শুক্রবারের আমল : বার মুসলিম উম্মাহর কাছে বছরের সর্বোশ্রেষ্ঠ দিন বলে বিবেচিত । হাদিসে উঠে এসেছে শুক্রবারের শ্রেষ্ঠত্বের কথা। শুক্রবার এমন একটি দিন,যেইদিন হযরত আদম (আঃ) কে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে , এবং শুক্রবারেই আল্লাহ আদমকে জান্নাত থেকে বের করে পৃথীবিতে পাঠিয়ে দেন। শুক্রবার পবিত্র জুম্মার দিন এবং আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ দিন ।
আর এই শ্রেষ্ঠ দিন উপলক্ষে রয়েছে কিছু শ্রেষ্ঠা আমল । যা দিয়ে আপনি খুব সহজেই আল্লাহ সুবাহানওয়ালা তায়ালার নৈকট্য লাভ করতে পারবেন ।
চলুন জেনে নেওয়া যাক এমনি কিছু শুক্রবারের আমল সম্পর্কেঃ
বৃহস্পতি বার রাত থেকেই বেশি বেশি দরুদ শরিফ পাঠ করা
রাসুল পাক (সা) শুক্রবারের আগের দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার রাত থেকে দরুদ শরিফ পাঠ করতেন এবং তিনি তার সাহাবাদের তা পাঠ করার কথা জানিয়েছেন । চাইলে আপনি যেকোন দরুদ পাঠ করতে পারেন,তবে দরুদে ইব্রাহীম সর্বাপেক্ষা উত্তম , তাই যতো বেশী পারা যায় দরুদে ইব্রাহীম পাঠ করুন।
রাসুল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,যে ব্যাক্তি জুম্মার দিন ৮০ বার দরুদ পাঠ করবে,আল্লাহ তায়ালা তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ করে দেবে । (সুবাহান আল্লাহ)
প্রিয় পাঠক,শুক্রবার আল্লাহ পাকের দরবারে গোনহা কমানোর দিন ! তাই এই দিনকে হেলায় হারাবেন না। বরং যতো বেশী বার সম্ভব ততো বেশী দরুদ পাঠ করুন !
শুক্রবার ফজরের নামাজে সুরা সাজদা ও সুরা ইনসান তেলাওয়াত করা
শুক্রবার, ফজরের সালাতে সুরা সাজদা ও সুরা ইনসান পাঠ করতে পারেন । এটি অনেক ফজিলতপূর্ণ একটি কাজ এবং নবীর সুন্নতও বটে । এছাড়া চাইলে আপনি আসর,মাগরিব,ইশার সালাতেও এই সূরা পাঠ করতে পারেন । যাদের সূরা সাজদা ও সূরা ইনসান মুখস্ত নেই, তারা এই লিংকে গিয়ে সূরা দুটি মুখস্ত করে নিতে পারেন ।
গোসল করা- শুক্রবারের আমল গুলোর অন্যতম
শুক্রবার উত্তররূপে গোসল করাটা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি ইবাদত হিসেবে গন্য করা যেতে পারে।
প্রিয় পাঠক,গোসলের ফরজ ৩ টি
- নাকে পানি দেওয়া
- গড়গড়া করা
- এবং সমস্ত শরীর ধৈত করা
ইসলামে পবিত্রতাকে ঈমানের একটি অংশ হিসেবে দেখা হয় । কাজেই গোসল করাটাও এক প্রকার ইবাদত ! নামাজের ফরজ ওযু, আর ওযুর ফরজ গোসল !
উত্তম পোশাক পরা
জুম্মাকে বলা হয় গরিবের হজের দিন অনেকে গরিবের ঈদের দিন বলে থাকেন । জুম্মার দিকে আল্লাহর নবী রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাহিওয়া সাল্লাম উত্তম পোশাক পড়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।
উত্তম পোশাকের অর্থ দামী পোশাক নয় । একেক জনের কাছে উত্তম পোশাকের সঙা একেক রকমের ! তবে এখানে উত্তম পোশাক বলতে মূলত, একজন ব্যাক্তির যতোগুলো পোশাক রয়েছে,তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ট পোশাককে বোঝানো হয়েছে।
উত্তম পোশাক পরা নিয়ে হাদিস
- সামর্থ্যমতো উত্তম পোশাক পরিধান করা : পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি জিজ্ঞেস করো, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য যেসব শোভনীয় বস্তু ও পবিত্র জীবিকা সৃষ্টি করেছেন তা কে নিষিদ্ধ করেছে?’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৩২)
- সামুরাহ বিন জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সাদা রঙের পোশাক পরিধান করো। কেননা তা অধিক পবিত্র ও উত্তম। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৫৬৭)
- নবীজি (সা.) মাঝেমধ্যে ভিন্ন রঙের পোশাকও পরিধান করেছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪০৬৫)
সুগন্ধি ব্যবহার করা
সুগন্ধি ব্যবহার করা শুক্রবারের আলম গুলোর মধ্যে একটি এবং এটি রাসুল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লামের সুন্নাহ !
