ব্যাডমিন্টন খেলার নিয়ম, কলাকৌশল ও ইতিহাস বিষয়ক যাবতীয় তথ্য

শীতকালে নারী পুরুষ থেকে শুরু করে ছোটদের মধ্যেও অন্যতম জনপ্রিয় একটি খেলা হলো ব্যাডমিন্টন। শীতপ্রধান দেশে ব্যাডমিন্টন অনেক জনপ্রিয় খেলা। তবে শুধু শীতপ্রধান দেশ না বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এই খেলাটির জনপ্রিয়তা অত্যাধিক। আমরা আজকে এই ব্যাডমিন্টন খেলার আদ্যোপান্ত জানব।

ব্যাডমিন্টন মূলত র‌্যাকেট দিয়ে খেলা হয়। যা একটি জালের সামনে র‌্যাকেট দিয়ে শাটল কর্ককে আঘাত করার মাধ্যমে খেলা হয়।

ব্যাডমিন্টন খেলা বিষয়ক যাবতীয় তথ্য

ব্যাডমিন্টন এর নামকরণ কীভাবে হয়?

ব্যাডমিন্টন নামটির সঠিক উৎপত্তি এখনো অস্পষ্ট। ধারণা করা হয় বৃটেনের দক্ষিণ-পশ্চিমের একটি প্রদেশ গ্লুচেস্টারশায়ারে অবস্থিত ডিউক অব বিউফোর্ট এর ব্যাডমিন্টন হাউস থেকে নামটি এসেছে। কিন্তু কেন এবং কোথা থেকে এসেছে তা অস্পষ্ট রয়ে গেছে।

১৮৬০ সালের প্রথম দিকে, আইজ্যাক স্প্র্যাট নামে লন্ডনের একজন খেলনা ব্যবসায়ী “ব্যাডমিন্টন ব্যাটলডোর – এ নিউ গেম” নামের একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেছিলেন। সেখান থেকেও এ নামের উৎপত্তি হতে পারে।

ব্যাডমিন্টন খেলার ইতিহাস

ব্যাডমিন্টন খেলাটি প্রায় দুই হাজার বছরের পুরনো। পৃথিবীর নানান অঞ্চলে এই খেলাটি পরিবর্তিত হয়ে বর্তমান রূপ ধারণ করেছে। এর পিছে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। ধারণা করা হয় ব্যাবিলনিয় সভ্যতায় (বর্তমান ইরাক-ইরান) এই খেলার ধরনের আদি উৎপত্তি। তবে সেটি ছিল বর্তমান সময়ের তুলনায় একেবারেই আলাদা। ভাগ্য গণনার কাজে এই খেলার ধারণা ব্যবহার করা হতো।

মধ্য যুগে জাপানেও এই খেলা ধারণা পাওয়া যায়। তবে বর্তমান সময়ের সাথে জাপানের মধ্যযুগের খেলার পার্থক্য হল জাপানে বর্তমান সময়ের মতো কোন জাল ব্যবহার করা হতো না। পরে ধীরে ধীরে খেলাটি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

তবে আধুনিক ব্যাডমিন্টন খেলার জন্ম হয়েছে ভারতেই। এই খেলার শুরু করেছে ভারতের পুনায়(বর্তমান পুনে) অবস্থানরত ব্রিটিশ নাগরিকরা। ১৮৬০-৭০ সালের দিকে ভারতে অবস্থানরত ব্রিটিশরা এই খেলা খেলত।

পরে ব্রিটিশরা নিজেদের দেশে গিয়ে এই খেলার ব্যাপক প্রচলন ঘটায়। আধুনিক ব্যাডমিন্টনের প্রায় সব নিয়মই এই সময়ের মধ্যেই তৈরি হয়। তাই বলতে পারি ব্যাডমিন্টনের জন্ম ভারতে এবং সেটা ব্রিটিশদের দ্বারা।

