কবুতর থেকে শুরু করে মোবাইল ফোন । অতঃপর-ম্যাসেঞ্জার,হোয়াটসঅ্যাপ,টেলেগ্রাম আরো কতো কি! প্রযুক্তির কল্যানে চিঠি লেখার যুগ উবে গিয়েছে বহুদিন আগেই৷ তাই এই প্রজন্ম জানে না চিঠির খাম লেখার নিয়ম ৷
অবশ্য বর্তমানে দাপ্তরিক কাজে টুকটাক চিঠির ব্যবহার রয়েছে বটে৷ বর্তমানে ছেলে-মেয়েরা চিঠি লেখে নোটবুকে,পরীক্ষার খাতায়৷
চলুন,জেনে নেওয়া যাক চিঠির খাম লেখার সঠিক নিয়ম!
চিঠির খাম লেখার নিয়ম –
চিঠির খামে প্রধানত দুটি অংশ থাকে৷ একটি প্রেরক এবং অপরটি প্রাপক।
প্রেরকঃ যে চিঠি পাঠাচ্ছে৷ বা যাকে ইংরেজিতে বলা হয় সেন্ডার। চিঠির খামে প্রেরকের ঠিকানা লিখতে হয় হাতের বা পাশে।
প্রাপকঃ চিঠির প্রাপকের অংশ থাকে হাতের ডান পাশে৷ চিঠির প্রাপক সেই, যে চিঠি গ্রহণ করবে৷
প্রাপকের ঠিক উপরের দিকে কোণায় থাকবে ডাক-টিকিট।
ডাকটিকিটঃ অনেক মানুষের কাছে ডাকটিকিট সংগ্রহ করাটাও একটা পেশা। ডাকটিকিট মূলত একটি সিম্বল যেটি দ্বারা বোঝা যায়, আপনি সরকারকে কর প্রদান করেছেন৷ চিঠির বিপরীতে সরকার কতৃক একটি কর ধার্য করা হয়।
চিঠির খামের ডিজাইন-
চিঠির খামটি একটি আয়াতাকার খাম৷ বাংলদেশে চিঠির খামগুলি খাকি রঙের হয়ে থাকে৷
এর উপরে একটি বাক্স আকা থাকে (নাও থাকতে পারে)।চিঠির খামে খুব একটা আহামরি কোনো ডিজাইন থাকে না। খুবই বেসিক একটি ডিজাইন বলা চলে৷
বাংলায় ঠিকানা লেখার নিয়ম -(চিঠির খাম লেখার নিয়ম)
প্রেরক অংশঃ
- প্রথমে লিখতে হবে প্রেরকের নাম৷
- অত:পর প্রেরকের প্রযোজক৷ প্রশ্ন আসতে পারে প্রযোজক কি? প্রযোজক হলো,সরকারী কাগজ কলমে প্রেরকের বাসস্থলের মালিক বা প্রেরকের পূর্বসূরী।
- এরপর লিখতে হবে ঠিকানা৷
যদি প্রেরক গ্রামের বাসিন্দা হয়ে থাকেন,তাহলে প্রথমে গ্রাম,অত:পর উপজেলা, তারপর জেলা, এবং সব শেষে পোস্ট কোড – এই ফরম্যাটটি অনুসরণ করতে হবে।
যদি প্রেরক শহরের বাসিন্দা হয়ে থাকেন,তাহলে প্রথমত বাসার হোল্ডিং নম্বর,এরপর রোড নম্বর/স্ট্রিট নম্বর এবং অত:পর এলাকার নাম, সবশেষে শহরের নাম লিখে পোস্ট কোড লিখতে হবে।
প্রাপক অংশঃ
- প্রাপকের নাম
- প্রাপকের প্রযোজক
- প্রাপকের ঠিকানা (প্রেরকের অনুরূপ)
ডাকটিকিট কোথায় পাওয়া যায়?
ডাকটিকিট সংগ্রহ করা একটি শখ। এই শখের কথা আমরা বই-পত্রে পড়েছি৷ কিন্তু শখ,কেনো শখ,কোথায় শখ,কি করে এই শখের ডাকটিকিটগুলো সংগ্রহ করা যায় – তা অনেকেই জানে না৷
মূলত প্রতিটি ডাক ঘরের কিছু না কিছু ডাকটিকিট কিনতে পাওয়া যায়৷ আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগেও আট আনা,চার আনায় পাওয়া যেতো এইসব ডাকটিকিট৷ কিন্তু এখন সেই সকল ডাকটিকিটের দাম প্রায় প্রায় ৫ থেকে ১০ টাকা৷
একেক দামের ডাক-টিকিট একেক কাজের জন্য।
বিদ্যুৎ বিলের সাথে ২৳’র ডাকটিকিট লাগানো থাকে৷ ব্যাংক লোন উত্তলনের ক্ষেত্রে ৫-১০৳’র ডাকটিকিট ব্যবহার করা হয়৷
স্বারক, ফাস্ট ডে কভার এই ধরণের ডাকটিকিটগুলো ঢাকার জিডিওপি সেন্টার থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন৷
এখানে মূলত ডাকটিকিট বিক্রি করার জন্য বিভিন্ন স্টল রয়েছে৷ আপনি সেই স্টলগুলো থেকে ডাকটিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন।
ডাকটিকিট সংগ্রহ শখের কাজ হলেও এই শখ এখন প্রায় উবে গিয়েছে৷
পোস্ট কোড কি? পোস্ট কোড কেনো ব্যবহার করা হয়?
