পদার্থ কাকে বলে? পাদার্থ কত প্রকার ও কী কী?

সাধারণভাবে বলা যায়, যার আকার আছে, ওজন আছে এবং জায়গা দখল করে তাকে পদার্থ বলে। যেমনঃ বই খাতা, কলম, ব্যাগ, পানি, অক্সিজেন ইত্যাদি।

এগুলো প্রত্যেকটির ভর আছে কিন্তু স্থান এবং ক্ষেত্র বিশেষে এদের আকার এবং আয়তন ভিন্ন হয়।
কক্ষ তাপমাত্রা বা সাধারণ তাপমাত্রায় কোনো কোনো পদার্থ কঠিন আবার কোনো পদার্থ তরল আবার কোনো পদার্থ গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে।

পদার্থ

পদার্থ হল সমস্ত দ্রব্য ও বস্তুর সামগ্রিক নাম। সংজ্ঞায়িত সামগ্রী যা প্রকৃতির উপস্থিতি বোঝায় এবং বিভিন্ন ধরণের গঠন, গুণ, সম্পদ, রঙ, ঘনত্ব ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়।

উদাহরণস্বরূপ, পানি, বায়ু, আইরন, স্টিল, প্লাস্টিক, কাঠ, আলু, মাটি ইত্যাদি সব পদার্থ হল। এছাড়াও পদার্থের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল যে এগুলি সাধারণত পরমাণু এবং মোলেকুল গঠিত।

বিজ্ঞানের যে শাখায় পদার্থ এবং শক্তির মিথস্ক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে পদার্থবিজ্ঞান বলে।পদার্থবিজ্ঞান একটি প্রাকৃতিক বিজ্ঞান যা শক্তি এবং বলের মতো ধারণার পাশাপাশি স্থান ও কাল সাপেক্ষে পদার্থের গতি নিয়ে আলোচনা করে থাকে। সংক্ষেপে বললে, মহাবিশ্ব কীভাবে আচরণ করে তা বোঝার প্রয়াসে এটি একটি প্রাকৃতিক অধ্যয়ন।

পদার্থ কাকে বলে পাদার্থ কত প্রকার ও কী কী

পদার্থ বিজ্ঞান

বিজ্ঞানের যে শাখায় পদার্থ এবং শক্তির মিথস্ক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে পদার্থবিজ্ঞান বলে।পদার্থবিজ্ঞান একটি প্রাকৃতিক বিজ্ঞান যা শক্তি এবং বলের মতো ধারণার পাশাপাশি স্থান ও কাল সাপেক্ষে পদার্থের গতি নিয়ে আলোচনা করে থাকে। সংক্ষেপে বললে, মহাবিশ্ব কীভাবে আচরণ করে তা বোঝার প্রয়াসে এটি একটি প্রাকৃতিক অধ্যয়ন।

আরো পড়ুন ;- শব্দ কাকে বলে? শব্দ কত প্রকার ও কি কি? উদাহরণ সহ

পাদার্থ কত প্রকার ও কী কী?

গঠনগত, গুণগত, অবস্থানগত বিভিন্ন ভিত্তিতে পদার্থকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। ভাগে ভাগ করা হয়। যথা–

১. মৌলিক

২. যৌগিক

৩. কঠিন

৪. তরল

৫. বায়বীয় বা গ্যাসীয়।

৬. বিশুদ্ধ

৭. অবিশুদ্ধ বা মিশ্র।

 ৮. প্লাজমা

মৌলিক পদার্থ

যে পদার্থকে রাসায়নিক পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করে দুই বা ততোধিক ভিন্ন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থে পরিণত করা যায় না, তাকে মৌলক বলে। অর্থাৎ, যে সকল পদার্থকে ভাঙলে বা বিশ্লেষণ করলে ওই পদার্থ ছাড়া আর কোনো পদার্থ পাওয়া যায় না, তাকে মৌলিক পদার্থ বলে।