আরো পড়ুন: সরাসরি খেলা দেখার সফটওয়্যার ও লিংক

আন্তর্জাতিক পরিসরে ব্যাডমিন্টন

ব্যাডমিন্টন খেলাটি প্রথমে ইংল্যান্ডেই সীমাবদ্ধ ছিলো। তবে ধীরে ধীরে তা আন্তজার্তিকভাবেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। ১৯০৪ সালে একটি ইংল্যান্ড-আয়ারল্যান্ড ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচ আয়োজিত হয় যা ছিলো আন্তর্জাতিক ভাবে আয়োজিত প্রথম প্রতিযোগিতা।

আন্তর্জাতিক ভাবে খেলাটির নিয়ন্ত্রণ এর জন্য কমিটি গঠন করা হয় ১৯৩৪ সালে। যার প্রাথমিক নাম ছিলো’ ” ইন্টারন্যাশনাল ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন (আইবিএফ)”। এর গঠনকালীন সদস্যসংখ্যা ছিলো নয়টি। দেশগুলো হলো কানাডা, ডেনমার্ক, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলস।

১৯৮১ সালে IBF একীভূত হয় ওয়ার্ল্ড ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন (BWF) এর সাথে। ২০০৬ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর স্পেনের মাদ্রিদে একটি বৈঠকে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ” ব্যাডমিন্টন ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন (বিডাব্লিউএফ) “। বর্তমানেও এই নামটিই ব্যবহৃত হচ্ছে।

এই সংস্থাটিই বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাডমিন্টনের সকল প্রতিযোগীতা ও নিয়মাবলী প্রনয়ণ এবং অন্যান্য বিষয়াদি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আঞ্চলিক ব্যাডমিন্টন নিয়ন্ত্রণ সংস্থাও রয়েছে।

আর প্রায় প্রতিটি দেশেই ব্যাডমিন্টন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকে সর্বপ্রথম ব্যাডমিন্টন খেলা শুরু হয়। অলিম্পিকে যুক্ত হওয়ার পর ব্যাডমিন্টন এর জনপ্রিয়তা আরো বাড়তে থাকে। বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় খেলা ব্যাডমিন্টন।

মালয়েশিয়ার জাতীয় খেলা সেপাক টার্কো নামক একটি খেলা যা অনেকটা ব্যাডমিন্টনের মতো। তবে সেটাকে পুরোপুরি ব্যাডমিন্টন বলা যায় না। কারন সে খেলাতে হাত ব্যবহার করা যায় না।

বাংলাদেশে কবে ব্যাডমিন্টন খেলা শুরু হয়?

১৯৬০-৭০ সালের দিকে বাংলাদেশের প্রথম দিকে উচ্চবিত্ত ও শহুরে জনগোষ্ঠীর মধ্যেই ব্যাডমিন্টন খেলার প্রচলন ছিল। কিন্তু পরে ধীরে ধীরে খেলার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। এখন চাই দেশের প্রত্যেকটি অঞ্চলেই ব্যাডমিন্টন খেলা হয়। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন গঠিত হয়।

এই ফেডারেশনের অধীনেই বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন দল বিভিন্ন ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক খেলায় অংশগ্রহণ করে থাকে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় আবদুল হামিদ দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো র‌্যাঙ্কিংয়ের ৫০ এ জায়গা করে নিয়েছিলেন।

র‍্যাংকিং এ এটাই বাংলাদেশের সেরা সাফল্য। যদিও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পদকে ব্যাডমিন্টনে বাংলাদেশের সাফল্য তেমন নেই। তবে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে জায়গা করে নিতে তৎপর চালিয়ে যাচ্ছে।

ব্যাডমিন্টন খেলার প্রয়োজনীয় উপকরণ কী কী?

