ফুটবল খেলার নিয়ম, ইতিহাস, বিশ্বকাপ ও রেকর্ড বিষয়ক যাবতীয় তথ্য

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হলো ফুটবল। এমন কোন দেশ নেই যেখানে ফুটবল খেলা হয় না। পৃথিবীর সব দেশে সমান জনপ্রিয় এবং সব বয়সীদের জন্য উপভোগের একমাত্র খেলা হলো ফুটবল। বাংলাদেশেও ফুটবল খেলা তুমুল জনপ্রিয়। প্রতিটি বিশ্বকাপ আসলেই বাংলাদেশে ফুটবলের জনপ্রিয়তা আমরা টের পাই।

বাংলাদেশে সব ঋতুতেই ফুটবল খেলা হয়ে থাকে৷ তবে বর্ষায় ফুটবল খেলার পরিমাণ বেড়ে যায়৷ বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধ প্রায় সব বয়সীরাই ফুটবল খেলে থাকে।

আমরা টিভিতেও ফুটবল খেলা দেখে থাকি৷ কিন্তু আমরা অনেকেই ফুটবল খেলার সব নিয়ম বিস্তারিত জানি না৷ ফুটবলের অনেক খুটিনাটি বিষয় আছে যেগুলো আমরা না জেনেই ফুটবল খেলে থাকি।

তাই আজকে আমরা ফুটবলের সকল নিয়মের বিস্তারিত জানবো। সেই সাথে জানবো ফুটবলের ইতিহাস এবং এর বিশ্বকাপ সম্পর্কেও।

ফুটবল খেলা বিষয়ক তথ্য

ফুটবলের ইতিহাস

ফুটবল খেলার উৎপত্তি ১৮৬৩ সালের তৎকালীন ইংল্যান্ডে। অধিকাংশের মতানুসারে, ফুটবল খেলার উৎপত্তি প্রাচীন চীনে। প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে। খেলার সকল আধুনিক নিয়ম কানুন চীনেই তৈরী করা হয়।

ইতিহাস গবেষণা করে বৈচিত্র্য সকল তত্ত্ব উপাত্তের ভিত্তিতে যা পাওয়া যায় তা হলো , ফুটবল শুরু করেছিলো আদিযুগে গ্রিক ও রোমান সম্প্রদায়িকগোষ্টী ৩৫০ খ্রিস্টাব্দে। বিভিন্ন দেশ ভিন্ন নামে এই খেলার নামকরণ করেছে।

যেমনঃ- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই খেলার নাম সকার(Soccer). ইংরেজিতে foot শব্দের অর্থ পা। পা দিয়ে এই খেলা খেলা হয় বলে এই খেলার নাম হয়েছে ফুটবল।

ফুটবল খেলার নিয়ম কানুন ও আইন

ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ফুটবলের নিয়মকে বিধিবদ্ধ করার বিভিন্ন প্রচেষ্টা নেওয়া হয়। প্রচলিত আইনগুলি ১৮৩৮ সালের, যেখানে নতুনভাবে গঠিত ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক একটি নিয়মাবলী আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। ফিফা ফুটবল খেলার নিয়মাবলী কেবলমাত্র তার সদস্যদের ব্যবহারের অনুমতি দেয়।

নিয়মগুলি জাতীয় ফুটবল সংস্থাকে কিছু ছোট ছোট ঐচ্ছিক পরিবর্তনের অনুমতি দেয়, যার মধ্যে কয়েকটি নিম্ন স্তরে খেলার জন্য প্রযোজ্য, তবে এছাড়া বিশ্বব্যাপী প্রায় সকল সংগঠিত ফুটবল একই নিয়মের অধীনে খেলা হয়। একটি ম্যাচ চলাকালীন সময়ে খেলার আইনগুলি ব্যাখ্যা করা এবং প্রয়োগ করা রেফারির কাজ।

ফুটবল খেলার নিয়ম
ফুটবল খেলার নিয়ম

আরো পড়ুন: লাইভ খেলা দেখার সফটওয়্যার ও লিংক

ফুটবল খেলার মাঠ নির্বাচন পদ্ধতি

ফুটবল খেলার মাঠটি আয়তাকার আকৃতির হয়ে থাকে। মাঠের তল সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক অথবা সম্পূর্ণ কৃত্রিম হতে হয়। কৃত্রিম মাঠ হলে তার রঙ অবশ্যই সবুজ হতে হবে। খেলার মাঠের দাগগুলো অবশ্যই নিরাপদ উপাদান দিয়ে তৈরি হতে হবে।

আয়তাকার মাঠের সীমানা নির্দেশকারী ৪টি লাইনের মধ্যে লম্বা দুটি লাইনকে বলে টাচলাইন। অপর দুটি লাইনকে বলে গোললাইন। সম্পূর্ণ মাঠ একটি মধ্যরেখা দ্বারা বিভাজিত থাকে। মধ্যরেখার ঠিক মাঝ বরাবর স্থানকে কেন্দ্র করে একটি বৃত্ত আকা হয়।

বৃত্তটির নাম মধ্যবৃত্ত। এর ব্যাসার্ধ ৯.১৫ মিটার। প্রত্যেক লাইনের প্রস্থ সমান হতে হবে। এবং কোন লাইনের প্রস্থই ৫ ইঞ্চির বেশি হতে পারবে না। কোনো খেলোয়াড় কোনো ভাবেই কোনো দাগের পরিবর্তন আনতে পারবেন না।

আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য মাঠের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ১১০ মিটার (১২০ গজ), সর্বনিম্ন ১০০ মিটার (১১০ গজ) এবং প্রস্থ সর্বোচ্চ ৭৫ মিটার (৮০ গজ), সর্বনিম্ন ৬৪ মিটার (৭০ গজ) হতে হবে। মাঠের স্পটগুলো (টাচলাইন, গোললাইন, মধ্যরেখা, মাঝখানের বৃত্ত, পেনাল্টি স্পট, কর্নার নেওয়ার জায়গা ও ফ্ল্যাগ পোস্ট) অবশ্যই পরিষ্কারভাবে দৃশ্যমান হতে হবে। গোলপোস্টে দুটি বারের দূরত্ব ৭.৩২ মিটার (আট গজ) এবং উচ্চতায় ২.৪৪ মিটার (আট ফুট)।

