মৌলিক সংখ্যা কাকে বলে? মৌলিক সংখ্যা নিয়ে ছাত্রদের মধ্যে সব সময় একটি কনফিউশন কাজ করে। অনেক সময় আমরা মৌলিক সংখ্যা নির্ণয় করতে ভুল করি । কেননা মৌলিক সংখ্যার কনসেপ্ট সোজা হলেও কিছুটা ডিপ্লোমেসি রয়েছে ।
আর তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা মৌলিক সংখ্যা কাকে বলে সে সম্পর্কে জানতে চলেছি। তার পাশাপাশি জানতে চলেছি,১ কেন মৌলিক সংখ্যা নয়। দুই জোড় সংখ্যা হওয়া সত্ত্বেও কেন এটি একটি মৌলিকসংখ্যা – সে সম্পর্কে ।
যে সংখ্যাকে কেবলমাত্র ১ এবং ঐ সংখ্যার ছাড়া অন্য কোন সংখ্যা দ্বারা ভাগ করা যায় না সেই সংখ্যা হতে বলা হয়ে থাকে মৌলিক সংখ্যা ।
অর্থাৎ মৌলিক সংখ্যা মূলত একটি অনন্য সংখ্যা যে সংখ্যাকে কেবলমাত্র 1 এবং ওই সংখ্যা দ্বারা ভাগ করা যাবে । ব্রম্ভান্ডের মৌলিক সংখ্যা সুনির্দিষ্ট নয় । তবে একটি সংখ্যা মৌলিক হওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সেটিকে বেশ কিছু শর্ত পালন করতে হয়। এই শর্তগুলো হলোঃ
প্রাচীন গ্রিসে গণিতশাস্ত্র রাতারাতি বেশ উন্নতি লাভ করতে শুরু করে । কেননা সেই সময় গ্রিসে কিছু গণিত পন্ডিত জন্মগ্রহণ করেছিলেন যারা গণিত শাস্ত্রের অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন এবং তাদের হাত ধরে গ্রিসে এক অভিনব বিপ্লব শুরু হয়েছিল । বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও এটি সত্যি যে, সেই সময় গণিতকে ব্যবহার করে তারা এমন কিছু ইমারত অথবা স্থাপত্য নির্মাণ করেছিল যা গোটা দুনিয়াকে বদলে দিতে সক্ষম হয়েছিল ।
গ্রিসের লোকজন গণিতকে কখনো থিয়োরির মধ্যে আবদ্ধ করে রাখেনি বরং তাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে এগুলোর প্রতিফলন ঘটিয়েছে । যার ফলে তারা উত্তরোত্তর বিজ্ঞানের সকল ক্ষেত্রে সুখ্যাতি অর্জন করেছিল ।
মৌলিক সংখ্যা কয়টি এর উত্তর সুস্পষ্টভাবে দেওয়া সম্ভব নয় । মূলত দুই থেকে ইনফিনিটি পর্যন্ত সকল মৌলিকসংখ্যা বিস্তৃত । তবে ধারাবাহিকভাবে প্রথম মৌলিকসংখ্যা কি প্রকৃত মৌলিক সংখ্যা বলা হয়ে থাকে । এবং সংখ্যা গুলি হলঃ২, ৩, ৫, ৭, ১১, ১৩, ১৭, ১৯, ২৩, ২৯, ৩১, ৩৭, ৪১, ৪৩, ৪৭, ৫৩, ৫৯, ৬১, ৬৭, ৭১, ৭৩, ৭৯, ৮৩, ৮৯, ৯৭, ১০১।
১ থেকে ১০০ পর্যন্ত মৌলিক সংখ্যা সর্ব মোট 25 টি। এবং এই সংখ্যাগুলি হলোঃ২, ৩, ৫, ৭, ১১, ১৩, ১৭, ১৯, ২৩, ২৯, ৩১, ৩৭, ৪১, ৪৩, ৪৭, ৫৩, ৫৯, ৬১, ৬৭, ৭১, ৭৩, ৭৯, ৮৩, ৮৯, ৯৭।
মৌলিকসংখ্যা কাকে বলে এটি ছাড়া যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনভাবে গুরুত্বপূর্ণ, এটি জানা যে যৌগিক সংখ্যা কাকে বলে ।
