বৃত্ত কাকে বলে?

আজকে আলোচনা করবো বৃত্ত কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?

বৃত্ত কাকে বলে?

একটি নির্দিষ্ট বিন্দুকে কেন্দ্র করে সবসময় সমান দূরত্ব বজায় রেখে অন্য আরেকটি বিন্দু তার চারদিকে একবার প্রদক্ষিণ করে এলে যে ক্ষেত্র তৈরি হয় তাকে বৃত্ত বলে।

আরও সুন্দরভাবে বৃত্ত কাকে বলে তা বর্ণনা করা যেতে পারে। একটি নির্দিষ্ট বিন্দুকে কেন্দ্র করে সবসময় সমান দূরত্ব বজায় রেখে অন্য আরেকটি বিন্দু নির্দিষ্ট বিন্দুটির চারদিকে একবার প্রদক্ষিণ করে এলে যে সুষম আবদ্ধ বক্রাকার ক্ষেত্র তৈরি হয় তাকে বৃত্ত বলে।

পরিবৃত্ত কাকে বলে?

ত্রিভুজের বাহুত্রয়ের লম্ব সমদ্বিখণ্ডকত্রয়ের ছেদবিন্দুকে ত্রিভুজের পরিকেন্দ্র বলা হয়। এ বিন্দু ত্রিভুজের পরিবৃত্তের কেন্দ্র। আবার ত্রিভুজের তিনটি শীষ বিন্দুগামী বৃত্তকে পরিবৃত্ত বলে।

ছায়াবৃত্ত কাকে বলে?

পৃথিবীর আলোকিত অর্ধবাংশ ও অন্ধকার
অর্ধাংশের সীমারেখাকে ছায়াবৃত্ত বলে।
পৃথিবীর গোলীয় আকৃতির কারণেই ছায়াবৃত্ত
বৃত্তাকার।

পৃথিবী আবর্তন করছে বলে ছায়াবৃত্ত সর্বদা পরিবর্তন্শীল। পৃথিবীর অক্ষ 66%°কোণে অবস্থান করে এবং 21 শে মার্চ ও 23 শে
সেপ্টেম্বর সূর্য নিরক্ষরেখার ওপর লম্বভাবে কিরণ দেওয়ার জন্য কেবল ছায়াবৃত্ত প্রতিটি অক্ষরেখাকে সমদ্বিখণ্ত করে। ছায়াবৃত্তের যে
অংশে উষা হয় তার বিপরীত অংশে হয়
গােধূলি।

উষা ও গোধুলিঃ


সূর্য ওঠার ঠিক আগে এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার ঠিক পরে বিচ্ছুরিত আলোকরশ্মির প্রভাবে
আকাশে যে ম্লান আলো দেখা যায় তাকেই যথাক্রমে উষা ও গােধূলি বলে।

বাযুমণ্ডলের উর্ধবাংশে ধূলিকণা, বায়বীয়কণা, জলীয় বাষ্প
, মেঘ প্রভূতি থেকে বিচ্ছুরিত সূর্যালোকের প্রভাবেই উষা ও গোধুলি সৃষ্টি হয়। সূর্য ওঠার
আগে দিগন্ত রেখার সাথে যখন 18° কোণ উৎপন্ন হয়, তখন উষাকাল শুরু হয় আবার অস্ত যাওয়ার পর যতক্ষণ সুর্য দিগন্তের সাথে
18° কোণে অবস্থান করে ততক্ষণ পর্যন্ত গোধূলি গােধুলির স্থায়িত্বকাল নির্ডর করে দিগন্তের নীচে
সূর্যের নেমে যাওয়া হারের ওপর। গােধুলির স্থায়িত্বকাল নিরক্ষরেখায় সবচেয়ে কম এবং
মেরুতে সবচেয়ে বেশি।

পর্যায়বৃত্ত কাকে বলে?

কোনাে গতিশীল বস্তুকণার গতি যদি এমন হয় যে, এটি
এর গতিপথে কোনো নির্দিষ্ট বিন্দুকে নির্দিষ্ট সময় পর
পর একই দিক থেকে অতিক্রম করে, তাহলে সেই গতিকে পর্যায়বৃত্ত গতি বলে। নির্দিষ্ট সময় পর পর কোন ঘটনার পুনরাবৃত্তি বা নির্দিষ্ট
দূরত্ব পর পর কোনাে কিছুর পুনরাবৃ্তিকে বলা হয়।

ইহা ২ প্রকারঃ ১ কালিক ২ স্থানিক

কালিক পর্যাক্রমঃ সময়ের
সাথে যখন কোনো কিছুর নিয়মিত পুনরাবৃত্তি ঘটে তখন
তাকে কালিক পর্যাক্রম বলে।
উদাহরণস্বরূপ, দোলায়মান সরল দালক একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর একটি নির্দিষ্ট বিন্দুকে একই দিক থেকে
অতিক্রম করে, ঘড়ির কাটা একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর
একই অবস্থানে ফিরে আসে, বর্ষাকাল একটি নির্দিষ্ট
সময় পর পর ফিরে আসে।
স্থানিক পর্যাক্রম: স্থানের সাথে
যখন কোনো কিছুর নিয়মিত পুনরাবৃক্তি ঘটে তখন তাকে স্থানিক পর্যাক্রম বলে।উদাহরণস্বরূপ, কঠিন পদার্থে কেলাসের অণু, পরমাণু, বা
আয়নগুলা নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর পর্যায়ক্রমিকভাবে বিন্যস্ত থাকে।

বৃত্তের জ্যামিতি,পরিধি,ব্যাসার্ধ, ক্ষেত্রফল এবং স্পর্শক কি?

