আলোক রশ্মি পদার্থবিজ্ঞানের জগতে গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়।আলোকে ব্যবহার যোগ্য মাত্রায় নিয়ে আসতে বিভিন্ন যন্ত্র কৌশলের ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
লেন্স এ ধরনের ই একটি যন্ত্র।আজ এই আর্টিকেলে আলোচনা করবো লেন্সের সম্পর্কে সাধারণ বিষয় সমূহ।প্রথমেই লেন্সের সঙ্গায়নের দিকে যাওয়া যাক।
লেন্স কাকে বলে?
লেন্স বা lens হচ্ছে এক ধরণের স্বচ্ছ মাধ্যম যার মধ্য দিয়ে আলোর প্রতিসরণ ঘটে। যদি কোন সমসত্ব, স্বচ্ছ প্রতিসারক মাধ্যম, দুটি গোলীয় তল কিংবা একটি সমতল একটি গোলীয় তলের দ্বারা ঘেরা থাকে, তবে সেই মাধ্যমকে লেন্স বলে।
আরো পড়ুন ;- প্রতীক কাকে বলে? প্রতীক কত প্রকার ও কী কী?
লেন্সের বৈশিষ্ট্য
লেন্সের কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে।সেসব সম্পর্কে জানা থাকলে,আমাদের লেন্স নিয়ে ধারণা আরো পরিষ্কার হবে।নিম্নে লেন্সের মৌলিক বৈশিষ্ট্য সমূহ তুলে ধরা হলোঃ
- লেন্স আলোকবিদ্যায় কাচের টুকরো বা অন্যান্য স্বচ্ছ পদার্থ যা বস্তু থেকে আলোর রশ্মি ফোকাস করে একটি বস্তুর চিত্র তৈরি করতে ব্যবহৃত হয় ।
- একটি লেন্স হল স্বচ্ছ উপাদানের একটি টুকরো, সাধারণত বৃত্তাকার আকৃতিতে দুটি পালিশ করা পৃষ্ঠ থাকে, যার একটি বা উভয়ই বাঁকা হয় এবং হয় উত্তল বা অবতল হতে পারে। বক্ররেখা প্রায় সবসময় গোলাকার হয় অর্থাৎ, বক্রতার ব্যাসার্ধ ধ্রুবক।
- একটি সাধারণ লেন্স হল একটি মৌলিক ডিভাইস যা আলো প্রতিসরণ করতে একটি একক লেন্স (single Lens) ব্যবহার করে। পকেট ম্যাগনিফায়ার, চশমা, প্রজেকশন কনডেনসার, কন্টাক্ট লেন্স, ভিউফাইন্ডার, সিগন্যাল লাইট, এবং সাধারণ বক্স ক্যামেরায় single Lens ব্যবহার করা হয়।
- প্রায়শই বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি অনেকগুলি লেন্সকে একটি টিউবের মধ্যে যৌগিক লেন্স হিসাবে একত্রিত করা হয় যাতে বিকৃতিগুলি সংশোধন করা যায় । যৌগিক লেন্সের একটি উদাহরণ হল একটি যৌগিক মাইক্রোস্কোপ, যা একটি বস্তুকে বড় করার জন্য দর্শকের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য একাধিক লেন্স ব্যবহার করে। যৌগিক লেন্সগুলি ক্যামেরা, মাইক্রোস্কোপ এবং টেলিস্কোপের মতো যন্ত্রগুলিতে ব্যবহৃত হয়।
লেন্স কত প্রকার ও কি কি?
লেন্সে উপযোগী দুটি পৃষ্টের প্রকৃতির ওপরে নির্ভর করে লেন্সকে দুটিভাগে ভাগ করা হয়
- উত্তল বা অভিসারী লেন্স (convex lens)
- অবতল বা অপসারী লেন্স(concave lens)
উত্তল লেন্স কাকে বলে?
একটি উত্তল লেন্স হল একটি বাহ্যিক বক্ররেখা সহ একটি লেন্স। অবতল লেন্সের বিপরীতে, উত্তল লেন্সের কেন্দ্রে পুরুত্ব লেন্সের প্রান্তের পুরুত্বের চেয়ে বেশি। উত্তল লেন্স হল কনভারজিং লেন্স।
একটি বিন্দুতে আলোর সমান্তরাল রশ্মিকে একত্রিত করার ক্ষমতা রয়েছে। এই বিন্দুটিকে উত্তল লেন্সের কেন্দ্রবিন্দু বলা হয় এবং অপটিক্যাল সেন্টার থেকে ফোকাল পয়েন্টের দূরত্বকে ফোকাল লেন্থ (Focal length) বলে। ফোকাল পয়েন্টটি লেন্সের বিপরীত দিকে যেখান থেকে আলোক রশ্মি উৎপন্ন হয়।
আরো জানুন ;- প্রচুরক কাকে বলে? প্রচুরক নির্ণয়ের সূত্র
অবতল লেন্স কাকে বলে?