ফুটবল খেলায় বল নির্বাচন

গোলাকার বলের পরিধির মাপ সর্বোচ্চ ৭০ সেন্টিমিটার হতে হবে, সর্বনিম্ন ৬৮ সেন্টিমিটার। ম্যাচ শুরুর সময় বলের ওজন সর্বোচ্চ ৪৫০ গ্রাম, সর্বনিম্ন ৪১০ গ্রাম। বলের ভেতর বাতাসের চাপ হবে ০.৬-১.১ অ্যাটমোস্ফিয়ার। কোনো সময় বল নষ্ট হয়ে খেলা বন্ধ হয়ে গেলে সেখান থেকে খেলা আবার শুরু হবে বল ড্রপিংয়ের মাধ্যমে।

ফুটবল খেলার বল চাইলেই পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। বল পরিবর্তনের সিধান্ত শুধু মাত্র রেফারি নিতে পারেন। রেফারি বলটিকে খেলার অযোগ্য বিবেচিত করলে তা বদলে নতুন বল ব্যবহার করা হয়।

যদি বলটি কিক-অফ, গোল-কিক, কর্নার কিক, ফ্রি কিক, পেনাল্টি কিক ও থ্রো-ইন এর সময়ে নষ্ট হয় তাহলে শটগুলো আবারো করা হয়। যদি পেনাল্টি-কিক এর সময় বলটি নষ্ট হয় এবং নষ্ট হওয়ার আগে গোলকিপার অথবা গোলপোস্ট/ক্রসবার না ছুঁয়ে থাকে তবে আবারো পেনাল্টি-কিক করার সুযোগ দেওয়া হয়।

আরো পড়ুন: দাবা খেলার নিয়ম, ইতিহাস, কলাকৌশল ও ভালো খেলতে করণীয়

খেলোয়াড়

দুই পক্ষের খেলোয়াড়সংখ্যা ১১ জন করে মোট ২২জন হতে হবে। প্রত্যেক খেলোয়াড়ই জায়গা পরিবর্তন করতে পারবেন। এমনকি গোলরক্ষকও স্টপেজ টাইম নিয়ে জায়গা পরিবর্তন করে খেলতে পারবেন। প্রতি দলে একজন গোলকিপার থাকা আবশ্যক। কোনো দলে ৭ জনের কম খেলোয়াড় থাকলে খেলা শুরু করা যাবে না।

কোনো খেলোয়াড় খেলার মধ্যে সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃতভাবে খেলার মাঠ ত্যাগ করায় তার দলের মোট খেলোয়াড় সংখ্যা ৭ এর কমে নেমে আসলেও রেফারি খেলা থামাতে বাধ্য নন। খেলা শুরুর আগেই প্রত্যেক খেলোয়াড় ও বদলি খেলোয়াড়ের নাম ঘোষণা করতে হবে। ফুটবল দলের দলনেতা একজন থাকে। মাঠের ভেতরে দলের সার্বিক পরিচালনার জন্য দলনেতা দায়ী।

আন্তর্জাতিক ম্যাচে সর্বোচ্চ ১২ জন খেলোয়াড়কে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে রাখা যায়। সর্বোচ্চ ৩ বার খেলোয়াড় বদল করা যায়। তবে করোনার কারণে এখন ৫ বার বদলের সুযোগ রয়েছে। জাতীয় পর্যায়ের ‘এ’ দল গুলোর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১২ জন অতিরিক্ত খেলোয়াড় রাখার সুযোগ রয়েছে।

এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৬ বার খেলোয়াড় বদল করা যায়। অন্যান্য ঘরোয়া ম্যাচে দুই দল ও রেফারির ঐক্যমতের ভিত্তিতে অতিরিক্ত খেলোয়াড় ও তাদের বদলির সংখ্যা ঠিক করা যায়।

পোশাক

প্রতি দলের খেলোয়াড়দের নির্দিষ্ট জার্সি, শর্টস, মোজা, শিন গার্ড, বুট পড়তে হবে এবং গোলরক্ষকদের সাজ-পোশাক হবে আউটফিল্ডের খেলোয়াড়দের চেয়ে আলাদা। তবে গোলকিপারদ্বয় চাইলে ট্র্যাকসুট (Tracksuit) পড়তে পারেন।

আর যদি খেলার মধ্যে কোনো খেলোয়াড়ের জুতা বা শিনগার্ড হারিয়ে যায় তাহলে যত দ্রুত সম্ভব তা আবার পড়তে হবে। তবে খালি পায়ে গোল করলেও সেটি গোল হিসেবেই গণ্য হবে। এছাড়া প্রত্যেক খেলোয়াড়কে একই রঙের জার্সি পড়তে হবে।

রেফারি ও সহকারী রেফারি

ম্যাচের শুরু থেকে শেষ বাঁশি বাজানোর আগ পর্যন্ত রেফারির হাতেই থাকবে ক্ষমতা। রেফারীর সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত। পুরো খেলাকে নিয়ম অনুযায়ী পরিচালনা করার দায়িত্ব তার। এবং নিয়মের ব্যাতায় ঘটলে যেকোনো খেলোয়াড়কে নিয়ম অনুযায়ী শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা তার রয়েছে।

এ ব্যাপারে তিনি লাল ও হলুদ কার্ডের ব্যবহার করেন। হলুদ কার্ড এর সাহায্যে তিনি কোনো খেলোয়াড়কে সাবধান করতে পারেন। আর লাল কার্ডের সাহায্যে কোনো খেলোয়াড়কে ওই খেলা থেকে বাতিল করে দিতে পারেন। আবার কোনো খেলোয়াড় দুইটি হলুদ কার্ড পেলে তা লাল কার্ড হিসেবেই গণ্য হয়।

কর্তৃত্বের দিক দিয়ে রেফারির পরেই সহকারী রেফারির স্থান। সহকারী রেফারি খেলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখেন তা হলো—

বল সম্পূর্ণভাবে মাঠের বাইরে গিয়েছে কি না তা লক্ষ্য করা। কোন দল কর্নার কিক, ফ্রি কিক, গোল কিক পাবে তা নির্ধারণ করা। অফসাইড হয়েছে কি না তা নির্ধারণ করা। খেলোয়াড় পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়লে সংকেত দেওয়া। পেনাল্টি কিক এর সময় খেলোয়াড় বল স্পর্শ করার আগেই গোলকিপার গোললাইন থেকে এগিয়ে আসলে তা লক্ষ্য করা।

