বাজি লাইভ নামটা ইদানীং বিভিন্ন প্রচারণার মাধ্যমে ভালোই প্রসার হয়েছে।এটি হলো একটি অনলাইন বেটিং সাইট।বিষয়টা অনেকের কাছে নতুন বলে ভালো মন্দ বিচার না করেই এ দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। তবে শুধু অর্থ উপার্জনের জন্য ভালো-মন্দ দিক বিবেচনা না করে অনলাইনের প্রতি নির্ভরশীল হওয়া অবশ্যই অনুচিত।
অনলাইনে ইনকামের বিভিন্ন পদ্ধতি যেমন প্রয়োজনীয় টিউটোরিয়াল তৈরি করা , বিনোদন কনটেন্ট তৈরি করা, ব্লগিং, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং, ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট প্রভৃতির মাধ্যমে যেমন ন্যায় সঙ্গত পন্থায় ঘরে বসে উপার্জন করা যায়।
আমাদের মধ্যে অনেকেই এ ধরণের এপ্লিকেশন থেকে আয়ের ব্যাপারে জানতে আগ্রহী।এই আর্টিকেলে তাই আলোচনা করবো বাজি লাইভ সম্পর্কে খুঁটিনাটি।অর্থাৎ বাজি লাইভ বা বেটিং সাইট থেকে আয়ের উপায়,এর ভালো মন্দ দিক ও পরিণিতি সম্পর্কে।
প্রথমেই জেনে আসা যাক বাজি লাইভ কি?
বাজি লাইভ কি?
আপনি যদি বিগত বিপিএলের ম্যাচ গুলো দেখে থাকেন তবে দেখবেন বাজি লাইভ এই খেলার স্পন্সরশীপে ছিলো এবং ব্যাপক ভাবেই তাদের প্রচারণা চালিয়েছে।তারা দাবী করে থাকে তারা বাংলাদেশের নাম্বার ওয়ান বেটিং সাইট।
আগেই বলেছি এই এপ্লিকেশন টিতে অনলাইনে জুয়া বা বাজি ধরে টাকা আয় করা যায়। এই এপ্লিকেশনে একাউন্ট খুলে টাকা ডিপোজিট বাজি খেলে টাকা আয় করা যায়।
১৮ বছরের উর্ধ্বে বয়স, এমন কেউ বাজি লাইভ একাউন্ট ওপেন করতে পারে।সরাসরি এপ্লিকেশন অথবা গুগল থেকে ওয়েবসাইটে এক্সেস করেও এটি ব্যবহার করা যায়।এপ্লিকেশন টির ব্যবহার সহজ হওয়ায় এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে। ক্রিকেট, ফুটবল সহ অসংখ্য খেলা এই অ্যাপের মাধ্যমে খেলতে পারবেন।ফেসবুক,টুইটারের মাধ্যমে মূলত এপ্লিকেশন টি ব্যবহার করতে হয়।
বাজি লাইভে একাউন্ট তৈরির নিয়ম
বাজি লাইভ থেকে বাজি ধরে জিতলে আয় করা যায়।খুব অল্প টাকা বিনিয়োগ করে অনেক বড় অংকের টাকা জেতা যায়।এ ধরনের বাজি খেলার জন্য বাজি লাইভ একাউন্টের প্রয়োজন হয়।এজন্য ফেসবুক বা টুইটার একাউন্ট দরকার পরে।একাউন্ট খোলার আগে এপ্লিকেশন টি ফোনে ডাউনলোড করে নিতে হবে অবশ্যই।
- আপনার টুইটার একাউন্টে প্রবেশ করুন
