ক্রিকেট খেলার নিয়ম | ক্রিকেট খেলার নতুন নিয়ম

ক্রিকেট খেলার নিয়ম ;- বাংলাদেশের গ্রাম বাংলাসহ শহরের অলিগলি সব জায়গাতেই অত্যন্ত জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে ক্রিকেট। প্রায় সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে এই খেলা বিপুল জনপ্রিয়। গ্রাম বাংলার ধানক্ষেত কিংবা শহরের অলি গলি সব জায়গাতেই এই খেলা হয়ে থাকে। আজকের আলোচনায় আমরা জানবো এই জনপ্রিয় ক্রিকেট খেলার নিয়মকানুন ও আদ্যোপান্ত।

ক্রিকেটের খেলার প্রকারভেদ

খেলার ধরণ এর উপর ভিত্তি করে তিন ধরনের ক্রিকেট খেলা প্রচলিত আছে। টেস্ট ক্রিকেট, ওয়ানডে ক্রিকেট এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ম্যাচ।  

টেস্ট ম্যাচ

এই খেলা ৫ দিনব্যাপী হয়। খেলার ফলাফল জয়, পরাজয় এবং ড্র হতে পারে। টেস্ট খেলা ক্রিকেটের সবচেয়ে প্রাচীন সংস্করণ। বর্তমানে দিবা-রাত্রির টেস্ট ম্যাচ প্রচলিত আছে।

ওয়ানডে ক্রিকেট ম্যাচ

ওয়ানডে ক্রিকেট ম্যাচ: ওয়ানডে খেলা হয় একদিনে। ৫০ ওভারের ম্যাচ হয়। ৬ টি বৈধ বলে এক ওভার ধরা হয়৷

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ম্যাচ

একদিনেই অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সাধারণত দিবা রাত্রির ম্যাচ হয়। ২০ ওভারের খেলা। দুই দলের স্কোর সমান হলে সুপার ওভারে খেলার নিষ্পত্তি হয়। ক্রিকেটের সবচেয়ে নবীনতম সংস্করণ। ২০০৭ সালে এটি চালু হয়। 

বর্তমানে টি-টেন, যা দশ ওভারের খেলা এবং হান্ড্রেড বল ক্রিকেট যা একশ বলের হয়ে থাকে। এমন সংস্করণও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

ক্রিকেট খেলার প্রয়োজনীয় উপকরণ

ক্রিকেট খেলতে বেশ কিছু উপকরণ লাগে। এগুলো হলো: বল, ব্যাট, স্ট্যাম্প ,প্যাড , হেলমেট, গার্ড ইত্যাদি।

বল

ক্রিকেট বলের ওজন কখনােই ১৬৩ গ্রামের বেশি ও ১৫৫.৯ গ্রামের কম হয় না। বলের পরিধি ২২.৪ সেমি থেকে ২২.৯ সেমির মধ্যে হয়। মহিলাদের ক্ষেত্রে বলের ওজন ১৪০ গ্রাম থেকে ১৫১ গ্রাম ও পরিধি ২১.০ সেমি থেকে ২২.৫ সেমি হয়।

ব্যাট

ক্রিকেট ব্যাট ৯৬.৫ সেমি (৩৮ইঞ্চি) লম্বা ও ১০.৮ সেমি (৪ ইঞ্চি) চওড়া হয় এবং তা কাঠের নির্মিত হয়। ব্যাটের ওজনের কোনাে সীমাবদ্ধতা নেই।

স্ট্যাম্প

দুই প্রান্তে ৩টি করে ৬ টি স্ট্যাম্প থাকে। উইকেট বিপরীত মুখে ২০.১২ মিটার দূরে পিচের দুই প্রান্তে লাগান থাকে। প্রতি সেট উইকেট ২২.৮৬ সেমি চওড়া হয় এবং তা তিনটি কাঠের স্ট্যাম্প দ্বারা গঠিত হয়। প্রতিটি স্ট্যাম্প বা উইকেট মাটি থেকে ৭১.১ সেমি (২৮ ইঞ্চি) উচ্চতাবিশিষ্ট হয়। তিনটি উইকেটের মাঝে দুটি বেল ওপর দিকে সংযুক্ত থাকে। প্রতিটি বেল ১১.১ সেমি লম্বা হয়।