ব্যাডমিন্টন খেলতে নির্দিষ্ট কিছু উপকরণ এর দরকার হয় এগুলো হলো শাটল বা কর্ক র‍্যাকেট বা ব্যাট এবং জাল বা নেট।

কর্ক: কর্কের দুটি অংশ থাকে। নিচের অংশটি রাবারের তৈরি। যা দেখতে গোলাকার। কর্কের উপরের অংশটি পালক দিয়ে তৈরি।

র‍্যাকেট: ব্যাডমিন্টন খেলায় র‍্যাকেটের দুটি অংশ থাকে। একটি হলো হ্যান্ডেল আরেকটি হলো মাথা মাথাটি হ্যান্ডেলের সাথে লাগানো থাকে। মাথায় জাল বোনা থাকে। র‍্যাকেটের নির্দিষ্ট মাপ রয়েছে। দৈর্ঘ্য ৬৮ সে.মি. এর বেশি এবং প্রস্থ ২৩ সে.মি. এর বেশি হতে পারবে না।

জাল বোনা মাথার দৈর্ঘ্য সর্বাধিক ২৮ সেঃমিঃ চেয়ে বেশি হবেনা এবং জাল বোনা মাথার প্রস্থ সর্বাধিক ২২ সেঃমিঃ চেয়ে বেশি হবেনা। মাপগুলি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।

নেট বা জাল: ব্যাডমিন্টন খেলার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হলো নেট বা জাল। দৈর্ঘ্য ২০ ফুট এবং উচ্চতায় ২.৫ ফুট। নেটের মাথাটি মাটি থেকে ৫ ফুট ১ ইঞ্চি উচ্চতায় স্থাপন করতে হয়। নেটটি দুইপাশে রশি দিয়ে বাঁধা থাকে।

আরো পড়ুন: দাবা খেলার নিয়ম, ইতিহাস, কলাকৌশল ও ভালো খেলতে করণীয়

ব্যাডমিন্টন খেলার নিয়ম কানুন

কোর্ট: ব্যাডমিন্টন খেলার কোর্ট আয়তাকার হয়ে থাকে। কোর্টের মেঝে কাঠের হলে ভালো, তবে যেন পিচ্ছিল না হয়। কোর্টের রং সাধারণত উজ্জ্বল হয়। সম্পূর্ণ কোর্টটি স্পষ্ট দাগ দিয়ে নির্দিষ্ট করা থাকে। কোর্ট কোন হালকা রঙের হলে দাগগুলো কালো হতে হবে, অন্যথায় দাগের রঙ হবে সাদা।

দৈর্ঘ্য বরাবর মাঝখানে একটি দাগ দিয়ে কোর্টকে দুইভাগে ভাগ করা হয়। একক অথবা দ্বৈত উভয়ভাবেই ব্যাডমিন্টন খেলা হয়। একক ম্যাচে উভয়পক্ষে ১ জন করে সর্বমোট ২ জন খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করে। দ্বৈত খেলায় উভয়পক্ষে ২ জন করে সর্বমোট ৪ জন খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করে। 

কোর্টের সম্পূর্ণ প্রস্থ হলো ৬.১ মিটার (২০ ফুট), এবং একক কোর্টের ক্ষেত্রে এই প্রস্থ হলো ৫.১৮ মিটার (১৭.০ ফুট)।

কোর্টের সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য হলো ১৩.৪ মিটার (৪৪ ফুট)। সার্ভিস কোর্টগুলিকে জাল থেকে ১.৯৮ মিটার (৬ ফুট ৬ ইঞ্চি) দূরত্বে একটি সংক্ষিপ্ত সার্ভিস লাইন দ্বারা কোর্টের প্রস্থকে বিভক্ত কেন্দ্র রেখা দ্বারা চিহ্নিত করা হয় এবং বাইরের দিক ও পিছনের দিক সীমানা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।

দ্বৈত কোর্টে সার্ভিস কোর্ট একটি দীর্ঘ সার্ভিস লাইন দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, যা পিছনের সীমানা থেকে ০.৭৬ মিটার (২ ফুট ৬ ইঞ্চি) সামনে।

