Frre online slots

  1. Law On Gambling Canada: This info is asked for at the point of sale, and includes.
  2. Roulette Definition New Zealand - Established in 2024, Duelz Casino is a relatively new online casino.
  3. Online Signup Slot Form: On the flipside, the Tribal Gaming Commission oversees all casino gambling at Eastern Band of Cherokee properties.

Roulette 5 bet system

Online Gambling With Free No Deposit Bonus
Here are other symbols that participate in the Cleopatra casino game online.
Casino De Chaves 100 Free Spins Bonus 2025
So, if you don't enjoy the first one, then move on and try the next one in our list.
For non-residents a tax of 30 percent is taken.

Free spins without deposit new

Casino Games For Fun Free Download
We found no issue with lengthy waiting times during our testing period.
Free Online Casino That Pays Real Money
In case of a zero, a double bet is made on the colour opposite to the one chosen at the beginning of the game.
Free Spins Deposit Uk

দর্শন কাকে বলে? দর্শন কত প্রকার ও কী কী?

ভূমিকাঃ
জীবন ও জগত সম্পর্কিত মৌলিক সমস্যাবলির যৌক্তিক অনুসন্ধান করাই হচ্ছে দর্শন। দৈনন্দিন জীবনে মানব মনে প্রকৃতির অপার রহস্য সম্পর্কে অজস্র জিজ্ঞাসার সৃষ্টি করে। আর এ জিজ্ঞাসা থেকেই জন্ম নেয় দর্শন। মানুষ বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন প্রাণী। তাই সে এসব রহস্য ছিন্ন করেই ক্ষান্ত হয়নি, জীবনের ক্ষেত্রে এর তাৎপর্যকেও আবিষ্কার করেছে। আর এজন্যই দর্শন একটি সর্বাত্মক বিষয়।

শাব্দিক অর্থে দর্শনঃ 
ইংরেজি ‘Philosophy’ শব্দের প্রতিশব্দ ‘দর্শন’। দর্শন শব্দটি মূলতঃ সংস্কৃতি শব্দ, যার পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে বস্তুর প্রকৃত সত্তা বা তত্ত্বদর্শন। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে গ্রিক দার্শনিক পিথাগােরাস “Philosophy” কথাটিকে ‘জ্ঞানানুরাগ’ অর্থে ব্যবহার করেন। “Philosophy” শব্দটি গ্রিক শব্দ Philos এবং “Sophia” থেকে উদ্ভূত হয়েছে। ‘Philos’ শব্দের বাংলা অর্থ অনুরাগ এবং ‘Sophia’ শব্দের অর্থ জ্ঞান । অর্থাৎ “Philosophy” শব্দের ধাতুগত অর্থ হচ্ছে জ্ঞানের প্রতি অনুরাগ। খ্রিষ্টপূর্ব যুগে Socratics ও Plato থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত Philosophy-এর প্রধান কাজ জ্ঞান আহরণ।

সম্পর্কিত আর্টিকেল

দর্শন কাকে বলে?

দর্শনের সংজ্ঞাঃ
এক কথায় দর্শনের কোন সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব নয়। যুগে যুগে বিভিন্ন দার্শনিক দর্শনের বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন। এসব সংজ্ঞা পর্যালােচনা করলে যে সারসংক্ষেপ পাওয়া যায় তাতে দেখা যায় যে, প্রত্যেক দার্শনিকই জগৎ জীবনের ব্যাখ্যা, জগতের সংগে জীবনের সম্পর্ক, স্রষ্টার সংগে সৃষ্টির সম্পর্ক ইত্যাদির ওপর গুরুত্বারােপ করেছেন।
যায় তাতে দেখা যায় যে, প্রত্যেক দার্শনিকই জগৎ জীবনের ব্যাখ্যা, জগতের সঙ্গে জীবনের সম্পর্ক, স্রষ্টার সংগে সৃষ্টির সম্পর্ক ইত্যাদির ওপর গুরুত্বারােপ করেছেন।

