প্রতীক কাকে বলে? প্রতীক কত প্রকার ও কী কী?

আজকে আলোচনা করবো প্রতীক কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? উদাহরণ সহ বিস্তারিত বুঝিয়ে বলবো

প্রতীক কাকে বলে?

প্রতীক বলতে বোঝায় এমন কোন চিহ্ন যা দিয়ে কোন কিছু সম্পর্কে অর্থপূর্ণ ধারণার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।কোন নির্দিষ্ট বস্তুকে নির্দেশক করে কোন ধরণের সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করে সেই বস্তুকে উপস্থাপন করার কৌশলকে বলা হয় প্রতীক। রাস্তার পাশে, কোন দেয়ালে, কোন প্লে-কার্ডে আমরা বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন দেখতে পাই। সে চিহ্নগুলোকে মূলত প্রতীক বলা হয়। প্রতীকের মাধ্যমে আমরা খুব সহজে কোন স্থান খুঁজে পেতে পারি কোন ধরণের ঝামেলা ছাড়াই।তাই,প্রতীক কাকে বলে ও বিভিন্ন প্রতীকের ব্যবহার সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত আমাদের।

আজ এই আর্টিকেলে প্রতীক সম্পর্কেই বিশদ আলোচনা করার চেষ্টা করবো।

আরো পড়ুন ;- জ্যামিতি কাকে বলে ? কত প্রকার ও কি কি?

প্রতীক শব্দের বুৎপত্তি

ইংরেজি Symbol শব্দটির বাংলা পারিভাষিক প্রতিশব্দ হলো প্রতীক। ইংরেজি শব্দটি এসেছে গ্রিক ক্রিয়াপদ ‘সিম্বালেঈন’ (অর্থ: একত্রে ছুঁড়ে মারা) এবং বিশেষ্য ‘সিম্বলোন’ (অর্থ: চিহ্ন; প্রতীক; টোকেন বা নিদর্শন) থেকে। এছাড়া বাংলায় ‘প্রতীক’ শব্দটির অর্থ চিহ্ন; নিদর্শন; সংকেত। বাংলা প্রতীক শব্দটি সংস্কৃত ‘প্রতি+√ই+ঈক’ যোগে গঠিত।

প্রতীকের ইতিহাস

প্রতীকের জন্ম হয়েছে বহু বহু আগে। ধারণা করতে পারি, মানুষের চিত্রণ ক্ষমতার বিকাশ থেকেই প্রতীকের বিকাশ শুরু। কেননা মানুষের প্রথম দিককার চিত্রগুলো ছিলো যথেষ্টই প্রতীক নির্ভর। তখন মানুষ গুহার গায়ে যেসব ছবি আঁকতো, সেখানে ফুটে উঠতো কোনো পশু, পাখি, মানুষ, যুদ্ধকৌশল কিংবা নিজেদের অস্ত্র। সেখানে প্রাণী তার প্রকৃত কাঠামোতে বেরিয়ে না এলেও প্রাণীর কাঠামোর আদল বেরিয়ে আসতো। ফলে সেই আদল দেখেই আমরা বুঝে নিতাম এটা অমুক প্রাণী। সময় বদলালো, মানুষের কৃতকর্মের বিকাশের পাশাপাশি চিত্রণ ক্ষমতারও বিকাশ ঘটলো। মানুষের চিত্র-ভাষায় বৈচিত্র্য আসতে শুরু করলো চিত্রলিপি (pictogram) স্তরে। এই স্তরে মানুষ চিত্র দিয়ে অনেক কথাই বলতে চেষ্টা করতে থাকলো, যেখানে প্রতীকের উপস্থাপনা লক্ষ্যণীয়। মানুষের এসব প্রতীকই ধীরে ধীরে বিবর্তিত হলো। তারপর মানুষ প্রবেশ করলো ভাবলিপির (logogram) স্তরে। তখন স্বাভাবিক চিত্রগুলোই বিশেষ ভাবময়তায় প্রস্ফুটিত হতে লাগলো। যেমন: [প্রাচীন যুগের] স্মারক চিত্রপ্রতীক স্তরে চোখ থেকে ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু ঝরে পড়াকে বোঝাতো কান্না, ভাবলিপিতে তা হয়ে উঠে দুঃখ। ভাবলিপির স্তরে অর্ধবৃত্তের নিচে তারা এঁকে রাত্রি এবং অর্ধবৃত্তের নিচে সূর্য বসিয়ে বোঝানো হতো দিন।

