আজকে আলোচনা করবো ;- আয়নিক বন্ধন কাকে বলে? আয়নিক বন্ধন কিভাবে গঠিত হয়? এবং আয়নিক বন্ধনের বৈশিষ্ট্য
আয়নিক বন্ধন কাকে বলে?
ধাতু এবং অধাতুর মধ্যেকার বন্ধন কে আয়নিক বন্ধন বলা হয় । সঙ্গার্থে বলতে গেলে, ক্যাটায়ন কর্তৃক ত্যাগকৃত ইলেকট্রন অ্যানায়ন কর্তৃক গ্রহণ করে ক্যাটায়ন এবং অ্যানায়ন এর মধ্যে যে বন্ধন সৃষ্টি হয় তাকেই মূলত বলা হয়ে থাকে আয়নিক বন্ধন।
আয়নিক বন্ধন মূলত ধাতু এবং অধাতুর মধ্যে গঠিত হয়ে থাকে। আয়নিক বন্ধন এর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে ।
আয়নিক বন্ধনের বৈশিষ্ট্য
আমরা চাইলে আয়নিক বন্ধনের সংজ্ঞা থেকেই আয়নিক বন্ধনের বৈশিষ্ট্য গুলো বলে দিতে পারি।
যে বন্ধনে, ইলেকট্রন আদান প্রদানের মাধ্যমে বন্ধন সৃষ্টি হয়, বন্ধনের গলনাঙ্ক এবং স্ফুটনাংক বেশি হয় এবং এরা শক্তিশালী বন্ধনযোগ গঠন করেন সেই বন্ধনকে বলা হয়ে থাকে আয়নিক বন্ধন ।
এবার চলুন আয়নিক বন্ধনের বৈশিষ্ট্য গুলো আরও বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক:
- বন্ধন এর গলনাঙ্ক এবং স্ফুটনাঙ্ক তাপমাত্রা বেশি হয়। অর্থাৎ এরা খুব সহজে তাপ দিলেই গলে যায় না । আবার খুব সহজেই তাপ দিলে ফুটতে শুরু করবে না । এরা অত্যন্ত বেশি তাপমাত্রায় গলতে ও ফুটতে শুরু করে।
- আয়নিক বন্ধন খুবই শক্তিশালী বন্ধন দ্বারা আবদ্ধ । এটির কারণ হলো, সমসংখক ইলেকট্রনের আকর্ষণ ও বিকর্ষণ হওয়ার ফলে এদের অভ্যন্তরের বন্ধন ছিন্ন করা খুব একটা সোজা হয় না । যার ফলে এটিকে বলা হয়ে থাকে “অতি শক্তিশালী আয়নিক বন্ধন”।
- আয়নিক বন্ধন পানি পানিতে দ্রবীভূত হওয়ার সক্ষমতা রাখে । তবে কিছু ব্যতিক্রম ধর্মী আয়নিক বন্ধন রয়েছে, যেগুলো পানিতে খুব সহজে বিগলিত হতে চায় না ।
- আয়নিক বন্ধন খুব সহজেই ইলেকট্রন পরিবহন করতে পারে । কাজেই যদি বলা হয়ে থাকে যে আয়নিক বন্ধন কাকে বলে তবে তার সংজ্ঞাটি হয়তো কিছুটা এভাবে দেওয়া যাবে-
ধাতব বন্ধন ব্যতীত যে সকল বন্ধন বিদ্যুৎ পরিবহন করতে সক্ষম তাদেরকে আয়নিক বন্ধন বলা হয় ।
আয়নীকীকরণ শক্তি কাকে বলে?
১ মোল গ্যাসীয় পরমাণু থেকে এক মোল ইলেকট্রন অপসারণ করে ১ মোল ধনাত্মক আয়নের পরিণত করতে যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হয় তাকে বলা হয় আয়নকীকরণ শক্তি ।
সমযোজী বন্ধন কাকে বলে?