দর্শনের কয়েকটি প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ-
কয়েকজন বিখ্যাত দার্শনিক কর্তৃক প্রদত্ত দর্শনের  সংজ্ঞা এখানে উল্লেখ করা হলো—
গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর মতে, “চিরন্তন এবং বস্তুর মূল প্রকৃতির জ্ঞান অর্জন করাই দর্শনের লক্ষ্য”।
অ্যারিস্টটলের মতে, “আদি সত্ত্বার স্বরূপ এবং এ স্বরূপের অঙ্গীভূত যে সব বৈশিষ্ট্য তার অনুসন্ধান করে যে বিজ্ঞান তাই হলাে দর্শন”।
হার্বার্ট স্পেন্সার বলেন, “বিশৃঙ্খল জ্ঞান নিম্নমানের জ্ঞান। বিজ্ঞান হলাে আংশিক একীভূত জ্ঞান। বিভিন্ন বিজ্ঞানের সাধারণ সত্যগুলােকে অন্তর্নিবিষ্ট ও দৃঢ়ীকৃত করার ফলে যে সম্পূর্ণ ঐক্য বা জ্ঞান তাই হলো দর্শন”।
কানিংহাম বলেন, “মানুষ দার্শনিক হবে কি না, তা কোনাে প্রশ্ন নয়; প্রশ্ন হলাে ভালাে এবং মন্দ এই দুই দর্শনের মধ্যে একটিকে নির্বাচন করা”।
শেলিং-এর মতে, “জগৎ ঠিক কি হলে মন একে বুঝতে পারবে এবং মন ঠিক কি হলে জগৎ একে বুঝতে পারবে এটি নির্দিষ্ট করার চেষ্টাই দর্শন”।
আর. জে. হার্স্ট-এর মতে, “জগৎ ও মানব প্রকৃতি সম্পর্কে যেসব নির্দিষ্ট মৌলিক সমস্যা আছে তার যৌক্তিক উত্তর অনুসন্ধানই হচ্ছে দর্শন”।

দর্শনের উৎপত্তি

দর্শনের উৎপত্তি কিভাবেঃ-
দর্শনের উৎপত্তি নিয়ে দার্শনিকদের মধ্য যথেষ্ট মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। যেমন, কেউ কেউ মনে করেন কৌতুহল ও সংশয় থেকে দর্শনের উৎপত্তি, কেউ বা মনে করেন সত্যানুসন্ধান বা জানার আকাক্সক্ষা থেকে দর্শনের উৎপত্তি।
আবার, কেউ মনে করেন ব্যবহারিক প্রয়োজন থেকেই এর উৎপত্তি। অনেকে আবার আধ্যাত্মিক প্রেরণা ও পিপাসাকেও দর্শন উৎপত্তির কারণ বলে মনে করেন। নিচে দর্শনের ঐতিহাসিক ক্রমানুসরণে দর্শনের উৎপত্তি বিষয়ক মতবাদগুলো আলোচনা করা হলোঃ
সত্যানুন্ধান ও জ্ঞানস্পৃহাঃ
দর্শনের লক্ষ্যই হলো সত্যানুসন্ধান করা। আর দার্শনিকের কাজ সভ্য অনুসন্ধানে সমস্যা চিহ্নিত করা, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে যৌক্তিক ভিত্তি প্রদান করা। আর এটা মানুষের জন্মগত স্পৃহাও বটে। প্রত্যেকটি মানুষই কম বেশি সত্য জানতে চায়। সেদিক থেকে প্রতিটি মানুষই জন্মগতভাবেই দার্শনিক। কেননা জীবন-জগত এবং সমস্যা নিয়ে সব মানুষই চিন্তা-ভাবনা করে।