এ শপথ সংখ্যাকে দুইটির অধিক সংখ্যা দ্বারা বিভাজন করা যায় সেই সংখ্যাগুলোকে বলা হয়ে থাকে যৌগিক সংখ্যা । যৌগিক সংখ্যা হওয়ার কিছু বৈশিষ্ঠ নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
1 থেকে 100 পর্যন্ত সর্বমোট ৭৪টি যৌগিক সংখ্যা রয়েছে । এবং এই সকল যৌগিক সংখ্যা গুলি হলঃ ৪, ৬, ৮, ৯, ১০, ১২, ১৪, ১৫, ১৬, ১৮, ২০, ২১, ২২, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ৩০, ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪২, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৮, ৪৯, ৫০, ৫১, ৫২, ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭, ৫৮, ৬০, ৬২, ৬৩, ৬৪, ৬৫, ৬৬, ৬৮, ৬৯, ৭০, ৭২, ৭৪, ৭৫, ৭৬, ৭৭, ৭৮, ৮০, ৮১, ৮২, ৮৪, ৮৫, ৮৬, ৮৭, ৮৮, ৯০, ৯১, ৯২, ৯৩, ৯৪, ৯৫, ৯৬, ৯৮, ৯৯, ১০০
এবার আমরা জানতে চলেছি ১ কেন মৌলিক সংখ্যা নয় ।
আমরা ইতিপূর্বে জেনেছি একটিমাত্র মৌলিক সংখ্যা কেবলমাত্র দুইটি সংখ্যা দ্বারা বিভাজিত হতে পারে । শুধু দুইটি সংখ্যা দ্বারা বিভাজিত হবে, দুইটি সংখ্যার কমও নয় দুইটি সংখ্যার বেশিও নয় ।
তবে ১ কেবলমাত্র নিজের দ্বারা নিজের বিভাজিত হতে পারে । সে কারণে এক কে কখনো মৌলিকসংখ্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয় না ।
এটি মূলত একটি প্রাইমারি কনসেপ্ট । এর পেছনে আরও বিভিন্ন তত্ত্ব বা থিওরি রয়েছে । যেকোনো জানার জন্য অবশ্যই উচ্চ শিক্ষার প্রয়োজন পড়বে । তবে কেবল মাত্র একজন মাধ্যমিকের শিক্ষক বা শিক্ষার্থী হিসেবে এটুকু জানলে যথেষ্ট ।
এক (১) মূলত একটি ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যা । এবং একইসাথে এটি একটি বিজোড় সংখ্যা । তবে এটি একটি মৌলিকসংখ্যা নয় । এটি মূলত মৌলিক সংখ্যার শর্ত পূরণ না করার কারণে এতে মৌলিক সংখ্যার অন্তর্ভুক্ত করা যায় না ।
শূন্য(০) কে বলা হয়ে থাকে অজ্ঞাত জ্ঞাপনকারী সংখ্যা । এই সংখ্যা মূলত দশমিকের পরে এবং একটি নির্দিষ্ট অংকের পরে বসে সংখ্যার মান হ্রাস অথবা বৃদ্ধি করে । এছাড়াও শূন্যকে বলা হয়ে থাকে এটি অঋণাত্মক সংখ্যা ।
আর্য ভট্ট নামক একজন ভারতীয় গণিতবিদ সর্বপ্রথম শুণ্য সম্পর্কে ধারণা দেন । পরবর্তীতে ব্রহ্মগুপ্ত নামক ভারতের আরেকজন গণিতবিদ এটিকে সংজ্ঞায়িত করেন । এটি খ্রিস্টপূর্ব শতাব্দীর ঘটনা ।
মূলত এই সংখ্যাটি গণিত শাস্ত্রকে আরো অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল ।
দুই(২) মূলত একটি মৌলিক সংখ্যা কেননা এটি দুই এবং এক(১) ছাড়া অন্য কোন সংখ্যা দ্বারা বিভাজিত হতে পারে না। দুই(২) একমাত্র মৌলিকসংখ্যা যেটি একটি ধনাত্মক জোড় সংখ্যা ।
