আজকে আলোচনা করবো ক্রিকেট খেলার ইতিহাস, উৎপত্তি, চ্যাম্পিয়ন, সেরা খেলোয়াড় ইত্যাদি ইত্যাদি।
ক্রিকেট নামের উৎপত্তি
ক্রিকেট নামটির সম্ভাব্য উৎস হিসাবে অনেক শব্দের কথাই ধরা হয়। সর্বপ্রথম স্পষ্ট উল্লেখে এটাকে ক্রেকেট বলা হয়। হতে পারে, নামটি এসেছে মধ্য ওলন্দাজ ভাষা ক্রিক থেকে, যার অর্থ দণ্ড; অথবা পুরাতন ইংরেজি ভাষার শব্দ ক্রিক বা ক্রাইক থেকে, যার অর্থ পঙ্গু লোকের চলবার লাঠি বা ছড়ি, অথবা ফরাসি ভাষা ক্রিকোয়েট থেকে, যার হলো অর্থ কাঠের থাম।
ক্রিকস্টোয়েল একটি মধ্য ওলন্দাজ ভাষা যার অর্থ একটি দীর্ঘ নিচু বসার টুল যেগুলি গীর্জায় নতজানু হওয়ার কাজে ব্যবহার করা হতো। এটা অনেকটা প্রারম্ভিক ক্রিকেটে ব্যবহৃত দীর্ঘ নিচু উইকেটের মত যাতে দুটি স্টাম্প ব্যবহার করা হত।
বন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোপীয় ভাষা বিশেষজ্ঞ হেইনার গিলমেইস্টার- বলেছেন, “ক্রিকেট” শব্দটির উৎপত্তি হকির মধ্য ওলন্দাজ শব্দ মেট দে (ক্রিক্ কেট্ (ইংরেজি krik ket)) সেন (অর্থাৎ “দণ্ড নিয়ে তাড়া”) থেকে।
ক্রিকেটের পরিভাষাগুলি গড়ে উঠেছে দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যাণ্ডের সেই সময়কার ভাষা থেকে এবং ফ্লেন্ডার্স দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক থেকে, বিশেষত যখন দেশটি পঞ্চদশ শতাব্দীতে ডাচি অব্ বার্গাণ্ডির অন্তর্ভুক্ত ছিল তখন দক্ষিণ ইংল্যাণ্ডের কথ্য ভাষায় অনেক মধ্য ওলন্দাজ শব্দ প্রবেশ করেছে।
ক্রিকেট খেলার ইতিহাস
ধারণা করা হয় স্যাক্সন অথবা নরম্যানদের সময়ে উইল্ড-এ বসবাসকারী শিশুরা প্রথম ক্রিকেট খেলা চালু করেছিলো। উইল্ড হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের কেন্ট এবং সাসেক্স এর মধ্যবর্তী একটি ঘন অরণ্য।
যতদূর জানা যায়, ক্রিকেট খেলা শুরু হয়েছিলো ষোড়শ শতাব্দীর শেষদিকে। মূলতঃ দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যাণ্ডে শুরু হলেও অষ্টাদশ শতাব্দীতে এটি ইংল্যাণ্ডের জাতীয় খেলায় পরিণত হয় এবং ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে এটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।
ক্রিকেটের উৎস সম্বন্ধে এছাড়া আরও অনুমান করা হয় যে এই খেলা ফ্রান্স অথবা ফ্লেন্ডার্সে শুরু হয়েছিলো। এই অনুমানের ক্ষেত্রে ক্রিকেট খেলার উল্লিখিত তারিখ বৃহস্পতিবার, ১০ই মার্চ, ১৩০০ খ্রীস্টাব্দ এবং এটা ভাবা হয় যে পরবর্তীকালে রাজা দ্বিতীয় এডয়ার্ড “ক্রিগ এবং অন্যান্য খেলা”-য় খেলেছিলেন ওয়েস্ট্মিনস্টার এবং নিউএন্ডেন নামক দুটি জায়গায়।