ক্রিকেট খেলার নিয়ম

১৭৭৫ সালে ইংল্যান্ডের মেলবাের্ন শহরে ক্রিকেট ক্লাব (MCC) গঠিত হয়। ১৮৭৭ সালে মেলবাের্ন-এর মাঠে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে প্রথম একটি টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। পরে ১৯০৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দপ্তর (ICC) গঠিত হয়।

এর সদর দপ্তর দুবাই। ১৯২৭ সালে দিল্লিতে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বাের্ডের উৎপত্তি হয়। ক্রিকেটের যাবতীয় সব নিয়মকানুনে MCC নিয়ন্ত্রণ করে।

ক্রিকেটের কিছু নিয়মকানুন হলো:

১. ক্রিকেট খেলা হয় পিচে৷ এই পিচ ২০.১২ মিটার (২২ গজ) লম্বা এবং ৩.০৫ মিটার চওড়া হয়। এই পিচের ঠিক মাঝখান থেকে ৬৫ গজ থেকে ৭৫ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত টানা হয়। এটিই হল ক্রিকেট মাঠ। পিচের ২০.১২ মিটার ব্যবধানে দপ্রান্তে ওটি করে উইকেট পোঁতা থাকে।

বোলিং ক্রিজ ২.৬৪ মিটার (৪ ফুট ৪ ইঞ্চি) লম্বা হয়। বালিং ক্রিজ থেকে ১.২২ মিটার দূরে এবং বোলিং ক্রিজের সমান্তরাল বরাবর ৩.৬৬ মিটার দাগ টানা থাকে যাকে পপিং ক্রিজ বলে। পপিং ক্রিজের মাঝখানে তিনটি করে দুদিকে ৬ টি স্ট্যাম্প লাগানাে থাকে।

পপিং ক্রিজ থেকে ২.৪৪ মিটার পিচের ভিতরের দিকে অর্থাৎ বােলিং ব্রিজ থেকে ১.২২ মিটার দূরের অংশকে রিটার্ন ক্রিজ বলে। রিটার্ন বক্লিজ ২.৬৪ মিটার লম্বা ও ১.২২ মিটার চওড়া হয়।

২. ক্রিকেট খেলায় প্রতি দলে ১১ জন করে খেলােয়াড় থাকে, যার মধ্যে একজন দলনায়ক ও একজন উইকেটরক্ষক থাকে। চোট বা অসুস্থতা কারণে কোন খেলােয়াড় খেলতে অসমর্থ হলে তার বদলে অতিরিক্ত খেলােয়াড় মাঠে নামানাে যেতে পারে, তবে সে শুধুই ফিল্ডিং করতে পারবে।

অসুস্থতা বা আঘাতজনিত কারণে কোনো ব্যাটস্ম্যান দৌড়াতে অসমর্থ হলে একজন রানার ব্যবহার করা যেতে পারে।

৩. আম্পায়ারের উচ্চারিত শব্দ ‘প্লে’র মাধ্যমে খেলা শুরু হয় ও প্রত্যেক বিরতিকালে ‘টাইম’ শব্দ উচ্চারিত হবে। খেলার শেষ ঘণ্টায় কমপক্ষে ২০ ওভার বোলিং করতে হবে। প্রয়োজনে অতিরিক্ত আরও ২০ ওভার খেলার মাধ্যমে বর্ধিত করা যেতে পারে।

৪. নাে বলের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত আডট হতে পারে যথা হিট দ্য বল টোয়াইস’, ‘রান আউট হ্যান্ডলড দ্য বল এবং অবস্ট্রাক দ্য ফিল্ড’।

৫. ফিল্ডিং দলের ব্যবহৃত মাঠে অবাস্থত হেলমেট বা কোনাে বস্তুতে বল লাগলে ব্যাটিং দলকে ৫ রান অতিরিক্ত দেওয়া হয়।

৬. যদি কোনাে ব্যাটসম্যান ইচ্ছাকৃতভাবে ফান্ডিং দলের খেলােয়াড়কে বল ধরার সময় বাধাদান করে, তবে তাকে অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড হিসেবে আউট ঘােষণা করা হয়।

৭. ক্রিকেট খেলায় একজন করে অ্যাম্পায়ার, লেগ আম্পায়ার, থার্ড আম্পায়ার, স্কোরার, একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট স্কোরার ও একজন ম্যাচ রেফারি থাকেন।

