প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও নমুনা

অনেক সময় নানান কাজে আমাদের প্রতিবেদন লিখতে হয়। সেটা হতে পারে পরীক্ষায় কিংবা পেশাদারিত্বের কোন কাজে।সুন্দর ও সাবলীল প্রতিবেদন লেখার নিয়ম জানা থাকলে এটি সবার কাছে গ্রহনযোগ্য হয়ে উঠে।

প্রতিবেদন কি?

প্রতিবেদন কথাটি ইংরেজি রিপোর্ট কথাটির বাংলা পারিভাষিক শব্দ। কোন নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যানুসন্ধান ভিত্তিক বিবরণীকেই প্রতিবেদন বলে। কোন ঘটনা, তথ্য বা বক্তব্য সম্পর্কে সুচিন্তিত বক্তব্য প্রদানই হলো প্রতিবেদন। তবে প্রতিবেদন কথাটির পাশাপাশি ইংরেজি রিপোর্ট শব্দটি ও বাংলা ভাষায় প্রচলিত আছে।

প্রতিবেদন রচনাকারীকে বলা হয় প্রতিবেদক। সাধারনত প্রতিবেদকের দায়িত্ব হল কোন বিষয়ের তথ্য উপাত্ত, সিদ্ধান্ত, ফলাফল ইত্যাদি খুঁটিনাটি অনুসন্ধানের পর বিবরণী তৈরি করে কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোন কর্তৃপক্ষের বিবেচনার জন্য পেশ করা।

প্রতিবেদনে সাধারণত বিশেষ বিষয় বা কাজের বিশ্লেষণী র্বণনা প্রকাশ পায়। প্রতিবেদনে কাজের নির্দেশ, পরামর্শ, সিদ্ধান্ত ইত্যাদি সম্পর্কে ও মন্তব্য করা হয়। প্রতিবেদন বিশেষ কৌশল বা পদ্ধতি অবলম্বনে রচিত বিবৃত বা বিবরণী বোঝায়। তথ্যগত ও সত্যনিষ্ঠ বিবরনীই প্রতিবেদন। প্রতিবেদন হলো কয়টি সুসংগঠিত তথ্যগত বিবৃতি যা কোন বক্তব্য সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত অথচ সঠিক বর্ণনা বিশেষ। একে যথেষ্ট সতর্কতা, পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা, গবেষনা ও বিচার বিশ্লেষণের পর তৈরি করতে হয়। প্রতিবেদনের মাধ্যমে কোন বিষয়ে পুন:উপস্থাপন করা হয়ে থাকে ।

প্রতিবেদন লেখার নিয়ম

প্রতিবেদন লেখার নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে। নিচে ধারাবাহিক আলোচনা করা হলো।

প্রতিবেদন লেখার নিয়ম
প্রতিবেদন লেখার নিয়ম

প্রতিবেদনের শিরোনাম

একটি আদর্শ প্রতিবেদনের শিরোনাম থাকতে হবে। নজরকাড়া শিরোনাম দিতে হবে। এমন নজরকাড়া শিরোনাম দিতে হবে যাতে পাঠক পুরো প্রতিবেদনটি পড়তে বাধ্য হয় বা পড়ার ইচ্ছা জাগ্রত হয়। এমন শিরোনাম দিতে হবে যাতে প্রতিবেদনের শিরোনাম দেখেই পাঠকের মনে এক ধরনের কৌতুহল জাগে সেই পুরো প্রতিবেদনটি পড়ার।

প্রতিবেদকের নাম

একটি প্রতিবেদনকে আদর্শ প্রতিবেদন হিসেবে গঠন করার দ্বিতীয় ধাপ হলো প্রতিবেদনে প্রতিবেদকের নাম উল্লেখ করে দেওয়া। আমরা যখন বিভিন্ন পত্রিকা দেখি তখন খেয়াল করবেন শিরোনামের নিচে প্রতিবেদকের নাম বা স্টাফ রিপোর্টার বা নিজেস্ব প্রতিনিধি লেখা থাকে। মুলত এটাই প্রতিবেদকের নাম।

প্রতিবেদনের স্থান

প্রতিবেদনের তৃতীয় গুরুত্বর্পূণ বিষয় হলো প্রতিবেদনটি কোন স্থান হতে পাঠানো হয়েছে বা প্রতিবেদনটিতে কোন এলাকার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। এজন্য জায়গার নাম উল্লেখ করা জরুরি।