- টুইটারে ভিজিট করে Baji.Live লিখে সার্চ করে তাদের অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করুন।
- তাদের টুইটার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করার পর যে লিংকটি দেখতে পাবেন সেটায় ক্লিক করুন।
- লিংকে ক্লিক করার পর আপনাকে একটি ওয়েবসাইটে নিয়ে যাবে। ওয়েব সাইটে প্রবেশ করলে আপনি এপ্লিকেশন টি ডাউন লোড করার লিংক দেখতে পাবেন।
- এবার অ্যাপটি ডাউনলোড করার পর ওপেন করুন।
- ওপেন করার পর Registration/ Singup এর অপশন পাবেন।
- সেই অপশনে ক্লিক করে যাবতীয় সকল তথ্য দিয়ে একাউন্ট তৈরি করে ফেলুন।
বাজি লাইভে খেলার নিয়ম
বেটিং করার জন্য প্রথমেই আপনাকে কিছু টাকা ডিপোজিট করতে হবে।এজন্য একাউন্ট লগ ইন করে ডিপোজিট অপশনে ক্লিক করুন।
ডিপোজিট অপশনে ক্লিক করলে পেমেন্ট মেথোডের অপশন শো করবে।যেমন,বিকাশ,নগদ, ব্যাংক একাউন্ট প্রভৃতি। আপনার সুবিধামতো অপারেটর বেছে নিন এবং পেমেন্ট করুন।
এবার,ট্রানজেকশন আইডি এবং স্ক্রিনশট দিয়ে সাবমিট করলেই 5 মিনিটের মধ্যেই আপনার একাউন্টে টাকা ডিপোজিট হয়ে যাবে।
টাকা ডিপোজিট হয়ে গেলে,ব্যালেন্স চেক করে নিশ্চিত হয়ে নিন।ব্যালেন্সের জমা হওয়ার পরে হোম পেইজে ক্লিক করুন। আপনি যে ধরনের খেলায় বাজি ধরতে চান সেখানে ক্লিক করুন। যেমন- ক্রিকেট, ফুটবল অথবা ওয়াইফ ক্যাসিনো গেম।
বাজি লাইভ খেলার নিয়ম
মূলত যে কোন খেলার দুই দলের সমর্থনে দুইটি দল থাকবে।আপনি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যে দল শক্তিশালী সেই দলের উপর বাজি ধরতে পারেন।এক্ষেত্রে আপনার প্রেডিকশন সঠিক হলে আপনি ডবল টাকা পাবেন।ভুল হলে টাকা দেবেন।
এভাবেই আসলে ক্রিকেট খেলা বাজি ধরা হয় এবং আপনি চাইলে প্রতিটি বলে বলে বাজি খেলতে পারেন
সেক্ষেত্রে আপনার একটু রিক্স থাকতে পারে যারা ম্যাচ উইন বাজি ধরে থাকে তাদের কিন্তু সম্পূর্ণ খেলাটি দেখতে হয় না তারা খেলার শেষে ফলাফল জানলেই হয়ে যায় |
বাংলাদেশ থেকে খেলা যায়,এমন কয়েকটি বেটিং সাইট
বাংলাদেশ থেকে আপনি খুব সহজে বাজি খেলতে পারেন তো কয়েকটি সাইট আমি আপনাদের সুবিধার্থে নিচে দিয়ে দিলাম আপনাদের সেখান থেকে কিন্তু বাজি খেলে উপার্জন করতে পারেন…
1. Bajilive.com
2. bajisportlive.com
3. baji999.com
4. xyy999.com
5. Baji99.com
বাজি লাইভ কি খেলা উচিত?
