দাবা খেলার নিয়ম, ইতিহাস, কলাকৌশল ও ভালো খেলতে করণীয়

দাবা খেলার উৎপত্তি ভারতে। অবসরে খেলার দারুন একটি খেলা হলো দাবা। স্কুলের টিফিন পিরিয়ডে কিংবা অন্য কোন অবসর সময়ে অনেকে দাবা খেলে থাকে। দাবা খেলার খুঁটিনাটি নিয়ম কানুন এবং কৌশল অনেকেই জানে না । যার ফলে ভালো ভাবে দাবা খেলতে পারে না। আজকে চলুন আমরা দাবা খেলার নিয়ম বিস্তারিত খুঁটিনাটি জেনে নেই।

দাবা খেলার নিয়ম , ইতিহাস, কলাকৌশল ও ভালো খেলতে করণী

দাবা কি

দাবা দুটি খেলোয়াড়ের মধ্যে একটি খেলা। এটি একটি বোর্ড গেম। যেটি দুটি রাজ্যের মধ্যে গুটি দিয়ে যুদ্ধ করে খেলতে হয়। এটি বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। লক্ষ লক্ষ মানুষ এটি বিনোদনমূলক এবং প্রতিযোগিতামূলক উভয়টিই খেলে থাকেন। দাবা খেলায় কোন গোপন তথ্য নেই। এটি একটি টার্ন-ভিত্তিক কৌশল গেম। এই কারণে, ভাগ্যের সহায়তা দাবায় নেই বললেই চলে।

দাবার ইতিহাস

নিয়ম জানার আছে ছোট করে একটু দাবার ইতিহাস জেনে নেই। ঠিক কখন দাবার প্রথম উৎপত্তি হয়েছিল তার কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। যাইহোক, ঐতিহাসিকরা একমত হন যে দাবা প্রাচীন ভারতীয় বোর্ড গেমস যা সম্ভবত চতুরাঙ্গা থেকে বিকশিত হয়েছিল।

প্রাচীন ভারতীয় খেলাটি পরবর্তীতে দুটি বৈশিষ্ট্য ভাগ করে নিয়েছিল: প্রতিটি গুটির জন্য একটি আলাদা শক্তি এবং রাজার ভাগ্য খেলার ফলাফল নির্ধারণ করে। চতুরঙ্গ পরে সপ্তম শতাব্দীতে শতরঞ্জতে পরিণত হয়েছিল। শতরঞ্জ পূর্ব, উত্তর এবং পশ্চিমের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য অর্জন করে।

ইউরোপে পৌঁছানোর পরে, খেলাটি ধীরে ধীরে পরিবর্তন হতে থাকে৷ এই পরিবর্তীত রুপটিকেই আমরা আজকে দাবা খেলার আদর্শ নিয়ম হিসাবে জানি।

১৮০০ এর দশক থেকে, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণ করতে দুই খেলোয়াড়ের মধ্যে দাবা ম্যাচগুলির জনপ্রিয়তায় বেড়েছে। প্রথম অফিসিয়াল চ্যাম্পিয়ন হয় ১৮৮৬ সালে। উইলহেলম স্টেইনিটজ জোহানেস জুকার্টর্টকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন।

ফিদে ১৯৪৮ সালে ওয়ার্ল্ড দাবা চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজন শুরু করেছিল। জিএম মিখাইল বোটভিনিক প্রথম এই শিরোপা জিতেছিলেন।

১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল অবধি ফিদে ওয়ার্ল্ড দাবা চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজন অব্যাহত রেখেছে। সেই সময়কালের চ্যাম্পিয়নরা ছিলেন বোটভিনিক, জিএমএস ভ্যাসিলি স্মিস্লোভ, মিখাইল তাল, টাইগ্রান পেট্রোসিয়ান, বোরিস স্প্যাস্কি, ববি ফিশার, আনাতোলি কার্পভ এবং গ্যারি কাস্পারভ।

১৯৯৩ সালে রেইনিং ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন কাস্পারভের সাথে ফিদের মতবিরোধ ছিল। জিএম নাইজেল শর্ট সহ আরও অনেকে মিলে ফিদের বাইরে আরেকটি আন্তর্জাতিক দাবা সংস্থা তৈরি করেছিলেন। যার নাম ছিল Professional Chess Association(PCA)।

১৯৯৩ সাল থেকে দাবা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের দুটি শিরোপা ছিল। একটি PCA কর্তৃক অন্যটি ফিদে কর্তৃক। ২০০৬ সালে PCA এবং FIDE পুনরায় একত্রিত হয়।