খেলার নিয়ম ও পয়েন্ট

১. ব্যাডমিন্টন সিঙ্গলস, ডবলস্ ও মিশ্র ডবলস্ হয়ে থাকে। সিঙ্গেলস ও ডাবল উভয় খেলায় সাধারণত ১৫ থেকে ২১ পয়েন্টে গেম হয়। উভয় খেলোয়াড় বা দল ২০-২০ পয়েন্ট অর্জন করলে সেক্ষেত্রে ২ পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে থেকে জয়লাভ করতে হবে, অর্থাৎ ২২-২০, ২৫-২৩ ইত্যাদি।

২. উভয় দলের পয়েন্ট সমান হওয়াকে ডিউস বলে। মনে রাখতে হবে, এভাবে সর্বোচ্চ ৩০ পয়েন্টের মধ্যে অবশ্যই গেম শেষ করতে হবে। তিনটি গেমের মধ্যে যে বা যে দল দুই খেলায় জিতবে, তারাই বিজয়ী হবে।

৩. একক খেলার সময় সার্ভিসকারীর পয়েন্ট শূন্য বা জোড় সংখ্যা হলে খেলোয়াড় তাদের ডান দিকের কোর্ট থেকে সার্ভিস করবে এবং বেজোড় সংখ্যা হলে বাম দিকের কোর্ট থেকে সার্ভিস করবে। প্রতি পয়েন্টের পর খেলোয়াড়রা তাদের সার্ভিস বা রিসিভ কোর্ট বদল করবে।

৪. দ্বৈত খেলার সময় প্রথম সার্ভিসের জন্য ডানদিকের খেলোয়াড় কোনাকুনি বিপক্ষের কোর্টে সার্ভিস করবে। যাকে সার্ভিস করা হবে কেবল সেই খেলোয়াড় সার্ভিস গ্রহণ করবে। কোনো খেলোয়াড় পরপর দুইবার সার্ভিস করতে পারবে না। প্রথম গেমে বিজয়ী খেলোয়াড় দ্বিতীয় গেমে সার্ভিস শুরু করবে।

৫. সার্ভিসের সময় সার্ভারের দুই পা মাটি স্পর্শ করে থাকবে। সার্ভিস করার সময় শাটল নেটে লেগেও যদি ঠিক কোর্টে পড়ে তবে সার্ভিস ঠিক হয়েছে বলে ধরা হবে। শাটল দাগ স্পর্শ করলেই শুদ্ধ হয়েছে বলে ধরা হবে।

৬. নেট অতিক্রম করে কেউ শাটলে আঘাত করতে পারবে না এবং খেলা চলাকালে কেউ র‌্যাকেট বা শরীরের কোনো অংশ দিয়ে নেট ও পোস্ট স্পর্শ করতে পারবে না।

৭. যে দল টসে জিতবে সেই দল ঠিক করবে সার্ভিস করবে, না কোন প্রান্তের কোর্টে খেলবে।

৮. প্রতিটি খেলা “বেস্ট অফ থ্রি” সেট হবে। যে দল প্রথম ২১ পয়েন্ট পাবে সেই দল জয়ী হবে, কিন্তু উভয় দলের পয়েন্ট ২০ হলে যে দল প্রথমে ২৩ পয়েন্টে পৌঁছবে সেই দল জয়ী হবে। যদি খেলায় ও পয়েন্টের ব্যবধান না থাকে তবে খেলা চলতে থাকবে ২৯ অবধি এবং যে দল প্রথম ৩০ পয়েন্ট পাবে সেই দল জয়ী হবে।

৯. যে দল গেম জেতে সেই দল পরবর্তী গেমে প্রথম সার্ভিস করে।

১০. টেনিস পয়েন্টের ন্যায় উভয়দলই পয়েন্ট লাভ করে।

১১. প্রত্যেক গেমের শেষে খেলোয়াড়দের কোর্ট বদল করতে হয়। কেবলমাত্র তৃতীয় গেমে কোনো দল প্রথম ১১পয়েন্ট পেলে কোর্ট পরিবর্তিত হয়।