যেমন– হাইড্রোজেন (H), অক্সিজেন (O), কার্বন (C), আয়রণ (Fe), কপার(Cu) ইত্যাদি। হাইড্রোজেনকে যত ভাগে ভাগ করা হোক—হাইড্রোজেনই পাওয়া যাবে। একইভাবে সোডিয়ামকে ভাগ করলেও শুধু সোডিয়ামই পাওয়া যায়।

এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত মৌলের সংখ্যা ১১৮টি। এগুলো হলো -ঃ
১। হিলিয়াম-He
২। বেরিলিয়াম- Be
৩। কার্বন- C 
৪। অক্সিজেন- O
৫। নিয়ন- Ne 
৬। ম্যাগনেসিয়াম- Mg
৭। সিলিকন- Si            
৮। সালফার – S
৯। পটাসিয়াম – K
১০। স্ক্যান্ডিয়াম – Sc
১১। ভ্যানাডিয়াম – V
১২। ম্যাঙ্গানিজ- Mn
১৩। কোবাল্ট- Co
‌১৪। কপার- Cu
১৫। গ্যালিয়াম- Ga
১৬। আর্সেনিক- As
১৭। ব্রোমিন- Br             
১৮। রুবিডিয়াম- Rb
১৯। ইট্রিয়াম- Y
২০। নাইওবিয়াম- Nb
২১। টেকনিশিয়াম- Tc
২২। রোডিয়াম- Rh
২৩। রুপা- Ag  
২৪। ইন্ডিয়াম- In
২৫। এন্টিমনি- Sb            
২৬। আয়োডিন- I
২৭। সিজিয়াম- Cs
২৮। ল্যান্থানাম- La
২৯। প্রাসিওডিমিয়াম- Pr
৩০। প্রমিথিয়াম- Pm
৩১। ইউরোপিয়াম- Eu
৩২। টার্বিয়াম-Tb
৩৩। হলমিয়াম- Ho         
৩৪। থুলিয়াম- Tm
৩৪। লুটেশিয়াম- Lu
৩৬। ট্যানটালাম- Ta
৩৭। অসমিয়াম- Os
৩৮। প্লাটিনাম- Pt
৩৯। পারদ- Hg
৪০। সীসা- Pb
৪১। পোলোনিয়াম- Po
৪২। রেডন – Rn
৪৩। রেডিয়াম – Ra
৪৪। প্রোটেক্টিনিয়াম- Pa
৪৫। নেপচুনিয়াম – Np     
৪৬। আমেরিসিয়াম- Am
৪৭। বার্কেলিয়াম – Bk      
৪৮। আইনস্টাইনিয়াম- Es
৪৯। মেন্ডেলিভিয়াম- Md
৫০। লরেন্সিয়াম- Lw