সেই সময় থেকে ফিদে “অল ওয়ার্ল্ড দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ” ইভেন্টগুলি আয়োজন করেছে। বিজয়ীদের মধ্যে জিএমএস বিশ্বনাথন আনন্দ এবং বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ম্যাগনাস কার্লসেন রয়েছে। ২০২০ সাল দাবা বিশ্বে একটি দুর্দান্ত বিপ্লব দেখেছিল।

অনলাইন দাবা বিশাল পরিমাণে বেড়েছে কোভিড -১৯ মহামারীর কারণে। নেটফ্লিক্স দাবা নিয়ে মিনিসিরিজ কুইন্স গ্যাম্বিট তৈরি করেছে। ই-স্পোর্টস এ দাবা শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে।

দাবার বোর্ড

দাবা বোর্ড ৬৪টি সম-আকৃতি বর্গক্ষেত্র নিয়ে গঠিত। বোর্ডের ক্ষেত্রগুলো সাদা ও কালো রং দিয়ে একের পর এক ধারাক্রমে সজ্জিত। বোর্ডের নিচের দিকে A থেকে H পর্যন্ত বর্ণ লেখা আছে। আবার বাম দিকে ১ থেকে ৮ অবধি সংখ্যা রয়েছে।

এগুলো দিয়ে আসলে বোর্ডের কলাম ও সারি নির্দেশ করে। বর্ণগুলো প্রতিটি কলামকে নির্দেশ করে। সংখ্যাগুলো প্রতিটি সারিকে নির্দেশ করে। এর মাধ্যমে প্রতিটি ঘরকে আলাদা করে চিহ্নিত করা যায়। সাধারণ খেলোয়াড়েরা এসব দাগকাটা ঘরের ব্যাবহার না করলেও প্রফেশনাল খেলোয়াড়েরা এসব মুখস্থ রাখেন।

তাতে করে তাদের চাল দিতে সুবিধা হয় এবং সময় বাঁচে। বোর্ডের সাদা ঘর খেলোয়াড়দের ডান দিকে থাকবে। খেলা আরম্ভের সময় একজন খেলোয়াড়ের ১৬টি সাদা এবং অপরজনের ১৬টি কালো রংয়ের খুঁটি থাকে। খুঁটিগুলোর মধ্যে ১টি রাজা, ১টি মন্ত্রী, ২টি নৌকা, ২টি হাতি, ২টি ঘোড়া, ৮টি বোড়ে বা পণ থাকে।

দাবা খেলার প্রয়োজনীয় উপকরণ

দাবা খেলতে খেলোয়াড়দের দাবার গুটি এবং দাবাবোর্ডের একটি সেট প্রয়োজন। খেলোয়াড়রা যদি একটি সময়সীমার খেলা খেলার সিদ্ধান্ত নেয় তবে একটি দাবা ঘড়িও প্রয়োজন। খেলোয়াড়রা তাদের দাবার চালগুলো রেকর্ড করতে অনেকসময় স্কোর শীটও ব্যবহার করে।

গুটি পরিচিতি

দাবা খেলা প্রধানত গুটি দিয়েই খেলতে হয়। দাবা খেলতে হলে অবশ্যই এর গুটিগুলো চিনতে হবে। ইংরেজিতে গুটিকে বলে পিস (Piece)। একটি দাবার সেটে ৬ ধরনের গুটি থাকে। প্রতি দলে ১৬ টি করে গুটি থাকে। মোট গুটির সংখ্যা ৩২। গুটিগুলো বোর্ডের রঙের সাথে মিলিয়ে দুই ভাগে বিভক্ত থাকে।

সাধারণত গুটির রঙ সাদা ও কালোই হয়ে থাকে। গুটিগুলো হলো– সৈন্য(Pawn), নৌকা(Rook), ঘোড়া(Knight), হাতি(Bishop), মন্ত্রী(Queen) এবং রাজা(King)।

সৈন্য: সৈন্যকে অনেকে ‘বড়ে’ নামেও সম্বোধন করে। এর ইংরেজি নাম Pawn। প্রতি দলে সৈন্য থাকে ৮ টি। প্রতি সৈন্যের মূল্য ১ পয়েন্ট।

নৌকা: নৌকা এর ইংরেজি নাম Rook। প্রতি দলে নৌকা থাকে দুইটি করে। প্রতিটি নৌকার মূল্য ৫ পয়েন্ট।

ঘোড়া: ঘোড়া এর ইংরেজি নাম Knight। প্রতি দলে ঘোড়া থাকে দুইটি করে। প্রতিটি ঘোড়ার মূল্য ৩ পয়েন্ট।

হাতি: হাতি এর ইংরেজি নাম Bishop। এটি প্রতি দলে দুইটি করে থাকে। প্রতিটি হাতির মূল্য ৩ পয়েন্ট।