ভিডিও সহকারী রেফারিকে (VAR) বলা যায় ফুটবলের আধুনিক সংযোজন। এই রেফারি মাঠে নয় বরং থাকেন টিভির সামনে। বর্তমান সময়ে গোল, পেনাল্টি বা ফ্রি কিক সম্পর্কিত সিদ্ধান্তের সময় ভিডিও সহকারী রেফারির প্রয়োজন হয়।

আরো পড়ুন: ভলিবল খেলার নিয়ম, কলাকৌশল ও ইতিহাস বিষয়ক যাবতীয় তথ্য

হলুদ কার্ড

মূল রেফারি সাতটি কারণে কোন খেলোয়াড়কে হলুদ কার্ড দেখাতে পারেন। কারনগুলা হলো:-

  • ১. অখেলোয়াড়োচিত আচরণের জন্য
  • ২. অশোভন শব্দ কিংবা আচরণের জন্য
  • ৩. খেলার নিয়মের বিরুদ্ধাচরণ করলে
  • ৪. আবার খেলা শুরু করতে দেরি করলে
  • ৫. প্রতিপক্ষের কর্নার কিক বা ফ্রি-কিক নেওয়ার সময় নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়ানোর রীতি মানতে না চাইলে
  • ৬. রেফারির আদেশ ছাড়া মাঠের বাইরে থেকে ভেতরে ঢুকলে
  • ৭. অনেকটা ইচ্ছাকৃতভাবে মাঠের বাইরে চলে গেলে।

লাল কার্ড

মূল রেফারি ছয়টি কারণে কোনো খেলোয়াড়কে লাল কার্ড দেখাতে পারেন। কারণগুলো হলো–

  • ১. গুরুতর ফাউল করলে।
  • ২. কাউকে হিংস্রভাবে আঘাত করলে।
  • ৩. প্রতিপক্ষের কোনো খেলোয়াড় কিংবা রেফারিকে থুথু দিলে।
  • ৪. প্রতিপক্ষের গোল মেনে না নিলে অথবা হাত দিয়ে গোল করার চেষ্টা করলে।
  • ৫. অসম্মানজনক বা অশ্লীল মন্তব্য করলে।
  • ৬. একই ম্যাচে কোনো খেলোয়াড়কে প্রথম হলুদ কার্ডে দেখানোর পর দ্বিতীয়বার হলুদ কার্ড দেখানো হলেই তা লাল কার্ড দেখানো বলে বিবেচিত হবে।

ম্যাচের সময়সীমা

ম্যাচের প্রতি অর্ধেই নির্ধারিত সময় ৪৫ মিনিট করে ম্যাচের মোট সময় ৯০ মিনিট। প্রথম ভাগ শেষ হওয়ার পরে একটি বিরতি নেওয়া হয় যাকে বলে হাফ টাইম। এই হাফ টাইম এর ব্যাপ্তি সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট হতে পারে। এ সময় খেলোয়াড়রা বিশ্রাম করেন অথবা পরবর্তী কৌশল ঠিক করেন।

তবে খেলোয়াড়দের ইনজুরির কারণে, খেলোয়াড়রা ইচ্ছাকৃতভাবে সময় নষ্ট করলে কিংবা বদলি খেলোয়াড় মাঠে নামতে নষ্ট হওয়া সময় হিসাব করে রেফারি অতিরিক্ত সময় নির্ধারণ করতে পারেন।

তবে অমিমাংশিত খেলার ফলাফল নিশ্চিত করা জরুরী হলে সে ক্ষেত্রে ৯০ মিনিটের পর আরো ৩০মিনিট সময় বাড়ানো হয়। তাতেও খেলা নিঃষ্পত্তি না হলে টাইব্রেকারের মাধ্যমে খেলার ফলাফল নির্ণয় করা হয়।

ফুটবল ম্যাচ শুরুর নিয়ম

পয়সা দিয়ে টস করা হয় প্রথমে, যারা জিতবে তারা মাঠের একটা অর্ধ পছন্দ করে নেবে আর যারা হারবে তারা কিক-অফ করবে। রেফারির বাঁশির মাধ্যমে খেলা শুরু হবে এবং কিক-অফের সময় প্রতিপক্ষের প্রত্যেক খেলোয়াড়কে কমপক্ষে বল থেকে ১০ গজ দূরে দাঁড়াতে হবে।

ম্যাচ চলাকালে বল মাঠের ভেতরে থাকলে রেফারি খেলা বন্ধ করতে পারবেন না। বল সাদা রঙের টাচলাইন বা গোললাইনের পুরোপুরি বাইরে চলে গেলে সেখান থেকে আবার খেলা শুরু হবে থ্রো-ইন, গোল কিক অথবা কর্নার কিকের মাধ্যমে (অতিক্রম করা লাইন ভেদে)। বলের একটু অংশও যদি টাচলাইন বা গোললাইনের মধ্যে থাকে, তখন বলটা মাঠের বাইরে ধরা যাবে না, খেলা চলতে থাকবে।

আরো পড়ুন: ক্রিকেট খেলার নিয়ম কানুন, ইতিহাস, বিশ্বকাপ, রেকর্ড বিষয়ক যাবতীয় তথ্য

গোল হওয়া

একটি গোল তখনই হবে যখন বলটি কোন দলের গোলপোস্ট ও ক্রসবারের ভেতরে দিয়ে প্রবেশ করবে। এ ক্ষেত্রে পুরো বলটিকে গোললাইন পার করতে হবে। যদি বলের কোনো অংশ লাইনের ওপরে থাকে তবে তা গোল বলে গণ্য হবে না।

বল গোললাইন পুরোপুরি পার হওয়ার আগেই যদি রেফারি গোলের সংকেত দেন তাহলে খেলা আবার ড্রপড বলের মাধ্যমে শুরু হবে।

দুই দলই সমান সংখ্যক গোল করলে স্বভাবতই ম্যাচটি ড্র হিসেবে নির্ণিত হবে। সে ক্ষেত্রে ড্র বা টাই ভাঙার জন্য টাইব্রেকার পদ্ধতির আশ্রয় নেওয়া হয়।

অফসাইড

ফুটবলে অফসাইড বেশ পরিচিত শব্দ হলেও অনেকেই এর মানে জানেন না। একজন খেলোয়াড় অফসাইড হিসেবে গণ্য হবেন যদি–