মৌলিক

৫১। ডুবনিয়াম- Db
৫২। বোহরিয়াম- Bh
৫৩। মাইটনেরিয়াম- Mt
৫৪। রন্টজেনিয়াম- Rg
৫৫। নিহোনিয়াম- Nh
৫৬। মস্কোভিয়াম- Mc
৫৭। টেনেসিন- Ts
৫৮। হাইড্রোজেন- H
৫৯। লিথিয়াম – Li
৬০। বোরন- B
৬১। নাইট্রোজেন-N
৬২। ফ্লোরিন- F
৬৩। সোডিয়াম- Na
৬৪। এলুমিনিয়াম- Al
৬৫। ফসফরাস- P
৬৬। ক্লোরিন- Cl
৬৭। আর্গন- Ar           
৬৮। ক্যালসিয়াম – Ca
৬৯। টাইটেনিয়াম- Ti
৭০। ক্রোমিয়াম- Cr
৭১। লোহা- Fe
৭২। নিকেল- Ni
৭৩। জিংক- Zn      
৭৪। জার্মেনিয়াম- Ge         
৭৫। সেলেনিয়াম- Se
৭৬। ক্রিপ্টন- Kr
৭৭। স্ট্রনশিয়াম- Sr
৭৮। স্ট্রনশিয়াম- Sr
৭৯। জিরকোনিয়াম- Zr
৮০। মলিবডেনাম- Mo
৮১। রুথেনিয়াম – Ru
৮২। প্যালাডিয়াম- Pd
৮৩। ক্যাডমিয়াম- Cd
৮৪। টিন – Sn    
৮৫। টেলুরিয়াম- Te
৮৬। জেনন- Xe
৮৭। বেরিয়াম- Ba
৮৮। সিরিয়াম- Ce
৮৯। নিওডিমিয়াম- Nd
৮৯। অগানেসন- Og
৯০। স্যামারিয়াম  – Sm       
৯১। গ্যাডোলিনিয়াম- Gd
৯২। ডিস্প্রোসিয়াম – Dy     
৯৩। ইরবিয়াম- Er
৯৪। ইটারবিয়াম- Yb
৯৫। হাফনিয়াম-Hf
৯৬। টাংস্টেন- W
৯৭। রেনিয়াম- Re
৯৮। ইরিডিয়াম- Ir
৯৯। সোনা – Au            
১০০। থ্যালিয়াম- Tl
১০১। বিসমাথ- Bi
১০২। এস্টাটিন – At
১০৩। ফ্রান্সিয়াম – Fr             
১০৪। এক্টিনিয়াম – Ac
১০৫। থোরিয়াম- Th
১০৬। ইউরেনিয়াম – U
১০৭। প্লুটোনিয়াম- Pu
১০৮। কুরিয়াম – Cm
১০৯।ক্যালিফোর্নিয়াম – Cf
১১০। ফার্মিয়াম – Fm
১১১। নোবেলিয়াম- No        
১১২। রাদারফোর্ডিয়াম- Rf
১১৩। সিবোর্গিয়াম – Sg
১১৪। হ্যাসিয়াম – Hs
১১৫। ডার্মস্টাটিয়াম – Ds
১১৬। কোপার্নিসিয়াম- Cn     
১১৭। ফ্লেরোভিয়াম- Fl
১১৮। লিভারমোরিয়াম – Lv

যৌগিক পদার্থ

যে পদার্থকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করলে একাধিক পদার্থ পাওয়া যায়, তা-ই যৌগিক পদার্থ। যেমন : সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) 
এখানে সোডিয়াম ক্লোরাইডকে ভাগ করলে সোডিয়াম (Na) ও ক্লোরিন (Cl) পাওয়া যাবে।
অন্যবাবে বলা যায়, যে সকল পদার্থ ভাঙ্গলে একের অধিক মৌলিক পদার্থ পাওয়া যায় তাদেরকে যৌগিক পদার্থ বলে । যেমন- চকের এক টুকরোকে ভাঙতে ভাঙতে এক সময় এমন ছোট অংশ পাওয়া যাবে যে, সে গুলোকে আর খালি চোখে দেখা যাবে না । আর ভাঙা অংশ গুলোতে চকের গুণ বা বৈশিষ্ট্য পাওয়া যাবে না। চকের পরিবর্তে ভাঙা অংশগুরোতে ক্যালসিয়াম, কার্বন ও অক্সিজেন গুণ বা বৈশিষ্ট্য পাওয়া যাবে। তাই এখানে চক একটি যৌগিক পদার্থ।