যখন দুইটি অধাতব পরমানু একে অপরের মধ্যে বন্ধন গঠন করে তখন তাকে বলা হয় সমযোজী বন্ধন ।
সমযোজী বন্ধনের আরো বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক!
সমযোজী বন্ধন এর বৈশিষ্ট্য
- দুইটি অধাতব পরমাণুর মধ্যে সমোযোজি বন্ধন গঠিত হয়।
- সমযোজী বন্ধন খুবই দুর্বল ভ্যানডোয়ালস শক্তির মাধ্যমে আবদ্ধ থাকে ।
- সমযোজী বন্ধনের গলনাংক এবং স্ফুটনাঙ্ক আয়নিক বন্ধন এর চেয়ে তুলনামূলক অনেক কম হয় ।
- সমযোজী বন্ধন সাধারণত পানিতে দ্রবীভূত হয় না । তবে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে । যেমন চিনি এবং গ্লুকোজ ।
- সমযোজী বন্ধন বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে না। কেননা সমযোজী বন্ধনে আয়নিক বন্ধন এর মত কোন মুক্ত আয়ন নেই , অথবা ধাতব বন্ধন এর মত কোন মুক্ত ইলেকট্রন নেই ।
- সমযোজী বন্ধন মূলত ইলেকট্রন শেয়ারিং অর্থাৎ ইলেকট্রন ভাগাভাগি করার মাধ্যমে বন্ধন গঠন করে।
- সমযোজী বন্ধনের মাধ্যমে ইলেকট্রন ভাগাভাগি করা হলেও কিছু কিছু সমযোজী বন্ধন রয়েছে যেগুলো পানিতে দ্রবীভূত হয় ।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে পানি একটি সমযোজী যৌগ হওয়ার শর্তেও কেন এটি দ্রাবক হিসেবে কাজ করে?
মূলত পানি একটি সমযোজী যৌগ হলেও পোলার যৌগ। তড়িৎ ঋণাত্মকতার কারণে বন্ধন জোরের দুইটি ইলেকট্রন পানিতে থাকা অক্সিজেনের দিকে একটু বেশি হেলে থাকে ।
যার ফলে অক্সিজেন তুলনামূলক বেশি ঋণাত্মক ধর্ম লাভ করে ।
এবং এরই ফলে পানিতে আংশিক ধনাত্মক ও আংশিক ঋণাত্মক প্রান্তের সৃষ্টি হয়। যার ফলে পানিও অন্য দ্রবণে দ্রবীভূত হওয়ার ক্ষমতা রাখে অথবা অধিকাংশ ক্ষেত্রে দ্রাবক হিসেবে কাজ করে।
ধাতব বন্ধন কাকে বলে?
আমরা ইতিমধ্যে আয়নিক বন্ধন কাকে বলে সে সম্পর্কে জেনেছি৷ আরো জেনেছি, সমযোজী বন্ধন এবং তার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে৷ এবার আমরা জানবো, ধাতব বন্ধন সম্পর্কে৷
ধাতব পরমাণু একে অপরের সাথে মিলে যে বন্ধন গঠন করে তাকে বলা হয় ধাতব বন্ধন । ধাতব বন্ধনের প্রত্যেকটি পরমাণু একটি ধাতব দন্ডে অবস্থান করে।
যেহেতু অধিকাংশ ধাতব পরমানু ব্যাসার্ধের দিক দিয়ে অনেক বড় হয় এবং এর সর্বশেষ কক্ষপথে অবস্থিত ইলেকট্রন গুলি খুব একটা শক্তিশালী বন্ধন দ্বারা আকৃষ্ট হয় না সে কারণে ধাতব বন্ধনে এই সকল ইলেকট্রন গুলো মুক্তভাবে বিচরণ করে । এই ধরনের ইলেকট্রন গুলোকে বলা হয়ে থাকে মুক্তভাবে সঞ্চরণশীল ইলেকট্রন।
এক বা একাধিক ইলেকট্রন ত্যাগ করে প্রত্যেকটি ধাতব পরমাণু ধনাত্মক আধানে পরিণত হয়। তখন এই প্রত্যেকটি ধনাত্মক আধানকে বলা হয়ে থাকে পারমাণবিক শ্বাস ।
অন্য সকল রাসায়নিক বন্ধন এর মত ধাতব বন্ধনের নিজের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে । চলুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক এই সকল বৈশিষ্ট্য। এবং কেন তারা এ সকল বৈশিষ্ট্য প্রাপ্ত হয় সে সম্পর্কেও জেনে নেওয়া যাক ।