  • ১. খেলোয়াড় বিপরীত দলের অংশে থাকেন এবং সেখানে বিপরীত দলের কোন খেলোয়াড় না থাকে।
  • ২. খেলোয়াড় বিপরীত দলের গোল লাইনের কাছে থাকেন কিন্তু তার প্রতিদ্বন্দ্বী দলের খেলোয়াড়রা তার আরো সামনে অবস্থান করেন।
  • ৩. তবে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের খেলোয়াড় যদি পাশে অথবা পেছনে থাকে তবে অফসাইড হবে না।

উল্লেখ্য যে, কোন অফসাইড খেলোয়াড় গোল দিলে তা গোল হিসেবে গণ্য হয় না এবং প্রতিদ্বন্দ্বী দল একটি গোল কিক প্রাপ্ত হয়।

ফাউল

কোনো খেলোয়াড় প্রতিপক্ষের কাউকে লাথি, ধাক্কা অথবা বেপরোয়া হয়ে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করলে তাঁর বিরুদ্ধে ফাউলের বাঁশি বাজাবেন রেফারি। বাজেভাবে ট্যাকল, ইচ্ছাকৃতভাবে বল হাত দিয়ে আটকালে কিংবা সময় নষ্ট করলেও ফাউল হবে। ফুটবলে ফাউলের কারণে আদিতে অনেক খেলোয়াড়ের প্রাণও গিয়েছে।

তাই খেলার মধ্যে যেকোনো ধরনের ফাউল বা অসদাচারণ সীমিত করতে অনেক ধরনের নিয়ম ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা রয়েছে। বিশেষত হলুদ ও লাল কার্ডের প্রচলন ফাউল ঠেকানোর জন্যই হয়েছে।

এছাড়াও কোনো খেলোয়াড় ফাউল করলে তার প্রতিদ্বন্দ্বী দলকে অনেক সময়ই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ফ্রি কিক এবং পেনাল্টি কিক দেওয়া হয়।

হ্যান্ডবল

ফুটবল খেলায় হ্যান্ডবলের নিয়ম সম্পর্কে কিছু না বললেই নয়। যখন ফুটবল কোনো খেলোয়াড় হাতে স্পর্শ করে তখনই তা হ্যান্ডবল হিসেবে গণ্য হবে। তবে কাঁধ থেকে বগল অবধি হাতের অংশে বল স্পর্শ করলে তা হ্যান্ডবল হিসেবে গণ্য হবে না। তার নিচে স্পর্শ করলেই হ্যান্ডবল হবে।

কিন্তু প্রতিটি হ্যান্ডবল অপরাধ নয়। যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে হাতে বল লেগে যায় তবে খেলোয়াড় শাস্তি পাবেন না। হ্যান্ডবল অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে তখনি যখনঃ

  • ১. খেলোয়াড় বল স্পর্শ করার উদ্দেশ্যেই হাত বাড়াবেন এবং বল স্পর্শ করবেন।
  • ২. ইচ্ছাকৃতভাবে হাত অস্বাভাবিক অবস্থায় রাখবেন যাতে বল লেগে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে এবং বল স্পর্শ করবেন।
  • ৩. খেলোয়াড়ের হাতে লেগে গোল হলে।

এসব কারণে হ্যান্ডবল হলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমনকি পেনাল্টি এরিয়ার বাইরে গোলকিপারের জন্যও একই নিয়ম প্রযোজ্য।

ফ্রিকিক ও ইনডিরেক্ট ফ্রি-কিক

‘বিপজ্জনকভাবে খেলা’ বা ‘শরীর দিয়ে প্রতিপক্ষের কোনো খেলোয়াড়ের গতিরোধ করা’র অপরাধে ইনডিরেক্ট ফ্রি- কিকের বাঁশি বাজাতে পারেন রেফারি। এ কিক দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তির স্পর্শ ছাড়া গোলে ঢুকলে সেটা গোল হবে না, এ জন্যই এটা ইনডিরেক্ট।

ডিরেক্ট ফ্রিকিক

ডিরেক্ট ফ্রিকিকে দ্বিতীয় কোনো খেলোয়াড়ের স্পর্শের প্রয়োজন নেই, বল সরাসরি গোলপোস্টে আশ্রয় নিলেই গোল। অসতর্কভাবে পা চালানো, বেপরোয়া হয়ে খেলা এবং অতিরিক্ত শক্তিপ্রয়োগ করা, মূল এ অপরাধ তিনটি। তবে স্থান-কাল- পাত্রভেদে এসব বিবেচনা করে রেফারি ডিরেক্ট ফ্রি-কিকের বাঁশি বাজাতে পারেন।

বল নিয়ে আক্রমণে ওঠা এক খেলোয়াড়কে প্রতিপক্ষের কেউ বেপরোয়াভাবে পা চালিয়ে কিংবা তাঁর জার্সি টেনে ধরে তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করলে তখনই রেফারি ডিরেক্ট ফ্রি-কিকের বাঁশি বাজান।

পেনাল্টি কিক

আক্রমণকারী দলের খেলোয়াড় যদি প্রতিরক্ষাকারী দলের পেনাল্টি এরিয়ার ভেতরে থাকা অবস্থায় কোনো ফাউলের শিকার হয় যার কারণে প্রত্যক্ষ ফ্রি কিক দেওয়া হয়ে থাকে, তবে আক্রমণকারী দল একটি পেনাল্টি পাবে।

পেনাল্টি শট করার নিয়ম–

  • ১. বলটিকে পেনাল্টি মার্কে স্থির থাকতে হবে।
  • ২. যেই খেলোয়াড় পেনাল্টি শট করবেন তার নাম পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করতে হবে।
  • ৩. পেনাল্টি শট করার সময় বাকি সকল খেলোয়াড়কে অবশ্যই পেনাল্টি এরিয়ার বাইরে এবং বল থেকে অন্তত ৯.১৫ মিটার দূরে থাকতে হবে।
  • ৪. রেফারি সিগনাল দেওয়ার পরে কিক করতে হবে। ৫. বলকে পেছন দিকে কিক করা যাবে না।
  • ৬. বল কিক করার সময় অবধি গোলকিপারকে অবশ্যই গোল লাইনে অবস্থান করতে হবে।
  • ৭. বলটি গোল করলে, নড়া থেমে গেলে অথবা গোল হওয়া সম্ভব না এটি নিশ্চিত হলেই কেবল পেনাল্টি শেষ হয়েছে এই সিদ্ধান্তে আসা যাবে।

