প্লবতা কাকে বলে? প্যাসকেলের সূত্র । চাপ কি?

প্লবতা কাকে বলে? প্লবতার অনেক হার্ড এন্ড টাফ সূত্র থাকলেও প্রবতা কাকে বলীর একটি সহজ সঙ্গাও রয়েছে। চলুনে জেনে নেই প্লবতা কাকে বলে?

প্লবতা কাকে বলে ?

 তরল অথবা বায়বীয় পদার্থে নিমজ্জিত বস্তুকতৃক লম্বভাবে প্রযুক্ত বলকে প্লবতা বলা হয়।

অর্থাৎ যখন কোনো বস্তুকে কোনো তরল বা বায়বীয় পদার্থে নিমজ্জিত করা হয় বা ডোবানো হয়,তখন এটি সেই তরল বা বায়বীয় পদার্থের উপরে পালটা একটি বল প্রয়োগ করে। মূলত এই বলটিকেই বলা হয়ে থাকে প্লবতা। এটি একটি উর্ধ্বমূখী বল। যে বল ক্রিয়া করে লম্ব বরাবর।

প্লবতা নির্নয়ের একটির সূত্র রয়েছে। এই সূত্রের মাধ্যমে তরল-বায়বীয় মাধ্যমের উপরে কি পরিমান বল প্রয়োগ করে সেটি নির্নয় করতে পারবো।

প্লবতার সূত্র- P=V.ROW.g

  •   যেখানে V হলো বস্তুটির আয়তন – বস্তু যে জায়গা দখন করে থাকে তাকে বলা হয় বস্তুর আয়তন।
  • ROW হলো যে মাধ্যমে বস্তুটিকে নিমজ্জিত করা হয়েছে সেই মাধ্যমের ঘণত্ব
  • এবং g হলো অভিকর্ষজ ত্বরণ।  

 তো জানা গেলো প্লবতা কাকে বলে। এখন আমরা চাপ ও বল সম্পর্কে আরো বিস্তারিত কিছু জানবো ! 

চাপ কাকে বলে?

বস্তু কতৃক একক ক্ষেত্রফলের উপর প্রযুক্ত বল কে বলা হয় চাপ। চাপ মূলত একটি লব্ধ রাশি ।চাপ পরিমাপের এককের বলা হয় প্যাসকেল । 

কোন বস্তুর একক ক্ষেত্রফলের উপর কি পরিমান বলপ্রয়োগ করে এটি মূলত নির্ভর করবে সেই বস্তুর ক্ষেত্রফল এর উপরে ।  এছাড়া অভিকর্ষজ ত্বরণ এর ওপরে  নির্ভর করে । যদিও বলতে গেলে পৃথিবীর সকল স্থানেই অভিকর্ষজ ত্বরণের মাত্রা প্রায় একই । 

বস্তুর ক্ষেত্রে কত বৃদ্ধি পায় চাপের পরিমান ততো কমে। এবং কোন বস্তুর ক্ষেত্রফল যত বৃদ্ধি পায় বস্তু কর্তৃক প্রদত্ত চাপের পরিমাণ কত বৃদ্ধি পায় । 

সে কারণে ক্ষেত্রফল মূলত চাপের ব্যস্তানুপাতিক । এবং অভিকর্ষজ ত্বরণ ধ্রুব হতে পারে । 

সম্পর্কিত আর্টিকেল

এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক

বল কাকে বলে? 

বল হল এমন একটি রাশি যেটি প্রয়োগ করার মাধ্যমে কোন গতিশীল বস্তুর স্থির এবং স্থির বস্তুকে গতিশীল করা সম্ভব।বল মূলত একটি ভেক্টর রাশি। কোন বস্তুর উপর মূলত নির্ভর করে সেই বস্তুটির  ওজন এবং অভিকর্ষজ ত্বরণ এর উপরে । 

বস্তুর ওজন যত বৃদ্ধি পায় বলের পরিমাণ তত বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং বস্তুর ওজন হ্রাস পায় বলের পরিমাণ হ্রাস পেতে থাকে। সে কারণে বস্তুর ওজন বলের সমানুপাতিক । 