যৌগিক পদার্থের বৈশিষ্ট্যঃ


১.যৌগিক পদার্থের উপাদান মৌল গুলি সর্বদা নির্দিষ্ট ওজনের অনুপাত এর পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যৌগ উৎপন্ন করে। নির্দিষ্ট যৌগের ক্ষেত্রে মৌল গুলির ওজন অনুপাত সর্বদায় একই থাকে।
২.যৌগিক পদার্থের ধর্ম তার উপাদান মৌল গুলির ধর্ম থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়।
৩.যৌগিক পদার্থের উপাদানগুলিকে সহজ ভৌত পদ্ধতিতে পৃথক করা যায় না।
৪.যৌগিক পদার্থের প্রতিটি অংশের গঠন ও ধর্ম একই থাকে। অর্থাৎ, যৌগিক পদার্থ সমসত্ব হয়।
৫.যৌগিক পদার্থ উৎপন্ন হওয়ার সময় তাপের উদ্ভব বা শোষণ অবশ্যই ঘটবে।
৬.প্রমাণ চাপে বিশুদ্ধ যৌগিক পদার্থের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক নির্দিষ্ট। যেমন, প্রমাণ চাপে বরফের গলনাঙ্ক ও 0°C এবং জলের স্ফুটনাঙ্ক 100°C।

কঠিন পদার্থ

সাধারণ অবস্থায় যে সকল পদার্থের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন থাকে এবং যাদের আকার পরিবর্তন করার সময় বাধা দেয় , তাদের কঠিন পদার্থ বলে । যেমন-লোহা , কাঠ , কয়লা ইত্যাদি ।

কঠিন পদার্থের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হলো :

  • কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট আকার আছে।
  • কঠিন পদার্থের ওজন আছে এবং এটি স্থান দখল করে।
  • কঠিন পদার্থকে তাপ দিলে প্রসারিত হয়।
  • কঠিন পদার্থকে বল প্রয়োগ করলে বাধার সৃষ্টি করে।
  • কোনো কোনো কঠিন পদার্থকে তাপ দিলে তরলে পরিণত না হয়ে সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয়, যেমন—ন্যাপথলিন।

তরল পদার্থ

যার নির্দিষ্ট ভর ও আয়তন আছে, জায়গা দখল করে এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে, কিন্তু নির্দিষ্ট আকার নাই, তাকে তরল পদার্থ বলা হয়।

তরল পদার্থের সমোচ্চশীলতা গুণ থাকায় এর উপস্থিতি স্পষ্ট হয়ে উঠে পাত্রের আকারের উপরে। একগ্লাস পানিকে যদি এক মাইল আয়তনের কোন সমতল পাত্রে রাখা যায়, তবে তার অস্তিত্বই টের পাওয়া যাবে না। কিন্তু একটি গ্লাসে রাখলে তার উপস্থিতি জানা যাবে। নির্দিষ্ট আকার নাই বলে, তরল পদার্থ পাত্রের আকার ধারণ করে দৃশ্যমান হয়।

তরল পদার্থের আন্তঃ আণবিক আকর্ষণ কঠিন পদার্থ অপেক্ষা কম। ফলে তরলপদার্থের কণাগুলো নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে চলাফেরা করতে পারে। কঠিন পদার্থ অপেক্ষা তরল পদার্থের কণাগুলোর ভিতরে ফাঁকা জায়গা বেশি থাকে। এর ফলে সাধারণত কঠিন পদার্থকে তরলে পরিণত করলে, এর আয়তনম বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে পানি একটি ব্যতিক্রমধর্মী পদার্থ। বরফকে তরল পদার্থে পরিণত করলে আয়তন কমে যায় ।

তরল পদার্থের বৈশিষ্ট্য

  • তরল পদার্থের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য গুলো দেখতে পাওয়া যায়-
  • অণুগুলো মধ্যে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল কঠিন পদার্থের তুলনায় কম হয়ে থাকে।
  • অণুসমূহ কিছুটা দূরে দূরে অবস্থান করে।
  • অণুগুলো কম্পন, আবর্তন ও স্থানান্তর গতি কঠিন পদার্থের চেয়ে বেশি, কিন্তু গ্যাসীয় পদার্থের থেকে কম হয়ে থাকে
  • তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে তরল পদার্থের আয়তন বৃদ্ধি পায়।
  • নির্দিষ্ট আয়তন আছে।
  • নির্দিষ্ট আকার নেই।
  • চাপের সামান্য সংকুচিত হয়।
  • কঠিন পদার্থ থেকে কম হয়ে থাকে।