থ্রো-ইন

যখন বল মাঠের বাইরে চলে যায় তখন সেই স্থান থেকেই এবার তা মাঠের ভেতরে ছুঁড়ে মারা হয়। একেই বলে থ্রো ইন। থ্রো ইন থেকে কখনো সরাসরি গোল দেওয়া যায় না।

বলটি কোনোভাবে সরাসরি প্রতিপক্ষের গোলে ঢুকে গেলে একটা গোল কিক দেওয়া হয়। আর বল নিজের গোলে ঢুকে গেলে কর্নার কিক দেওয়া হয়।

গোল কিক

অ্যাটাকিং দলের কারো পায়ে লেগে বল ডিফেন্ডিং দল গোললাইন অতিক্রম করলে তখনই গোল কিক পাবে। নিজেদের পেনাল্টি বক্সের ভেতর থেকেই তারা গোলে কিক নেবে এবং কিকটি অবশ্যই পেনাল্টি বক্স অতিক্রম করতে হবে। গোল কিক থেকেও সরাসরি গোল হতে পারে।

গোল কিকের নিয়ম

গোল এরিয়ার যেকোনো স্থান থেকে ঐ দলের যেকোনো খেলোয়াড় গোল কিক করতে পারে। গোল কিক করার সময় অবশ্যই প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের পেনাল্টি এরিয়ার বাইরে থাকতে হবে। বল লাথি লেগে নড়া শুরু করা মাত্রই খেলা শুরু হয়ে যাবে।

বল অন্য কোনো খেলোয়াড় স্পর্শ করার আগেই যদি যেই খেলোয়াড় গোল কিক করেছেন তিনি আবার স্পর্শ করেন তবে বিপরীত দল একটি প্রত্যক্ষ ফ্রি কিক পাবেন।

এই ঘটনা পেনাল্টি এরিয়ার ভেতরে ঘটলে বিপরীত দল পেনাল্টি পাবে। তবে যদি গোল কিক করা খেলোয়াড় খোদ গোলকিপারই হয় তবে পেনাল্টি নয় বরং পরোক্ষ ফ্রি কিক পাবে।

কর্নার কিক

ডিফেন্ডিং দলের কারো পায়ে বা শরীর স্পর্শ করে বল তাদের গোললাইন অতিক্রম করলে অ্যাটাকিং দল কর্নার কিক পাবে। কর্নার কিক নেওয়ার সময় প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের অন্তত ১০ গজ দুরে থাকতে হয়।

কর্নার কিক করার নিয়ম

গোল পোস্টের যেই পাশ দিয়ে বল মাঠের বাইরে গেছে সে পাশের কর্নার থেকে কর্নার কিক করতে হবে। বলটি স্থির অবস্থায় থাকতে হবে এবং আক্রমণকারকারী দলের একজন খেলোয়াড় বলটিকে কিক করবেন। কর্নার থেকে বিপরীত দলের খেলোয়াড়দের অন্ততপক্ষে ৯.১৫ মিটার দূরে থাকতে হবে। কর্নারের পতাকাবাহী দন্ডটি নড়ানো যাবে না।

কিক করার পরে বল অন্য খেলোয়াড় স্পর্শ করার আগেই যদি একই খেলোয়াড় আবারো বল স্পর্শ করেন তবে প্রতিরক্ষাকারী দল একটি প্রত্যক্ষ ফ্রি কিক পায়।

বদলি খেলোয়াড়

খেলোয়াড় আহত, ক্লান্ত বা দলের কৌশলগত বা দলের অন্য প্রয়োজনে ম্যাচ চলাকালীন বদলি খেলোয়াড় নামানোর আইন রয়েছে, এক্ষেত্রে প্রতি ম্যাচে সর্বোচ্চ ৩ জন বদলি খেলোয়াড় নামতে পারবেন।

ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা

ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা হচ্ছে ফিফা। FIFA বা Federation Of International Football Association. অর্থাৎ আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা হচ্ছে আন্তর্জাতিক ফুটবল নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান। এর সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহরে অবস্থিত।

বর্তমান প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। ফিফা ফুটবলের প্রধান অনুষ্ঠানগুলো বিশেষ করে ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজন ও তত্ত্বাবধান করে থাকে। ফুটবল এবং ফুটবলের নিয়মের যাবতীয় দিক ফিফাই দেখভাল করে থাকে।

ফুটবল বিশ্বকাপ

ফিফার নিয়ন্ত্রনে চার বছর পর পর বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম বিশ্বকাপ হয় ১৯৩০ সালে। মাঝে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৪২ ও ১৯৪৬ সালে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়নি। বর্তমানে ৩২টি জাতীয় দল একমাসব্যাপী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। এই প্রতিযোগিতা দু’ধাপে বিভক্ত –

গ্রুপ পর্যায় এবং

নক-আউট পর্যায়।

গ্রুপ পর্যায়ে দলগুলোকে প্রতি দলে চারটি করে আটটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। বিশ্বকাপের মূলপর্বের ছয়মাস আগে কোন গ্রুপে কে থাকবে তা নির্ধারন করা হয়। ফিফা বিশ্ব র‌্যাঙ্কিং অনুযায়ী শীর্ষ আটটি দলকে (স্বাগতিক দল-সহ) আটটি ভিন্ন গ্রুপে রাখা হয়।

প্রতি গ্রুপের বাকি তিনটি দলের স্থান বিভিন্ন এলাকার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট করা হয়। পরে ঐ এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন দলের মধ্যে লটারি করে চূড়ান্ত গ্রুপ নির্ধারণ করা হয়। ১৯৯৮ থেকে একই গ্রুপে যেন দু’টির বেশি ইউরোপীয় দল বা অন্য কনফেডারেশনের একটির বেশি দল না থাকে সে জন্য নিয়ম বেঁধে দেয়া হয়েছে।

প্রতি গ্রুপে রাউন্ড-রবিন পদ্ধতিতে একটি দল বাকী তিনটি দলের সাথে তিনটি খেলা খেলে। গ্রুপের তিনটি খেলার পর শীর্ষ দু’টি দল পরের ধাপে উত্তীর্ণ হয়। গ্রুপের মধ্যে দলের অবস্থান নির্ণয়ের জন্য পয়েন্ট ব্যবস্থা গৃহীত হয়।