তারিখ

প্রতিবেদনে সঠিক তারিখ উল্লেখ রাখাও জরুরি। এতে করে পাঠক সহজেই বুঝতে পারবে প্রতিবেদনটি কত তারিখের৷ ঘটনা সম্পর্কেও পাঠক ধারণা পাবে।

সঠিক তথ্য

প্রতিবেদন রচিত হবে সঠিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে। কথ্যানুসন্ধান ই হল প্রতিবেদনের প্রধান কাজ। সেজন্য তথ্যের যথার্থতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।

সম্পূর্ণতা

প্রতিবেদন যেসব তথ্য পরিবেশিত হবে তা হতে হবে নির্ভুল সম্পূর্ণ ও নির্ভরযোগ্য।

স্পষ্টতা

প্রতিবেদনের বক্তব্যের মধ্যে স্পষ্টতা থাকবে যাতে বক্তব্য বিষয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা লাভ সহজ হয়।

সংক্ষিপ্ততা

প্রতিবেদন হবে বাহুল্যবর্জিত। বক্তব্য হবে সুনির্বাচিত এবং কোন অনাবশ্যক বক্তব্য সংযোজিত হতে পারেনা

সুন্দর উপস্থাপনা

প্রতিবেদনের উপস্থাপন হবে আকর্ষণীয়।এরকম বক্তব্য সহজ সরল ভাষায় প্রকাশ পায়।

সুপারিশ

প্রতিবেদনে উপসংহারে সুপারিশ সংযোজন করতে হবে যাতে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ সমস্যা সম্পর্কে সিদ্ধন্ত গ্রহন করতে পারে ।

প্রতিবেদন লেখার গুরত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা

  • প্রতিবেদন হবে সংক্ষিপ্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ।
  • প্রতিবেদনে প্রকাশ করা সমস্ত তথ্য হবে নির্দিষ্ট, সুনির্বাচিত, নির্ভুল , সম্পূর্ণ এবং সহজ সরল ভাষায়।
  • প্রতিবেদনে দেওয়া শিরোনামের সাথে মুল প্রতিবেদনের অবশ্যই মিল থাকবে।
  • প্রতিবেদনে কোন ধরনের অগ্রীম কথা বা ভবিষ্যৎবাণী করা উচিৎ নয়।

সম্পর্কিত আর্টিকেল

প্রতিবেদনের বিভিন্ন অংশ

সাধারণত প্রতিবেদনের তিনটি থাকে। এগুলো হলো:-

  • ১। প্রারম্ভিক অংশ
  • ২।প্রধান অংশ
  • ৩।পরিশিষ্ট অংশ

প্রারম্ভিক অংশ

প্রতিবেদনের মুল শিরোনাম প্রতিবেদনের প্রারম্ভিক অংশে থাকে। এছাড়াও প্রারম্ভিক অংশে প্রাপকের নাম ঠিকানা, সূত্র বিষয়ের সংক্ষিপ্ত সার নির্দেশক কথা থাকে।

প্রধান অংশ

প্রতিবেদনের প্রধান অংশে থাকে বিষয় সম্পর্কে ভূমিকা, মূলপ্রতিবেদন, উপসংহার ও সুপারিশ। একে মূল গর্ভও বলা হয়।

পরিশিষ্ট অংশ

প্রতিবেদনের সর্বশেষ অংশ হলো পরিশিষ্ট। এতে থাকে তথ্য নির্দেশ, গ্রন্থ বিবরণী, কমিটির তালিকা ও আনুসঙ্গিক বিষয়াদি। প্রতিবেদন রচনার পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত থাকলে উত্তম প্রতিবেদন প্রণয়ন করা সম্ভব। এসব পদ্ধতির মধ্যে আছে প্রতিবেদনের আকার, শ্রেণী, বৈশিষ্ট্য, রীতিনীতি ও বিন্যাস।

প্রতিবেদনের আকার সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোন সীমাবদ্ধতা নেই। বিষয়ের গুরুত্ব ও পরিধি অনুসারে তা ছোট হতে পারে, বড়ও হতে পারে। ছোট আকারের প্রতিবেদনে শিরনাম, বিষয়বস্তু সুপারিশ ও উপসংহার থাকে।বড় প্রতিবেদন পুস্তককারে হতেপারে এবং তাতে বিভিন্ন প্রকারের সারণি, চিত্র, নকশা, ছক, পরিশিষ্ট, তথ্যনির্দেশ ইত্যাদি সহ বর্ণনা ও ব্যাখ্যা সংযুক্ত করা হয়।