পোস্ট কোড হলো চার সংখ্যার একটি কোড,যার মাধ্যমে কতৃপক্ষ বুঝতে পারে, যে ঠিক কোন ডাক ঘরে চিঠিটি প্রেরণ করতে হবে
এর ফলে যদি আপনি ঠিকানা কিঞ্চিত ভুলও লিখে থাকেন, তবুও আপনার নিকটস্থ ডাক ঘরে চিঠি পৌছে যাবে৷
ইংরেজিতে চিঠির খাম লেখার নিয়মঃ
বাংলা এবং ইংরেজিতে চিঠির খাম লেখার নিয়মের ভেতরে খুব একটা পার্থক্য নেই৷
কেবল ইংরেজিতে প্রেরকের জায়গায় “From” এবং প্রাপকের জায়গায় “To” শব্দটি ব্যবহার করতে হবে।
এবং বাকিসব কিছু ইংরেজিতে লিখতে হবে৷
ইংরেজিতে খুব একটা চিঠি লেখার প্রচলন নেই৷ দাপ্তরিক চিঠিগুলিও বাংলাতেই লেখা হয়ে থাকে৷ তবে দেশের বাইরে যেকোনো চিঠি পাঠাতে হলে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করতে হয়৷
আরো পড়ুনঃ ২০২৩ সালে সরকারী ছুটির তালিকা!
কুরিয়ারে চিঠি পাঠানোর নিয়ম
কুরিয়ারে চিঠি পাঠাতে হলে অবশ্যই আপনাকে নিকটস্থ যেকোনো কুরিয়ার সার্ভিসে যোগাযোগ করতে হবে৷ এবং তাদের সহযোগীতায় আপনি একটি চিঠি নির্দিষ্ট কারো কাছে পৌছাতে পারবেন৷
মজার বিষয় হলো কুরিয়ারে চিঠি পাঠাতে হলে কোনো টিপিক্যাল খাম বা ফরমালটিজের প্রয়োজন পড়ে না।
বিদেশি বন্ধুর কাছে চিঠির খাম
যদিও দিবেশী বন্ধুদের কাছে চিঠি লেখার যুগ এখন আর নেই, তবুও অনেকে শখের বসে চিঠি লিখে থাকে৷ অনেকে আবার র্যান্ডম ঠিকানায় চিঠি পাঠায়৷
বিদেশী বন্ধুদের কাছে চিঠি পাঠানোর সময় আলাদা একটা খামের প্রয়োজন পড়ে৷ এই ধরণের চিঠির খামের উপরে!”AIRMAIL” লেখা থাকে।
পুরো চিঠির খামটি ইংরেজিতে লিখতে হয়৷
সচারচর,বিদেশে চিঠি পাঠানোর ক্ষেত্রে স্টাম্পের দাম হয়ে থাকে ১৫-২০৳।
বিদেশী বন্ধুর কাছে পাঠানোর চিঠির খাম কিছুটা এমন হয়ঃ
চাকরী আবেদনের চিঠি পাঠানোর নিয়ম
যেকোনো চাকরীর পোস্টের আবেদনের জন্য যদি চিঠি পাঠানোর প্রয়োজন পড়ে তবে তার খাম কিছুটা এমন হবে।
খামের উপরে অবশ্যই পদের নাম ও ঠিক তার নিচে নিচ জেলার নাম উল্লেখ থাকতে হবে। বাকি সব কিছু ঠিকঠাক (সাধারণ চিঠি-পত্রের খামের মতো) থাকবে৷
ফেরত চিঠি কি? অথবা ফিরতি চিঠি কি?
কোনো আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপনার কাছে যে চিঠি আসবে সে চিঠিকে বলা হয় ফেরত চিঠি বা ফিরতি চিঠি৷
ফিরতি চিঠি হলো সেই চিঠি,যেখানে কেবল প্রাপকের নাম (অর্থাৎ আপনার নাম),ঠিকানা উল্লেখ থাকবে৷
ফেরত চিঠিতে প্রেরকের জায়গাটি ফাকা থাকে৷ ফেরত চিঠি মূলত কোনো প্রতিষ্ঠান কতৃক প্রেরিত চিঠি৷
চিঠি লেখা অনেক মজার, এবং আনন্দের একটি বিষয়৷ এই আনন্দ কেবল নব্বই দশক বা তার আগের সময়কার মানুষ উপভোগ করেছে৷ যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নতির বদৌলতে যদিও এখন, আর চিঠি-পত্র লেখার প্রচলন নেই! কেননা মানুষ এখন কৃত্তিমতায় ডুবে অবগাহন করতে ব্যস্ত!
সূচীপত্র