মন্ত্রী: মন্ত্রী এটি ইংরেজিতে Queen হিসেবে পরিচিত। বাংলায় আবার মন্ত্রী হিসেবে পরিচিত। দাবা খেলায় এটিই সবচেয়ে শক্তিশালী গুটি। প্রতি দলে মন্ত্রী থাকে একজন। মন্ত্রীর মূল্য ৯ পয়েন্ট।

রাজা: রাজার ইংরেজি নাম কিং King। রাজা যেকোন দলের প্রধান গুটি। দাবা খেলার একমাত্র গুটি যেটিকে কখনো কাটা যায় না। রাজা আটকে পড়লেই খেলা শেষ হয়ে যায়। স্বভাবতই প্রতি দলে মাত্র একজন রাজা থাকে। রাজার মূল্য অসীম।

আরো পড়ুন: লাইভ খেলা দেখার সফটওয়্যার ও লিংক

গুটির স্থান পরিবর্তন

দাবা খেলা সবগুলো গুটি সমান সমান ঘর যেতে পারে না৷ প্রতিটি গুটির নির্দিষ্ট একটি সীমা আছে৷ যা হলো–

রাজা: রাজা তার ডানে-বামে, সামনে-পেছনে অর্থাৎ‍ সবদিকে এক ঘর যেতে পারে।

মন্ত্রী: বোর্ডের ওপর মন্ত্রীর শক্তি সবচেয়ে বেশি। বোর্ডের একটি নৌকা ও গজ বা হাতির শক্তির সমান। মন্ত্রী নৌকার মতো ডানে-বামে এবং গজের মতো কোনাকুনি চলতে পারে। সামনে ঘুঁটি খেয়ে ঘর দখল করতে পারে।

নৌকা: ডানে-বামে অথবা সামনে-পেছনে নৌকা সোজা পথে চলে। কোনো পুঁটি ডিঙিয়ে যেতে পারে না। তবে চলার পথে কোনো খুঁটি থাকলে তা খেয়ে ওই ঘর দখল করতে পারে।

গজ বা হাতি: গজ কোনাকুনি চলে। কালো ঘরের গজ কালো ঘর দিয়ে, সাদা ঘরের গজ সাদা ঘর দিয়ে চলতে পারে।

ঘোড়া: ঘোড়া সামনে পেছনে, ডানে-বামে এক্কেবারে আড়াই ঘর লাফাতে পারে। নিজ বা বিপক্ষের ঘুঁটির ওপর দিয়ে ডিঙিয়ে যেতে পারে।

বড়ে বা সৈনিক: বড়ে হলো রাজার সৈনিক। এটি প্রথম চালে ইচ্ছা করলে দুই ঘর যেতে পারে। পরবর্তী চালগুলো এক ঘর করে এগিয়ে যাবে। অন্যসব ঘুঁটি পেছনে সরিয়ে আনা যায় কিন্তু বোড়ে কখনোই পেছনে চালা যায় না। বড়ে কোণাকুণি একর সামনের ঘুটি খেতে পারে।

বোর্ডে গুটি সাজানোর নিয়ম

গুটি সম্পর্কে তো জানলেন৷ চলুন এবার দাবার বোর্ডে গুটি সাজানো সম্পর্কে জেনে নিই।

বোর্ডের একদম নিচের সারিতে সবার বামে একটি নৌকা বসাতে হবে। তারপর তার পাশের ঘরটিতে একটি ঘোড়া, তার পাশের ঘরটিতে একটি হাতি, বোর্ডের ডান দিকের ঘরগুলোতে ক্রমান্বয়ে নৌকা, ঘোড়া ও হাতি বসাতে হবে।

গুটিগুলো সাদা হলে কালো ঘরে রাজা ও সাদা ঘরে মন্ত্রী বসাতে হয়। আর গুটি কালো হলে সাদা ঘরে রাজা ও অপর ঘরে মন্ত্রী বসাতে হবে। সবশেষে দ্বিতীয় সারির ৮টি ঘরেই সৈন্য বসিয়ে দিলেই ঘুটি বসানোর কাজ শেষ।

আরো পড়ুন: ফুটবল খেলার নিয়ম, ইতিহাস, বিশ্বকাপ ও রেকর্ড বিষয়ক যাবতীয় তথ্য

দাবা খেলার সাধারণ চাল বা নিয়মকানুন

যেকোনো দুইটি সৈন্য তাদের প্রথম চালের সময় একই সাথে এক ঘর করে এগোতে পারবে।

প্রথম চালের সময় সৈন্যের দুই ঘর যাওয়ার বাধ্যবোধকতা নেই। খেলোয়াড় চাইলে এক ঘরও চালতে পারেন।