বায়বীয় বা গ্যাসীয় পদার্থ

যে পদার্থের নির্দিষ্ট ভর আছে, কিন্তু নির্দিষ্ট কোন আকার ও আয়তন নেই, তাকে বায়বীয় পদার্থ বলে । যে সকল পদার্থের অণুগুলোর মধ্যে আন্তঃআনবিক আকর্ষণ বল থাকে না এবং অণুগুলো ছুটাছুটি করতে থাকে তাকে বায়বীয় পদার্থ বলে।

গ্যাসীয় বা বায়বীয়: গ্যাসীয় পদার্থের নির্দিষ্ট আয়তন ও নির্দিষ্ট আকার নেই। গ্যাসীয় পদার্থের অণুসমূহের আন্তঃআণবিক দূরত্ব পদার্থের তিন অবস্থার মধ্যে সবচেয়ে বেশি, তাই আন্তঃআণবিক আকর্ষণ শক্তি সবচেয়ে কম। ফলে তারা প্রায় সম্পূর্ণ মুক্তভাবে চলাচল করে। উদাহরণ: নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, মিথেন ইত্যাদি।

বায়বীয় বা গ্যাসীয় পদার্থ পদার্থের বৈশিষ্ট্য

নিচে এর বৈশিষ্ট্য দেওয়া হলো—

  • নির্দিষ্ট কোনো আকার বা আয়তন নেই।
  • বায়বীয় পদার্থের ওজন আছে।
  • এ পদার্থ জায়গা দখল করে।
  • ঠাণ্ডা করলে তরল পদার্থে পরিণত হয়।
  • ছোট পাত্রে এর আয়তন কম, বড় পাত্রে আয়তন বেশি।

বিশুদ্ধ পদার্থ

যে পদার্থগুলোর মধ্যে একাধিক পদার্থ মিশে থাকে না তাদের বিশুদ্ধ পদার্থ বলে । যেমন- অক্সিজেন , কার্বন-ডাই-অক্সাইড , জল , চিনি , গন্ধক ইত্যাদি।

অবিশুদ্ধ বা মিশ্র পদার্থ

সাধারণত যখন কোনো বিশুদ্ধ পদার্থে অল্প পরিমাণে অন্য বস্তু পাওয়া যায় তাকে আবিশুদ্ধ পদার্থ বলে। এক্ষেত্রে বিশুদ্ধপদার্থ ও অবিশুদ্ধ পদার্থের অনুপাত একশো ভাগের এক ভাগ বা হাজার ভাগের এক ভাগ এর মত হয়।

আর যখন দুই বা ততোধিক পদার্থ এমন ভাবে মিলে যায় যাতে তাদের অনুপাত তুলনা যোগ্য ( comparable) হয় তাকে মিশ্র পদার্থ বলে। এক্ষেত্রে পদার্থ গুলির অনুপাত 1:1 বা 1:2 বা 2:3 বা 7:17 এর মত হয়।

একটি অবিশুদ্ধ পদার্থ মােমের গলনাঙ্ক নির্ণয় পদ্ধতি নিচে বর্ণনা। মােম কিছু পদার্থের মিশ্রণ। মােমের গলনাঙ্ক নির্ণয় করতে হলে প্রথমে মােমকে চূর্ণ করে পাউডার বা গুঁড়ায় পরিণত করি । এরপর মােমের গুঁড়াকে একটি এক মুখ বন্ধ কাচনলে নিয়ে সেখানে একটি থার্মোমিটার রাখি । এবারে কাচনলটি বিকারের পানিতে এমনভাবে ডুবাই  যেন কাচনলের খােলা মুখে পানি প্রবেশ করতে না পারে। এখন বিকারটিতে ধীরে ধীরে তাপ প্রদান করি । 