মনে করা হয় যে, “ক্রিগ” হল ক্রিকেটেরই একটি পুরাতন ইংরাজি ভাষার শব্দ। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে এর আগে এটি ছিল “ক্রেইক”, যার মানে সার্বজনীন মজা এবং খেলা।
এটা বিশ্বাস করা হয় যে, সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথমদিকে প্রাপ্তবয়স্কদের খেলা হয়ে ওঠার আগে পর্যন্ত বহু প্রজন্ম ধরে ক্রিকেট খেলা শুধু শিশুদের খেলা ছিল। সম্ভবত ক্রিকেট খেলা উদ্ভূত হয়েছিলো বোলস খেলা থেকে।
যেহেতু বোলস একটু পুরানো খেলা, তাই মনে করা হয় বলটিকে তার লক্ষ্যের আগে ব্যাটসম্যান ব্যাট দিয়ে থামিয়ে সেটিকে আঘাত করে দূরে পাঠানো থেকেই ক্রিকেট খেলার উৎপত্তি।
খেলা শুরু হয় মেষ-চারিত কোনো মাঠ বা ফাঁকা জায়গায়, মূল সরঞ্জামের মধ্যে বল হিসাবে ব্যবহার করা হয় ভেড়ার দলা পাকানো পশম (বা এমনকি একটি পাথর অথবা একটি ছোটো কাঠের ডেলা); ব্যাট হিসাবে ব্যবহার করা হয় একট লাঠি বা একটি বাঁকা দণ্ড বা খামারবাড়ির কোনও যন্ত্র; উইকেট হিসাবে একটি বসার টুল বা গাছের গোড়ার শিকড় অথবা কোনো দরজা।
১৫০০ খ্রিস্টাব্দের আগে যেই খেলাটির নাম ছিল ক্রিঘ বা ক্রিকে, সেটিই ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে এসে পরিচিতি লাভ করে ক্রিকেট। তখনো ক্রিকেটের উপর নিষেধাজ্ঞা ছিলো, কিন্তু অলিখিত নিষেধাজ্ঞা নিয়েই ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যায় ইউরোপের জনগণরা।
খেলা নিয়ে মোটা অংকের টাকার জুয়া খেলতো জুয়াড়িরা। তখনো ধর্মযাজকরা এই খেলাটির ঘোর আপত্তি করতে থাকে। তারা আপত্তি জানিয়ে বলে ক্রিকেট হলো অলস, অকর্মন্য আর জুয়াড়িদের খেলা। ধর্মযাজকরা এর বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থাও করেছিল। কিন্তু কোনো বাঁধাই বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি ক্রিকেটের চলার পথে।
এরপর আস্তে আস্তে ক্রিকেট খেলা আরো জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, ১৭১৯ সালে ইংল্যান্ড জাতীয় দল ও বর্তমান কাউন্টি দল কেন্টের মধ্যকার ম্যাচটির মাধ্যমে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মাধ্যমে ১৭২১ সালে আধুনিক ক্রিকেটের প্রচলন শুরু হয়। তবে ১৭৪৪ সালের আগে ক্রিকেট পুরোপুরি আধুনিক হয়ে উঠেনি। কেননা সে সময়ও নিয়ম কানুন মেনে ক্রিকেট খেলা হতো না।
ইংল্যাণ্ডের বাইরে ক্রিকেটের প্রসার কীভাবে হলো?