৮. খেলায় দুইজন আম্পায়ার থাকেন। তারা খেলায় নিয়ম-কানুন প্রয়োগ করা, অন্যান্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে স্কোরারের মনোযোগ আকর্ষণ করেন থাকেন।

কোন কারণে আইনের বাস্তবায়ন সম্ভব না হলে উচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটে মাঠের বাইরে অবস্থানরত ও মাঠের আম্পায়ারকে সহযোগিতার নিয়োজিত তৃতীয় আম্পায়ার কর্তৃক সিদ্ধান্ত চূড়ান্তরূপে গ্রহণ করা হয়।

৯. দুইজন স্কোরার থাকে। তারা আম্পায়ারদ্বয়ের কাছ থেকে প্রদত্ত সঙ্কেত গ্রহণপূর্বক স্কোরকার্ডে অন্তর্ভুক্ত করেন।

১০. বৃষ্টি কিংবা শিশিরস্নাত অবস্থা থেকে রক্ষা পাবার উদ্দেশ্যে গ্রাউন্ডসম্যান কর্তৃক ঢাকতে হবে। পূর্বেই উভয় অধিনায়কদের সম্মতিতে পীচের ঢাকা হবে। পীচের কোন জায়গায় বল পড়লে মারাত্মক ক্ষতিসাধিত হবে, বোলারের রান আপে সমস্যা হবে কি না তা সাধ্যমতো নজর রাখতে হবে।

১১. উভয় দল এক বা দুই ইনিংসে খেলায় সম্মতি প্রদান করবে ও সময় অথবা ওভার সংখ্যা দিয়ে ইনিংস নির্ধারিত হবে। খেলা শুরুর চুক্তির তুলনায় প্রতিযোগিতার নিয়মাবলীই এখানে প্রাধান্য পাবে। দুই ইনিংসের খেলায় উভয় দল ধারাবাহিকভাবে ব্যাটিং করবে, নাহলে ফলো-অনের প্রয়োগ ঘটবে।

সব ব্যাটসম্যান আউট হলে, খেলতে অনিচ্ছা প্রকাশ করলে, অধিনায়ক কর্তৃক ইনিংস ঘোষণা করলে, নির্ধারিত সময় বা ওভার সংখ্যায় পৌঁছলে ইনিংসের সমাপ্তি হবে। অধিনায়ক মুদ্রা নিক্ষেপের মাধ্যমে ব্যাট কিংবা বল করার কথা ঘোষণা করবেন।

১২. দুই ইনিংসের খেলায় যদি দ্বিতীয় পর্যায়ে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম পর্যায়ে ব্যাটিংকারী দলের তুলনায় কম রান সংগ্রহ করে তাহলে প্রথম ব্যাটিংকারী দল জোরপূর্বক প্রতিপক্ষকে পুনরায় ব্যাটিং করতে নির্দেশ করবে।

সেক্ষেত্রে প্রথম দল পুনরায় ব্যাট করার ঝুঁকি গ্রহণ করে না ও দলের জয়ের সম্ভাবনা ব্যাপক থাকে। পাঁচ বা ততোধিক দিনের খেলার জন্য কমপক্ষে ২০০, তিন বা চারদিনের খেলার জন্য ১৫০, দুইদিনের জন্য ১০০ ও একদিনের জন্য ৭৫ রানের পার্থক্য থাকার নিয়ম। শুরুর পর থেকে খেলার সময়সীমা পূর্ব-নির্ধারিত করা হয়।

১৩. ব্যাটিং দলের অধিনায়ক যে-কোন সময় দলের ইনিংসের সমাপ্তি ঘোষণা করতে পারবেন। এছাড়াও তিনি তার নিজের ইনিংস শুরুর আগেও ইনিংস ঘোষণার অধিকার থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখতে পারেন।

১৪. প্রত্যেক দিনের খেলার মাঝে, ইনিংসের মাঝে ১০ মিনিট, মধ্যাহ্নভোজন, চাবিরতি ও জলপানের বিরতি থাকবে। খেলা শুরুর পূর্বে সময়সীমা ও বিরতির দৈর্ঘ্য উল্লেখ করতে হবে।

এছাড়াও কিছুক্ষেত্রে সাময়িক বিরতি এবং বিরতির দৈর্ঘ্য কিছু অবস্থার উপর নির্ভরশীল। কোন কারণে নবম উইকেটের পতন ঘটলে চাবিরতিকাল পরের ৩০ মিনিট পর্যন্ত দেরি হতে পারে।