 এভাবেই মানুষের চিহ্ন, সংকেতগুলো ভাবমন্ডিত হয়ে উঠতে লাগলো। মানুষের ভাবময় অর্থবোধক চিহ্ন, সংকেতগুলোই [বিপুল অর্থদ্যোতনায়] হয়ে উঠলো প্রতীক। এভাবেই মানুষ যথেষ্ট সভ্য হয়েও, এবং বিবর্তিত ধ্বনিলিপি বা বর্ণমালা (alphabet) পেয়েও সংক্ষেপে অনেক কথা বলতে যুগ যুগ ধরে প্রতীকের ব্যবহার করে আসছে এবং আজও প্রতীকের বিশাল রাজ্যে বসবাস করছে।

গাণিতিক প্রতীক কাকে বলে?

বিভিন্ন গাণিতিক হিসাব নিকাশ প্রকাশ করতে যে বিশেষ ধরণের চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকে গাণিতিক প্রতীক বলে।

গাণিতিক প্রতীকের প্রকারভেদ

গাণিতিক প্রতীক মূলত ৫ ধরণের হয়।যথাঃ

১) সংখ্যা প্রতীকঃ ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮,

২) প্রক্রিয়া প্রতীকঃ + (যোগ), (বিয়োগ), (গুণ),

  • (ভাগ)

৩) সম্পর্ক প্রতীকঃ > (বড়), (ছোট), = (সমান), < = (সমান নয়), ≤ (ছোট অথবা সমান), ≥ (বড় অথবা সমান )

৪) বন্ধনী প্রতীকঃ () প্রথম বন্ধনী, ) দ্বিতীয় বন্ধনী, তৃতীয় বন্ধনী।

৫) অক্ষর প্রতীকঃ ক, খ, গ, ঘ, …. ইত্যাদি।

সম্পর্কিত আর্টিকেল ;- আয়নিক বন্ধন কাকে বলে? সমযোজী বন্ধন কাকে বলে?

রাসায়নিক প্রতীক কাকে বলে?

প্রতীক বা রাসায়নিক প্রতীক হলো কোনো মৌলের সংক্ষিপ্ত প্রকাশ। প্রকৃতিতে প্রাপ্ত সব মৌলিক পদার্থের প্রতীক এক বা দুই অক্ষরের, তবে মানুষ সৃষ্ঠ কিছু মৌলের প্রতীক তিন অক্ষরের।

রাসায়নিক প্রতীকগুলি সাধারণত লাতিন বা গ্রিক শব্দ থেকে তৈরি করা হয়। যেমন সীসার জন্য ব্যবহৃত হয় “Pb” (লাতিন ভাষায় নাম plumbum)। পারদের জন্য ব্যবহৃত হয় “Hg” (গ্রিক hydrargyrum). কিছু প্রতীক অন্যভাষা থেকে এসেছে। যেমন টাংস্টেন-এর প্রতীক “W” (জার্মান Wolfram থেকে)।

প্রতীকের বামে বা ডানে উপরে বা নিচে কিছু সংখ্যা যোগ করে অতিরিক্ত তথ্য দেওয়া যায়।

যেমন প্রতীকের উপরে বামে মৌলের ভরসংখ্যা বা নিউক্লিয়ন সংখ্যা দেখানো হয় (যেমন, 14N)।

প্রতীকের বামে নিচে সংখ্যা দিয়ে পারমাণবিক সংখ্যা বা প্রোটন সংখ্যা বোঝানো হয়। (যেমন 64Gd) বিভিন্ন বর্ণ যেমন “m” এবং “f” দিয়ে আণবিক আইসোমার বোঝানো যায়। (যেমন 99mTc). কোন মৌলিক বা যৌগিক পদার্থের একটি অণুতে কয়টি পরমাণু আছে তা প্রতীকের ডানে নিচে দেখানো হয় (যেমন N2 বা Fe2O3).