ধাতব বন্ধন এর বৈশিষ্ট্য
- ধাতব বন্ধন খুব সহজেই বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে। যেমনটা কি আমরা সকলেই জানি যে ধাতব বন্ধন যে ধাতব দন্ডে অবস্থান করে, সেই ধাতুর দন্ডে মুক্তভাবে সঞ্চরণশীল ইলেকট্রন রয়েছে। এবং মূলত এই সকল ইলেকট্রন এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ পরিবাহিত হয়ে থাকে ।
সচরাচর, বিশ্বব্যাপী বিদ্যুৎ পরিবহনের কাজে ধাতব বন্ধনে নির্মিত কপারের তার ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।
- ধাতব বন্ধন খুব সহজেই তাপ পরিবহন করতে পারে । এবং এর পেছনেও দায়ী মুক্তভাবে সঞ্চালনশীল ইলেকট্রন। সে কারণেই আমরা লোহার কয়ড়া অথবা লোহার চামচ গরম হতে দেখি।
- ধাতব বন্ধন এর গলনাংক এবং স্ফুটনাঙ্ক উচ্চমাত্রা সম্পন্ন। এগুলোকে খুব সহজে বিগলিত করা যায় না। উচ্চ তাপমাত্রার প্রয়োজন পড়ে।
- ধাতব বন্ধন অনেক দৃঢ় এবং এগুলোর মাধ্যমে সভ্যতার ক্রমবিকাশ সম্ভব হয়েছিল ।
মূলত এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করেছি, রাসায়নিক বন্ধন কত প্রকার, আয়নিক বন্ধন কাকে বলে, আয়নিক বন্ধনের সকল বৈশিষ্ট্য সমূহ , সমযোজী বন্ধন কাকে বলে , সমযোজী বন্ধনের বৈশিষ্ট্য , পানি দ্রাবক হিসেবে কাজ করে কেন, ধাতব বন্ধন কাকে বলে, ধাতব বন্ধন এর বৈশিষ্ট্য সমূহ, মুক্তভাবে সঞ্চরণশীল ইলেকট্রন কোনগুলো এবং কাকে বলে পারমাণবিক শ্বাস কাকে বলা হয় ।
মূলত আমরা রসায়নের অনেক বড় একটি অধ্যায়ের মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে আলোচনা করেছি । যার মাধ্যমে শিক্ষার্থী অথবা শিক্ষক উভয় উপকৃত হতে পারবেন।
যদি পাঠক আমাদের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে বিন্দুমাত্র উপকৃত হয়ে থাকেন – তবে অতি নগণ্য ব্লগ হিসেবে সেটি আমাদের একমাত্র সার্থকতা !
READ MORE:
- অনলাইনে নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম।
- ভোটার আইডি কার্ড চেক ও ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করার নিয়ম।
- নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন ও পুরাতন জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করার নিয়ম।
- অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন ইংরেজি করার নিয়ম, আবেদন ও যাচাইকরণ।
সর্বশেষ আপডেট
- স্বপ্নে কোরআন তেলাওয়াত করতে দেখা এর ব্যাখ্যা কী?
- কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন আবেদন ফরম সম্পর্কে বিস্তারিত
- স্বপ্নে স্বর্ণ বা সোনা দেখলে কি হয়
- খাদ্যের উপাদান কয়টি | খাদ্যের সহায়ক উপাদান কয়টি
- খাদ্য কাকে বলে? খাদ্য উপাদান কাকে বলে?
সূচীপত্র