অবতল লেন্স হল এক ধরনের লেন্স যার অন্তত এক পাশ ভেতরের দিকে বাঁকা থাকে। একটি অবতল লেন্স যার উভয় দিক ভিতরের দিকে বাঁকা থাকে তাকে বাইকনকেভ লেন্স বলে। অবতল লেন্সগুলি ডাইভারজিং লেন্স, অর্থাৎ তারা আলোক রশ্মি ছড়িয়ে দেয় যা এর মাধ্যমে প্রতিসৃত হয়েছে। তাদের আলোর সমান্তরাল রশ্মিকে অপসারণ করার ক্ষমতা রয়েছে। অবতল লেন্সের জন্য, প্রান্তগুলি কেন্দ্রের চেয়ে চওড়া বা কেন্দ্র প্রান্তের চেয়ে পাতলা।
একটি অবতল লেন্স দর্শকের জন্য একটি ছোট চিত্র তৈরি করে। অবতল লেন্সের কেন্দ্রবিন্দু হল সেই বিন্দু যেখান থেকে অক্ষের সমান্তরাল আলোক রশ্মি লেন্সের মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। লেন্সের অপটিক্যাল সেন্টার থেকে ফোকাল পয়েন্টের দূরত্বকে লেন্সের ফোকাল লেন্থ বলে।
সম্পর্কিত আর্টিকেল ;- কারক কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?
উত্তল লেন্সের বৈশিষ্ট্য
- এটি আলোক রশ্মি হিসাবে রূপান্তরকারী লেন্স হিসাবে পরিচিত, যখন এই লেন্সের মধ্য দিয়ে যায়, একে অপরের দিকে বাঁকানো থাকে।
- এটি দীর্ঘ দৃষ্টিশক্তি সংশোধনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- ফোকাল দৈর্ঘ্যের প্রকৃতি ইতিবাচক।
অবতল লেন্সের বৈশিষ্ট্য
- লেন্সের বস্তুর পাশে অবস্থিত
- একটি সরল চিত্র
- আকারে ছোট (অর্থাৎ, বস্তুর চেয়ে ছোট)
- অবতল লেন্সে গঠিত চিত্রটি সর্বদা ফোকাল পয়েন্ট এবং অপটিক্যাল কেন্দ্রের মধ্যে থাকে। বস্তুর অবস্থান গঠিত চিত্রের বৈশিষ্ট্যকে প্রভাবিত করে না।
- একটি ভার্চুয়াল ছবি
- এটি আলোক রশ্মি হিসাবে একটি diverging লেন্স হিসাবে পরিচিত, যখন এই লেন্সের মধ্য দিয়ে যায়, একে অপরের থেকে দূরে বাঁকানোর প্রবণতা থাকে।
- এটি কেন্দ্রে পাতলা হতে থাকে এবং এর প্রান্তগুলি তুলনামূলকভাবে মোটা হয়
- এটি অদূরদর্শীতা সংশোধনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- ফোকাল দৈর্ঘ্যের প্রকৃতি নেতিবাচক।
উত্তল লেন্স কত প্রকার ও কি?
১.উভোত্তল লেন্সঃ যে লেন্সের উভয় তলই উত্তল (অর্থাৎ মধ্যভাগ মোটা এবং দুই প্রান্ত শরু) তাকে উভোত্তল লেন্স বলে। ক্যামেরা, দূরবীক্ষণ, অণুবীক্ষণ প্রভৃতি যন্ত্রে উভোত্তল লেন্স ব্যবহার করা হয়।
২.সমোত্তল লেন্সঃলেন্সের একটি তল সমতল এবং অপরটি উত্তল তাকে সমোত্তল লেন্স বলে। এই লেন্সকে দূরবীক্ষণ , অণুবীক্ষণ প্রভৃতি যন্ত্রের অভিনেত্র হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
৩.অবতলোত্তলঃ যে লেন্সের একটি তল অবতল এবং অপরটি উত্তল, তাকে অবতলোত্তল লেন্স বলে। এই লেন্সকে চশমার কাচ হিসেবে ব্যবহার করায় হয়।
উত্তল লেন্সের মতোই অবতল লেন্স ও তিন প্রকারের হয়ে থাকে।নিম্নে অবতল লেন্সের প্রকারভেদ সমূহ তুলে ধরা হলোঃ
অবতল লেন্স কত প্রকার ও কি কি?
