সাহিত্য কাকে বলে?

সাহিত্য জীবনের অনুষঙ্গ।যাপিত জীবনকে আরেকটু অলংকৃত করতেই লোকে সাহিত্য চর্চার প্রয়োজন বোধ করে।সাহিত্য চর্চা জীবনের গ্লানি কমায়।মনের ভাবকে তুলে ধরে জীবনের নানা দিকের প্রতি আলোকপাত করে।তাই সাহিত্যের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন রাখার কোন অবকাশ নেই।

আজ এই আর্টিকেলে তাই আলোচনা করবো সাহিত্য কাকে বলে ও এর বিস্তারিত নিয়ে।আশা করি,সাহিত্য সম্পর্কিত সকল জিজ্ঞাসার যথাযথ উত্তর আর্টিকেলটি পড়ে শেষ করলে আপনারা পেয়ে যাবেন।তাহলে প্রথমেই আসি,সাহিত্য কি সে আলোচনায়।

সাহিত্য ক?

সাহিত্য যে কোন ভাষায় জীবন বোধ ও জীবনের নানা দিক দর্শন নিয়ে রচিত লেখনী যা মানুষের আবেগের আবহকে তুলে ধরে এবং অনুপ্রেরণাও যোগায়।সাহিত্যচর্চা অত্যন্ত ভালো অভ্যাস।সাহিত্যের সাথে সংশ্লিষ্টতা মানুষকে উন্নত চিন্তাধারা ও পরিপক্ব হয়ে উঠতে সাহায্য করে।

আমাদের ভাষা বাংলা। আমরা বাংলা ভাষাভাষীর মাধ্যমে নিজেদের মনের ভাব, আবেক একজন অন্যজনের কাছে প্রকাশ করে থাকি। আর এই প্রকাশটাই যখন বিশেষ কোনো ভাবে সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে লিখিত আকারে প্রকাশ হয় ঠিক তখনই এটিকে সাহিত্য হিসেবে ধরা হয়। সাহিত্য শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আর এই  সাহিত্য শিল্পের মাধ্যমেই একটি সাধারণ লেখনী কে করে তোলা হয় ভিন্ন কিংবা অসাধারণ। যা শুধুমাত্র সাহিত্যের মাধ্যমেই সম্ভব।

সাহিত্য এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে Literature. সাহিত্য শিল্পের একটি বড় অংশ হিসেবে পরিচিত। আর এই সাহিত্য নিয়ে যদি সহজ করে বলি, যেখানে শিল্পের ছোঁয়া দিয়ে একটি সাধারণ লেখনীকে যখন অন্যসব লেখনী থেকে আলাদা করে তোলা হয় তাকেই সাহিত্য বলে। সাহিত্য এর গোঁড়াপত্তন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে হয়েছে। আর এই গোড়পত্তনের জন্যই বাংলা ভাষায় যেনো আরো সৌন্দর্য ছুঁয়ে গেছে।

সাহিত্য কত প্রকার ও কী কী?

সাহিত্যকে মোটা দাগে ভাগ করতে চাইলে দুই প্রকার সাহিত্য পেতে পারি।

যেমনঃ- দেশি বা স্থানীয় সাহিত্য। এবং বিশ্ব সাহিত্য বা বিদেশি সাহিত্য।

আবার ধরণ অনুযায়ীও সাহিত্য দু’প্রকার। যেমনঃ গদ্য ও পদ্য।

অনেকে আবার ‘নাটক’ কেও সাহিত্যের একটি প্রধান শাখা হিসেবে দেখে থাকে।

দেশী ও বিদেশী সাহিত্য মূলত ভাষার উপর নির্ভরশীল।যেমন বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্য বাংলাদেশের বাংলা ভাষাভাষী লোকের কাছে দেশী সাহিত্য কিন্তু অন্য দেশে তা বিদেশী।

গদ্য,পদ্য ও নাটক নিয়ে নিম্নে সংক্ষিপ্ত আলোচনা তুলে ধরছি।

গদ্য কাকে বলে?

