বর্তমানে সবচেয়ে বেশি লাভজনক ব্যবসা ও ব্যবসার আইডিয়া

বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা কোনটি ? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আমাদেরকে একটু গভীরে যেতে হবে। বেশ কিছু বিষয় বোঝার আছে,বেশ কিছু জিনিস জানার আছে ! সব কিছু বিচার বিশ্লেষন করে আজকের আর্টিকেলে আমরা এটা জানবো যে বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা কোনটি ? 

বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা কোনটি এটি বড় বিষয় নয় – বড় বিষয় হলো আপনার ব্যবসা মার্কেটে কতদিন স্টেবল থাকবে, এর মাধ্যমে আপনার কেমন মুনাফা আসবে, এটির ভবিষ্যত কি, এর মাধ্যেমে আপনি কি নিজের কেরিয়ার গড়তে পারবেন কিনা, বাজারে কম্পিটিটর কেমন, চাহিদা কেমন ইত্যাদি আরো বেশ কিছু বিষয়-আশয় বোঝার রয়েছে। 

সব কিছু বিচার বিশ্লেষন করে বর্তমানে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন কিছু ব্যবসা রয়েছে যা আপনাকে ভালো মুনাফা দেবে, তার সাথে বাংলাদেশে আপনার ব্যবসা কর্তৃক সেবার ব্যাপক চাহিদা আছে অথবা যদি নাও থেকে থাকে , তবুও সেগুলো স্টেবল!

বর্তমান সময়ের সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসাগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ

ডোমেইন ও হোস্টিং এর ব্যবসা

অনলাইনে ইনকাম এর অন্যতম মাধ্যম হলো হলো ডোমেইন ও হোস্টিং এর ব্যবসা। তবে, হোস্টিং এর ব্যবসা সম্পর্কে জেনে নেওয়ার আগে জানতে হবে ডোমেইন কি? ডোমেইন কত প্রকার ও কি কি? ডোমেইন নেম কাকে বলে! ইত্যাদি ইত্যাদি এবং হোস্টিং কি ও হোস্টিং কেন প্রয়োজন?

হোস্টিং এর ব্যবসা দুইভাবে করা যেতে পারে। একটি রিসেলার অপরটি নিজের ডেডিকেটেড সার্ভার শেয়ার করে। নিজের ডেডিকেটেড সার্ভার ভাগাভাভগি করে আপনি যদি ব্যবসা স্টেবল করতে পারেন তবে তাতে মুনাফা আপনি আরো বেশী পাবেন । 

রিসেলারের ব্যবসাতেও ভালো মুনাফা রয়েছে – তবে এটি নিতান্তই  আপনার আর্থিক স্বাধীনতা খর্ব হতে পারে। কাজে চেষ্টা করবেন ডেডিকেটেড সার্ভার নিয়ে কাজ করার। ডেডিকেটেড সার্ভার যদি আপনি ভাড়া নেন, এবং প্রতি মাস এক জিবি হোস্টিং ২০০ টাকা দিয়েও বিক্রি করেন তবুও আপনি এখান থেকে ডাবল মুনাফা আয় করতে পারবেন।

এবং নিজেই যদি হার্ডওয়্যার কিনে একটি সার্ভার তৈরী করেন,তবে যা আয় হবে তার পুরোটাই আপনার। কেননা ডেডিকেটেড সার্ভারে খরচ এককালীন। 

মাত্র ৫ লাখ টাকার পুজি নিয়ে আপনি অনেক বড় হোস্টিং ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

সোনার ব্যবসা

সোনার ব্যবসা অনেক লাভজনক একটি ব্যবসা। পৃথীবিতে স্বর্নের চাহিদা কখনো শেষ হবেনা। বিশেষ করে ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্টে সোনার দাম প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। সোনার দাম যাই হোক না কেনো সোনা আপনিআপনার কাস্টোমারদের কাছ থেকে কিনে সেটা অন্য কোনো জুয়েলারিতে কনভার্ট করে বিক্রি করতে পারেন।

এটি আপনাকে অবিশ্বাস্য মুনাফা দেবে। স্বর্ণের ব্যবসায় পুজি তুলনামূলক বেশী প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু আপনি চাইলে ৪-৫ লাখ টাকা দিয়েই শুরু করতে পারেন। 