১৯৯৪ সাল থেকে একটি দলের জয়ের জন্য তিন পয়েন্ট ও ড্রয়ের জন্য এক পয়েন্ট দেয়া হচ্ছে। এর আগে প্রতি খেলায় জয়ে জন্য দুই পয়েন্ট ছিল। যদি দুটি দলের পয়েন্ট সমান হয়ে যায় তাহলে প্রথমে গোল ব্যবধান, এরপর গোল সংখ্যা, এরপর দু’টি দলের খেলার ফলাফলের উপর নির্ভর করে অবস্থান নির্ণয় করা হয়।

এতেও যদি অবস্থান না নির্ণয় করা যায় তাহলে লটারির মাধ্যমে অবস্থান নির্ণয় করা হয়।

নক আউট পর্যায়ে কেউ হারলেই প্রতিযোগিতা থেকে বাদ হয়ে যায়। এতে দু’টি দল এক-লেগের খেলা খেলে। নির্ধারিত নব্বুই মিনিটে খেলা না শেষ হলে ‘অতিরিক্ত সময়’ ও ‘পেনল্টি শুটআউট’ এর মাধ্যমে খেলার জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়। এই নিয়ম গ্রুপ পর্যায়ের পর দ্বিতীয় পর্যায় থেকেই চালু হয়।

দ্বিতীয় পর্যায়ে এক গ্রুপের বিজয়ী অন্য গ্রুপের রানার্স-আপের সাথে খেলে থাকে। এরপর কোয়ার্টার-ফাইনাল, সেমি-ফাইনাল, তৃতীয় স্থান নির্ধারনী ও ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়।

সেরা কয়েকজন খেলোয়াড়দের তালিকা

ফুটবলে অনেক নামকরা বিখ্যাত খেলোয়াড় রয়েছেন। তাদের সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে সুপরিচিত। সেরা খেলোয়াড় বাছাই করা সত্যিই কঠিন কাজ। তবুও সেরা দশজনের তালিকা নিচে দেওয়া হলো:

১. পেলে– ১৯৫৮, ১৯৬২ এবং ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপ বিজয়ী ব্রাজিলের পেলে সর্বকালের সর্বকালের সেরা ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচিত।

২. লিওনেল মেসি– বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় মেসি। তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে খেলে থাকেন। তিনি একটি ক্যালেন্ডার বছরে ৯২ টি গোল করে গার্ড মুলারের সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড ভাঙ্গেন ২০১২ সালে।

৩. ম্যারাডোনা – তিনিও আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়। দুইবার বিশ্বকাপ জয়ী। তার অসাধারণ ড্রিবলিং এবং নান্দনিক ফুটবল সবার মন কাড়ে।

৪. জোহান ক্রুইফ – ১৯৬০-৭০ এর দশকে ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার হয়ে খেলেন এই ফুটবলার। তাকে টোটাল ফুটবলের জনক বলা হয়। তিনটি ব্যালন ডি’অর এর বিজয়ী, আটটি ডাচ শিরোপা এবং তিনটি ইউরোপীয় কাপ জেতেন।

৫. ফ্রাঞ্জ বেকেনওয়েবার – এই ডাচ ফুটবলার তার ড্রিবলংয়ের জন্য বিখ্যাত৷ তিনি ১৯৭০ এর দশকের খেলোয়াড়। তিনি পাঁচটি বুন্দেসলিগা শিরোপা এবং তিনটি ইউরোপীয় কাপ জিতে নেন।

৬. ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো – এই পর্তুগিজ ফুটবলার বর্তমান সময়ের সেরা খেলোয়াড়। তাকে মেসির সাথে তুলনা করা হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে রোনালদোর পারফরমেন্স মেসির কাছাকাছি। গতি, শক্তি, নিয়ন্ত্রণ এবং সমাপ্তি – রোনালদোর সবকিছুই আছে।

৭. মাইকেল প্লাতিনি – পরের বছরটি জুভেন্টাসের সাথে ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে ভাল একজন বিশেষজ্ঞ ফ্রী-কিক নেওয়ার অন্যতম। ফ্রান্স ও ইউরোপীয় কাপে ১৯৮৪ সালের ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার পর প্ল্যাটিনি ক্লাব ও দেশের জন্য ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। মিডফিল্ডারটি ১৯৮৪ সালে সেরা জয়টিতে নয়টি গোল করে।

৮. ডি স্টেফানো- পাঁচটি ইউরোপীয় কাপের ফাইনালে ডি স্টেফানোের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। তিনটি ভিন্ন দলের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে খেলা, ডি স্টেফানো এর কর্মজীবন মহাজাগতিক কিছুই ছিল

৯. পুসকাস – ১৯৫০ সালের গ্রেট হাঙ্গেরী দলের একজন বিশিষ্ট সদস্য ছিলেন। পুসকাস চারবার রিয়াল মাদ্রিদের সাথে শীর্ষ লিগের খেলোয়াড় ছিলেন এবং দুই ইউরোপীয় কাপের ফাইনালে ৭ গোল করেন। ১৯৫৮ সালে রিয়ালে যাওয়ার আগে তিনি পাঁচটি লিগ শিরোপা জিতেছিলেন

১০. ইসেবিও – রোনালদো আসার আগ পর্যন্ত ইসেবিও ছিলেন পর্তুগালের সর্বকালের সেরা ফুটবল খেলোয়াড়। ইসেবিও বিস্ফোরক গতি এবং ভ্রান্ত করার ক্ষমতা অর্জন করেছিলেন।

ফুটবলের অসাধারণ কিছু রেকর্ড

ফুটবলে এমন সব কীর্তি গড়ে ওঠেছে যেখানে অন্য অনেক চাইলেও যেতে পারে না। তাদের কীর্তিগুলো অবিনশ্বর, আর কখনো ভাঙবে কি না সন্দেহ আছে। কিংবদন্তিদের এমন সব কীর্তিগাথা গুলো জেনে নেই–

১. এক বিশ্বকাপে দু’টি হ্যাট্রিক এবং ১৩ গোল।

অংশ নিয়েছেন মাত্র এক বিশ্বকাপ। আর তাতেই বিশ্বকাপের রেকর্ডবোর্ডে চিরকালের মতো নিজের নাম লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। ১৯৫৮ সালের সুইডেন বিশ্বকাপে ৬ম্যাচে মাঠে নেমে দু’টি হ্যাটট্রিকসহ ১৩ গোল করেছিলেন ফ্রেঞ্চ স্ট্রাইকার জা ফন্টেইন।