বিষ্ময় , সংশয় ও কৌতূহল থেকে দর্শনঃ
মানব শিশু যখন ভূমিষ্ট হয় তখন সে ভূমিষ্ট হবার সাথে সাথেই চিৎকার করে কান্না করে । কারণ তার পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতা একেবারেই নতুন ও বৈচিত্র্যময় । আস্তে আস্তে সে যখন বড় হতে থাকে বাড়তে থাকে তার কৌতূহল । অর্থাৎ কৌতূহল তার জন্মগত স্বভাব । এরপর সে কখনো বিষ্ময় , কখনো বা সংশয় ভরে জানতে চায় তার জীবন ও জগতকে । আর মানুষের এ কৌতূহল ও বিস্ম§য়ই জন্ম দেয় দর্শনের । নিত্য নতুন বিষয়ের জ্ঞান অর্জন করেই সে ক্ষান্ত হয় না আবিষ্কার ও প্রতিষ্ঠা করে অনেক বড় কিছু । কবি নজরুলের ভাষায় বলা যায় , “ বিশ্বজগত দেখব আমি আপন হাতের মুঠোয় পরে ” । বিশ্বজগতকে হাতের মুঠোয় পেতে মানুষের যে অদম্য বাসনা তা জন্ম দেয় দর্শনের ।

জীবনের নানাবিধ প্রয়োজন থেকেও দর্শনঃ
অনেকে মনে করেন , জীবনের মৌলিক প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করাই কেবল দর্শন নয় , জীবনের ব্যবহারিক প্রয়োজনসহ আরো অনেক প্রয়োজন থেকেও দার্শনিক আলোচনার উৎপত্তি ঘটে । প্রয়োগবাদী দার্শনিক মতবাদ ব্যবহারিক প্রয়োগকে প্রাধান্য দিয়েই যাত্রা শুরু করে । উইলিয়াম জেমস , জন ডিউই , এফ.সি শিলার প্রমুখ এ দর্শনের প্রধান প্রবক্তা । জন ডিউই তার শিক্ষাতত্ত্বে উল্লেখ করেন , যে শিক্ষা মানুষের কাজে লাগে না তা প্রকৃত শিক্ষা নয় । হাতে কলমে শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষাকে তারা বেশি গুরুত্ব দেন । বিখ্যাত দার্শনিক কানিং হামও তাই মনে করেন । মানুষের প্রয়োজনই মানুষকে জগত সম্বন্ধে তাকে চিন্তা করতে বাধ্য করে । একইভাবে মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনে গড়ে উঠে অস্তিত্ববাদী দার্শনিক মতবাদ । অস্তিত্ববাদী দার্শনিক জ্যা পল সাত্র , কিয়াকেগার্ড প্রমুখ মনে করেন মানুষ এ সমস্যা বহুল পৃথিবীতে অসহায় অবস্থায় জন্ম নেয় এবং বয়োবৃদ্ধির সাথে সাথে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয় ।হাজারো পরিস্থিতির মধ্যে তাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয় একান্ত নিজের জন্য ।সেক্ষেত্রে তাকে তার নিজস্ব প্রয়োজন ও সমস্যার আলোকেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয় । তার কোন প্রয়োজনকেই সে উপেক্ষা , অবহেলা বা অস্বীকার করতে পারে না । কাজেই দেখা যাচ্ছে ব্যক্তি মানুষের এ অস্তিত্বের উপরে গুরুত্বারোপ করে জীবনের লক্ষ্য ও মূল্য নির্ধারণের চেষ্টা করে থাকে , যা মানুষের সমস্যা বা প্রয়োজনকেই গুরুত্ব দিয়েই অস্তিবাদীী দর্শন যাত্রা করে । এভাবে দেখা যায় জীবনের নানা প্রয়োজন ও সমস্যা সমাধান কল্পেও দর্শনের উৎপত্তি হয়ে থাকে বলে মনে করা হয় । ভারতীয় চার্বাক দর্শনও মানুষের প্রয়োজনেই উদ্ভূত হয় ।
মানুষের আধ্যাত্মিক পিপাসা থেকে দর্শনঃ
মানুষ দৈহিক ও মানসিক উভয়টির সমন্বয়ে গঠিত । সে যুগে যুগে মানসিক তৃপ্তি ও শান্তির অন্বেষায় কাজ করে । আধ্যাত্মিক পিপাসা ও প্রয়োজন তারই একটি দিক যা মানুষের চিরন্তন সমস্যা । পরম সত্তার পরিচয় পাওয়া , অনাবিল শান্তি , বিষণ্ণ – শান্তি ইত্যাদি মরমীয়বাদের জন্ম দেয় । ভারতীয় দার্শনিকদের মতে আধ্যাত্মিক প্রয়োজন পূরণেই দর্শনের উৎপত্তি । মহর্ষী কপিল ( সাংখ্য দর্শনের প্রবর্তক ) বলেন , এ জগতে মানুষ আধ্যাত্মিক , আধিদেবিক ও আধিভৌতিক এই ত্রিতাপে তাপিত । এই অশান্তি থেকে মুক্তি লাভের চেষ্টা থেকেই দর্শনের উৎপত্তি ।