প্রতিবেদনের প্রকারভেদ

প্রতিবেদনের কোন সুনির্দিষ্ট শ্রেনীবিভাগ নেই ।বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে প্রতিবেদন নানা রকম হতে পারে। বহুল প্রচলিত কিছু প্রতিবেদন আছে সেগুলি নিন্মে বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো

  • ১। সংবাদ প্রতিবেদন
  • ২। তদন্ত প্রতিবেদন
  • ৩। সাধারণ প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন ।
  • ৪। খেলাধুলা বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রতিবেদন ।
  • ৫। রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বিষয়ক প্রতিবেদন ।
  • ৬। সাক্ষাৎকার মুলক প্রতিবেদন।
  • ৭। সম্পাদকীয় প্রতিবেদন
  • ৮। অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ইত্যাদি

সম্পর্কিত আর্টিকেল

সংবাদ প্রতিবেদন লেখার নিয়ম

শিরোনাম ছাড়া সংবাদ প্রতিবেদন হয় না। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খবরের একটি সংক্ষিপ্ত বিষয়বস্তু শিরোনামে প্রকাশ পায়। শিরোনাম দেখেই পাঠক সিদ্ধান্ত নেন, খবরটি তিনি পড়বেন কি-না। প্রতিবেদকের নাম বা পদবী, প্রতিবেদন তৈরির স্থান ও ঘটনার একটা সংক্ষিপ্ত বিষয়বস্তু নিয়ে শুরু হয় সংবাদ প্রতিবেদন। এটা দু’তিন লাইনের মধ্যে শেষ হয়ে থাকে। এরপরের অংশে বিস্তারিত বর্ণনা লিখতে হয়। সংবাদ প্রতিবেদন লেখার সুবিধা হলো এতে শুধু শিরোনাম লিখেই সরাসরি মূল লেখায় চলে যাওয়া যায়। এ ধরনের প্রতিবেদন লিখতে গিয়ে সম্পাদকের নিকট আনুষ্ঠানিক পত্র কিংবা খাম আঁকার প্রয়োজন নেই। প্রশ্নে সংবাদপত্র বা প্রতিবেদকের নাম থাকলে সেটা অনুসরণ করতে হবে। আর তা না থাকলে কাল্পনিক নাম ব্যবহার করা যেতে পারে।

প্রতিবেদন লেখার নমুনা

এলাকায় লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট সম্পর্কে একটি সংবাদ প্রতিবেদন

বিদ্যুৎ বিভ্রাট : প্রয়োজন আশু প্রতিকার
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা।

লোডশেডিং ঢাকা শহরের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। কিন্তু বর্তমানে গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং এর তীব্রতা। ঢাকা শহরে বিদ্যুৎ এই আসে,এই যায়। বিশেষ করে ঢাকার বনশ্রী, মুগদা, মাদারটেক, ডেমরা, যাত্রাবাড়ি, ধানমন্ডি প্রভৃতি কিছু স্থানের চিত্র ভয়াবহ। পুরো দিনে এইসব এলাকায় দশ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকে কিনা বলা দুষ্কর।

ঢাকা শহরে বিদ্যুৎ সার্বক্ষণিক প্রয়োজনীয় একটি জিনিস। দিনে বা রাতে যে কোন সময়েই হোক, বিদ্যুতের অনুপস্থিতি আধুনিক জীবনে হাজার সংকট ও সমস্যার সৃষ্টি করে। রাষ্ট্রীয়, সাংস্কৃতিক,অর্থনৈতিক, সামাজিক সকল ক্ষেত্রে প্রতিটি মুহূর্তে বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বিদ্যুৎ ছাড়া কলকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালত অচল। দেশের চাহিদামাফিক বিদ্যুৎ এখনো উৎপাদন করা সম্ভব হয় নি।