যেহেতু অবিশুদ্ধ পদার্থের গলনাঙ্ক বিশুদ্ধ পদার্থ থেকে কম হয়। স্ফুটনাঙ্ক বিশুদ্ধ থেকে বেশি হয়। মিশ্র পদার্থের সুনির্দিষ্ট গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক থাকে না।  সেহেতু এক পর্যায়ে দেখা যাবে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় মােম না গলে তাপমাত্রার একটি পরিসরে (range) মােম গলতে থাকে এবং তাপমাত্রার এই পরিসরই হলাে মােমের গলনাঙ্ক।

উর্ধ্বপাতিত পদার্থ


আমরা যেসকল পদার্থ প্রকৃতিতে সাধারণত দেখতে পাই সেগুলোর সকলেরই ৩ টি অবস্থা দেখি। সেগুলো হলো তাদের ভৌত অবস্থা যেমন: কঠিন, তরল ও বায়বীয় অবস্থা। আমরা যদি একটি বরফ টুকরাকে তাপ দেই তাহলে সেটি প্রথমে তরল বা পনি হবে। যদি আরও তাপ দিতে থাকি তাহলে সেটি বায়বীয় অর্থাৎ বাষ্পে পরিণত হবে। এখানে আমরা পানির ৩ টি ভৌত অবস্থাই দেখতে পাই।

কিন্তু কিছু কিছু পদার্থ আছে যাদের এই ৩ টি ভৌত অবস্থার সবগুলো দেখতে পাওয়া যায় না। এখন, যেসকল কঠিন পদার্থকে তাপ দিলে সেটি তাপ গ্রহণের মাধ্যমে তরলে পরিণত না হয়ে সরাসরি বাষ্পে অর্থাৎ বায়বীয় অবস্থায় পরিণত হয় তাদেরকে উর্ধপতিত পদার্থ বলে। যেমন:

ড্রাই আইস বা কঠিন CO2

কর্পূর (C10H16O)

কঠিন আয়োডিন (I2)

নিশাদল (NH4Cl)

ন্যাপথলিন‌ (C10H8)
ইত্যাদি

রেচন পদার্থ

যে জৈবিক প্রক্রিয়ায় জীব দেহকোষে উৎপন্ন হওয়া বিপাকীয় দূষিত পদার্থ গুলি দেহকোষে অদ্রাব্য কেলাস রূপে সাময়িক ভাবে সঞ্চিত থাকে (উদ্ভিদের ক্ষেত্রে) কিংবা দেহ থেকে নির্গত হয়ে যায় (প্রাণীদের ক্ষেত্রে) , তাকে রেচন বলে।

প্লাজমা :

 পদার্থের যে গ্যাসীয় অবস্থায় সমান সংখ্যক ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আয়ন বহন করে আয়নিত হয়, তাকে প্লাজমা বলে। পদার্থের প্লাজমা অবস্থায় ধনাত্মক চার্জ বা আয়ন কণা বা অনু-পরমাণু বহন করে এবং ঋণাত্মক আয়ন বা চার্জ ইলেকট্রন বহন করে। বজ্রপাত, নিয়ন গ্যাস দিয়ে তৈরি রাসায়নিক যৌগ, নিউক্লিয়ার বোমায় উৎপন্ন আগুন ইত্যাদি হচ্ছে পদার্থের প্লাজমা অবস্থার উদাহারন।