অনেকে ধারণা করে থাকেন দুই একটি যৌগিক সংখ্যা । তবে যৌগিক সংখ্যার শর্ত পূরণ করতে হলে অবশ্যই সেই সংখ্যাটিকে নূন্যতম তিনটি সংখ্যা দ্বারা বিভাজিত হতে হবে । সে ক্ষেত্রে দুই(২) কেবলমাত্র দুইটি সংখ্যা দ্বারা বিভাজিত হওয়ার কারণে এটিকে মৌলিকসংখ্যা হিসেবে পরিগণিত করা যায় না।
সহমৌলিক সংখ্যাঃ দুই বা ততোধিক সংখ্যার “সাধারণ উৎপাদক” শুধুমাত্র ১ হলে, সংখ্যাগুলোকে পরস্পরের সহমৌলিক বলে।
অর্থাৎ দুইটি সংখ্যা বা তার বেশি সংখ্যার মধ্যে যদি এমন হয় যে, ১ ছাড়া আর কোনো কমন সংখ্যা দিয়ে তাদের ভাগ করা যাচ্ছে না, তবে তারা পরস্পর সহমৌলিক। উল্লেখ্য যে, দুইটি মৌলিক সংখ্যা সবসময়ই পরস্পর সহমৌলিক।
১৬ এর মৌলিক উৎপাদক গুলো = ১* ২* ২ *২* ২
২৫ এর মৌলিক উৎপাদকগুলো =১* ৫* ৫
দেখা যাচ্ছে যে, ১৬ ও ২৫ এর মধ্যে ১ ছাড়া অন্য কোন সাধারণ গুণনীয়ক নেই। সুতরাং ১৬ ও ২৫ পরস্পর সহমৌলিক।
অর্থাৎ ১ বাদে এমন কোনো সংখ্যা নেই যে সংখ্যাটি ১৬কেও ভাগ করতে পারে আবার ২৫কেও ভাগ করতে পারে।
দুইটি সংখ্যার মধ্যে যদি 1 ব্যতীত আর কোনো সাধারণ গুণনীয়ক না থাকে তাহলে তাদের কে পরস্পরের সহমৌলিক বলা হয়।
উদাহরণস্বরূপ 3 আর 7 তে এদের মধ্যে 1ছাড়া আর কোনো সাধারণ উৎপাদক নেই তাই 3 ও 7 একে অপরের সহমৌলিক সংখা।
দুইটি যৌগিক সংখ্যা অথবা একটি জোড় অপরটি বিজোড় হলেও সহ-মৌলিক হতে পারে।
কিন্তু দুইটি জোড়সংখা সহমৌলিক হওয়া সম্ভব না কারণতাদের মধ্যে সবসময় সাধারণ উৎপাদক 2 থাকবেই ।
তাই বলতে পারেন সহমৌলিক সংখ্যা হচ্ছে একে অপরের সাপেক্ষে মৌলিক কিংবা পরস্পর মৌলিক সংখ্যা ।
যেমন ধরুন
9 আর 16
এখানে 9 এর উৎপাদক=133
16 এর উৎপাদক=12222
এদের মধ্যে 1ব্যতীত কোনো সাধারণ উৎপাদক নেই, তাই সহমৌলিক।
আবার 5 আর 4 এদের মধ্যে ও 1 ব্যতীত আর কোনো সাধারণ গুণনীয়ক নেই বিধায় এরা ও সহমৌলিক।
উত্তর হ্যাঁ , হতে পারে। যেমনঃ ৮ এবং ৯ দুইটাই যোগিক সংখ্যা কিন্তু তারা পরস্পর সহমৌলিক। এখানে একটা বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, সংখ্যা দুইটির একটি জোড় আরেকটি বিজোড় হতে হবে।দুইটি জোড় সংখ্যা হলে তাদের মধ্যে সাধারণ উৎপাদক ২ থাকবে, তখন আর তারা সহমৌলিক থাকবেনা।
আজকের আর্টিকেল এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল মৌলিক সংখ্যা কাকে বলে ? ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত মৌলিক সংখ্যা কয়টি সে সম্পর্কে । আর্টিকেলটিতে প্রদত্ত তথ্যের মাধ্যমে যদি একজন পাঠক ন্যূনতম উপকৃত হয়ে থাকেন তবে সেটি নিয়তি ডটকম’ এর কেবল সার্থকতা নয় অনেক বড় সাফল্য !
আয়নিক বন্ধন কাকে বলে? সমযোজী বন্ধন কাকে বলে?
প্লবতা কাকে বলে? প্যাসকেলের সূত্র । চাপ কি?
কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম যা আপনার অবশ্যই জানা প্রয়োজন!
সূচীপত্র