সতের শতকে ব্রিটিশ উপনিবেশসমূহের মাধ্যমেই প্রথম উত্তর আমেরিকায় ক্রিকেট পরিচিতি লাভ করেছিল। তখনো সম্ভবত ইংল্যান্ডের উত্তরে ক্রিকেট জনপ্রিয়তা পায়নি। ১৮ শতকের শেষ দিকে এটি বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তেও ছড়িয়ে পড়ে।
উপনিবেশবাদীদের মাধ্যমে ওয়েস্ট ইন্ডিজে এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নাবিকদের মাধ্যমে ভারতে শতাব্দীর প্রথমার্ধে খেলাটি পরিচিতি লাভ করে। ১৭৮৮ সালে উপনিবেশ স্থাপনের পর পরই অস্ট্রেলিয়াতে এবং ১৯ শতকের গোড়ার দিকে নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্রিকেট প্রবেশ করে।
উচ্চ শ্রেণির মানুষদের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কানাডায় ক্রিকেট কখনই জনপ্রিয়তা পায়নি। ১৮৬০-১৯৬০ সালের মধ্যে কানাডায় খেলাটির জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে হ্রাস পায়, যা অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সম্পূর্ণ বিপরীত। কানাডার সাধারণ মানুষদের মধ্যেও খেলাটি জনপ্রিয়তা পায়নি।
গ্রীষ্মকালে জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে খেলাটিকে বেসবলের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হতো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ফ্রান্সে থাকা কানাডার সৈন্যরা ক্রিকেটের বদলে বেসবল খেলেছিলো।
প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ কবে অনুষ্ঠিত হয়?
আন্তর্জাতিকভাবে ক্রিকেট খেলার প্রচলন হয় ১৮৭৭ সাল থেকে। ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া প্রথম আন্তর্জাতিক টেস্ট ম্যাচ খেলে। ক্রিকেটের জনক হিসাবে ইংল্যান্ডের নাম জোরালোভাবে বলা হলেও প্রথম টেস্ট ম্যাচে জয় পায় অস্ট্রেলিয়া।
মেলবোর্নে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো অস্ট্রেলিয়া, সে সময়ে ৪ বলে ওভার হতো এবং ম্যাচের নির্দিষ্ট কোনো সময় ছিলো না। অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে ২৪৫ রান সংগ্রহ করে, যার মধ্যে ওপেনার চার্লস ব্যানারম্যান একাই ১৬৫ রান করেন।
চার্লস ব্যানারম্যান সে সময়ে অস্ট্রেলিয়ার সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম রান এবং প্রথম শতকের রেকর্ড তার দখলে আজীবন থাকবে।
জবাবে ইংল্যান্ড তাদের প্রথম ইনিংসে ১৯৬ রান গুটিয়ে গেলে ৪৯ রানের লিড পায় অস্ট্রেলিয়া। ২য় ইনিংসে ইংলিশ বোলাররা অস্ট্রেলিয়াকে মাত্র ১০৪ রানে অলআউট করে ব্যাটসম্যানদের জয়ের জন্য ১৫৪ রানের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড় করায়।
কিন্তু ১৫৪ রান করতেও ব্যর্থ হয় ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা, দ্বিতীয় ইনিংসে ১০৮ রানে অলআউট হয়ে ৪৫ রানে পরাজিত হয় অস্ট্রেলিয়ার কাছে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থা এবং এর সদস্যপদ
১৫ জুন, ১৯০৯ সালে ইংল্যান্ডের লর্ডসে এই প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়। তখন এর নাম ছিল ইম্পেরিয়াল ক্রিকেট কনফারেন্স। প্রতিষ্ঠাকালীন এর সদস্য ছিল ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
শুরুতে কেবলমাত্র কমনওয়েলথভূক্ত দেশসমূহই এত যুক্ত হতে পারতো। পরবর্তীতে এতে যোগ দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড, ভারত ও পাকিস্তান ক্রিকেট দল। ১৯৬৫ সালে সংস্থার নাম পরিবর্তিত হয়ে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কনফারেন্স নামকরণ করা হয়। পূর্বে কেবলমাত্র টেস্টখেলুড়ে দেশগুলোই এর অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এসময় থেকে এসব দেশের বাইরে অন্য দেশকেও আইসিসি’র সহযোগী সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা শুরু হয়। ১৯৮৯ সালে আবারো এর নাম পরিবর্তন করা হয়। এবার নামকরণ করা হয় ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল’ যা অদ্যাবধি প্রচলিত।