বৃত্তের পরিধি কাকে বলে?
একটি বৃত্তের কেন্দ্র হতে সমান দূরত্ব বজায় রেখে কোন বিন্দুর চলার পথকে পরিধি বলে ।
বৃত্তের পরিধি বের কারর সূত্র:-

পরিধি=2πr
বৃত্তের চাপ কাকে বলে?
বৃত্তের পরিধির যে কোন অংশকে চাপ বলে।

১। বৃত্তের একই চাপের উপর দন্ডায়মান বৃত্তস্থ কোন কেন্দ্রেস্থ কোণের অর্ধেক।
২। পরিধিস্থ কোণ বা বৃত্তস্থ কোণ একই কথা।
৩। অর্ধবৃত্তস্থ কোণ এক সমকোণ।

জ্যা কাকে বলেঃ
’’পরিধির যে কোন দুই বিন্দুর সংযোজক রেখাংশকে জ্যা বলে।’’

১। বৃত্তের ব্যাসই হচ্ছে বৃত্তের বৃহত্তম জ্যা।
২। বৃত্তের যে কোন জ্যা এর লম্ব দ্বিখণ্ডক কেন্দ্রগামী ।
৩। বৃত্তের সমান সমান জ্যা কেন্দ্র হতে সমদূরবর্তী।
৪। বৃত্তের দুটি জ্যা এর মধ্যে কেন্দ্রের নিকটতম জ্যাটি অপর জ্যা অপেক্ষা বৃহত্তম।

ব্যাস কাকে বলে?
বৃত্তের কেন্দ্রগামী সকল জ্যাকেই ব্যাস বলে। একটি বৃত্তে অসংখ্য ব্যাস থাকে।
ব্যাস=২*ব্যাসার্ধ

ব্যাসার্ধ কাকে বলে?

একটি বৃত্তের কেন্দ্র হতে পরিধি পর্যন্ত দূরত্বকে ব্যাসার্ধ বলে।
ব্যাসার্ধ=ব্যাস/২

বৃত্তের ক্ষেত্রফল
বৃত্তের ক্ষেত্রফল = πr2 বর্গ একক

স্পর্শক কাকে বলেঃ
একটি বৃত্ত ও একটি সরল রেখা যদি একটি ও কেবল একটি ছেদ বিন্দু থাকে তবে রেখাটিকে বৃত্তটির একটি স্পর্শক বলে।

১। বৃত্তের বহি:স্থ যে কোন বিন্দুতে কেবল একটি স্পর্শক আঁকা যায়।
২। বৃত্তের যে কোন বিন্দুতে অংকিত স্পর্শক স্পর্শবিন্দুগামী ব্যাসার্ধের উপর লম্ব।
৩। বৃত্তের বহি:স্থ কোন বিন্দু হতে ঐ বৃত্তের উপর ২ টি স্পর্শক টানা সম্ভব।

ইতিহাসঃবৃত্তের ইতিহাস অনেক পুরানো। প্রাচীন সভ্যতায় বৃত্তের ধারণা থেকে চাকার আবিষ্কার হয়। ফলে বর্তমান প্রচলিত সকল আধুনিক যন্ত্রপাতি নির্মাণ সম্ভবপর হয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব ১৭০০ অব্দের কাছাকাছি সময়ে প্রাচীন মিশরীয় গণিতবিদগণ π (পাই) এর আসন্ন মান ব্যবহার করে বৃত্তের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করেন। তবে π যে তুরীয় সংখ্যা তা ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে লিন্ডেম্যান প্রমাণ করেন। ইউক্লিড খ্রিস্টপূর্ব ৩২০ হতে ৩০০ অব্দের মধ্যে ১৩ খন্ডের যে গ্রন্থ রচনা করেন সেখানে তিনি বৃত্তের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করেন। পরবর্তীতে প্লেটো বৃত্তের সংজ্ঞা দেন।

বৃত্তের বৈশিষ্ট্যঃ

  • বৃত্ত হল নির্দিষ্ট পরিসীমার মধ্যে আবদ্ধ বৃহত্তম ক্ষেত্রফল।
  •  বৃত্ত বিশেষ ধরনের প্রতিসাম্যের অধিকারী একটি আকৃতি। কেন্দ্রভেদী যে কোন রেখাই প্রতিফলন প্রতিসম অক্ষ হিসেবে কাজ করে এবং কেন্দ্রের সাপেক্ষে যে কোন কোনে ঘূর্ণন প্রতিসাম্য তৈরি হয়।
  •  প্রতিটি বৃত্তের আকৃতি অভিন্ন।
  •  বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত একটি ধ্রূব সংখ্যা, একে π দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
  •  কার্তেসীয় স্থানাঙ্ক ব্যাবস্থায় মূলবিন্দুতে কেন্দ্র বিশিষ্ট একক ব্যাসার্ধের বৃত্তকে বলা হয় একক বৃত্ত।
  •  যে কোন তিনটি বিন্দুগামী, যারা অসমরেখ, একটি এবং কেবলমাত্র একটি বৃত্ত রয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top