অর্থনীতি কাকে বলে? অর্থনীতির জনক কে ? 

অর্থনীতি কাকে বলে ? অর্থনীতি বিষয়টি আমাদের অনেকের কাছেই বেশ জটিল বলে মনে হয়। তবে আপনি মানুন বা নাই মানুন সমগ্র পৃথিবীর একমাত্র পরিচালক কিন্তু এই অর্থনীতি। মূলত অর্থনীতির ওপর নির্ভর করেই সমাজনীতি গড়ে উঠেছে এমনকি অনেক ক্ষেত্রে রাজনীতিও অর্থনীতির দ্বারা প্রভাবিত হয়। 

আপনার আর্টিকেলে আমরা জানতে চলেছি অর্থনীতি কাকে বলে এবং অর্থনীতির জনক কে । মূলত আমরা বিভিন্ন আঙ্গিকে থেকে অর্থনীতির সংজ্ঞা দিতে চলেছে এবং তার পাশাপাশি অর্থনীতি ব্যক্তি জীবন ও সমাজ জীবনে তেমন প্রভাব বিস্তার করে সে সম্পর্কেও জানবো আমাদের আজকের আর্টিকেলে । 

অর্থনীতি

অর্থনীতি হলো এমন এক ধরনের বিজ্ঞান যা মূলত মানুষের অসীম অভাব এবং বিকল্প ব্যবহারকে সমন্বয় করে গ্রহণ ও বিপণন সম্পর্কে আলোচনা করে । 

এছাড়াও বলা যেতে পারে, অর্থনীতি হলো এমন এক ধরনের বিজ্ঞান যা সম্পদকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে সেখান থেকে উৎপাদন করা সম্ভব, এবং সেই উৎপাদনের বিনিময় অন্য কোনো পণ্য গ্রহণ ও অধিগ্রহণ করা যায় সে সম্পর্কে আলোচনা করে। 

স্যার অ্যাডাম স্মিথ এর মতে, “ অর্থনীতি হলো এমন এক ধরনের বিজ্ঞান যার মাধ্যমে কোন জাতির সম্পদ এবং তার কারণ অনুসন্ধান করা হয়।”  

বিষয়টিকে একটু বুঝিয়ে সহজ করে বলা যাক। 

অর্থ হলো ভ্যালু। বা মূল্য। এমন একটি বিষয় যেটি অন্য মানুষের কাছে মূল্যবান।অর্থাৎ সার্বজনীনভাবে যে বিষয় বা বস্তুটির গুরুত্ব রয়েছে তাকে বলা হয় অর্থ । এবং নীতি শব্দের অর্থ নিয়ম বা প্রটোকল । 

অর্থাৎ অর্থনীতি হলো অর্থ সম্পর্কিত নীতি বা নিয়ম । এটি এমন একটি বিষয় যেখানে অর্থ সম্পর্কে আলোচনা করা হবে । তার পাশাপাশি অর্থ সম্পর্কিত নীতি প্রণয়ন করা হয় । অর্থনীতির পরিধি অনেক বড় হতে পারে । এটি ব্যক্তিপর্যায়ে হতে পারে অথবা সমগ্র বিশ্বব্যাপী হতে পারে। ব্যক্তি পর্যায়ের অর্থনৈতিক নীতি কে ইংরেজিতে peer-to-peer বলা হয়। 

এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিকে বলা হয় বিশ্ব অর্থনীতি । 

অর্থনীতির জন্ম, উৎপত্তিস্থল এবং ইতিহাস 

আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি অর্থনীতি কাকে বলে । এখন আমরা অর্থনীতির জন্ম এবং ইতিহাস সম্পর্কে জানব । 

ঠিক কবে নাগাদ মানুষ একে অপরের মধ্যে আর্থিক লেনদেন ঘটেছিল তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয় । তবে নিঃসন্দেহে মানুষ তার চাহিদার তাগিদে এ কাজ করেছিল । ধারণা করা হয়ে থাকে প্রাচীন গ্রিসে বা মেসোপটেমিয়া সভ্যতা মানুষ সর্বপ্রথম ধানের বিনিময় গৃহপালিত গবাদিপশুর  বিনিময় করেছিল । এবং সেখান থেকে জন্মগ্রহণ করেছিল বিনিয়োগ মাধ্যম যাকে আমরা নাম দিয়েছি অর্থ । 