গদ্য হলো মানুষের কথ্য ভাষার লেখ্যরূপ। এর বিপরীত হলো পদ্য বা কাব্য। গদ্যের প্রাথমিক ব্যবহার চিঠিপত্র লেখায়, দলিল-দস্তাবেজ প্রণয়নে এবং ধর্মীয় গ্রন্থাদি রচনায়। বাংলা পদ্যের ইতিহাস শুরু হয়েছে চর্যাপদ থেকে; কিন্তু গদ্যের ইতিহাস ততটা প্রাচীন নয়। গদ্যের চারিত্র্য নির্ভর করে শব্দের ব্যবহার এবং বাক্যে পদ স্থাপনার ক্রমের ওপর।

বাংলা গদ্য  প্রাক-বাংলা ভাষার কিছু নমুনা দশ শতক থেকে রচিত বৌদ্ধগান চর্যাপদে পাওয়া গেছে।  এ গানগুলি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার আংশিক কারণ হলো এগুলি শতকের পর শতক গাওয়া হয়েছে এবং অনেক পরে লিখিতরূপে রক্ষিত হয়েছে। তাছাড়া, ধর্মীয় সাহিত্য হিসেবে এগুলি সেই ধর্মের অনুসারীদের পৃষ্ঠপোষণা লাভ করেছে।  অপরপক্ষে, তখনকার গদ্যের কোনো নমুনা বলতে গেলে রক্ষা পায়নি। বাংলা কিছু শব্দ এবং অনুবাক্য এগারো শতক থেকে রচিত তাম্রলিপি এবং তাম্রশাসনে লক্ষ করা যায়। কিন্তু এসব উৎকীর্ণ লিপির সঠিক তারিখ সর্বত্র দেওয়া নেই। ১১৫৯ সালে সর্বানন্দ রচিত অমরকোষের টীকাসর্বস্বে তিন শতাধিক বাংলা শব্দ সংকলিত হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় যে, তখন কেবল বাংলা ভাষা বিকাশ লাভ করতে আরম্ভ করেছিল। উৎকীর্ণ লিপি বা টীকাসর্বস্বে অবশ্য বাংলা বাক্যের কাঠামো অথবা ব্যাকরণ সম্পর্কে কোনো ধারণা পাওয়া যায় না।

বাংলা গদ্যের আদি নিদর্শন বাংলা গদ্যে লেখা সবচেয়ে পুরানো যে-চিঠিটি সময়ের প্রতিকূলতা সত্ত্বেও রক্ষা পেয়েছে সেটি কোচবিহারের রাজা ১৫৫৫ সালে আসামের রাজাকে লিখেছিলেন বলে দাবি করা হয়। কোনো কোনো পন্ডিত এ বিষয়ে সন্দেহ করেন। তবে এ থেকে অন্তত বোঝা যায় যে, মোটামুটি ওই সময় থেকে কেউ কেউ যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বাংলা গদ্যে চিঠিপত্র লিখতে শুরু করেন। সতেরো শতকে মুগল শাসন শক্ত ভিত্তি এবং সুবদ্ধ কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেই বাংলা ভাষায় না হলেও, ফারসিতে লিখে রাখার রেওয়াজ চালু হয়–রাজকীয় আদেশ, রাজানুগ্রহ, দলিল-দস্তাবেজ, কাজীর আদেশ–সব কিছুই। লিখে রাখার এ রীতি বাঙালিদেরও প্রভাবিত করে। পরে বাংলা গদ্যে চিঠিপত্র এবং দলিল-দস্তাবেজ লেখা ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা অর্জন করে, যদিও তখনকার বাংলা ছিল ফারসি পরিভাষা দিয়ে প্রভাবিত।

পদ্য কাকে বলে?

পদ্য (ইংরেজি: Poetry) হলো সাহিত্যিক ধারার একটি রূপ, যা কোনো অর্থ বা ভাব প্রকাশের জন্য গদ্যছন্দে প্রতীয়মান অর্থ না ব্যবহার করে ভাষার নান্দনিক ও ছন্দোবদ্ধ গুণ ব্যবহার করে থাকে। পদ্যে ছন্দোবদ্ধ বাক্য ব্যবহারের কারণে গদ্য থেকে ভিন্ন। গদ্য বাক্য আকারে লেখা হয়, পদ্য ছত্র আকারে লেখা হয়।

সাহিত্যের ইতিহাস খুঁজলে জানাযায় আজ থেকে প্রায় চার হাজার (৪০০০) বছর আগে অর্থাৎ খ্রীস্টপূর্ব ২০০০ বছর আগে প্রথম বারের মতো কোন স্বীকৃত সাহিত্য লেখা হয়। এটি ছিলো ‘সোম’ ভাষায় রচিত যার নাম ‘গিলগামেশের মহাকাব্য।’
এরপর যেটার নাম পাওয়া যায় সেটা হলো ‘বুক অব দ্য ডেড।’ এটি ‘প্যপিরাস অব অনি’র’ লেখা এবং এর লেখার সময়কাল হলো খ্রীস্টপূর্ব আঠারো (১৮০০) শত শতকে। এটিও ছিলো একটি কাব্যধর্মি রচনা।
এবার যে নামটা আসবে সেটা আমরা অনেকেই জানি। বিশেষ করে, সাহিত্যের ছাত্র যারা তাদের সবাই এর নাম জানে এবং ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষার্থীদের এটা পাঠ্যও থাকে। আমারও ছিলো ‘ইলিয়াড ও ওডিসি’ মহাকবি ‘হুমার’ এর কবি। এটি একটি মহাকাব্য। এটি গ্রীক সভ্যতার অবদান এবং প্রায় ১৫-১৬ শত শতকের দিকে এটি রচিত।
ঐতিহাসিকগণ মনে করেন হোমারের ‘ইলিয়াড ও ওডিসি’ প্রকাশের পরই নাকি তারা গ্রীক সভ্যতা সম্পর্কে জানতে পারেন এবং সে সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। সেই আগ্রহহতেই সবশেষে গ্রীক সভ্যতা নামক অত্যন্ত সমৃদ্ধ এক সভ্যতার প্রকাশ ঘটান।