১৫. খেলা চলাকালীন ব্যাটিং কিংবা বোলিং অনুশীলন করা যাবে না। তবে খেলা শুরুর পূর্বদিন এবং খেলা শেষ হবার পরদিন অনুশীলন করা যাবে। আম্পায়ার যদি মনে করেন যে, খেলার সময় নষ্ট হচ্ছে না তাহলে একজন বোলার প্রস্তুতিসূচক ‘রান-আপে’ অংশ নিতে পারবেন।

১৬. দুইজন ব্যাটসম্যান পিচের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত অতিক্রম করলে রান সংগৃহীত হবে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত রানের পাশাপাশি দলীয় রান স্ফীত হবে। এক বল থেকে বেশ কয়েকটি রান সংগৃহীত হতে পারে।

১৭. ক্রিকেট মাঠের চতুর্দিকে গোলাকৃতি অবস্থায় বাউন্ডারি নির্দেশ করা থাকে। কোন কারণে বল ঐ সীমারেখায় স্পর্শ করে কিংবা অতিক্রম করে তাহলে চার রান সংগৃহীত হবে।

আবার, বল যদি মাঠে স্পর্শ না করে সীমারেখার উপর দিয়ে মাঠের বাইরে যায়, তাহলে ছয় বা ছক্কা হবে।

১৮. খেলা চলাকালীন সময়ে বল হারিয়ে গেলে বা বল উদ্ধার করা না গেলে ফিল্ডিংয়ে অংশগ্রহণকারী দল লস্ট বল হয়েছে বলে জানাবেন। নো-বল ও ওয়াইডের ন্যায় ব্যাটিংকারী দল অতিরিক্ত রান দাবী করতে পারবেন। এ রান সংখ্যা ছয়ের অধিক হবে এবং এর সাথে প্রকৃত রানও যুক্ত হবে।

১৯. খেলায় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী দল বিজয়ীরূপে ঘোষিত হবে। কোন কারণে উভয় দলের রান সংখ্যা সমান হলে খেলাটি টাই বলে গণ্য হবে। এছাড়াও, উভয় দলের ইনিংস শেষ হবার পূর্বে সময় শেষ হয়ে গেলে খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হবে।

২০. ছয়টি বল ছোড়া হলে একটি ওভার হিসেবে বিবেচিত হবে। তন্মধ্যে ওয়াইড ও নো-বল যুক্ত হবে না। ধারাবাহিকভাবে ওভার করার জন্য পিচের অন্যপ্রান্তও ব্যবহৃত হবে। তবে, একজন বোলার উপর্যুপরী দুই ওভার বোলিং করার অধিকারী হবেন না।

২১. খেলা চলাকালীন বোলার রান আপরত অবস্থায় বলের উপর নিয়ন্ত্রণ হারালে বলটি ডেড বলে রূপান্তরিত হবে। একবার বল ডেড হিসেবে গণ্য হলে কোন রান হবে না এবং কোন ব্যাটসম্যান আউট হবেন না। ৎ

অনেকগুলো কারণে বল ডেড হতে পারে। সচরাচর ব্যাটসম্যান আউট হলে, বাউন্ডারি হলে কিংবা বোলার বা উইকেট-রক্ষকের কাছে বল এলে বল ডেড হবে।

২২. কোন কারণে বোলার ভুল জায়গায় বোলিং করলে, বল ডেলিভারির সময় তার কনুই সোজা না রাখলে, বিপজ্জ্বনকভাবে বোলিং করলে, বল দুইবার বাউন্স বা ব্যাটসম্যানের কাছে গড়িয়ে গেলে, ফিল্ডার অবৈধস্থানে অবস্থান নিলে বলটি নো-বল হিসেবে গণ্য হবে।

নো-বলের কারণে ব্যাটিং দল অতিরিক্ত রান পাবে। এছাড়াও দৌঁড়ে রান নিলে তা-ও যুক্ত হবে। নো-বলে ব্যাটসম্যান আউট হবেন না। তবে রান-আউটের শিকার হতে পারেন অথবা বল হাতে ধরলে, বলকে দুইবার আঘাত করলে বা ফিল্ডিংয়ে বাঁধা দিলে ব্যাটসম্যান আউট হবেন।