সৈন্য সামনা-সামনি থাকা কোনো বিপক্ষ গুটি কাটতে পারবে না।

বিপক্ষ দলের গুটি কোণাকুনি থাকলে তবেই তা সৈন্য কাটতে পারবে।

বিপক্ষ দলের গুটি কাটলে সৈন্যকে কোণাকুনি এক ঘর চলে কলাম পরিবর্তন করতে হবে। অর্থাৎ যেই গুটি কাটা পড়বে সেই গুটির স্থানেই সৈন্য অবস্থান নেবে।

সৈন্য কোনো অবস্থাতেই পেছনে আসতে পারবে না।

সৈন্য কোনো অবস্থাতেই কোনো গুটি ডিঙ্গিয়ে চলতে পারবে না।

নৌকা ডানে-বায়ে ও উপরে-নিচে যেতে পারে।

নৌকার চলাচলের ক্ষেত্রে দূরত্বের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। অর্থাৎ পথ ফাঁকা থাকলে নৌকা যত ঘর ইচ্ছা যেতে পারে।

নৌকার চলার পথে বিপক্ষ কোনো গুটি পড়লেই নৌকা তা কাটতে পারবে।

নৌকা কোনো ভাবেই কোনো গুটি ডিঙ্গিয়ে চলতে পারবে না।

ঘোড়া প্রতি চালে আড়াই ঘর চলতে পারে। অর্থাৎ ডানে-বামে কিংবা উপরে-নিচে দুই ঘর এগিয়ে ঐ ঘরের ডানে বা বামে এক ঘর যেতে পারে।

ঘোড়া কোনো ভাবেই আড়াই ঘরের কম অথবা বেশি চলতে পারে না।

হাতি কোনোভাবেই পাশে চলতে পারবে না।

পথ ফাঁকা থাকলে হাতি যত ঘর ইচ্ছা চলতে পারবে।

হাতির চলার পথে বিপক্ষ গুটি পড়লেই হাতি তা কাটতে পারবে।

যেই হাতি খেলার শুরুতে কালো ঘরে ছিল তা কোনো ভাবেই সাদা ঘরে আসতে পারবে না।

যেই হাতি খেলার শুরুতে সাদা ঘরে ছিল তা কোনো ভাবেই কালো ঘরে আসতে পারবে না।

হাতি কোনো ভাবেই অন্য গুটি ডিঙ্গিয়ে চলতে পারবে না।

মন্ত্রী ডানে-বামে, উপরে-নিচে কিংবা কোণাকুনি সকল দিকে চলতে পারবে।

পথ ফাঁকা থাকলে মন্ত্রী যত ঘর ইচ্ছা যেতে পারবে।

মন্ত্রী তার গতিপথে থাকা যেকোনো বিপক্ষ গুটি কাটতে পারবে।

মন্ত্রীর একমাত্র সীমাবদ্ধতা হলো এটি কোনো গুটি ডিঙ্গিয়ে যেতে পারবে না।

রাজা প্রয়োজনে যেকোনো দিকে যেতে পারবে।

রাজা একটি চালে মাত্র এক ঘর যেতে পারবে।

নিজের অস্তিত্ব ধংস্ব হবে এমন কোনো ঘরে রাজা কখনোই যেতে পারে না।

রাজা কোনো গুটি ডিঙ্গাতে পারে না।

রাজার চালের সীমানার মধ্যে থাকলে রাজা যেকোনো বিপক্ষ গুটি খেতে পারে।

বিশেষ কিছু নিয়ম: দাবায় কিছু বিশেষ নিয়ম আছে যেগুলোকে শুরুতে যৌক্তিক মনে নাও হতে পারে। খেলাটিকে আরো মজার ও আকর্ষণীয় করতে এগুলো তৈরি করা হয়েছে।

দাবা খেলার নিয়ম
দাবা খেলার নিয়ম

আরো পড়ুন: ভলিবল খেলার নিয়ম, কলাকৌশল ও ইতিহাস বিষয়ক যাবতীয় তথ্য

দাবায় যেভাবে সৈন্যের পদোন্নতি করতে হয়

সৈন্যের একটা বিশেষ ক্ষমতা আছে এবং সেটা হল যে একটা সৈন্য যদি বোর্ডের অন্য পাশে যেতে পারে তাহলে এটি অন্য যেকোনো গুটি হতে পারবে (যাকে পদোন্নতি বলে)।

সৈন্য দিয়ে যেকোনো গুটি বানানো যাবে। একটা সাধারণ ভুল ধারণা আছে যে সৈন্য শুধু সেই গুটিই হতে পারবে যে গুটি খাওয়া গেছে। ধারণাটা ঠিক নয়। সৈন্য দিয়ে সাধারণত মন্ত্রী বানানো হয়। শুধুমাত্র সৈন্য দিয়েই অন্য গুটি বানানো যাবে।