জানিয়ে রাখা ভাল,অর্থ এবং টাকাপয়সা বা সম্পদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনা । এটি একটি চুক্তি পত্রের মধ্যে সংঘটিত হতে পারে।যদিও সেটির সর্বশেষ রূপ হল কাগজে নোট । 

খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ অব্দ থেকে মানুষের মাঝে ধীরে ধীরে সরাসরি পণ্যের বিনিময় না ঘটিয়ে কোন চুক্তি বা প্রতীক এর মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের প্রচলন শুরু হয় । সে ক্ষেত্রে অনেকেই মূল্যবান পাথর বা ধাতু ব্যবহার করত ।

ভারতবর্ষে সামুদ্রিক কড়ি আদান প্রদানের প্রচলন ছিল । তবে এটি তুলনামূলক সহজলভ্য হওয়ায় কোন অথরিটি  বা কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রণ করতে পারত না ।  পরবর্তীতে অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে হিসেবে মুদ্রার প্রচলন ঘটে থাকে। 

সোনা,রুপা,কপার বা তামা গলিয়ে মুদ্রা তৈরি করার প্রচলন শুরু হয় । এবং এর ওপর একটি নির্দিষ্ট কতৃপক্ষের কোন চিহ্ন প্রদান করা হতো । হতে পারে সেটি রাজার সিলমোহর অথবা গভর্নরের স্বাক্ষর। 

রাসুল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়কালের, লেনদেন অথবা বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে মূল্যবান ধাতুর মুদ্রা অথবা খেজুর ব্যবহৃত হতো ।  

এবং পরবর্তীতে প্রচলন ঘটে কাগজি নোট এর।

সর্বপ্রথম ১৬৯০ সালে আমেরিকার ম্যাসাচুসেটসে কাগজি নোট প্রচলন এর ব্যাপারে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় । তবে সেই সময় সে প্রস্তাব দিয়ে খুব একটা গ্রহণযোগ্য না হওয়ার ফলে সাধারণ লোকজন এটিকে ভালোভাবে গ্রহণ করে না । 

তবে পরবর্তীতে ১৭৬০ সালে প্রথমবারের মতো কাগজি নোট হিসেবে ডলার ছাপা হয় । সেই সময় মানুষ এটিকে ইতিবাচক বিষয় নেয়। ধীরে ধীরে কাগজি নোট এর ব্যবহার সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে । এবং সোনা,রূপা ,তামার  তৈরি মুদ্রাগুলো রীতিমতো কর্পূরের মত উবে যায় । 

অর্থনীতির জনক কে ? 

অর্থনীতি কাকে বলে

আর্টিকেল এর এই অংশে আমরা জানতে চলেছি অর্থনীতির জনক কে সে সম্পর্কে । অর্থনীতির জনক হলো পল অ্যান্থনি স্যামুয়েলসনএকজন মার্কিন অর্থনীতিবিদ এবং তাকে আধুনিক অর্থনীতির জনক বলা হয়ে থাকে । তার হাত ধরে বিশ্ব অর্থনীতি এক অনন্য রূপ ধারণ করেছে । যদিও সেটি অত্যন্ত ভয়াবহ বলা চলে । 

অর্থনীতিতে তার তথাকথিত অবদানের জন্য ১৯৭০ সালে তাকে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয় । 

ব্যষ্টিক অর্থনীতি কাকে বলে? 