২৩. আম্পায়ার যদি মনে করেন যে, নিক্ষিপ্ত বলটি স্ট্রাইকিং প্রান্তে অবস্থানরত ব্যাটসম্যানের নাগালের বাইরে ও বেশ দূর দিয়ে অতিক্রম করার ফলে তিনি ব্যাট স্পর্শ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, তাহলে তিনি বোলার কর্তৃক ছোড়া বলটিকে ওয়াইড হিসেবে আখ্যায়িত করবেন।

এছাড়াও বল বাউন্সারে রূপান্তরিত হয়ে ব্যাটসম্যানের মাথার অনেক উপর দিয়ে গেলেও ওয়াইড হবে। ওয়াইড থেকে অতিরিক্ত এক রান যুক্ত হবে।

২৪. বল যদি নো-বল বা ওয়াইড না হয়ে ব্যাটসম্যানের পাশ দিয়ে চলে যায় ও রান সংগ্রহ করা হয় তাহলে তা বাই হিসেবে ধরা হবে। নো-বল না হয়েও যদি বল ব্যাট স্পর্শ না করে ব্যাটসম্যানকে স্পর্শ করে রান সংগ্রহ করলে তা লেগ বাই হবে।

কিন্তু ব্যাটসম্যান যদি বল মারার চেষ্টা না চালনা বা বল থেকে নিজেকে দূরে রাখেন, তাহলে তা লেগ বাই হবে না। বাই ও লেগ বাই ব্যাটসম্যানের ব্যক্তিগত রান নয় বরং দলীয় রান।

ক্রিকেটের মজার এবং ব্যতিক্রম কিছু নিয়ম

ক্রিকেটে এমনও কিছু নিয়ম রয়েছে যা রীতিমতো অদ্ভুত। চলুন দেখে নেওয়া যাক ক্রিকেটের তেমনই কিছু নিয়ম।

খেলার মাঝে যদি বল হারিয়ে যায়, তবে যে দল ফিল্ডিং করছে তারা ‘লস্ট বল’ এর আবেদন করতে পারে। আইনানুসারে তখনই বল পাল্টে খেলা শুরু হবে। ব্যাটিং সাইড দাবি করলে এই লস্ট বলের জন্য পেনাল্টি রান দাবি করতে পারবে। ছয় রান পর্যন্ত ব্যাটিং দল পেতে পারে।

আম্পায়ার যদি বোঝেন যে ব্যাটসম্যান আউট হয়ে গিয়েছেন, সে ক্ষেত্রেও তিনি তাকে আউট ঘোষণা করতে পারবেন না, যতক্ষণ না ফিল্ডিং সাইড আউটের আবেদন করেন। এমনকী ব্যাটসম্যান নিজে চাইলেও বেরিয়ে যেতে পারবেন না ফিল্ডিং সাইড আবেদন না করলে।

ক্রিকেটের এক বিচিত্র নিয়ম হল মানকারেড। ১৯৪৭ সালে ভারতের বিনু মাঁকড় অস্ট্রেলিয়ার বিল ব্রাউনকে এই পদ্ধতিতে প্রথম আউট করেন বলে এই অদ্ভুত নাম। এই নিয়মে বোলিং রান আপ শেষে বোলার যদি দেখেন নন স্ট্রাইকার ক্রিজের বাইরে আছেন, তখন তিনি নন স্ট্রাইকারের বেল ভেঙে আউট করতে পারেন। বোলার সফল না হলে বলটিকে ডেড বল ঘোষণা করা হবে।

কোনও ক্রিকেটার আহত হলে তার জায়গায় পরিবর্তিত ক্রিকেটার আনতে হলে প্রতি ক্ষেত্রে আম্পায়ারকে জানাতেই হবে। কোনও বার যদি না জানানো হয়, তা হলে ব্যাটিং সাইড পাঁচ রান পেনাল্টি হিসাবে পাবে।

কোনও বোলার বা ব্যাটসম্যান যতক্ষণ মাঠের বাইরে থাকবেন, মাঠে ফেরার পর ততক্ষণই বোলিং বা ব্যাটিং করতে পারবেন না। এমনই এক ঘটনায় ইনিংসের শেষে দিকে ১৮ মিনিট মাঠে না থাকায় দু’টি উইকেট পড়ে গেলেও শচীন ব্যাট করতে নামতে পারেননি।