প্রতীক ও সংকেতের মধ্যে পার্থক্য

প্রতীক ও সংকেত রসায়নের দুইটি গুরুত্বপুর্ণ পরিভাষা। যারা বিজ্ঞান নিয়ে পড়ালেখা করেন তাদের জন্য এই প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। যা হোক, প্রতীক ও সংকেত নিয়ে আলোচনা করা যাক।

প্রতীকঃ প্রতীক হলো কোনো মৌলের ইংরেজি বা ল্যাটিন নামের সংক্ষিপ্ত রুপ।যেমনঃHydrozen একটি মৌলের নাম।এর প্রতীক H যা Hydrozen নামটির সংক্ষিপ্ত রুপ।আবার,Nattrium সোডিয়ামের ল্যাটিন নাম।এর প্রতীক Na যাnattrium এর সংক্ষিপ্ত রুপ।

সংকেতঃ কোনো মৌল বা যৌগ অণুর সংক্ষিপ্ত রুপকে সংকেত বলে।যেমনঃঅক্সিজেনের দুইটি মৌল পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে অক্সিজেনের অণু তৈরী করে যার সংকেত হলোo2.

আরো জানুন ;- ঘর্ষণ কাকে বলে ? ঘর্ষণ বল কাকে বলে?

রাসায়নিক প্রতীক লেখার নিয়ম

  • প্রতীক মৌলের ল্যাটিন অথবা ইংরেজি নামের আদি এক বা একাধিক বর্ণ দ্বারা লেখা হয়।
  • এক বর্ণবিশিষ্ট প্রতীক হলে তা বড় হাতের অক্ষরে লেখতে হয়।
  • দুই বর্ণবিশিষ্ট প্রতীকের ক্ষেত্রে প্রথম বর্ণ বড় হাতের এবং দ্বিতীয় বর্ণ ছোট হাতের লেখা হয়।

প্রতীক ও সংকেত ব্যবহারের নিয়ম

কোনাে রাশির মান প্রকাশ করার জন্য একটি সংখ্যা লিখে তারপর একটি ফাঁকা জায়গা ( space ) রেখে এককের সংকেতটি লিখতে হয় । যেমন 2.21 kg , 7.3 x 102 m ° কিংবা 22 K , শতকরা চিহ্নও ( % ) এই নিয়ম মেনে চলে । তবে ডিগ্রি ( ৩ ) মিনিট ( ‘ ) এবং সেকেন্ড ( ‘ ) লেখার সময় সংখ্যার পর কোনাে ফাঁকা জায়গা বা space রাখতে হয় না ।

2. গুণ করে পাওয়া লন্ধ লেখার সময় দুটি এককের মাঝখানে একটি ফাঁকা জায়গা বা space দিতে হয় । যেমন : 2.35 N_m

3.ভাগ করে পাওয়া লব্ধ এককের বেলায় ঋণাত্মক সূচক বা ‘ / ‘ ( যেমন ms – 1 কিংবা m / s ) দিয়ে প্রকাশ করা হয় ।

4. প্রতীকগুলাে যেহেতু গাণিতিক প্রকাশ , কোনাে কিছুর সংক্ষিপ্ত রূপ নয় , তাই তাদের সাথে কোনাে যতিচিহ্ন ( . ) বা full stop ব্যবহার হয় না ।

5. এককের সংকেত লেখা হয় সােজা অক্ষরে যেমন মিটারের জন্য m , সেকেন্ডের জন্য s ইত্যাদি । তবে রাশির সংকেত লেখা হয় italic বা বাঁকা অক্ষরে । যেমন ভরের জন্য m , বেগের জন্য v ইত্যাদি ।

6. এককের সংকেত ছােট হাতের অক্ষরে লেখা হয় যেমন cm , s , mol ইত্যাদি । তবে , যেগুলাে কোনাে বিজ্ঞানীর নাম থেকে নেওয়া হয়েছে সেখানে বড় হাতের অক্ষর ( নিউটনের নাম অনুসারে N ) হবে । একাধিক অক্ষর হলে শুধু প্রথমটি বড় হাতের অক্ষর হবে ( প্যাস্কেলের নামানুসারে গৃহীত একক Pa )

7. এককের উপসর্গ ( k , G , M ) এককের ( m , W , Hz ) সাথে কোনাে ফাঁক ছাড়া যুক্ত হবে যেমন km , GW , MHz .

৪. কিলাে ( 103 ) থেকে সব বড় উপসর্গ বড় হাতে হবে ( M , G , T ) ।

9. এককের সংকেতগুলাে কখনাে বহুবচন হবে না ( 25 kgs নয় সব সময় 25 kg )

10. কোনাে সংখ্যা বা যৌগিক একক এক লাইনে লেখার চেষ্টা করতে হবে । খুব প্রয়ােজন হলে সংখ্যা এবং এককের মাঝখানে line break দেওয়া যেতে পারে ।

আরো পড়ুন ;- প্রচুরক কাকে বলে? প্রচুরক নির্ণয়ের সূত্র

Leave a Comment