আইসিসি’র বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১০৫। যার ১২টি পূর্ণসদস্য রয়েছে যারা টেস্টখেলুড়ে, ৯২ টি সহযোগী সদস্য। পূর্ন সদস্যগুলো হলো: আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড, ভারত, আয়ারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে।
পূর্বে অনুমোদনপ্রাপ্ত সদস্য নামে আরেকটি স্তর ছিলো।২০১৭ সালে তা বাতিল করে দেওয়া হয়।সকল অনুমোদনপ্রাপ্ত দল স্বয়ংক্রিয়ভাবে সহযোগী সদস্য হয়ে যায়। আইসিসি ক্রিকেটের প্রধান নিয়ন্ত্রণকারী এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা আয়োজন করে, যার মধ্যে ক্রিকেট বিশ্বকাপ অন্যতম।
আইসিসি একই সাথে টেস্ট ক্রিকেট, একদিনের আন্তর্জাতিক এবং টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিকের জন্য আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারি নিয়োগ দেয়। আইসিসি, সংস্থার কোড অব কন্ডাক্ট মেনে চলে, যা আন্তর্জাতিক ম্যাচের পেশাদারী মান বজায় রাখে। এছাড়া সংস্থার ‘দুর্নীতি-দমন ইউনিট’ (আকসু) এর মাধ্যমে দুর্নীতি ও ম্যাচ-গড়াপেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাস
বাংলাদেশের ক্রিকেটে যাত্রা শুরু হয় ১৯৭২ সালে। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে নিজস্ব ক্রিকেট খেলা আয়োজনের ব্যবস্থা গড়ে উঠে। এ সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৪-৭৫ মৌসুমে জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেট প্রতিযোগিতা শুরু হয় বাংলাদেশে।
১৯৭৯ সালে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ ঘটে। সেবার ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে আবির্ভাব হয় নতুন এক নক্ষত্র বাংলাদেশের।
১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ প্রথম একদিনের ম্যাচ খেলে এবং ১৯৯৭ সালে কেনিয়াকে শেষ বলে হারিয়ে আইসিসি ট্রফি জেতে এবং এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়।
বিশ্বকাপে পাকিস্তান এবং স্কটল্যান্ডকে পরাজিত করে ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দেয় বাংলাদেশ। পরের বছরেই টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসাবে আবির্ভাব হয় বাংলাদেশের, ক্রিকেটের সর্বোচ্চ মর্যাদার খেলা টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম প্রতিপক্ষ ছিলো ভারত।
নারী ক্রিকেটের ইতিহাস
ডিসেম্বর, ১৯৩৪ সালে সর্বপ্রথম মহিলাদের টেস্ট ম্যাচ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মহিলা ক্রিকেটারগণ অংশ নিয়েছিলেন। পরের বছর নিউজিল্যান্ড জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দল যোগ দেয়। ২০০৭ সালে নেদারল্যান্ডসের মহিলা ক্রিকেটারগণ দশম মহিলাদের টেস্টভূক্ত দেশ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অংশ নেয়।
১৯৭৩ সাল থেকে মহিলাদের একদিনের আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এরফলে দ্রুত মহিলাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পরিচিতি পেতে থাকে। মহিলাদের ওডিআইয়ের প্রচলনের পর টেস্ট ক্রিকেটের তুলনায় আট গুণ বেশি খেলা হয়। এ পর্যন্ত নয়বার মহিলাদের ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের মহিলা ক্রিকেট দল বিশ্বকাপের শিরোপাগুলো নিজেদের করে নিয়েছে। ২০০৪ সালে নতুন ধরনের ক্রিকেটের প্রচলন হলে, মহিলাদের টুয়েন্টি২০ ক্রিকেটেরও প্রচলন হয়। কিন্তু, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ খেলাটি খুব কমই সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়।
২০০৬ সালের শেষ ভাগ পর্যন্ত মাত্র চারটি খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। পরের তিনবছর এটি দ্রুতলয়ে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ২০০৭ সালে ৬টি, ২০০৮ সালে ১০টি ও ২০০৯ সালে ত্রিশটি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও, ২০০৯ সালে মহিলাদের প্রথম বিশ্ব টুয়েন্টি২০ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
নারী ক্রিকেটে বাংলাদেশের অবস্থান