দাবায় কীভাবে “এন প্যাসান্ট” করতে হয়

সৈন্য সম্পর্কিত শেষ নিয়মটি হল “এন প্যাসান্ট”, যেটি একটি ফরাসি শব্দ যার অর্থ “পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময়ে”। যদি সৈন্য প্রথম চালে দুই ঘর সামনে চালানো হয় এবং এর মাধ্যমে প্রতিপক্ষের সৈন্যের পাশের ঘরে বসে (অর্থাৎ দ্বিতীয় সৈন্যটির প্রথম সৈন্যটিকে খাওয়ার সুযোগ না দিয়ে পাশ কাটিয়ে পরের ঘরে যায়), তাহলে দ্বিতীয় সৈন্যটির ঐ পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়া সৈন্যটিকে খাওয়ার সুযোগ থাকবে।

প্রথম সৈন্যটি পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই এই বিশেষ চালটি দিতে হবে, অন্যথায় সৈন্যটিকে আর খাওয়ার সুযোগ থাকবেনা। এই অদ্ভুত, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ চালটি ভালভাবে বোঝার জন্য নিচের উদাহরণগুলোতে ক্লিক করুন।

যেভাবে দাবায় ক্যাসলিং করতে হয়

আরেকটা বিশেষ নিয়ম হলো ক্যাসলিং। এই চাল আপনাকে একসাথে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস করার সুযোগ দেয়: আপনার রাজাকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে আসা এবং নৌকাকে কোণা থেকে বের করে খেলায় আনা।

কোনো খেলোয়াড়ের চালের সময় তিনি তার রাজাকে যেকোনো একদিকে দুইঘর সরাতে পারেন এবং তারপর সেই দিকের নৌকাকে বিপরীত পাশে রাজের পাশে বসিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু ক্যাসলিং করতে হলে নিচের শর্তগুলো অবশ্যই মানতে হবে:

এটি অবশ্যই ঐ রাজাটির প্রথম চাল হতে হবে

এটা অবশ্যই ঐ নৌকার প্রথম চাল হতে হবে

রাজা ও নৌকার মাঝে কোন ঘুঁটি থাকতে পারবেনা

রাজাকে হয়তো চেক দেওয়া হয়নি অথবা চেক থেকে বের হয়ে যেতে পারে। খেয়াল করুন, যখন আপনি একদিকে ক্যাসল করবেন তখন রাজাটি বোর্ডের বেশি একপাশে চলে যায়। এটি “কিংসাইড” ক্যাসল বা শর্ট ক্যাসল নামে পরিচিত।

অন্য দিকে ক্যাসল করাকে, যেদিকে মন্ত্রী বসে, “কুইনসাইড” ক্যাসল বা লং ক্যাসল বলে। যেদিকেই করুন না কেন, ক্যাসলিং করার সময় রাজা সবসময় দুই ঘর চলে।

আরো পড়ুন: ক্রিকেট খেলার নিয়ম কানুন, ইতিহাস, বিশ্বকাপ, রেকর্ড বিষয়ক যাবতীয় তথ্য

দাবায় জয় পরাজয় ও ড্র

দাবা খেলার মূল উদ্দেশ্য হলো রাজাকে বন্দী করা। বাংলায় বলে কিস্তিমাত (Check Mate)। রাজার উপর চেক পড়লে বা প্রতিপক্ষের ঘুটি দ্বারা আক্রান্ত হলে তিনটি উপায়ে রাজা নিজেকে রক্ষা করতে পারে।

১. প্রতিপক্ষের আক্রমণকারী ঘুটিকে নিজের কোন ঘুটি দ্বারা কেটে

২. মধ্যবর্তী স্থানে নিজের কোন ঘুটি বসিয়ে বাধার সৃষ্টি করে

৩. আক্রান্ত ঘর থেকে নিজেকে সরিয়ে।

দাবা খেলায় মাত করার প্রনালী ও অর্থ

দাবা খেলায় জেতার জন্য বোর্ডের ওপর ঘুঁটির চাল দিয়ে প্রতিপক্ষের রাজাকে কোণঠাসা করে এমন অবস্থায় আনতে হয় যেখান থেকে রাজা আর অন্য চাল দিতে পারে না। অর্থাৎ রাজার চাল বন্ধ হয়ে যায়। রাজা আর নিজেকে রক্ষা করতে পারে না৷ দাবার পরিভাষায় একে বলে কিস্তিমাত। এই অবস্থায় প্রতিপক্ষকে বিজয়ী বলা হবে। দাবা খেলায় মাত করার প্রণালীর ক্ষেত্রে দুটি শর্ত অবশ্যই পূর্ণ করতে হবে। শর্তগুলো হলোপ্রথমত রাজার উপর চেক থাকতে হবে এবংদ্বিতীয়ত চেক থেকে বাঁচার কোন উপায় থাকবে না।আর এভাবেই দাবায় মাত বা কিস্তিমাত করা হয়।