আল্লাহ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম সুগন্ধি পছন্দ করতেন । তিনি ছিলেন সুগন্ধি অনুরাগী ।
তবে সেই সুগন্ধি হতে হবে ধর্মসম্মত উপায়ে তৈরী । যদিও আমাদের সমাজে বডি স্প্রে লাগিয়ে মসজিদে যাওয়ার নজির রয়েছে। ইদানিং আবার অনেক প্রতিষ্ঠান নিজেদের তৈরী পন্যকে হালাল সুগন্ধি বলে চালানোর চেষ্টা করছেন । তবে তা চেষ্টা নাকি অপচেষ্টা তা কেইই বা জানে !
রাসুল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম সুগন্ধী ভালো বাসতেন । তাকে উপহার স্বরূপ কেও সুগন্ধী উপহার দিলে তিনি তা ফিরিয়ে দিতেন না।
মসজিদে গিয়ে জুমার নামাজের আগে ৪ রাকাত সুন্নত আদায় করা
হযরত আলি (রা.) থেকে বর্ণিত,রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমার পূর্বে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত সুন্নত পড়তেন। (আল মুজামুল আওসাত,হাদিস: ১৬১৭)
যেহেতু জুম্মার দিন একটি ফজিলত পূর্ণ দিন তাই এই দিনে যতো বেশী ইবাদত করা যায় ততো বেশী সওয়াবের ভাগিদার হওয়া সম্ভব।
রাসুল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুম্মার দিনে খুতবা দেওয়ার আগে ৪ রাকআত এবং সালাতের শেষে চার রাক’আত নামাজ আদায় করতেন,নফল নামাজের পাশপাশি ।
ইমামের কাছে গিয়ে বসা
জুম্মার দিন ইমামগণ সমাজের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ খুতবা দেন । সেই খুতবায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা উঠে আসে। যা আমাদের সমাজের ইসলামের অবস্থাকে চিত্রিত করে।
কাজেই জুম্মার দিন যতোগুলো করণীয় কাজ রয়েছে তার মধ্যে একটি হলো,জুম্মার দিন ইমামের কাছে গিয়ে বসা।
আরো পড়ুনঃ
খুতবা শোনা
খুতবা শোনা ওয়াজিব । খুতবা শোনার ভেতরে প্রচুর ফজিলত রয়েছে । খুতবা শোনার সময় এবশ্যই তা মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে এবং নিরবতা পালন করে থাকতে হবে । খুতবা শোনার সময় আনমনা হয়ে বসে থাকা যাবে না ।
রাসুল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি জুম্মার দিন উত্তর রূপে ওযু করে , আগে ভাবে মসজিদে গিয়ে , ইমামের খুতবা মনোযোগ সহকারে শুনে, একত্রে সালাত আদায় করে ফিরবে ,মহান আল্লাহ পাক তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন – আমিন !
অপর একটি হাদিস থেকে জানা যায় , জুম্মাহর দিন মসজিদের সামনে দুইজন ফেরেশতা,মসজিদের ভেতরে প্রবেশকারীদের নাম লিখতে ব্যাস্ত থাকেন, কিন্তু যখন তারা খুতবা শুনতে পান তখন তারা লেখা থামিয়ে দেন। এবং মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনতে থাকেন ।
সুরা কাহফ তেলাওয়াত করা – শুক্রবারের আমল
সুরা কাহফ অতন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি সূরা। রাসুল পাক সাল্লাল্লহু আলাইহিওয়া সাল্লামের একটি হাদিসে উঠে এসেছে, যে ব্যাক্তি জুম্মার দিন সূরা কাহফ পাঠ করবে , মহান আল্লাহ পাক , সেই জুম্মা থেকে পরবর্তী জুম্মা পর্যন্ত তার উপর নূর বর্ষন করবে ।
সূরা কাহফে উঠে এসেছে এমন ৭ জন গুহাবাসীর কথা যাদেরকে আল্লাহ পাক গুহার ভেতরে বছরের পর বছর ধরে বাচিয়ে রেখেছিলেন । এছাড়াও এই সূরা মুসা(আঃ) ও খিজির (আঃ) এর ঘটনা উঠে এসেছে ।
এই সূরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহীওয়া সাল্লামের অলৌকিকতার একটি পরিচয় বহন করে।
শুক্রবারের দোয়া কবুলের আমল
শুক্রবারে ঠিক কোন সময়টাতে দোয়া কবুল হয় এই নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও,দোয়া যে কবুল হয় এই বিষয় কারো দ্বিমত হয়।
অনেক মুহাদ্দিস মনে করেন, জুম্মার সালাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর আমল বলার সময় দোয়া কবুল হয় ।
আবার অনেক মুহাদ্দিস এটাও বলেছেন যে, জুম্মার দিন আসরের ওয়াক্ত থেকে মাগরীবের ওয়াক্ত দোয়া কবুলের সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ সময় ।
শুক্রবার সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিবস জানা শর্তেও আমরা অনেকে কাজের ছুতো দেখিয়ে শুক্রবারে জুম্মার সালাত আদায় করি না । এটি সুস্পষ্ট মুনাফিকের লক্ষন । কাজেই শুক্রবার-জুম্মার দিনটিকে কেও হেলায় হারাবেন না।
জুম্মা সহ বাকি ৪ ওয়াক্তের সালাত যথা সময় আদায় করুন এবং যতোটুকু সম্ভব ছোটো ছোটো এই আমলগুলি করবার চেষ্টা করুন ।
মনে রাখবেন,সৃষ্টিকর্তা একজনই, এবং দিন শেষে তার কাছেই একদিন সব কিছুর জবাবদিহিতা করতে হবে।
সূচীপত্র