প্যাসকেলের সূত্র- 

আবদ্ধ পাত্রে তরল অথবা বায়বীয় পদার্থের উপর যে যে বল প্রয়োগ করা হয়ে থাকে সেই বল বিন্দুমাত্র না কমে চারিদিকে সমানভাবে সঞ্চালিত হয় এবং পাত্র সংলগ্ন গায়ে লম্বভাবে ক্রিয়া করে । 

প্যাসকেলের সূত্র কেবল বৃদ্ধিকরণ নীতিও বলা হয়ে থাকে ।  এবং বল কি পরিমান বৃদ্ধি অথবা হ্রাস পাবে সেটি মূলত নির্ভর করে ক্ষেত্রফল এর উপরে । 

কোন পিস্টনে যদি ছোটনের তুলনায় বড় পিস্টনের আয়তন পাঁচগুণ বেশি হয়ে থাকে তবে সেই বড় পিস্টনে বল পাঁচগুণ বেশি বৃদ্ধি পায় । 

তবে বল বৃদ্ধি  পাওয়ার অর্থ এই নয় যে সেখানে  কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে । অর্থাৎ এখানে শক্তির কোন ধরনের পরিবর্তন ঘটনা । বা শক্তির ক্ষয় অথবা বৃদ্ধি হয় না । আছে এক্ষেত্রে শক্তির সংরক্ষণশীলতা নীতি বজায় থাকে । 

প্যাসকেল মূলত এই সূত্রটা ব্যবহার করেছিলেন তার সময় কার রাজার মুকুট-এ কি পরিমান  স্বর্ণ এবং কী পরিমান খাদ ব্যবহার করা হয়েছিল সেটি নির্ণয়ের জন্য ।

প্যাসকেলের সংক্ষিপ্ত জীবনী

ব্লেইজ প্যাসকেল মূলত একজন ফরাসি বিজ্ঞানী যিনি 1623 সালে ফ্রান্সে জন্মগ্রহণ করেন । তিনি কোন ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করেননি । মূলত তিনি তার ট্যাক্স কলেক্টর বাবার কাছ থেকে সংখ্যা জ্ঞান এবং প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেছিলেন । 

প্যাসকেল প্রথমদিকে ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের চরম বিরোধিতা করলেও জীবনের দ্বিতীয় অংশে তিনি মূলত ধর্মতত্ত্ব এবং দর্শন বিজ্ঞান এর পেছনে ব্যয় করেছেন । আজকের খুবই শুকনো এবং খর্ব ছিলেন । সে কারণে তিনি মাত্র 39 বছর বয়সে পরপারে পাড়ি জমিয়েছিলেন বলে জানা যায় । 

তার  নাম অনুসারে মূলত চাপের একক পরিমাপ করা হয়ে থাকে । 

আর্কিমিডিসের সূত্র

আর্কিমিডিস মূলত একজন যুগান্তরকারী ব্যক্তি । যিনি তার বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে এমন কিছু বিষয় সম্পর্কে আমাদেরকে অবগত করেছেন যা অতি নগন্য হলেও এটি পুরো  সৃষ্টিজগতের বিষয় । 

আর্কিমিডিসের সূত্রটি হলঃ

কোন বস্তুকে কঠিন অথবা তরল মাধ্যমে নিমজ্জিত করা হলে বস্তু যে পরিমাণ ওজন হলে সেটি ওই বস্তু কর্তৃক অপসারিত তরল ও বায়বীয় পদার্থের ওজনের সমান । 

যদি কোন বস্তুর ওজন 50 নিউটন হয়ে থাকে, এবং তরল মাধ্যমে নির্বাচিত করার পর সে বস্তুর ওজন যদি 30 নিউটন হয়, তাহলে এর অর্থ দাঁড়ায় বস্তু 20 নিউটন বল হারিয়েছে। অর্থাৎ শুধু কর্তৃক অপসারিত তরলের ওজন 20 নিউটন। 

আরো সুস্পষ্টভাবে বলতে গেলে বলা যায়, বস্তুটিতে 20 নিউটন তরল পদার্থ ধরতে পারে । কিংবা বস্তুর আয়তন 20 নিউটন তরল পদার্থ আটবে।

9.8 নিউটন = 1 KG ভরের একটি বস্তু কতৃক ভূমধ্যসাগর অথবা মক্কা নগরীর ভূপৃষ্ঠ কর্তৃক প্রযুক্ত বল ! 