এছাড়া চাইলে গোল্ড ইনভেস্টমেন্টও করতে পারেন। মনে রাখবেন, আগামী ১০০ বছরের ইতিহাসে সোনার দাম কখনো কমেনি। 

তেলের ব্যবসা

তেল নিয়ে বাংলাদেশে  আলোচনা ও সমালোচনার কোনো শেষ নেই। কেননা আজ থেকে ২ বছর আগেও যে তেল আমাদের ৯০ টাকা কেজি দরে খেতে হতো এখন সেই সয়াবিনে তেলের দামই প্রায় ২০০ টাকার কাছাকাছি চলে এসেছে। যদিও তেলের ব্যবসা করাটা অনেক প্রফিটেবল। 

আপনি চাইলে ভোজ্য তেল বাদেও, জ্বালানী তেলের ব্যবসা করতে পারেন। কেননা দিন যতো যাচ্ছে জ্বালানী তেলের পরিমান ততো কমে আসছে এবং এতে করে তেলের দাম বেড়ে চলেছে। তার উপরে অনেক সময় ওপেক সংস্থা  যেকোনো দেশের উপর স্যংশান প্রদান করতে এই তেলের দাম আরো বেশী বেড় যাবে।

অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে- এই ধরণের অধিক মুনাফার ব্যবসা করতে গেলে আপনাকে অবশ্য সৎ হতে হবে, তা না হলে আপনি ব্যবসায় স্টেবলিটি অর্জন কুরতে পারবেন না , বরং আপনার ব্যবসাকে আমজনতা ডুবিয়ে ছাড়বে।

সোলার সিস্টেম বা এনার্জি সেভিংস গ্যাজেটের বিজনেস 

এর পূর্বের প্যারায় বলা হয়েছে,দিন যতো যাচ্ছে জ্বালানী তেলের পরিমান বা জীবাশ্ম জ্বালানীর পরিমান ততো কমে আসছে। এর ফলে বিভিন্ন এনার্জি সেভিংস গ্যাজেটের চাহিদা বেড়ে চলেছে।

যার অর্থ দাড়ায়,এমতাবস্থায় যদি আপনি সোলার সিস্টেম বা এনার্জি সেভিংস গ্যাজেটের ব্যবসা শুরু করেন তবেতা আপনাকে বিশেষ ভাবে লাভবান করবে। 

যদিও এতে পুজি লাগবে তুলনামূলক বেশী এবং অবশ্যই মার্কেটের কম্পিটিটরদেরকে বিট করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে বিদ্যুতের সমস্যা অনেক ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এবং সেই কারণে সোলার সিস্টেমের ওপর মানুষ ঝুকছে । যার ফলে এই ব্যবসা সফলতার মুখ দেখছে। 

ফরেন কারেন্সি এক্সচেঞ্জ বিজনেস-বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা!

মুদ্রার দাম বাড়ুক বা কমুক ! ফরেন কারেন্সি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায় কোনো লস নেই ! বরং লাভ আছে ভরিভরি! সেকারণে এটি বর্তমানে সবথেকে লাভজনক ব্যবসা বলে বিবেচিত। 

কিভাবে করবেন এই ব্যবসা? উত্তর হলোঃ

মনে করুন, আপনার কাছে কেও ডলার বিক্রি করতে এলো, এখন আপনি সেই ডলার ১০০৳ দরে কিনে নিলেন। কিন্তু যখন আপনার কাছে কেও ডলার কিনতে আসবে তখন আপনি সেটাকে ১০৫৳ দরে বিক্রি করে দিতে পারবেন – মাঝখান থেকে ৫৳ আপনার পকেটে। 

[বিঃদ্রঃ অবশ্যই লাইসেন্স এবং সকল ধরণের ক্লিয়ারেন্স থাকতে হবে। অনৈতিকভাবে নিজের কাছে অনুনমোদিত পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে ডলার সংরক্ষন করা যাবে না।)

শুধু ইউ এস ডলার নয়, আপনি চাইলে যেকোনো কারেন্সির ব্যবসা করতে পারবেন। কারেন্সির ব্যবসা করা কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষে ইসলামী দৃষ্টিকোন থেকে হালাল বলে বিবেচিত। 

স্টক মার্কেট বা ট্রেডিং বা রিস্ক ম্যানেজমেন্ট-বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা!