যার কারণে বিদ্যুৎ সমস্যা জনজীবনে তৈরি করেছে নানা দুর্ভোগ। ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখার নিরন্তর ব্যাঘাত ঘটছে। বিদ্যুৎ না থাকলে সুষ্ঠু পানি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়। অনেক সময় লো-ভোল্টেজের কারণে ফ্রিজ, ফ্যান, এসি ইত্যাদি অচল হয়ে যাচ্ছে। কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, হাসপাতালের চিকিৎসার ব্যাঘাত ঘটছে। বিজিএমইএ’র সাম্প্রতিক এক বিবরণে জানা যায়, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে শুধু তৈরি পোশাক খাতেই বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রায় ১৬ লাখ ডলার আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। এ হিসেবে বছরে দেশের মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা।

বিদ্যুৎ সমস্যা ও এর কারণে সৃষ্ট আর্থিক ক্ষতি নিয়ে লেখালেখি কম হয় নি। কিন্তু পরিস্থিতির তেমন কোন উন্নতি হয় নি। এ সংকটের পেছনে বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট সংস্থাটির এক শ্রেণির কর্মকর্তাদের চরম দুর্নীতির ব্যাপারও কম দায়ী নয়। দৈনিক জনকণ্ঠে কিছুদিন আগে এ ব্যাপারে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ডেসা’র এক শ্রেণির কর্মীদের সহায়তায় চলছে বিদ্যুৎ চুরির মহোৎসব। দুর্নীতিবাজ কর্মী ও গ্রাহকের যোগসাজশে মাসে অন্তত ৬ কোটি ইউনিট বা গড়পড়তায় ১৫ কোটি টাকার বিদ্যুৎ চুরি হচ্ছে। বিদ্যুতের অভাবে যেখানে মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, সেখানে এ ধরনের চুরিকে প্রশ্রয় দেওয়া কোনভাবে মেনে নেওয়া যায় না। এ ব্যাপারে সরকারের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সময় এসে গেছে।

অনতিবিলম্বে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ সমস্যা থেকে দেশবাসীকে বাঁচাতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে সচেতনমহল।

প্রতিবেদকের নাম ও ঠিকানা : বিধান কুমার রায়, সাভার ঢাকা।
প্রতিবেদনের শিরোনাম : বিদ্যুৎ বিভ্রাট : প্রয়োজন আশু প্রতিকার
প্রতিবেদন তৈরির সময় : সন্ধ্যা ৭ টা
প্রতিবেদন তৈরির তারিখ : জুলাই ০৩, ২০১৭

সাধারণ প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন লেখার নিয়ম

প্রতিষ্ঠান বা দপ্তরের প্রয়োজনে সাধারণ আঙ্গিকে যে প্রতিবেদন লেখা হয়, তা-ই সাধারণ প্রতিবেদন। যেমন, যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান তাঁর প্রতিষ্ঠানে জাতীয় দিবস পালন বা স্কুলের কোন সমস্যার বিবরণ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করে থাকেন। এজন্য তিনি কাউকে প্রতিবেদন লেখার দায়িত্ব দিয়ে থাকেন।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের ওপর একটি প্রতিবেদন

আগস্ট ৩, ২০২২
প্রধান শিক্ষক,
জয়পাড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়।
জয়পাড়া, দোহার, ঢাকা।
বিষয়: বিদ্যালয়ে আয়োজিত আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস’ এর অনুষ্ঠানমালা সম্পর্কে প্রতিবেদন।
সূত্র : জ.পা.বি.২০১৭/২৭(ক) তারিখঃ ২৩/০২/২০১৭।

মহোদয়,
সম্প্রতি সমাপ্ত পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ এর অনুষ্ঠানমালা সম্পর্কে প্রতিবেদন পেশে আদিষ্ট হয়ে নিম্নলিখিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করছি।