আরো জানুন ;- প্রতীক কাকে বলে? প্রতীক কত প্রকার ও কী কী?

দর্শনের পরিধি ও বিষয়বস্তু


জীবন ও জগতের মৌলিক সমস্যা বা প্রশ্নসহ মানুষের অভিজ্ঞতার সকল দিকই দর্শনের আওতাভুক্ত ।ডক্টর স্কিয়াড এজন্যই বলেন , “ মানব অভিজ্ঞতার এমন কোন দিক নেই , সমগ্র সত্তা রাজ্যের এমন কোন কিছু নেই , যা দর্শনের পরিধি বা আওতার বাইরে , কিংবা দার্শনিক অনুসন্ধান কর্ম যা দিকে প্রসারিত হয় না । ” ( কোন একটি বিষয়ের আলোচ্যসূচি ( Content ) – কেই বিষয়ের পরিধি ও বিষয়বস্তু বলা যেতে পারে যেহেতু দর্শন একটি সর্বাত্মক বিষয় তাই এর পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক ও বিস্তৃত । শিক্ষার্থী বন্ধুগণ আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে দর্শনের বিষয়বস্তুকে পাঁচটি ভাগে আলোচনা করা হলো ।
১. অধিবিদ্যা(Meta Physics):অধিবিদ্যা দর্শনের একটি অন্যতম শাখা । অধিবিদ্যার ইংরেজি প্রতিশব্দ Meta Physics শব্দটি গ্রীক শব্দ Meta ও Phisics শব্দদ্বয় থেকে উদ্ভূত । Meta অর্থ ‘ পর ‘ আর Phisics শব্দের বাংলা অর্থ পদার্থবিদ্যা । তাই ব্যুৎপত্তিগত দিক থেকে যা পদার্থ বিদ্যার পরে অবস্থিত তাই অধিবিদ্যা।দর্শনের যে শাখাটি বস্তুর প্রাতিভাসিক রূপের অন্তরালে অবস্থিত প্রকৃতরূপ নিয়ে আলোচনা করে তাকেই বলে অধিবিদ্যা। বিশ্বজগতের প্রকৃত সত্তা সম্পর্কিত আলোচনাই এতে প্রাধান্য পায়।কিছু অধিবিদ্যা ( Meta Physical ) প্রশ্ন থেকে আমরা অধিবিদ্যার প্রকৃতি সম্পর্কে যথার্থ ধারণা নিতে পারি । যেমন, আত্মা কী , আত্মা নশ্বর না অবিনশ্বর ? ঈশ্বর কী ? ঈশ্বরের অস্তিত্ব কীভাবে প্রমাণ করা যায় ? দেশ – কাল বলতে কী বুঝায় ? দেহ ও মনের সম্পর্ক কী ? আমাদের ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষের বাইরে কোন জগত আছে কী ? সৃষ্টি ও স্রষ্টার সম্পর্ক কী ? প্রকৃত জগত কোনটি ? ইত্যাদি প্রশ্নসমূহের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও উত্তর অনুসন্ধান করে দর্শনের অধিবিদ্যা নামক শাখাটি ।
