে অধিকরন কারক বলে। এককথায় ক্রিয়ার আধারকে অধিকরণ কারক বলে। অধিকরণ কারক
সাধারণত সপ্তমী বিভক্তি হয়। যেমন- বাঘ থাকে। সকালে সূর্য উঠে। nesch
এখানে ‘বনে’ এবং অধিকরণ কারক।
ক্রিয়াকে কোথায়, কখন এবং কিসে ইত্যাদি প্রশ্ন করলে সাধারণত অধিকরণ কারক পাওয়া যায়।
অধিকরণ কারক কত প্রকার ও কি কি?
অধিকরণ কারক তিন প্রকার। যথা-
১. কালাধিকরণ,
২. আধারাধিকরণ এবং
৩. ভাবাধিকরণ।
সম্পর্কিত আর্টিকেল
- স্ট্যাম্প লেখার নিয়ম ও নমুনা | কত টাকার স্ট্যাম্প কি কাজে ব্যবহার হয়?
- চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম | চুক্তিনামা লেখার নিয়ম
- অঙ্গীকারনামা লেখার নিয়ম ও নমুনা pdf সহ
সূচীপত্র