জয়পাড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উদ্যাপিত

  • ১.‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উদ্যাপন উপলক্ষে জয়পাড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন হয়েছিল। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন স্কুলের বাংলা বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক জনাব আতিক ইসলাম।
  • ২.দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার সূচনা হয় সকাল ৬টায় প্রভাতফেরির মাধ্যমে। খুব ভোর থেকেই স্কুলের আশেপাশের ছাত্র-ছাত্রীরা খালি পায়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে সমবেত হয়। তাদের সঙ্গে যোগদান করেন শিক্ষকবৃন্দ। স্কুল মাঠের পশ্চিম প্রান্তে শহিদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ প্রদানের সিদ্ধান্ত করা হয়েছিল। প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের খালিপায়ে শোভাযাত্রা শুরু হলে সবার কণ্ঠে অনুরণিত হয় একুশে ফেব্রুয়ারির অমর গান: ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি।’ ধীর পদক্ষেপে অগ্রসরমান শোভাযাত্রা এক ভাবগম্ভীর পরিবেশ সৃষ্টি করে। শহিদ মিনারের পাদদেশে মিছিল উপনীত হলে প্রধান শিক্ষক প্রথম পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে অমর শহিদদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ফুলের তোড়া শহিদ মিনারে অর্পণ করে।
  • ৩.আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পরবর্তী কর্মসূচি ছিল আবৃত্তি ও সংগীতানুষ্ঠান। প্রথমে বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত কবিগণের কবিতা থেকে নির্বাচিত কবিতাবলি আবৃত্তি করে স্কুলের শিক্ষার্থীরা। পরে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করে শোনানো হয়। শিক্ষার্থীরাই ছিল এ পর্যায়ে কবিতা রচয়িতা ও আবৃত্তিকার। আবৃত্তি শেষে শুরু হয় সংগীতানুষ্ঠান। দেশাত্মবোধক গানই ছিল এপর্যায়ের কর্মসূচি। স্কুলের শিল্পীরা এতে অংশগ্রহণ করে।
  • ৪.বিকেলবেলায় আয়োজন করা হয়েছিল আলোচনা সভার। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লেখক আনিসুল হক। স্কুলের দুজন শিক্ষকসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ওপর আলোচনা করে। এ দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরার পাশাপাশি বিশ্বদরবারে আরো উল্লেখযোগ্যভাবে এ দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরার আহ্বান রাখা হয়। এ পর্যায়ে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার সমাপ্তি ঘটে।

প্রতিবেদকের নাম ও ঠিকানা : নজরুল ইসলাম খান, দশম শ্রেণি, বিজ্ঞান বিভাগ, রোল: ০১
জয়পাড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা।
প্রতিবেদনের শিরোনাম : জয়পাড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উদ্যাপিত।
প্রতিবেদন তৈরির তারিখ : ৩ আগস্ট, ২০২২
প্রতিবেদন তৈরির সময় : সকাল ৭ টা।

সম্পর্কিত আর্টিকেল

তদন্ত প্রতিবেদন লেখার নিয়ম

সাধারণ প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন লেখার নিয়মের সাথে তদন্ত প্রতিবেদন লেখার আঙ্গিক মিল রয়েছে। তবে সংবাদ প্রতিবেদনের সাথে এটা মিলবে না। এতে লেখকের ব্যক্তিগত মতামতের গুরুত্ব রয়েছে। দায়িত্ব প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের সমীপে তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে হয়। প্রতিবেদনের সূচনায় ঘটনা ও ঘটনার কার্যকারণ ব্যাখ্যা করার পর ঘটনার পুুনরাবৃত্তি নিরসনকল্পে করণীয় সম্পর্কে প্রতিবেদককে সুপারিশ করতে হয়।

মহাসড়কের কোন একটি স্থানে বার বার সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটে থাকে। কারণ উদঘাটনের জন্য একটি তদন্ত প্রতিবেদন।

তারিখ : আগস্ট ০১, ২০১২
জেলা প্রশাসক
ঢাকা।
বিষয় : সড়ক দুর্ঘটনা সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রণয়ন।

মহোদয়
আপনার পত্র নং ২০১২ ঢা.জে.ঐ/১৫ মোতাবেক আদিষ্ট হয়ে সড়ক দুর্ঘটনা সংক্রান্ত একটি তদন্ত প্রতিবেদনটি পেশ করা হলো।
প্রতিবেদকঃ মোঃ আসলামুল ইসলাম।
সাভার, ঢাকা।