১২.প্রত্যেক গেমের মাঝে ৯০ সেকেন্ডের বেশি বিরতি দেওয়া হয় না।

১৩. আম্পায়ারের অনুমতি ব্যতিরেকে কোন খেলোয়াড় কোর্ট ত্যাগ করতে পারে না।

১৪. কোনো সার্ভিস তখনই সঠিক বলে গণ্য হবে যখন–

(i) কোনো দলের খেলোয়াড় সার্ভিস বোর জন্য অযথা দেরি না করে।

(II) সার্ভিসকারী ও সার্ভিস গ্রহণকারী আড়াআড়িভাবে দাঁড়াবে এবং উভয়েই কোনো সীমারেখা স্পর্শ না করে মাটিতে দু’পা স্পর্শ করে স্থির হয়ে দাঁড়াবে।

(iii) সার্ভিসকারী শাটলকে কোমরের নিচে থেকে মারবে।

(iv) সার্ভিসকারীর র‍্যাকেটের সঞ্চালন সর্বদা সামনের দিকে হবে সার্ভিস করার।

(v) সার্ভিস করার পর শাটলের গতিপথ নেটের উপর দিয়ে উর্ধমুখী হবে।

(vi) সার্ভিস করার পর শাটল সার্ভিস কোর্টে পড়বে।

(vii) শাটলকে হাত থেকে ছেড়ে সার্ভিস করতে হবে।

১৫. সিঙ্গলস্ খেলায় খেলোয়াড়রা ডানদিকের কোর্ট থেকে সার্ভিস করবে এবং বিপক্ষ ডানদিকের কোর্ট থেকে তা গ্রহণ করবে যখন, সার্ভিসকারীর পয়েন্ট শূন্য অথবা কোনো জোড় সংখ্যা হবে। বিজোড় সংখ্যার পয়েন্ট হলে বামদিকের কোর্ট থেকে সার্ভিস করবে এবং প্রতিপক্ষ তার বামদিকের কোর্ট থেকে সার্ভিস গ্রহণ করবে।

১৬. সার্ভিসকারী ও তার বিপক্ষ পর পর শাটলকে মারবে এবং বিপরীত কোর্টে পাঠাবে। যখন সার্ভিস গ্রহণকারী কোনো ফল্ট (Fault) করে বা শাটল তাঁর নিজস্ব কোর্টের ভূমি স্পর্শ করে তখন সার্ভিসকারী একটি পয়েন্ট পায় এবং পাশের কোর্ট থেকে সার্ভিস করার সুযোগ পায়।

১৭. সার্ভিসকারী কোনো ফল্ট (Fault) করলে বা শাটল তার কোর্টের ভূমি স্পর্শ করলে বিপক্ষ পয়েন্ট পাবে এবং সার্ভিস পরিবর্তন হবে।

১৮. ডাবলস্ খেলায় একই দলের দুজন খেলোয়াড় পয়েন্টের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের মধ্যে কোর্ট পরিবর্তন করে খেলবে।

১৯. কোনো কারণে খেলা স্থগিত হয়ে গেলে, আম্পায়ার ‘লেট’ উচ্চারণ করবে এবং খেলা পুনরায় চালু করবে। লেটের ক্ষেত্রে কোনো দল পয়েন্ট পায় না।

২০. “Fault” এর জন্য দায়ী কারণসমূহ নিম্নরূপ:

(I) সার্ভিস সঠিক না হলে।

(II) সার্ভিস করার সময় শাটলকে মারতে না পারলে।

(III) সার্ভিসের পর শাটল নেটে আটকে গেলে।

(iv) কোর্টের বাইরে শাটল পড়লে।

(v) নেটের ভিতর বা তলা দিয়ে শাটল গেলে।

(vi) নেট অতিক্রম না করলে।

(vii) শাটল খেলোয়াড়ের গায়ে লাগলে।

(viii) খেলা চলাকালীন খেলোয়াড়ের কোনো অংশ নেট স্পর্শ করলে।

(ix) নেটের উপর দিয়ে অপরপক্ষের কোর্টে গেলে।

(x) পরপর দুবার শাটলকে মারলে।

(xi) খেলোয়াড়ের র‍্যাকেট স্পর্শ করে কোর্টের বাইরে শাটল গেলে।

(xii) খেলা চলাকালীন প্রতিপক্ষকে চিৎকার বা অঙ্গভঙ্গি করে বাধা প্রদান করলে

২১. ব্যাডমিন্টন খেলায় একজন রেফারি, একজন আম্পায়ার দুজন সার্ভিস বিচারক দুজন লাইন্সম্যান ও দুজন স্কোরার থাকেন।

আরো পড়ুন: ফুটবল খেলার নিয়ম, ইতিহাস, বিশ্বকাপ ও রেকর্ড বিষয়ক যাবতীয় তথ্য

বিখ্যাত ব্যাডমিন্টন খেলার টুর্নামেন্টসমূহ

ব্যাডমিন্টনের আন্তর্জাতিক কিছু টুর্নামেন্ট রয়েছে৷ এগুলো হলো:

  • ১. থমাস কাপ
  • ২. উবার কাপ
  • ৩. BWF ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ
  • ৪.সুদিরমান কাপ
  • ৫. ওয়ার্ল্ড গ্র‍্যান্ড পিক্স ফাইনাল ইত্যাদি

বিশ্বের সেরা দশ জন ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়

১. লিন ডান(চীন): সর্বকালের সেরা ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় বলা হয় চীনের লিন ডান কে। অলিম্পিকে টানা দুইবার সোনা জয়ী খেলোয়াড় হচ্ছেন লিন ডান।

২. তৌফিক হিদায়াত(ইন্দোনেশিয়া): ইন্দোনেশিয়া অপেনে সর্বোচ্চ ৬ বার বিজয়ী হলেন তৌফিক হিদায়াত৷ এছাড়াও ২৭ টি আন্তর্জাতিক ট্রফি জিতেছেন তিনি।

৩. গাও লিং(চীন): সেরা তিনের মধ্যে একমাত্র নারী। নারীদের দ্বৈত খেলায় তাকে সবার সেরা ধরা হয়। অলিম্পিকে ২ টি সোনা, ১ টি রুপা ও ১ টি ব্রোঞ্জ আছে তার ঝুলিতে।

৪.টনি গুনায়ান( ইন্দোনেশিয়া): পুরুষ দ্বৈত খেলায় তাকে সেরা বলে স্বীকার করা হয়। অলিম্পিকে সোনাসহ আছে অসংখ্য পদক ও পুরস্কার।

৫. লি চং ওয়ে(মালেশিয়া): ২০০৮ সালে ১৯৯ সপ্তাহ ধরে ছিলেন বিশ্বের এক নাম্বার ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়। যা রেকর্ড। অলিম্পিকে তার রয়েছে রুপা পদক।

৬.রুডি হারটোনো(ইন্দোনেশিয়া): এই ইন্দোনেশিয়ান ১৯৭২ সালের মিউনিখ অলিম্পিকে সোনা জিতেন।

৭. মর্টেন ফ্রস্ট হানসেন(ডেনমার্ক): তাকে ডাকা হতো মি. ব্যাডমিন্টন নামে। অলিম্পিক পদক ছাড়া প্রায় সব ধরনের পদকই তার আছে।

৮. লি লিংওয়ে(চীন): নারীদের একক খেলায় অন্যতম খেলোয়াড়। তিনি IBF ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন। তিনি ২০১২ সালে অলিম্পিক কমিটির সদস্য ছিলেন।