টেস্টে একটি নিয়ম রয়েছে যার নাম ফরফেচার। দুই দলের অধিনায়ক সম্মত হলে একটি করে ইনিংস পুরো ডিক্লেয়ার করতে পারে। ২০০০ সালে টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকা ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম দিনে করে ৬ উইকেটে ১৫৫। তিনদিন বৃষ্টি হয়। প্রথম ইনিংসে ২৪৮ রানের পর হ্যান্সি ক্রোনিয়ে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক নাসির হুসেনকে ফরফেচারে আবেদন করেন।

ক্রিকেটে আউট হবার পদ্ধতি

ক্রিকেটে আউট হবার পদ্ধতি গুলো হলো:

বোল্ড আউট: বোলার কর্তৃক নিক্ষেপিত বল উইকেটে স্পর্শ করলে ব্যাটসম্যান আউট হবেন। বলটি ব্যাট, গ্লাভ অথবা ব্যাটসম্যানের শরীরের কোন অংশ স্পর্শ করেছে কি-না তা মূখ্য নয়। তবে, অন্য কোন খেলোয়াড় বা আম্পায়ারের সাহায্যে এটি ঘটে না।

টাইমড আউট: ডিসমিসের শিকার ব্যাটসম্যানের পরিবর্তে নতুন ব্যাটসম্যানকে ৩ মিনিটের মধ্যে বল মোকাবেলা বা অন্য প্রান্তের অবস্থানকারী ব্যাটসম্যানের সঙ্গী হিসেবে ক্রিজে প্রস্তুত থাকতে হবে। অন্যথায় নতুন ব্যাটসম্যান টাইমড আউট হবেন।

কট: নিক্ষেপিত বল ব্যাট বা ব্যাট স্পর্শরত হাতে লেগে প্রতিপক্ষের ফিল্ডারের কাছে ভূমি স্পর্শ না করে মুষ্টিবদ্ধ হলে তিনি কট হবেন।

হ্যান্ডেলড দ্য বল: প্রতিপক্ষের সম্মতি ছাড়াই ও বল ব্যাটে স্পর্শ করার পূর্বেই কোন ব্যাটসম্যান বল হাতে ধরলে তিনি আউট হবেন।

হিট দ্য বল টুয়াইস: ব্যাটসম্যান নিজ উইকেট পতন রক্ষার্থে অথবা প্রতিপক্ষের সম্মতি ছাড়াই দুইবার বলকে আঘাত করলে তিনি এই আইনে আউট হবেন।

হিট উইকেট: বোলার কর্তৃক বল নিক্ষেপকালে ব্যাটসম্যান ঐ বল মোকাবেলা করার সময় যদি তার ব্যাট বা নিজ শরীর উইকেটে স্পর্শ করেন তাহলে তিনি এ ধরনের আউট হবেন।

লেগ বিফোর উইকেট (এলবিডব্লিউ): ব্যাট স্পর্শের পূর্বেই যদি ব্যাটসম্যানের শরীরে বল আঘাত হানে এবং উইকেটে বলটি লাগার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে বোলারের আবেদনক্রমে আম্পায়ার এলবিডব্লিউ সিদ্ধান্ত প্রয়োগ করবেন। তবে, বল যদি লেগ সাইড দিয়ে যায় ও অফ স্ট্যাম্পের দিকে খেলার চেষ্টা চালান, তাহলে ব্যাটসম্যান অপরাজিত থাকবেন।

অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড: খেলা চলমান অবস্থায় যদি ব্যাটসম্যান ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতিপক্ষের ফিল্ডারকে কথায় বা কাজে বাঁধা প্রদান করেন, তাহলে তিনি আউট হবেন।

রান আউট: বল চলাকালীন ব্যাটসম্যানের ব্যাট বা তিনি স্বয়ং পপিং ক্রিজে অবস্থান না করেন ও প্রতিপক্ষের ফিল্ডার উইকেটে বল লাগালে তিনি আউট হবেন।

স্ট্যাম্পড: ব্যাটসম্যান রান করার চেষ্টা না করে ক্রিজের বাইরে চলে যান, তাহলে উইকেট-কিপার বল নিয়ে উইকেটে আঘাত হানলে তিনি স্ট্যাম্পড হবেন।

Leave a Comment