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু আর কত !!
আসলামুল ইসলাম, ঢাকা: গত ৩০ জুলাই সকাল ৭টায় আরাম বাসস্ট্যান্ডে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই পরীনামে এক স্কুল ছাত্রীর অকাল মৃত্যু ঘটে। এ ঘটনায় অন্তত দশজন মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। জযপাড়া পাইলট উচ্চ – এর একদল ছাত্রী স্কুলে আরাম বাসে যাচ্ছিল । আরাম বাসস্ট্যান্ডে আসতেই অন্যদিক থেকে দ্রুতবেগে ধেয়ে আসা একটি ট্রাক আচমকা পরীদের বহনকারী বাসটিকে ধাক্কা দিয়ে কেটে পড়ে। পরীদের বহনকারী বাসটি মুহূর্তেই উল্টে যায়। স্থানীয় ও পথচারীদের কয়েকজন এগিয়ে এসে বাসের মধ্যে আটকাপড়া যাত্রীদের বের করার চেষ্টা চালায়। কারও হাত, কারও পা, কারও শরীরের বিভিন্ন স্থান ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। বাসের সামনের দিকে সিটে আটকে পড়া পরী নামের মেয়েটি আর বাঁচতে পারল না। ঘাতক ট্রাক তার জীবন প্রদীপ নিঃশেষ করে দিয়েছে। আর কোনোদিন ও সে সহপাঠীদের সাথে স্কুলে আসবে না এবং স্কুলের মাঠে ঘুরবে না। বাসের চালক ও মারাত্মক ভাবে আহত হয়েছিল। আহতদের মধ্যে ১০/১৫ জনের অবস্থা আশংকাজনক। স্থানীয় জনগণের অকুণ্ঠ ও আন্তরিক সহযোগিতা প্রমাণ করেছে , মানবতার মৃত্যু নেই। যার যতটুকু সামর্থ্য ছিল, তিনি ততটুকু দিয়েই এগিয়ে এসেছেন।

দেখা গেছে, এ স্থানটিতে নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। সরেজমিনে তদন্ত করে এর কতগুলো কারণ লক্ষ করা গেছে।

  • ** স্থানটি জনকোলাহলপূর্ণ। রাস্তার দুপাশে হকাররা বাজার বসিয়েছে। প্রচুর দোকানপাটে ফুটপাত সম্পূর্ণ দখল হয়ে আছে।
  • ** বেশ কয়েকটি লোকাল বাস সর্বদা জায়গাটিতে যাত্রী তোলার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে।
  • ** রাস্তাটি অপ্রশস্ত ও সরু বিধায় দুর্ঘটনা নিত্য নৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
  • ** এ স্থানে কোন ট্রাফিক পুলিশ থাকে না।
  • তাছাড়া ড্রাইভারদের বেপরোয়া গাড়ি চালানো, অতিরিক্ত যাত্রি বোঝাই করা, যান্ত্রিক ক্রটি, ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কারণগুলোও এ ধরনের দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।

স্থানীয়দের সাথে আলোচনা করে এ স্থানে সড়ক দুর্ঘটনা রোধের জন্য কিছু সুপারিশ পেশ করা হল। সেগুলো হচ্ছে :

  • অনতিবিলম্বে এ রাস্তাটি প্রশস্ত করতে হবে।
  • ড্রাইভাররা যাতে মাদকমুক্ত থাকে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে।
  • রাস্তায় নামানোর পূর্বে গাড়ি ক্রটিমুক্ত কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে।
  • ট্রাফিক নিয়ম-কানুন প্রয়োগে আরো কঠোর হতে হবে।
  • অতিরিক্ত যাত্রি/মাল বহন বন্ধ করতে হবে।
  • ড্রাইভারদের লাইসেন্স প্রদানে কড়াকড়ি নিয়ম চালু করতে হবে।
  • ট্রাক, রিকশা, ভ্যান, সাইকেল ইত্যাদি চলার জন্য পৃথক লেনের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • প্রতিবেদকের নাম : মোঃ নজরুল ইসলাম খান।

সাভার ,ঢাকা।
প্রতিবেদনের শিরোনাম : সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু আর কত!
প্রতিবেদন তৈরির সময় : সন্ধ্যা ৭ টা
প্রতিবেদন তৈরির তারিখ : আগস্ট ০১, ২০২২।

সম্পর্কিত আর্টিকেল

প্রতিবেদন লেখার নিয়ম pdf

আশা করছি পুরো লেখাটি পড়ে কিভাবে একটি ভালো প্রতিবেদন লিখতে হয় তা সম্পর্কে জেনেছেন। এবার আপনি নিজেই সুন্দর ভালো একটি প্রতিবেদন লিখতে পারবেন।

Leave a Comment