ব্যক্তি পর্যায়ে অর্থনীতিকে বলা হয় ব্যষ্টিক অর্থনীতি ।অর্থাৎ যখন একজন ব্যক্তি আর একজন ব্যক্তির সাথে অর্থনৈতিক লেনদেন ঘটিয়ে থাকে তখন তাকে বলা হয় ব্যষ্টিক অর্থনীতি । এটি অর্থনীতির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ বা প্রাথমিক ধাপ বলা যেতে পারে । 

সামষ্টিক অর্থনীতি

মূলত অর্থনীতি যে শাখায়  বিশ্বব্যাপী অর্থব্যবস্থার নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে বলা হয়ে থাকে সামষ্টিক অর্থনীতি । সামষ্টিক অর্থনীতি বিশ্ব অর্থনীতির একটি ইন্ডিকেটর বা পরিমাপক । এর মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতি ঠিক কোন পর্যায়ে রয়েছে তা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায় । ব্যষ্টিক অর্থনীতির সাথে সামষ্টিক অর্থনীতি অনেকটাই সম্পৃক্ত । 

ইসলামিক অর্থনীতি

অর্থনীতি কাকে বলে

ইসলামী পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল-কোরআন এবং ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক  হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশিকা বা হাদিস মোতাবেক যে অর্থব্যবস্থা পরিচালিত হয় তাকে বলা হয় ইসলামিক অর্থনীতি ।  

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা এবং মনুষ্য জীবনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সকল বিষয় ইসলামী ধর্ম তত্ত্বে আলোচনা করা হয় । অর্থনীতির তার মধ্যে অন্যতম। গোটা বিশ্বব্যাপী শরিয়াসম্মত যে অর্থ ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে তাকে বলা হয়ে থাকে ইসলামী অর্থনীতি । ইসলামী অর্থনীতি ব্যক্তিপর্যায়ে অথবা একটি রাষ্ট্র পর্যায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে । 

মূলত সমাজতান্ত্রিক ও পুঁজিবাদী দেশে ইসলামী অর্থব্যবস্থা কেবলমাত্র ব্যক্তি পর্যায় পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ।তবে ইসলামিক রিপাবলিক বা মুসলিম শাসিত দেশ গুলোকে রাষ্ট্রপতি ইসলামী অর্থনীতি ব্যবস্থার প্রচলন থাকলেও থাকতে পারে ।  

বাংলাদেশ ব্যক্তি পর্যায়ে এবং প্রতিষ্ঠান পর্যায় ইসলামী অর্থ ব্যবস্থা চালু রয়েছে । প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে এটি কেবল মাত্র ব্যাংক ব্যবস্থার মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে । 

দিনশেষে এটি আমাদের স্বীকার করতেই হবে যে, টাকার প্রয়োজন সকলের জীবনে রয়েছে । সুতরাং টাকা তুচ্ছ কোনো বিষয় নয়।গোটা বিশ্ব এখন অর্থনীতির চর্চা করে, কেননা অর্থনৈতিক চর্চা না করলে মানুষের হাড়িতে ভাত ফুটবে না । সুতরাং এটি থেকেই স্পষ্ট হয় যে অর্থনীতি আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ । 

তবে তার পাশাপাশি এটি আপনাকে স্বীকার করতে হবে যে বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী মুনাফা ভিত্তিক যে অর্থ ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে সেটি মোটেও ভালো কোনো অর্থ ব্যবস্থা নয় । বরং এর মাধ্যমে দিনকে দিন মানুষ তার সর্বস্ব খোয়াচ্ছে,এবং ব্যাপকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে । 

একমাত্র ইসলামিক অর্থনীতি বা ইসলামী অর্থব্যবস্থা এর পরিত্রান ঘটাতে পারে । 

আমাদের আজকের আর্টিকেল এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল অর্থনীতি কাকে বলে এবং অর্থনীতির জনক কে সে সম্পর্কে । আর্টিকেলটির মাধ্যমে যদি  আপনি বিন্দুমাত্র উপকৃত হয়ে থাকেন তবে বাংলাদেশের অতি সামান্য প্রগতিশীল বাংলা ব্লগ হিসেবে সেটি আমাদের বৃহৎ সার্থকতা।   

আরো পড়ুনঃ

Leave a Comment