আরো পড়ুন ;- তরঙ্গ কাকে বলে? তরঙ্গের প্রকারভেদ ও বৈশিষ্ট্য সমূহ উদাহরণ সহ

মৌলিক ও যৌগিক পদার্থের মধ্যে পার্থক্যঃ

১.যে পদার্থকে রাসায়নিক পদ্ধতিতে বিভাজিত করে দুই বা ততোধিক ভিন্ন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থে বিশ্লিষ্ট করা যায় না, সাধারণভাবে সেই পদার্থ ব্যতীত অন্য কোন নূতন পদার্থ পাওয়া যায় না, তাকে মৌল বা মৌলিকপদার্থ বলে।পক্ষান্তরে, যে পদার্থ থেকে দুই বা ততোধিক সম্পূর্ণ ভিন্ন ধর্মবিশিষ্ট মৌলিক পদার্থ পাওয়া যায়, সেই পদার্থকে যৌগ বা যৌগিকপদার্থ বলে। 
২.মৌলিকপদার্থ হলো-  কার্বন, হাইড্রোজেন, লৌহ ইত্যাদি। আর,যৌগিক পদার্থ হলো- পানি, এসিড, লবন ইত্যাদি।
৩.মৌলিক পদার্থের একক হলো- পরমানু।আর, যৌগিক পদার্থের একক- অনু।
৪.মৌলিক পদার্থকে বিশ্লেষন করলে ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন পাওয়া যায়।আর, যৌগিক পদার্থকে বিশ্লেষন করলে মৌলিক পদার্থ পাওয়া যায়।
৫.মৌলিক পদার্থের সংখ্যা সীমিত। কিন্তু, যৌগিক পদার্থের সংখ্যা অসীম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

পদার্থ কাকে বলে পাদার্থ কত প্রকার ও কী কী

পদার্থ এ সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তরঃ–

গ্যাসীয় বা বায়বীয় পদার্থের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন নেই কেন?

কঠিন পদার্থের অণু সমূহ হলো রোমিও-জুলিয়েটের মত, তাই সবসময় একসাথে জুড়ে থাকে। প্রত্যেক অণু তাদের সঙ্গী অণু ছেড়ে চলে যায়না বা স্থান পরিবর্তন করেনা বলে এদের সমন্বয়ে তৈরি পদার্থ নির্দিষ্ট আকার বজায় রাখে।

তরল পদার্থ হলো ফ্রেন্ডজোনে থাকা কোন ছেলে-মেয়ের সম্পর্কের মত, তারা কাছে আসি-আসি করেও আসেনা আবার দূরেও যায়না, পারিপার্শ্বিক অবস্থা নির্ধারন করে তারা আদৌ কোনোদিন এক হবে কি না। পদার্থের অণুর ক্ষেত্রে নিম্নতাপমাত্রায় ফ্রেন্ডজোন ভেঙে রোমিও-জুলিয়েট বানিয়ে দেয় আর উচ্চ তাপমাত্রা দূরে সরিয়ে দেয়।

গ্যাসীয় পদার্থের অণুগুলোর সম্পর্ক হলো পুরোপুরি ভুলতে না পারা এক্স এর মতো, একজন আরেকজনের কাছে থাকতে চায় কিন্তু কাছে যাওয়ার মতো সুযোগ বা পরিস্থিতি থাকেনা। অণুগুলো এই ক্ষেত্রে যথাসম্ভব কাছে থাকতে চায় কিন্তু গ্রাভিটি এবং বায়ুর বাধা পরস্পর আকর্ষণের চেয়ে বেশি হওয়ার ফলে এদিক-সেদিক ছড়িয়ে পড়ে। যেহেতু বিভিন্ন জায়গার গ্রাভিটি এবং বায়ুর বাধা ভিন্নরকম তাই এই ছড়িয়ে পরার ধরণও ভিন্ন হয়, ফলে এর নির্দিষ্ট আকার বা আয়তন বজায় রাখা সম্ভব হয়না।

গ্যাসীয় পদার্থের নির্দিষ্ট আকার থাকে না কেন?

যেহেতু বিভিন্ন জায়গার গ্রাভিটি এবং বায়ুর বাধা ভিন্নরকম তাই এই ছড়িয়ে পরার ধরণও ভিন্ন হয়, ফলে এর নির্দিষ্ট আকার বা আয়তন বজায় রাখা সম্ভব হয়না

সব পদার্থের স্থিতিস্থাপকতা একই হয় না কেন?