২. জ্ঞানতত্ত্ব ( Epistemology ) : জ্ঞানতত্ত্ব বা জ্ঞানবিদ্যা দর্শনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্ষেত্র , যা জ্ঞানের উৎপত্তি , জ্ঞানের প্রকৃতি , চিন্তার সূত্র ও পদ্ধতি , সত্যতা ও এর মানদণ্ড , জ্ঞানের বিষয়বস্তু , জ্ঞানের সীমা , জ্ঞানের বৈধতা , জ্ঞান আহরণের উপায় ও পদ্ধতিসমূহ , যেমন- বুদ্ধিবাদ , অভিজ্ঞতাবাদ , স্বজ্ঞাবাদ , বিচারবাদ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে থাকে । সত্যতার ন্যায় বৈধতার প্রসঙ্গটিও একটি জ্ঞানতাত্ত্বিক প্রশ্ন তাই জ্ঞানের বৈধতার প্রসঙ্গটিও জ্ঞানবিদ্যার আলোচ্য বিষয় । জ্ঞানবিদ্যার ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে- Epistemology | শব্দটি “ Institutes of Meta Physics ” নামক গ্রন্থে সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন জে , এফ ফোরিয়ার । Epistemology শব্দটি গ্রীক শব্দ Episteme ও Logos শব্দ দুটি থেকে উদ্ভূত । Episteme- এর বাংলা অর্থ জ্ঞান ( Knowledge ) এবং Logos শব্দটির বাংলা অর্থ হলো বিদ্যা বা বিজ্ঞান । তাই ব্যুৎপত্তিগত দিক থেকে Epistemology শব্দটির বাংলা অর্থ দাঁড়াচ্ছে জ্ঞানবিজ্ঞান বা জ্ঞানবিদ্যা ।
৩. মূল্যবিদ্যা ( Axiology of Philosophy of Values ):দর্শনের অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে মানবতার কল্যাণ সাধন করা । আর তাই দার্শনিকগণ জগত-জীবনের মূল ধারণ করতে গিয়ে সুদূর প্রাচীনকাল থেকে মূল্য সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ের সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করে চলেছেন । দর্শনের যে শাখাটি আদর্শ বা মূল্য আদর্শের স্বরূপ নিয়ে আলোচনা করে তাকে বলা হয় মূল্যবিদ্যা । মূল্যবিদ্যাকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয় , যেমন যুক্তিবিদ্যা ( Logic ) , নীতিবিদ্যা ( Ethics ) ও নন্দনতত্ত্ব ( Aesthetics ) । যুক্তিবিদ্যা আলোচনা করে সত্যতার স্বরূপ নিয়ে , নীতিবিদ্যা আলোচনা করে মঙ্গলের স্বরূপ নিয়ে আর নন্দনতত্ত্ব আলোচনা করে সৌন্দর্যের স্বরূপ নিয়ে । কাজেই দেখা যাচ্ছে যে মূল্যবিদ্যা দর্শনের একটি অন্যতম শাখা যেখানে মূল্য বা আদর্শ কী , মূল্যের স্বরূপ কেমন , মূল্য ব্যক্তিগত না বস্তুগত , মূল্য ও সত্তার সম্পর্ক কী , মূল্য সম্পর্কিত বচনের স্বরূপ তার তাৎপর্য নির্ধারণ করা এবং সত্য , সুন্দর ও মঙ্গল প্রভৃতি পরম আদর্শগুলোর স্বরূপ উদঘাটন করাসহ ধর্মীয় মূল্যবোধ , নৈতিক মূল্যবোধ ও সৌন্দর্যগত মূল্যবোধের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয় ও সমন্বয় সাধন করাও মূল্যবিদ্যার কাজ ।