৯. পিটার হেগ গেড(ডেনমার্ক): তিনি তার কৌশল ও খেলার ধরনের জন্য বিখ্যাত। পাঁচ বার ইউরোপিয়ান ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেন।

১০. হ্যান এইপিং(চীন): এই চীনা খেলোয়াড় ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশীপে পাঁচবার সোনা ও পাঁচবার রুপা জিতেন।

আরো পড়ুন: ভলিবল খেলার নিয়ম, কলাকৌশল ও ইতিহাস বিষয়ক যাবতীয় তথ্য

ব্যাডমিন্টন খেলার উপকারিতা

সব খেলাই শারীরিক ও মানসিকভাবে আমাদের সাহায্য করে। তেমনি ব্যাডমিন্টনও এর ব্যাতিক্রম নয়। এই খেলার কয়েকটি উপকারী দিক হলো:

  • ১.পেশি টোনিং করে।
  • ২. নমনীয়তা বৃদ্ধি করে।
  • ৩. পেশি ধৈর্য্য এবং শক্তি বৃদ্ধি করে।
  • ৪. মেটাবলিজমের হার বৃদ্ধি করে।
  • ৫. ওজন কমায়।
  • ৬. শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
  • ৭. হৃদপিণ্ড ভালো রাখে।
  • ৮. ফুসফুস ফাংশন উন্নত করে
  • ৯. ডায়াবেটিসের প্রকোপ হ্রাস করে।
  • ১০. ঘুমের উন্নতি করে
  • ১১. হাড়ের ঘনত্ব এবং শক্তি বৃদ্ধি করে।
  • ১২. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
  • ১৩. খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে
  • ১৪. চটপট কৌশল অবলম্বন করতে সাহায্য করে।
  • ১৫. সামাজিক দক্ষতা উন্নতি করতে সাহায্য করে।

উপর্যুক্ত উপকারিতার পাশাপাশি শরীর সুস্থ রাখতে ব্যাডমিন্টন খেলার কোনো বিকল্প নেই।

সর্বোপরি, ব্যাডমিন্টন খেলার নিয়মকানুনগুলোতে শারীরিক কসরত বেশি থাকার কারণে এ খেলাটি মানুষের শরীর সুস্থ রাখতে ভূমিকা রাখে।

দেহের ওজন কমানো যায়, মেটাবলিজম রেট বাড়ে, কাজ করার আগ্রহ বাড়ে, হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, হাড়ের ঘনত্ব বাড়ে, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে, উচ্চরক্তচাপ কমানোসহ আরও বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে ব্যাডমিন্টন খেলার। প্রাচীন যুগ থেকেই ব্যাডমিন্টনের বিভিন্ন রুপ মানুষের মনে আনন্দ দিয়ে আসছে।

আরো পড়ুন: ক্রিকেট খেলার নিয়ম কানুন, ইতিহাস, বিশ্বকাপ, রেকর্ড বিষয়ক যাবতীয় তথ্য

অভিজাত ও সুন্দর এ খেলাটি বাংলাদেশের শীতের আমেজের সাথে বর্তমানে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছে। তবে শহরে আর আগের মতো উঠান বা ফাঁকা খেলার মাঠ না থাকায় ব্যাডমিন্টন খেলা আগের মত আয়োজন করা শহরাঞ্চলে বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছে।

তবুও এটি সকলের ভালোবাসার একটি খেলা। আশা করি এটি ভবিষ্যতে আরো সারাবিশ্বে ফুটবল, ক্রিকেটের সমপর্যায়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এবং বিশেষত বাংলাদেশী খেলোয়াড়রা এই খেলাতে আন্তজার্তিকভাবে নানান পদক অর্জনের মাধ্যমে দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনবে। সেদিনেরই প্রত্যাশায়।

লিখেছেন: রাকিব খান

Leave a Comment