কোনো বস্তুর ওপর বাইরে থেকে বল প্রয়োগ করা হলে যদি বস্তুটি গতিশীল না হয় তাহলে এর বিভিন্ন অংশের মধ্যে আআপেক্ষিক সরণ হয় বা বলা যেতে পারে অণুগুলোর মধ্যবর্তী দূরত্বের পরিবর্তন ঘটে, ফলে বস্তুটির আকার বা আয়তন বা উভয়ের পরিবর্তন হয়। এ অবস্থায় বস্তুর ভেতরের আন্তআণবিক বল এ পরিবির্তনকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। ফলে বল প্রয়োগ বন্ধ করলে বস্তু আবার আগের অবস্থা ফিরে পায়। পদার্থের এ ধর্মের নাম স্থিতিস্থাপকতা।

যেহেতু সব পদার্থের আন্তআণবিক বল একই নয়। তাই সব পদার্থের স্থিতিস্থাপকতাও একই হয় না।

বস্তুর গঠন এবং গঠিত পদার্থের ওপর নির্ভর করে ভিন্ন ভিন্ন বস্তুর স্থিতিস্থাপকতা ভিন্ন ভিন্ন হয়।

কঠিন ও তরল পদার্থের কিভাবে ব্যাপন হয়?

তরল ও বায়বীয় পদার্থের ব্যাপন হয়। কঠিন পদার্থের কোনো ব্যাপন হয়না। সকল পদার্থই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুর সমন্বয়ে গঠিত,এই অণুগুলো সর্বদা গতিশীল অবস্থায় বিরাজমান থাকে এবং বেশি ঘনত্বের স্থান হতে কম ঘনত্বের স্থানে ছড়িয়ে পড়ে যতক্ষণ না সবজায়গায় ঘনত্ব সমান হয়।

কোন দুইটি স্থানে তাপমাত্রা, বায়ুমণ্ডলীয় চাপ ও অণুর ঘনত্ব সমান থাকলে সেখানে ব্যাপন ঘটবে না কারণ সেখানে গতিশক্তির ভিন্নতা থাকবে না। পক্ষান্তরে, যদি তাপ ও চাপগত পার্থক্য নাও থাকে তবুও শুধুমাত্র ঘনত্বের ভিন্নতার ভিত্তিতে ব্যাপন হবে কারণ গতিশক্তির ভিন্নতা থাকবে। আর কোনো বস্তুর অধিক ঘনত্বের স্থান থেকে কম ঘনত্বের স্থানের দিকে ছড়িয়ে পড়ার প্রচ্ছন্ন ক্ষমতার হারকে ব্যাপনের হার বা ব্যাপন হার বলে।

যেমন – ঘরের এক কোণে সেন্টের বোতল খোলা মুখে রাখলে তার থেকে সেন্টের সুগন্ধ পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়ে, এটি হলো গ্যাসীয় পদার্থের ব্যাপন। আবার তরল পানিতে কয়েক ফোটা তরল নীল বা তুঁতের দ্রবণ মেশানো হলে তা কিছুক্ষনের মধ্যেই পুরো পানিকে নীল বর্ণে পরিণত করে, এটিও ব্যাপনের উদাহরণ তবে তরল পদার্থের ৷

তাপমাত্রা বাড়লে পরিবাহী পদার্থের রোধ বাড়ে কেন?

পরিবাহীতে দুধরনের ইলেকট্রন থাকে ১.মুক্ত ইলেকট্রন ২. বন্ধন জোড় ইলেকট্রন। স্বাভাবিক বা নিম্ন তাপমাত্রায় মুক্ত ইলেকট্রন এবং বন্ধন জোড় ইলেকট্রনের মধ্যে অনেক বেশি ফাঁকা জায়গা থাকে। এর ফলে মুক্ত ইলেকট্রন কোন বাঁধা ছাড়াই চলাচল করতে পারে। কিন্তু তাপমাত্রা বাড়ালে বন্ধন জোড় ইলেকট্রন গুলোতে কম্পনের ফলে জায়গা কমে যায়। এতে মুক্ত ইলেকট্রনগুলোর চলাচলে বাঁধার সৃষ্টি হয়, এমনকি সংঘর্ষও হয়। এ কারণেই রোধ বেড়ে যায়।

সূচীপত্র

Leave a Comment