দাবায় খেলা ড্র হবার কিছু নিয়ম রয়েছে। এগুলো হলো–

১. দুই পক্ষের সম্মতি

২. ফিফটি মুভ রুল

৩. গুটির অভাব

৪. একই অবস্থার পুনরাবৃত্তি

৫. স্টেলমেট

দুই পক্ষের সম্মতি: খেলার যে কোন পর্যায়ে উভয় পক্ষ ড্রো এর ব্যাপারে সম্মত হলে ফলাফল ড্রো হবে। তবে এক্ষেত্রে যার চাল থাকবে তাকে ড্রো এর প্রস্তাব দিতে হবে এবং প্রতিপক্ষ তা মেনে নিলে ফলাফল চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।

ফিফটি মুভ রুল: এই নিয়মটিও খেলোয়াড়দের বার বার একই চাল দেওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য সৃষ্টি হয়েছে। এই নিয়ম অনুযায়ী যেকোনো টানা ৫০ চালের ভেতর যদি কোনো গুটি কাটা না যায় অথবা কোনো সৈন্য না নড়ে তাহলে ঐ খেলাটি ড্র হিসেবে গণ্য হবে। অনেক স্থানে ৫০ চালের বদলে ৭৫ চাল ধরেও এই নিয়ম অনুসরণ করা হয়।

গুটির অভাব: গুটির অভাব দাবা খেলা ড্র হওয়ার অন্যতম কারণ। যখন বোর্ডে শুধু দুইজন রাজা বেঁচে থাকে তখন খেলাটি ড্র হয়। কারণ শুধু দুইজন রাজার পক্ষে বৈধ ভাবে খেলা শেষ করা সম্ভব নয়। এছাড়াও টুর্নামেন্ট ব্যাতীত অন্যান্য খেলায় দুইজন খেলোয়াড়ের সম্মতি ক্রমে ড্র ঘোষণা করা যেতে পারে।

একই অবস্থার পুনরাবৃত্তি: দাবার বোর্ডে একই অবস্থা তিনবার বা তার বেশি পুনঃপুনঃ আসলে খেলার ফলাফল ড্রো হবে। রাজাকে বারবার চেক দেওয়ার মাধ্যমে এই অবস্থা হতে পারে অথবা অন্য যে কোন চাল বার বার পুনরাবৃত্তি করার কারনে এই অবস্থা হতে পারে।

এক্ষেত্রে যে কোন এক পক্ষ দাবি করলেই খেলার ফলাফল ড্রো হবে। লক্ষণীয় যে, পরপর তিনবার চেক দিলেই খেলা ড্রো হবেনা, বরং একই অবস্থার তিনবার পুনরাবৃত্তি হতে হবে।

স্টেলমেট: খেলার মধ্যে যদি এমন কোন অবস্থা আসে যখন রাজার উপর কোন চেক না থাকা অবস্থায় কোন বৈধ চাল নেই তখন সেটি ড্রো হবে। এই ধরণের অবস্থা বেশিরভাগ সময় প্রতিপক্ষের ভূলের কারণে হয়ে থাকে।

দাবায় ভালো করতে হলে

দাবা খেলায় ভালো করার প্রথম নিয়ম হচ্ছে আপনাকে একজন ভালো মানুষ হতে হবে এবং মানষিকভাবে শান্ত ও দুশ্চিন্তামুক্ত থেকে খেলতে হবে। দাবায় ভালো করতে হলে শেষ নিয়মটি হছে প্রচুর পড়াশুনা করা এবং প্রাকটিস করা।

একটি জরিপে দেখা গেছে, দাবার বিখ্যাত খেলোয়াড়েরা অন্য যে কোন পেশার মানুষের চেয়ে বেশি পড়াশুনা করে থাকেন। কথিত আছে, দাবার সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারতের বিশ্বনাথ আনন্দ দৈনিক আঠারো ঘন্টা পর্যন্ত স্টাডি করেন/করতেন।

কোনো কিছুতে ভাল হতে চাইলে অনুশালীনের কোনোই বিকল্প নেই। তাই দাবা খেলায় ভাল হতে চাইলে প্রচুর অনুশীলন করুন। সম্ভব হলে আসল প্রতিপক্ষের সাথে খেলুন। সম্ভব না হলে কম্পিউটার বা মোবাইলে দাবার গেম নামিয়ে খেলুন।

সকল গুটি সব সময় এবং সকল স্থানে শক্তিশালী থাকে না। যেমন খেলার মধ্যম পর্যায় বোর্ডের মাঝে সৈন্যরা বেশ শক্তিশালী। কিন্তু খেলার শেষ পর্যায়ে একক সৈন্য একেবারেই দুর্বল। এছাড়াও ঘোড়া বোর্ডের মাঝে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে।