১.উভাবতল লেন্সঃ যে লেন্সের দুটি তল ই অবতল দুটি অবতল লেন্সের সমন্বয়ে গঠিত তাকে উভাবতল লেন্স বলে।
২.সমাবতল লেন্সঃ উভাবতল লেন্সের দুই পৃষ্ঠের বক্রতা ব্যাসার্ধ সমান হলে তাকে সমাবতল লেন্স বলে।
৩.উত্তলাবতল লেন্সঃ যে লেন্সের একটি তল উত্তল ও অপর তলটি অবতল তাকে উত্তলাবতল লেন্স বলে।এই লেন্সের উত্তর তাদের বক্রতার ব্যাসার্ধের চেয়ে অবতল দলের বক্রতা ব্যাসার্ধ কম হয়।
নানা আলোকনির্ভর যন্ত্রপারি তৈরিতে বিভিন্ন লেন্স ব্যবহার করা হয়ে থাকে।নিম্নে উত্তল ও অবতল লেন্সের বেশ কিছু ব্যবহারিক গুরুত্ব তুলে ধরা হলোঃ
উত্তল লেন্সের ব্যবহারিক গুরুত্ব
ফটোগ্রাফি ক্যামেরায় উত্তল লেন্স ব্যবহার করে ফিল্মের উপর বস্তুটির আলোকচিত্র গ্রহণ করা হয়। এখানে যে বস্তুর ফটো তুলতে হবে সেই বস্তুটিকে ক্যামেরার লেন্সের ফোকাস দূরত্বের দ্বিগুণ দূরত্ব থেকে দূরে রেখে ফিল্মের উপর বস্তুটির আলোকচিত্র তোলা হয়। ফলে ফিল্মের উপর বস্তুটির সদ, অবশীর্ষ খর্বাকৃতি প্রতিবিম্ব পাওয়া যায়।
ছোট ছোট জিনিস যা খালি চোখে দেখতে অসুবিধা হয় তাদের দেখতে অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই যন্ত্রে ব্যবহৃত উত্তল লেন্সের ফোকাস দূরত্ব থেকে কম দূরত্বে ক্ষুদ্রাকৃতি কোন বস্তু রাখলে বস্তুটির অসদ, সমশীর্ষ এবং বিবর্ধিত প্রতিবিম্ব দেখা যায়। অলংকার তৈরি করতে ছোট ছোট অক্ষরের লেখা পড়তে এবং ঘড়ি মেরামত করতে অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটা উত্তল লেন্সের ব্যবহার।
উত্তল লেন্সকে বসিয়ে ম্যাগনিফাইং গ্লাস বা বিবর্ধক কাচ প্রস্তুত করা হয়। পাশের ছবিতে কাচ শব্দটির উপর একটি বিবর্ধক কাচকে ধরে একটি লেন্সের ভেতর থেকে দেখলে শব্দটিকে বড় দেখাবে। শব্দটি থেকে উত্তল লেন্সের দূরত্ব অবশ্যই লেন্সের ফোকাস দৈর্ঘ্য থেকে কম রাখতে হবে। এই অবস্থায় উত্তল লেন্সটি কাচ (ছবিতে) শব্দটির বিবর্ধক অসদ প্রতিবিম্ব গঠন করে। ফলে প্রতিবিম্বটি বস্তুর চেয়ে আকারে বড় এবং সমশীর্ষ হয়। দৃষ্টি কমে গেলে অথবা ক্ষুদ্রাকৃতি অক্ষরের লিপি পড়তে বিবর্ধক কাচ ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও অণুবীক্ষণ এবং দূরবীক্ষণ যন্ত্রের অভিনেত্র হিসাবে ম্যাগনিফাইং গ্লাসের ব্যবহার করা হয়।
অবতল লেন্সের ব্যবহারিক গুরুত্ব
- চশমায় ব্যবহার করা হয় (ক্ষীনদৃষ্টির ক্ষেত্রে)
- কোন কোন দূরবীক্ষণ যন্ত্রে
- অন্যান্য আলোক যন্ত্রে
- বিভিন্ন পরীক্ষণে
- দাঁত এর চিকিৎসায়
আরো পড়ুন ;- পাদ কয় প্রকার
লেন্সের ক্ষমতা
একগুচ্ছ সমান্তরাল আলোকরশ্মিকে কোন লেন্সের মধ্য দিয়ে অপসারী বা অভিসারী আলোকরশ্মি করছে পরিণত করার ক্ষমতাকে লেন্সের ক্ষমতা বলা হয়।
লেন্সের ক্ষমতার একক
লেন্সের ক্ষমতার একক ডায়াপ্টার।একে D দ্বারা প্রকাশ করা হয়ে থাকে।এক ডায়াপ্টার বলতে বোঝায়,১ মিটার ফোকাস দূরত্ব বিশিষ্ট কোন লেন্সের ক্ষমতা।
সম্পর্কিত আর্টিকেল
- স্ট্যাম্প লেখার নিয়ম ও নমুনা | কত টাকার স্ট্যাম্প কি কাজে ব্যবহার হয়?
- চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম | চুক্তিনামা লেখার নিয়ম
- অঙ্গীকারনামা লেখার নিয়ম ও নমুনা pdf সহ
সর্বশেষ আপডেট
- স্বপ্নে কোরআন তেলাওয়াত করতে দেখা এর ব্যাখ্যা কী?
- কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন আবেদন ফরম সম্পর্কে বিস্তারিত
- স্বপ্নে স্বর্ণ বা সোনা দেখলে কি হয়
- খাদ্যের উপাদান কয়টি | খাদ্যের সহায়ক উপাদান কয়টি
- খাদ্য কাকে বলে? খাদ্য উপাদান কাকে বলে?
সূচীপত্র