যে যাই বলুক না কেন স্টক মার্কেট বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা গুলির ভেতর অন্যতম। পৃথিবীতে এমন কোনো ব্যবসা নেই স্টক মার্কেটের মত   মুনাফা দিয়ে থাকে। অবশ্য যে ব্যবসায় মুনাফা যত বেশি সেই ব্যবসায় রিস্ক ততো বেশি ।

আর তাই যে কারো কথা শুনে যেকোনো স্টক কিনে ফেলবেন না । অবশ্যই স্পেশালিস্ট দেয়ার পরামর্শ এবং মতামত গ্রহণ করে তার পরে স্টক কিনবেন। তাইলে আপনি একটি প্রশিক্ষণ নিতে পারেন । যেখানে আপনাকে শেখানো হবে ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিস এবং টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস সম্পর্কে । তাহলে আপনি নিজে থেকে বুঝতে পারবেন স্টক প্রাইস এখন কোন দিকে যাবে । 

স্টক মার্কেটের খুব অল্প সময়ে অধিক মুনাফা ইনকাম করা সম্ভব । তবে একই সাথে লসের আশঙ্কা ততবেশি ।   কাজেই নিজের ইমোশন কন্ট্রোল করে,ধৈর্য ধরে মার্কেট এনালাইসিস করুন । অবশ্যই টেকনিক্যাল এনালাইসিস এবং মানি ম্যানেজমেন্ট নিখুঁতভাবে ফলো করতে হবে । একমাত্র তখনই মার্কেট থেকে প্রফিট কামানো সম্ভব । 

স্টক মার্কেট কি হালাল?

কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষে স্টক মার্কেট ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে হালাল । বিখ্যাত ইসলামিক চিন্তাবিদ ডক্টর জাকির নায়েকের মতে,স্টক মার্কেট তখনই হালাল হবে যখন – 

  • শেয়ারহোল্ডার কোন ধরনের গ্ল্যাম্বিং এর সাথে জড়িত থাকবেন না।
  • অবশ্যই যে সকল প্রতিষ্ঠান হালাল পণ্যের ব্যবসা করেন সেই সকল প্রতিষ্ঠান  স্টক কিনতে হবে।

অবশ্যই যে সকল প্রতিষ্ঠান হালাল পণ্যের ব্যবসা করেন সেই সকল প্রতিষ্ঠান কিনতে হবে কিনতে হবে। 

  • মার্কেটের সর্ট সেলিং এর  মাধ্যমে ভোলাটিলিটি সৃষ্টি করা যাবে না ।

কেননা প্রতিনিয়ত শর্ট সেলিং এর মাধ্যমে মার্কেটে প্রচন্ড রকমের ভোলাটিলিটি সৃষ্টি হয়। তার ফলে শেয়ারহোল্ডাররা মার্কেটের ডিরেকশন বুঝতে পারেন না । 

হালাল ব্যবসা নিয়ে হাদিস- 

রাসুল পাক সাঃ ভালো ব্যবসা নিয়ে বেশ দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ 

রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘ফরজ ইবাদতসমূহের (নামাজ, রোজা, জাকাত ইত্যাদি) পরে হালাল উপার্জন করাও একটি ফরজ এবং ইবাদতের গুরুত্ব রাখে।’ 

অন্য হাদিসে বলা হয়েছে , ‘কোনো মানুষ এর চেয়ে উত্তম উপার্জন খায়নি যা সে নিজ হাতে উপার্জন করে খায়। নবী দাউদ (আ.)ও নিজ হাতের উপার্জন খেতেন।’ (সহিহ বোখারি)

রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘সত্যবাদী আমানতদার ও বিশ্বাসী ব্যক্তি কিয়ামতের দিনে নবীগণ সিদ্দিকগণ এবং শহীদগণের দলে থাকবেন।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১২০৯)

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সহিহ-সালামতে ব্যবসা করার তৌফিক দান করুক আমিন! 

Leave a Comment