অন্যদিকে হাতি বোর্ডের কোণে দারুণ বিধ্বংসী। একই ভাবে ঘোড়া অধিক সংখ্যক গুটির মধ্যে ভাল খেলতে পারে। কিন্তু হাতি ফাঁকা বোর্ডে ভাল ফলাফল দেয়। এভাবে প্রতিটি গুটির শক্তিমত্তা এবং দুর্বলতা রয়েছে। খেলার সময় অবশ্যই এই বিষয়গুলির প্রতি নজর দিতে হবে।

নিজের ভুল থেকে শেখা দাবার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রতিটি ম্যাচ হারার পরে কেন হেরেছেন এবং কি কি ভুল করেছেন তা ভেবে দেখুন। যদি তার সুযোগ না থাকে তাহলে খেলাগুলোর রেকর্ড রাখার চেষ্টা করুন।

অনেক খেলোয়াড়ই কি করবেন ভেবে না পেয়ে অহেতুক চাল দেন। এটি করা একদমই উচিত নয়। খেলায় জিততে হলে প্রথম থেকেই ভেবে চাল দিতে হবে। কোনো চালই নষ্ট করা যাবে না। খুব উঁচু দরের খেলোয়াড় না হলে সকলেরই উচিত দাবার নিয়মগুলো নিয়মিত পড়া।

নিয়ম জানা থাকলেও এটি করা উচিত। কারণ যেকোনো কৌশল খাটাতে গেলে এসব নিয়ম আপনাকে সিধান্ত নিতে ও কৌশল তৈরি করতে সাহায্য করবে।

দাবা খেলার উপকারিতা

দাবা যদিও শারীরিক কোন উপকার করে না। কিন্তু মানসিক ভাবে ভালো রাখতে দাবা অনেক সাহায্য করে। দাবা খেলার উপকার গুলো হল–

১. যুক্তিসঙ্গতভাবে চিন্তা করতে শেখায়

২. স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি

৩. ধৈর্যশক্তি বাড়ায়

৪. সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়ায়

৫. মনোযোগ বাড়ায়

৬. হেরে গেলে মেনে নেওয়ার মানসিকতা তৈরী করে

৭. সৃজনশীল চিন্তাশীলতা বৃদ্ধি করে

৮. চাপের মাঝেও চিন্তা করার দক্ষতা বৃদ্ধি করে

৯. ভিন্ন ভিন্ন প্যাটার্ন চেনার ও মনে রাখা শেখা যায়

১০. কোন কাজ করার ফলাফল কি হতে পারে তা চিন্তা করতে শেখায়

১১. অন্যের অবস্থায় নিজেকে চিন্তা করতে শেখায়

১২. পরিকল্পনার দক্ষতা বাড়ায়

১৩. দূরদৃষ্টি বৃদ্ধি করে

১৪. মস্তিষ্কের উভয় পাশেরই সমানভাবে ব্যায়াম হয়

দাবা খেলার পদ-পদবী

দাবা খেলার সর্বোচ্চ খেতাব যা দাবা খেলার আন্তর্জাতিক সংগঠন ফিদে কর্তৃক দেওয়া হয় আন্তর্জাতিক গ্র্যান্ডমাস্টার। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া ছাড়া গ্র্যান্ডমাস্টার হল একমাত্র খেতাব যা একজন দাবা খেলোয়াড় অর্জন করতে পারেন।

একবার অর্জন করার পর আজীবন একজন খেলোয়াড় এই পদবীর দাবিদার থাকেন। দাবার পরিভাষায় সংক্ষেপে এই পদবীকে বলা হয় জিএম বা গ্র্যান্ডমাস্টার। দাবার অন্যান্য পদবী বা খেতাব সংক্ষেপিত হয় এইভাবে, এফএম বা ফিদে মাস্টার; সিএম বা ক্যান্ডিডেট মাস্টার এবং আইজিএম ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যান্ডমাস্টার।

গ্র্যান্ডমাস্টার, ‌আন্তর্জাতিক মাস্টার এবং ফিদে মাস্টার পদবী মহিলা ও পুরুষ উভয়েই অর্জন করতে পারেন। ১৯৭৮ সালে মহিলা দাবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, নোনা গাপ্রিন্দাশভিলিকে ফিদের বিশেষ বিবেচনায় গ্রান্ডমাস্টার খেতাব দেয়া হয়। দাবার সর্বোচ্চ সংস্থা ‘ফিদে’ (Fédération Internationale des Échecs – FIDE) রেটিং এর জন্য এলো ELO সিস্টেম অনুসরণ করে।

বাংলাদেশে ৫ জন গ্র‍্যান্ডমাস্টার, ২ জন আন্তর্জাতিক মাস্টার, ১২ জন ফিদে মাস্টার, ৯ জন ক্যান্ডিডেট মাস্টার, ১ জন নারী আন্তর্জাতিক মাস্টার, ৪ জন নারী ফিদে মাস্টার এবং ১ জন নারী ক্যান্ডিডেট মাস্টার আছেন।