  1. মনোদর্শন ( Philosophy of Mind ):দর্শনের এই শাখাটিও সাম্প্রতিককালে দর্শন ইতিহাসের অন্যতম শাখায় পরিণত হছে । মনোদর্শন নামক এই শাখাটি মন বা আত্মার স্বরূপ , দেহ ও মনের সম্পর্ক , ইচ্ছার স্বাধীনতা , আত্মার অমরত্ব ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে ।
    ৫. বিশ্বতত্ত্ব ( Cosmology ) : ইংরেজি Cosmology শব্দটির বাংলা অর্থ বিশ্বতত্ত্ব । Cosmology শব্দটি গ্রীক শব্দ Kosmos থেকে উদ্ভূত । যার অর্থ সুশৃংখল বিশ্বজগত ( Ordered Universe ) । বিশ্বজগতের যে পরিদৃশ্য মানরূপ আমরা প্রত্যক্ষ করছি যেমন- জড় , প্রাণ , দেশকাল , বিবর্তন , পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয় নিয়েই দর্শনের এই শাখায় আলোচনা করা হয়।

দর্শনের স্বরূপ

এ পর্যন্ত আলোচনা থেকে আমরা দর্শন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছি । আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে এখন আমরা পৃথকভাবে দর্শনের স্বরূপ সম্পর্কে আলোচনা করব । তবে এ প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে যে ,দর্শনের স্বরূপ জানতে হলে অবশ্যই দর্শনের আলোচ্য বিষয় , দর্শনের লক্ষ্য , উদ্দেশ্য , দার্শনিক সমস্যাবলি ও এরআলোচনার পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়াদির ওপরেই তা বহুলাংশে নির্ভর করে । কাজেই দর্শনের প্রকৃত স্বরূপ নির্ণয় করতে হলে সেসব বিষয়ের উপর আমাদের গুরুত্ব দেয়া দরকার।
সেগুলো নিম্নরূপঃ
১. লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের আলোক দর্শন
২. আলোচ্য বিষয়ের দিক থেকে দর্শন
৩. সমস্যাবলীর দিবালোকে দর্শন
৪. পদ্ধতিগত দিক থেকে দর্শন
৫. জীবন দর্শনের আলোকে দর্শন ।

১. লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের আলোক দর্শনঃ
দর্শনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যের সাথে এর স্বরূপের বিষয়টি ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত । দর্শন জীবন ও জগতের মৌলিক প্রশ্নসমূহের যৌক্তিক ব্যাখ্যা দানের মাধ্যমে এক অখণ্ড দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠা করতে চায় । খণ্ড খণ্ড আকারে জীবন – জগতে দেখা দর্শনের লক্ষ্য নয় বরং সার্বিকভাবে জীবন – জগতের ব্যাখ্যা ও মূল্যায়ন করাই দর্শনের লক্ষ্য । তাই লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যের দিক থেকে বলা যায় দর্শন একটি সর্বাত্মক বিষয়ের দিক নির্দেশনা দান করে থাকে । সেদিক থেকে আমরা বলতে পারি যে , জ্ঞানার্জনের যে বিষয় বা শাখাটি জীবন ও জগতের মৌলিক প্রশ্নাবলিকে সব সময় একটি যৌক্তিক পদ্ধতিতে বিচার বিশ্লেষণ করে তার প্রকৃত তাৎপর্য ও লক্ষ্য সম্বন্ধে আমাদের সম্যক অবগত করে তাকেই বলা হয় দর্শন । এ কারণেই প্যাট্রিক বলেন , বস্তুর আদ্যোপান্ত চিন্তা – কলা কিংবা বস্তুর আদ্যোপান্ত চিন্তা প্রয়াসের অভ্যাসই হচ্ছে দর্শন । তবে দর্শনের প্রকৃত স্বরূপ কেবলমাত্র তার লক্ষ্য – উদ্দেশ্যের আলোকে নির্ণয় করা সম্ভব নয়।