এখন প্রশ্ন আসতে পারে ওজন বলতে কী বোঝায় ?

দৈনন্দিন জীবনে আমরা ওজন এবং ভরকে একই রাশি  হিসেবে ব্যবহার করে থাকলেও এ দুইটি রাশির মধ্যে ব্যাপক ব্যবধান রয়েছে । মূলত ভর বলতে বোঝায় যে কোন বস্তুতে কি পরিমান পদার্থ মজুদ রয়েছে সেটি বোঝায় । অপরদিকে ওজন বলতে মূলত বোঝায় অভিকর্ষজ ত্বরণ একটি বস্তুকে কি পরিমানে আকর্ষণ করছে  সেটি । 

ভর সবসময় ধ্রুব হলেও বস্তুর ওজন হ্রাস পেতে পারে অথবা বৃদ্ধি পেতে পারে । 

আর্কিমিডিস এর সংক্ষিপ্ত জীবনী 

আর্কিমিডিস মূলত ছিলেন একজন রোমানীয় গণিতবিদ এবং তিনি তার সময়কার সর্বশ্রেষ্ঠ গণিতবিদ হিসেবে পরিচিত ছিলেন । আর্কিমিডিস মূলত তার সময় রোমান সম্রাটের জন্য বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধ সামগ্রী তৈরি করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন । এ কারণে তিনি তার রোমান সম্রাটের অনেক প্রিয়ভাজন একজন ছিলেন । 

তিনি আতস কাচের মাধ্যমে সমস্ত সূর্যকে একীভূত করে দস্যু দলের  জাহাজ পুড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন এবং সঠিকভাবে বাস্তবায়ন ঘটিয়েছিলেন । 

যদিও সেই সময়টায় আর্কিমিডিসের কোন ধরনের ক্ষতি করাটা অনেক গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত ছিল । কিন্তু তবুও একদল বিপথগামী রোমান সেনা তাকে হত্যা করেন । 

পাহাড়ের খাবার রান্না করতে বেশি সময় লাগে কেন?

পাহাড়ে খাবার রান্না করতে বেশি সময় লাগে কারণ ভূপৃষ্ঠ থেকে বস্তুর উচ্চতার যত বেশি হয় বস্তুর স্ফুটনাঙ্ক কত বেশি হ্রাস পেতে থাকে। সে কারণে খাদ্যবস্তু গুলোর নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পৌঁছানোর পূর্বেই ফুটতে শুরু করে । আবার বলাই বাহুল্য এই খাবার সম্পূর্ণ অপাক্তেও। কাজেই পাহাড়ের রান্না করতে অনেক বেশি সময় প্রয়োজন হয়। এ কারণে অনেক সময় পাহাড়ে আরোহীরা রান্নার কাজে প্রেসার কুকার ব্যবহার করে থাকেন । যার মাধ্যমে তারা তুলনামূলক অনেক দ্রুত রান্না করতে পারে । 

 প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা মূলত জানলাম প্লবতা কাকে বলে, চাপ কাকে বলে,বল কাকে বলে,প্যাসকেলের সূত্র,আর্কিমিডিসের সূত্র,প্যাসকেলের সংক্ষিপ্ত জীবনী,আর্কিমিডিস এর সংক্ষিপ্ত জীবনী,পাহাড়ের খাবার রান্না করতে বেশি সময় লাগে কেন, ইত্যাদি যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে । 

যদি আপনি আমাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে বিন্দুমাত্র উপকৃত হয়ে থাকেন তবে নগণ্য বাংলা ব্লগ হিসেবে সেটি আমাদের সার্থকতা । 

আরো পড়ুনঃ

আয়নিক বন্ধন কাকে বলে? সমযোজী বন্ধন কাকে বলে?

চিঠির খাম লেখার নিয়ম-সঠিক নিয়ম জেনে নিন!

সর্বশেষ আপডেট

Leave a Comment