রেটিং পদ্ধতি অনুসারে পদবী

রেটিং: ২৭০০ বা এর বেশি

পদবী: সুপার গ্র‍্যান্ডমাস্টার

রেটিং: ২৫০০-২৭০০

পদবী: গ্রান্ডমাস্টার (জিএম)

রেটিং: ২৪০০-২৫০০

পদবী: আন্তর্জাতিক মাস্টার (আইএম)

রেটিং: ২৩০০-২৪০০

পদবী: ফিদে মাস্টার (এফএম)

রেটিং: ২২০০-২৩০০

পদবী: ফিদে ক্যান্ডিডেট মাস্টার (সিএম)

রেটিং: ২০০০-২২০০

পদবী: ক্যান্ডিডেট মাস্টার

রেটিং: ১৮০০-২০০০

পদবী: এ শ্রেণী

রেটিং: ১৬০০-১৮০০

পদবী: বি শ্রেণী

রেটিং: ১৪০০-১৬০০

পদবী: সি শ্রেণী

রেটিং: ১২০০-১৪০০

পদবী: ডি শ্রেণী

রেটিং: ১২০০ এর কম

পদবী: শিক্ষানবিশ

দাবা এবং বাংলাদেশ

দাবা খেলার প্রচলন বাংলাদেশের অনেক আগে থেকেই ছিল। ভারতীয় উপমহাদেশে দাবা খেলার জন্ম হওয়া উপলক্ষে বাংলাদেশের প্রভাব ছিল দাবা খেলার। অনেক বিখ্যাত বিখ্যাত বাঙালি দাবা খেলোয়ার ও আছে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে প্রথম দাবা ফেডারেশন গঠিত হয়।

বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা করেন কাজী মোতাহার হোসেন। কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন নিখিল পাকিস্তান জাতীয় দাবা ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ দাবা সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন।

দাবা সংঘ ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনে পুনরায় সংগঠিত হয়। কাজী মোতাহার হোসেন বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন। এর অবস্থান ক্রীড়া কক্ষ, ২য় তলা, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরাতন ভবন, ৬২/৩ পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।

১৯৮৫ সালে, বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন তার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির নামে বার্ষিক ড. কাজী মোতাহার হোসেন আন্তর্জাতিক মাস্টার্স দাবা টুর্নামেন্ট শুরু করে।

বাংলাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোরশেদ। ১৯৮৭ সালে ২১ বছর বয়সে উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব অর্জন করেন নিয়াজ। তখন গোটা এশিয়াতেই গ্র্যান্ডমাস্টার ছিলেন মাত্র চারজন। এরপর গত ৩৪ বছরে মাত্র চারজন গ্র্যান্ডমাস্টার পেয়েছে বাংলাদেশ।

২০০২ সালে গ্র্যান্ডমাস্টার হয়েছেন জিয়াউর রহমান। ২০০৬ সালে রিফাত বিন সাত্তার, ২০০৭ সালে আবদুল্লাহ আল রাকিব। সর্বশেষ গ্র্যান্ডমাস্টার ২০০৮ সালে পেয়েছে বাংলাদেশ, সেবার এই খেতাব পান এনামুল হোসেন রাজীব।

অলিম্পিকে কেন দাবা খেলা নেই?

দাবা যদিও বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন এবং জনপ্রিয় একটি খেলা। জেনে আশ্চর্য হবেন যে কে এখনো দাবার অন্তর্ভুক্তি হয়নি। কারণটাই বা কি? কেন এখনো দাবা খেলা অলিম্পিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। দাবা খেয়ে অলিম্পিকে যুক্ত না করার পেছনে যে যুক্তি দেয়া হয় তা হল দাবাকে একটি খেলা মনে করা হয় না।

খেলার সংজ্ঞায় বলা আছে খেলায় শারীরিক উপস্থিতি থাকতে হবে যার পিছে শারীরিক শক্তি জড়িত। কিন্তু দাবা সম্পূর্ন একটি মানসিক খেলা। এর পিছে শারীরিক শক্তি সামর্থের কোন প্রয়োজন নেই। যদিও মানসিক শক্তি দাবায় খেলতে সাহায্য করে কিন্তু শারীরিক শক্তি কম বেশি হলে দাবায় খেলার কোন প্রভাব বিস্তার করে না। আর এ কারণেই অলিম্পিকে এখনো দাবা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

দাবা খেলার নিয়ম কানুন বিস্তারিত খুঁটিনাটি আমরা জেনেছি। আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা দাবা খেলার সম্পূর্ণ পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন।

লিখেছেন: রাকিব খান

Leave a Comment