আলোচ্য বিষয়ের দিক থেকে দর্শন

দর্শনের স্বরূপ যেমন লক্ষ্য – উদ্দেশ্যের আলোকে নির্ণয় করা যেতে পারে , তেমনি তার আলোচ্য বিষয়ের আলোকেও অনেকটা নির্ধারিত হয়ে থাকে । মানব অভিজ্ঞতার তথা জ্ঞানের সকল শাখাই যেহেতু দর্শনের অন্তর্ভুক্ত তাই এর প্রকৃতি বা স্বরূপ সাধারণ ও সর্বাত্মক । বিখ্যাত দার্শনিক বাট্রান্ড রাসেলের মতে সচেতনভাবে বা অচেতনভাবেই হোক মানুষের মনে এমন কিছু প্রশ্ন জাগে যাদের কোন যুক্তি সঙ্গত উত্তর ধর্মতত্ত্বে যেমন পাওয়া যায় না , তেমনি আবার বিজ্ঞান এদের নিয়ে আদৌ মাথা ঘামায় না । যেমন- আমাদের কর্মের স্বাধীনতা আছে কি নেই , না – কি তা নিয়তি দ্বারা পূর্বনির্ধারিত যা দ্বারা আমরা প্রতিনিয়ত চালিত হচ্ছি , দেহের সাথে আত্মার সম্বন্ধ কী ? এ জাতীয় প্রশ্নের কোন যুক্তি সঙ্গত ব্যাখ্যা ধর্মতত্ত্বের খুঁজে পাওয়া যায় না । এ সবের উত্তর ধর্মতত্ত্ব ধর্মীয় দৃষ্টিতেই দিয়ে থাকে ; কিন্তু কিছু বিজ্ঞান মনস্করা তাতে সন্তুষ্ট হতে পারে না । তাই তারা বিজ্ঞানের কাছে উত্তর অনুসন্ধান করেন । আর ধর্মতত্ত্ব ও বিজ্ঞানের মধ্যবর্তী এই যে অনধিকৃত একটি রাজ্য তাতেই দর্শন বিচরণ করে চলেছে । আর এ কারণেই রাসেল দর্শনকে বিজ্ঞান ও ধর্মতত্ত্বের মধ্যবর্তী অনধিকৃত রাজ্য ( No Man’s Land ) বলে অভিহিত করেছেন ।

৩. সমস্যাবলির দিবালোকে দর্শনঃ
আমরা ইতিপূর্বের আলোচনায় জেনেছি যে , জগত – জীবন সম্পর্কিত মৌলিক ও সর্বজনীন সমস্যাবলি নিয়ে দার্শনিকগণ কাজ করেন । প্রকৃতিগত দিক থেকে দার্শনিক সমস্যাবলি দৈনন্দিন ও সত্যানুগতিক সমস্যাবলি থেকে আলাদা । যেমন- কেউ যদি মনে করেন আমার ব্যবসায় লাভ হচ্ছে না কেন অথবা আজকের দুপুরে রান্না কী হলে ভাল হয় , কিংবা আজ বেড়াতে যাব কি যাব না ইত্যাদি সমস্যা হচ্ছে দৈনন্দিন ও ব্যক্তিগত প্রশ্ন এ জাতীয় প্রশ্ন দার্শনিক আলোচনার বিষয় নয় । তবে আমি কে এই জগত কেন সৃষ্টি হল , স্রষ্টা বলে কেউ আছেন কী না , আত্মা কী , আত্মা অমর নাকি নশ্বর , জ্ঞান কীভাবে কোন পথে আর্জিত হয় , মানুষের জীবন মৃত্যুর সাথে সাথে শেষ হয়ে যায় , নাকি পুররুত্থান বা পুনঃজ্জীবন বলে কিছু আছে , নৈতিকতা কী , সদগুণ ও সততা আসলে কী , তা বংশগত না ব্যক্তিগত ইত্যাদি জীবন সমস্যার অনুসন্ধান করাই দার্শনিকের কাজ । কাজে দেখা যাচ্ছে যে , দর্শনের কাজ হলো জীবন ও জগতের মৌলিক , সর্বজনীন , অনুপম ও অনন্য প্রশ্নসমূহের একটি যৌক্তিক সমাধান করা । আর সেদিক থেকে বিবেচনা করলে নিঃসন্দেহে দর্শন একটি মৌলিক বিষয় ।