বিশ্বকাপ অলটাইম টপ স্কোরার লিস্টে চার নাম্বার পজিশন দখল করে আছেন। এক বিশ্বকাপ খেলেই এমন রেকর্ড! এই তালিকার এক নম্বরে থাকা মিরোস্লাভ ক্লোসা ১৬ গোল করতে খেলতে হয়েছে ২১ টি ম্যাচ এবং অংশ নিয়েছেন ৪টি বিশ্বকাপে।

এক বিশ্বকাপে দু’টি হ্যাটট্রিক এবং মাত্র ৬ ম্যাচে ১৩ গোল! অবিশ্বাস্য এক কীর্তি গড়েছেন জা ফন্টেইন।

২. পেলের ৩ বিশ্বকাপ জয়

এডসন আরান্তেস দ্য নাসিমান্তো, যিনি পেলে নামে পরিচিত। ব্রাজিলের কালো মানিক। ফুটবলের সর্বকালের সেরা একজন ফুটবলার। পেলের ঝুলিতে অসংখ্য রেকর্ড আছে যেগুলো নিয়ে লিখতে বসলে লেখা শেষ হবে না। ফুটবল বিশ্বে একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে জিতেছেন ৩টি বিশ্বকাপ।

এই কীর্তিই তাকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। ১৯৫৮ বিশ্বকাপে মাত্র ১৭ বছর বয়সে ব্রাজিলের হয়ে অভিষেক ঘটে পেলের। সেই বিশ্বকাপেই নিজের আগমনী বার্তা জানান দেন পেলে।

বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে ফ্রান্সের সাথে হ্যাটট্রিক এবং ফাইনালে সুইডেনের সাথে জোড়া গোল করেন পেলে। ওই বিশ্বকাপে মোট ৬ গোল করে দলের বিশ্বকাপ জয়ে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন।

১৯৭০ মেক্সিকো বিশ্বকাপের ব্রাজিল দল ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা দল । পেলে, টোস্টাও, জেয়ারজিনহো, কার্লোস আলবার্তোদের নিয়ে গড়া দল নিয়ে মাত্র ১২ বছরের ব্যবধানে ৩টি বিশ্বকাপ জিতে নেয় ব্রাজিল।

পেলে একমাত্র প্লেয়ার হিসেবে ৩টি ওয়ার্ল্ড কাপ চ্যাম্পিয়ান হয়ছেন। আর কেউ এমনটি করতে পারে নি।

৩. মেসির এক পঞ্জিকাবর্ষে ৯২ গোল

মেসি মাঠে নামেন নতুন কোন রেকর্ড নিজের করে নেওয়ার জন্যে। মেসি মাঠে নামলেই রেকর্ডবই নতুন করে সাজাতে হয়। অসংখ্যা রেকর্ডের মাঝে মেসি ২০১২ সালে এমন এক রেকর্ড গড়েছেন যে রেকর্ড আর কবে ভাঙবে কিংবা আদৌ ভাঙবে কিনা সন্দেহ আছে।

এমনিতেই মেসির কাছে গোল করা একদম ডালভাতের মতো ব্যাপার স্যাপার, সেই বছর মেসি গোল করাকে আরো সাধারণ পর্যায়ে নিয়ে এসেছিলেন।

২০১২ সালে ৬৯ ম্যাচ খেলে ৯১ গোলের দেখা পেয়েছিলেন মেসি। বার্সার হয়ে ৬০ ম্যাচ খেলেই করেছিলেন ৭৯ গোল আর আর্জেন্টিনার হয়ে ৯ ম্যাচে ১২ গোল করে দেখা পেয়ে যান অবিশ্বাস্য এক কীর্তির। এর আগের রেকর্ড ছিল জার্মান জার্ড মুলারের । ১৯৭২ সালে ৮৫ গোল করেছিলেন মুলার।

৪. থম্পসনের এক ম্যাচে ১৩ গোল

গোলের খেলা ফুটবল, একটা দল প্রতিপক্ষকে ৪ গোলের ব্যবধানে হারাতে পারলেই অনেক বড় করে দেখা হয়। দলীয় খেলায় ৮/১০ গোল দেখা বিরল একটা বিষয়। ২০০১ সালে এরকম একটি বিরল ঘটনার দেখেছিল বিশ্ববাসী। ১১ এপ্রিল ২০০১ সালে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের একটি ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয় আমেরিকান সামোয়া।

প্রতিপক্ষকে একদম গুড়িয়ে দেওয়া যাকে বলে তার পারফেক্ট উদাহরণ দেখায় অস্ট্রেলিয়া। খেলায় আমেরিকান সামোয়ার জালে গুনে গুনে ৩১ গোল দেয় অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়ার স্ট্রাইকার আর্চি থম্পসন একাই করেন ১৩ গোল। তার ১৩ গোল কোন প্লেয়ারের এক ম্যাচে দেওয়া সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড।

৫. বেকেনবাওয়ারের অধিনায়ক এবং কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জয়

ফুটবলের সর্বোচ্চ শিরোপা জয় করা যেকোন প্লেয়ারের কাছেই অনেক বড় স্বপ্ন। পেলে, ম্যারাডোনা, থেকে শুরু করে হালের রোনালদো, বুফন, জাবি,ইনিয়েস্তারা বিশ্বকাপ জয় করে নিজেদের নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়। বিশ্বকাপ জয়ের দিক দিয়ে জার্মান ফ্রেঞ্জ বেকেনবাওয়ার ছাড়িয়ে গেছেন অন্য সব বিশ্বকাপ জয়ীদের।

তিনি একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে অধিনায়ক এবং কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জয় করেছেন। জার্মানির ১৯৭৪ বিশ্বকাপ জয়কালে দলের অধিনায়ক ছিলেন বেকেনয়াওয়ার। ১৯৯০ সালে ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে জার্মানি যখন তাদের তৃতীয় বিশ্বকাপ ট্রফির দেখা পায় তখন সেই দলের কোচ ছিলেন বেকেনবাওয়ার।

৬. খেলোয়াড় এবং কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জয়

অধিনায়ক এবং কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন জার্মান ডিফেন্ডার ফ্রেঞ্জ বেকেনবাওয়ার। ব্রাজিলিয়ান মারিও জাগালো জিতেছিলেন খেলোয়াড় এবং কোচ হিসেবে। লেফট উইঙ্গার হিসেবে খেলা জাগালো ব্রাজিলের হয়ে ৫৮ এবং ৬২ বিশ্বকাপ জিতেছিলেন।

পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে ব্রাজিল যখন তাদের ইতিহাসের তৃতীয় শিরোপা জয় করে তখন সেই বিশ্বকাপ জয়ী দলের কোচ ছিলেন মারিও জাগালো

৭. রোনালদোর চ্যাম্পিয়নস লিগের এক মৌসুমে ১৭ গোল

উয়েফা আয়োজিত চ্যাম্পিয়নস লীগ মানেই রোনালদো, রোনালদোর রেকর্ডের ছড়াছড়ি। এইজন্যে অনেকে UCL কে মজা করে Uefa Cristiano League বলে ডাকেন। এই আসরে সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা, সবচেয়ে বেশি এসিস্টকারী সহ এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোল দেওয়ার রেকর্ড ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর দখলে।

রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ২০১৩-১৪ মৌসুমে ১৭ গোল করেন রোনালদো। সেই মৌসুমে রোনালদোর দুরন্ত ফর্মের সুবাদে রেকর্ড ১০বারের মতো চ্যাম্পিওনস লীগের শিরোপা জিতে রিয়াল মাদ্রিদ।

৮. গোল রক্ষক হয়ে ১৩১ গোল

একজন গোলরক্ষকের কাজ হলো নিজ দলের গোলপোস্ট আগলে রাখা। মাঝে মাঝে গোলরক্ষকেরা লম্বা শট মেরে এসিস্ট করেন। একজন গোলরক্ষকের গোল করা বিরল একটি দৃশ্য। এটি বিরল দৃশ্য হলেও ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক রোজানেরি চেনি দৃশ্যটাকে নিয়মিত বানিয়ে ফেলেছিলেন।

গোলকিপার হয়েও ১৩১ গোল করেছিলেন তিনি। রীতিমতো অবিশ্বাস্য ব্যাপার স্যাপার। গোলগুলোর মধ্যে ৭১ টি গোল করেছেন স্পটকিক থেকে, বাকি ৬০ গোল ফ্রি কিক থেকে। তাছাড়া তিনি ব্রাজিল দলের হয়ে ২০০২ বিশ্বকাপ এবং ১৯৯৭ সালের কনফেডারেশন কাপ জয় করেছেন।

৯. দুই দেশ এক খেলোয়াড় 

এমন মজার ঘটনারও সাক্ষী ফুটবল বিশ্বকাপ। ভিন্ন দুই দেশের হয়ে বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলেছেন লুইস মন্টি ( Luis Monti)। ১৯৩০ সালে অর্থাৎ প্রথমবার আর্জেন্টিনার হয়ে। দ্বিতীয়বার ১৯৩৪ সালে ইটালির হয়ে।

ভিন্ন দুই দেশের হয়ে বিশ্বকাপের ৯ ম্যাচে ৩ টি গোল করার রেকর্ড রবার্ট প্রসিনেকির দখলে। যুগোস্লোভিয়া (১৯৯০) এবং ক্রোয়েশিয়া (১৯৯৮, ২০০২)-র হয়ে খেলে গোল করেছিলেন।

১০. বেশি গোল

এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড করেছেন রাশিয়ার ওলেগ সালেনকোর (Oleg Salenko)। ১৯৯৪ সালে ক্যামেরুনের বিপক্ষে ৫ গোল করেন। এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন ফ্রান্সের জ্য ফন্টেইন (Just Fontaine)।

মোট ১৩ গোল। সব বিশ্বকাপ মিলিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা জার্মানীর মিরোস্লাভ ক্লোসে (Miroslav Klose)। বিশ্বকাপের ২৯ টি ম্যাচে মোট ১৬ টি গোল করেন তিনি।

১১. বেশি কার্ড

সুন্দর ফুটবলের দেশ হিসেবে পরিচিত ব্রাজিলের দখলেই বেশি (১১) লাল কার্ড দেখার মত খারাপ রেকর্ডও। ব্রাজিলের নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী দল দুটিও লাতিন আমেরিকার – আর্জেন্টিনা (১০) ও উরুগুয়ে (৯)। অবশ্য হলুদ ও লাল কার্ডসহ সর্বমোট কার্ডের হিসেবে সবচেয়ে বেশি কার্ড দেখতে হয়েছে আর্জেন্টিনাকে (১২০ টি)।

১২. শিরোপাহীন সর্বোচ্চ

বিশ্বকাপ শিরোপা না জিতেও সবচেয়ে বেশিবার এই আসরে অংশগ্রহণকারী দেশটি হলো মেক্সিকো (১৫)। শিরোপাজয়ী অন্য তিন দেশ স্পেন (১৪), ইংল্যান্ড (১৪) ও ফ্রান্সের (১৪) চেয়ে বেশি বিশ্বকাপ খেলেছে মেক্সিকো।

১৩. সর্বকনিষ্ঠ ও সর্বজ্যেষ্ঠ

১৯৮২ বিশ্বকাপে মাত্র ১৭ বছর ১ মাস ১০ দিন বয়সে যুগোস্লাভিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলে এখনও পর্যন্ত সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় নর্দ্যান আয়ারল্যান্ডের (Northern Ireland) নরম্যান হোয়াইটসাইড(Norman WHITESIDE)।

সর্বজ্যেষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে ম্যাচ খেলেছেন কলম্বিয়ার (Columbia) ফারীদ মন্দ্রাগন (Faryd MONDRAGON)। ২০১৪ সালে জাপানের বিরুদ্ধে খেলার দিন বয়স ছিল ৪৩ বছর ৩ দিন।

সবশেষে বলতে পারি, ফুটবল একটি দারুণ উপভোগের খেলা। ফুটবল খেলা দেখার রোমাঞ্চটা পরিপূর্ণভাবে তখনই পাওয়া যায়, যখন আপনি এর নিয়মগুলো জানবেন। উত্তেজনাকর খেলাটি সঠিকভাবে বুঝে উপভোগ করার মজাই আলাদা।

আর নিয়ম না জেনে খেলা দেখলে পানসে লাগবে। লেখাটি পড়ে সব নিয়মকানুন সব তো জানলেন। ফুটবলের কিছু খেলোয়াড়, বিশ্বকাপ এবং রেকর্ডের কথাও জানলেন। এবার আশা করি এরপর থেকে খেলা দেখতে বসলে আগের চেয়ে বেশি উপভোগ করবেন।

লেখক: রাকিব খান

সূচীপত্র

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top