তাহলে একটা বিষয়ে পরিষ্কার হওয়া গেলো যে “সাহিত্যের গোড়াপত্তন হয় কাব্য রুপে। অর্থাৎ, সাহিত্যের আদিরূপ হলো কাব্য বা কবিতা।

সাহিত্য চর্চার গুরুত্ব

অন্তরের জিনিসকে বাহিরের,ভাবের জিনিসকে ভাষায়, নিজের জিনিসকে বিশ্বমানের ও ক্ষণকালের জিনিসকে চিরকালের করিয়া তোলাই সাহিত্যের কাজ।’’
শুরুতেই প্রমথ চৌধুরীর কথা স্মরণ করছি যিনি সাহিত্যে চর্চার গুরুত্ব অন্যান্যদের তুলনায় বেশ ভালোই বুঝেছিলেন।ধন-সম্পদের তুলনায় সাহিত্যে যে বিশাল আরও মূল্যবান সেটাই তিনি বলেছেন,‘‘যে জাতি মনে বড় নয়,সে জাতি জ্ঞানেও বড় নয়;কেননা ধনের সৃষ্টি যেমন জ্ঞান সাপেক্ষে তেমনি জ্ঞানের সৃষ্টি মন সাপেক্ষে এবং মানুষের মনকে সরল,সচল,সরাগ ও সমৃদ্ধ করার ভার আজকের দিনের সাহিত্যের ওপর ন্যস্ত হয়েছে।’’সুতরাং সাহিত্যের চর্চাও আবশ্যক যেমনটা শিক্ষা অর্জন আমরা আবশ্যক মনে করছি।শিক্ষার সর্বপ্রধান শাখা সাহিত্যেচর্চা।সর্বপ্রধান শাখা সাহিত্যে হলেও এটা সত্য যে সাহিত্যের রস সকলে সানন্দে গ্রহণ করতে চায় না কারণ এই রসের সাথে অর্থের রস পারস্পারিক আকর্ষণ করে না।
প্রত্যেক মানুষেরই কিছু কথা থাকে,থাকে গল্প বা অনুভূতি।আর এ কথাকে বা গল্পকে লিখে ফেলাই সাহিত্যের কাজের মধ্যে পড়বে না।যখন গল্প বা যেকোনো লিখা গবেষণামূলক অথবা অনুসন্ধানমূলক হবে তখনই তা সাহিত্যের পর্যায়ে পড়বে।এজন্যই সাহিত্যে এতো শক্তিশালী কারণ এটি সম্ভাবনাকে বাস্তবে রুপদানে সক্ষম।

মানুষের জীবনে সাহিত্য পাঠের মূল্য অপরিসীম। বিভিন্ন যুগের সাহিত্য পাঠের মধ্য দিয়ে অতীতের সাথে বর্তমানের যে যোগসুত্র রচিত হয় তার মধ্যে দিয়ে মানুষ নিজের ঐতিহ্য এবং ইতিহাসকে মনে রাখে। কথায় বলে সবকিছু হারিয়ে গেলেও কাহিনী কোনদিন হারিয়ে যায় না। সেই কাহিনীর মধ্যে দিয়েই ইতিহাস তার গল্প বলে যায়।

সাহিত্য পাঠের দ্বারা ইতিহাসের সাথে বর্তমানের সেতু রচিত হলে সেই সূত্র সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে বিশেষ উপযোগী হয়। একটি সমাজ আপন ইতিহাস ও ঐতিহ্য দ্বারাই ঐক্যবদ্ধ থাকে। সাহিত্য সমাজের ঐক্যের ক্ষেত্রে ইতিহাসের সুতো বাধার কাজ করে। অন্যদিকে সাহিত্যপাঠ মাধ্যমে ব্যক্তি মানুষের চরিত্র গঠন করে তাকে সমাজজীবনে বসবাস এবং সমাজ গঠনে অবদান রেখে যাওয়ার জন্য উপযোগী করে তোলে।

Leave a Comment