বাজি লাইভ সহ অন্যান্য যেকোন মাধ্যমেই বেটিং খেলা উচিত না।এটি একধরনের জুয়া খেলাই।যা ইসলাম ধর্ম অনুসারীদের জন্য পাপ এবং বাংলাদেশী আইন অনুযায়ী অবৈধ।অর্থ্যাৎ এটি দেশের আইনে শাস্তি যোগ্য অপরাধ।কেননা,বাজি খেলার জন্য আপনার যে টাকা এই সকল অ্যাপে ডিপোজিট করেন তা বিদেশে পাচার হয়ে যায়। যেটিকে মানি লন্ডারিং বলা হয়ে থাকে। তাই অনলাইন জুয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখার চেস্টা করুন।
অনলাইন বেটিং এর শাস্তি
অনলাইন বেটিং বাংলাদেশে নিষিদ্ধ।আগে বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল বেটিং সাইট ব্যবহার করে এ ধরনের বাজির খেলা খেলা যেতো।বর্তমানে অনেক গুলোই বাংলাদেশ থেকে ব্যবহার করা যায় না।বেটিং বা জুয়া খেলা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।বিভিন্ন খেলার সীজনে যেমন আইপিএল,বিপিএল,ফিফা প্রভৃতি তে এই অনলাইন বেটিং এর পরিমাণ বেড়ে যায়।তাই বাংলাদেশ সরকার মাঝে মাঝে বিভিন্ন অভিযান চালিয়ে থাকে।
কেননা এ ধরনের বেটিংয়ের জন্য দেশের কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যায়।বিভিন্ন সময় পত্রিকার পাতায় এ ধরণের খবর দেখা যায়।এ ধরনের জুয়া খেলার শাস্তিস্বরুপ জেল ও জরিমানা হতে পারে।আমাদের সকলের উচিত নিজেকে ও আশেপাশের সকলকে এ ধরনের বেটিং সাইট ব্যবহার থেকে বিরত রাখা।
অনলাইন বেটিং কি হারাম?
আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন”হে মুমিনরা, নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদি ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও। শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা-বিদ্বেষ ঘটাতে এবং তোমাদের আল্লাহর স্মরণে ও সালাতে বাধা দিতে। তবে কি তোমরা বিরত হবে না?’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৯০-৯১)
উপরিউক্ত আয়াতে স্পষ্ট ভাবে দেখা যায়,আল্লাহ তা’আলা জুয়াকে শয়তানের কর্ম হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।এবং মুসলিমদের তা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।জুয়াসহ উল্লেখিত অন্যান্য কাজ গুলির মহান আল্লাহতা’আলার অত্যন্ত অপছন্দনীয় কাজ।
এছাড়া,জুয়া হারাম কর্মের অন্তর্ভুক্ত এ ব্যাপারে বিশ্বনবীর একটি সুনির্দিষ্ট হাদীস রয়েছে।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) মদ পান, জুয়া খেলা ও ঢোল-তবলাকে হারাম করে দিয়েছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৬৮৫)
হাদীস শরীফ মুসলিমদের কাছে কোরআনের ব্যখ্যা হিসেবেই পরিচিত।এটি অত্যন্ত মান্য একটি গ্রন্থ।মহানবী সাঃ এর বিভিন্ন দিকনির্দেশনা সম্বলিত একটি কিতাব।উপরিউক্ত রেফারেন্স অনুযায়ী মহানবী সাঃ স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছেন,ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের জন্য জুয়া খেলা অবশ্যই হারাম।
হাদীস ও কোরআন শরীফের আলোকে, তাই বলা যায় অনলাইন বেটিং অবশ্যই ইসলামে হারাম কাজের অন্তর্ভুক্ত।তাই এ ধরনের এপ্লিকেশন থেকে অর্থ উপার্জনকে অবশ্যই নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
উপসংহার
বাজি লাইভ মাধ্যমে দেশীয় বিপুল অংকের টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যায়।এছাড়া,ধর্মীয় ভাবেও এ ধরণের খেলা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে,কেননা এটি নৈতিকতা পরিপন্থী।
তাই নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থের দিকে তাকিয়ে দেশের বিরাট ক্ষতি করা কোনভাবেই উচিত কোন কাজ হবে না।বাজি লাইভ সম্পর্কিত আজকের আলোচনায় আশা করি আপনারা পরিষ্কার ভাবে এর ভালোমন্দ দিক ও পরিণতি সম্পর্কে ধারনা পেয়েছেন।নিজে বিরত থেকে কাছের মানুষকে ও এ ধরনের এপ্লিকেশন ব্যবহারে বাধা দিন ও বুঝিয়ে বলুন।
ইসলাম
- শবে বরাতের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত এবং রোজা ও অন্যান্য।
- তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত, সময় এবং ফজিলত ও অন্যান্য।
সূচীপত্র