৪.পদ্ধতিগত দিক থেকে দর্শনঃ
দর্শন যেহেতু জগত – জীবনের মৌলিক প্রশ্নের যৌক্তিক অনুসন্ধান , তাই দর্শন একদিকে যেমন বিচার বিশ্লেষণধর্মী , ( Reflective ) অন্যদিকে আবার গঠনমূলক ( Constructive ) বটে । যৌক্তিক বিচার বিশ্লেষণই হচ্ছে দর্শনের যথার্থ পদ্ধতি । তাই পদ্ধতিগত দিক থেকে দর্শন ও বিজ্ঞানের মধ্যে রয়েছে যথেষ্ট পার্থক্য । বিজ্ঞানে যেখানে পর্যবেক্ষণ নিরীক্ষণ জাতীয় বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় , দর্শনে সেখানে বিজ্ঞানমূলক পদ্ধতিতে অগ্রসর হয়ে সমস্যা সমাধানের প্রয়াস পায় । কেননা যৌক্তিক বিচার বিশ্লেষণই ( Argument and Analysis ) হচ্ছে দর্শনের যথার্থ পদ্ধতি । তাই পদ্ধতিগত দিক থেকে দর্শন বিজ্ঞান থেকে একেবারেই আলাদা । মোটকথা পদ্ধতিগত দিক থেকে দর্শনের স্বরূপ হলো এটি সব সময় বিচারধর্মী ও গঠনমূলক ( Constructive ) ।

৫. জীবন – দর্শন হিসেবে দর্শনঃ
জীবন কেবল সত্তার স্বরূপ ও অর্থই ব্যাখ্যা করে তা নয় , আবার জগত – জীবনের মৌলিক প্রশ্নের যৌক্তিক বিশ্লেষণ করে বা দার্শনিক সমস্যাবলির পদ্ধতিগত আলোচনা মাত্র তাও বলা যায় না । অনেকেই মনে করেন দর্শন মানেই জীবন দর্শন । দর্শন বলতে যা বুঝায় তা অবশ্যই জীবন ঘনিষ্ট হতে হবে । জীবনের সাথে যা সম্পৃক্ত নয় , বা জীবনের কোন কাজে লাগেনা তেমন বিষয় দর্শন হতে পারে না । এদেশেরই স্বনাম ধন্য দার্শনিক ড . জি . সি দেব “ আমার জীবন দর্শন ” গ্রন্থে দর্শনকে ‘ জীবন দর্শন ‘ হিসিবে চিহ্নিত করেন । অবশ্য তিনি তত্ত্বজ্ঞানকে জীবনের প্রয়োজন থেকে আলাদা করে দেখেননি । সাধারণ মানুষের কাজে দর্শনকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার প্রয়াসেই তিনি ব্যাপৃত ছিলেন । দর্শনকে সাধারণ মানুষের সেবায় নিয়োজিত করতে হবে । তিনি মনে করতেন মানুষের জীবনের দুটো দিক রয়েছে , জাগতিক ও আধ্যাত্মিক । এদের মধ্যে কোন একটিকে বাদ দিয়ে জীবন পূর্ণাঙ্গ হতে পারে না , বরং দুটোর সমন্বয়েই গড়ে উঠে সার্থক জীবন । কাজেই দর্শনকে কেবল তত্ত্বালোচনার বিষয় বলে যারা ভুল বুঝেন তাদের সে ধারণা পরিবর্তন করা আবশ্যক । কেননা দর্শনের প্রকৃত স্বরূপ এমন যে তা কখনোই কোথাও থেমে থাকার বিষয় নয় এবং এটা গতিশীল ও বিচার বিশ্লেষণধর্মী জীবন ঘনিষ্ঠ বিষয় যাতে জীবনে ও জগতের যৌক্তিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে একটি সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করে । আর এজন্য বোধ হয় মহান দার্শনিক এ্যারিস্টটল বলেছিলেন , “ আইনের ভয়ে অন্যেরা যা করে থাকে , স্বেচ্ছায় ও সানন্দে তা করার প্রেরণা ও ক্ষমতা আমি দর্শন থেকে পেয়েছি ” ।

সর্বশেষ আপডেট

রম্য পড়ুন ;- পাদ কয় প্রকার ও কি কি? পাদের কবিতা ও রম্য রচনা

Leave a Comment


Math Captcha
1 + 6 =