১৯৮২ সালে একদল উৎসাহী মেয়েকে নিয়ে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশে নারী ক্রিকেটে পথচলা। আবাহনী ক্রীড়া চক্রের ব্যনারে ১৯৮৩ সালে ইডেন গার্ডেনসে পশ্চিমবাংলা নারী ক্রিকেট দলের বিপক্ষে ৩০ ওভারের একটি প্রদর্শনী ম্যাচেও অংশ নেয় নারি ক্রিকেটাররা।
২০০৬ সালের এপ্রিলে উইম্যান্স উইং গঠন করে একটি ট্রেনিং ক্যাম্প শুরু করে বিসিবি। ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে ওদের সরাসরি নামিয়ে দেয়া হলো ওপেন টুর্নামেন্টে। তাতেই স্বপ্ন দেখা শুরু বিসিবি’র। পরের বছরে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত এসিসি উইম্যান্স ট্রফিতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণেই বদলে গেল দৃশ্যপট।
সংযুক্ত আরব আমিরাতকে মাত্র ৯ রানে অল আউট করে ১০ উইকেটের বিশাল জয়ে শুরু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ নারী দলের পথচলা। সিঙ্গাপুর, চীন, হংকং, নেপালকে হারিয়ে ট্রফি জিতে অভিষেক গড়ে টাইগ্রেসরা।
ভলিবলে তখন তুখোড় খেলোয়াড় পান্না ঘোষ, সেই পান্নাকে ধরে এনে ক্রিকেটার বানানো হয়। এসিসি উইম্যান্স ট্রফির সেই আসরে প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট সেই পান্না ঘোষই। চম্পা চাকমা ফুটবল ছেড়ে নাম লেখান ক্রিকেটে।
অন্যদের কেউ এসেছে হ্যান্ডবল, কেউবা ব্যাডমিন্টন, কাবাডি থেকে! তাদেরকে নিয়েই অসাধ্য সাধন! ২০১০ সালে এশিয়ান গেমসে অংশগ্রহণ করেই মেয়েরা জিতল রৌপ্য পদক।২০১২ সাল থেকে বিসিবি’র কেন্দ্রিয় চুক্তির আওতায় এসেছে নারী ক্রিকেটাররা।
ক্রিকেট বিশ্বকাপ
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ওয়ানডে ক্রিকেটের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতা। প্রতি চার বছর পরপর খেলাটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (ICC) এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। প্রাথমিক বাছাইপর্ব শেষে দলগুলো চূড়ান্ত পর্বে অংশ নেয়।
ওয়ানডে র্যাঙ্কিং এর সেরা আটটি দল সরাসরি এবং বাকি চারটি দল বাছাইপর্ব থেকে এসে মূল প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। টুর্নামেন্টটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দেখা ক্রীড়া প্রতিযোগিতাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি আইসিসির ক্রিকেট ক্যালেন্ডারে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যালেন্ডারের সেরা প্রতিযোগিতা হিসাবে বিবেচিত হয়।
প্রথম ওয়ানডে ক্রিকেট ম্যাচের মাত্র চার বছর পর, ১৯৭৫ সালের জুনে ইংল্যান্ডে প্রথম বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। পুরুষ ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরুর দুই বছর আগে মহিলা ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯১২ সালের শুরুতে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে টেস্ট ম্যাচের একটি ত্রিদেশীয় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রথম তিনটি বিশ্বকাপ ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপ থেকে, একটি অনানুষ্ঠানিক ঘূর্ণন ব্যবস্থার অধীনে বিভিন্ন দেশের মধ্যে আয়োজক নির্বাচন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত আইসিসির চৌদ্দটি সদস্য দেশ এ প্রতিযোগিতার অন্তত একটি ম্যাচ আয়োজন করেছে।
মোট বিশটি দল টুর্নামেন্টের এগারটি সংস্করণে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে, যেখানে সর্বশেষ ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে দশটি দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। অস্ট্রেলিয়া পাঁচবার করে টুর্নামেন্টটি জিতেছে।
ভারত এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুইবার করে জিতেছে । অন্যদিকে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং ইংল্যান্ড একবার করে বিশ্বকাপ জিতেছে। ইংল্যান্ড ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়। পরবর্তী বিশ্বকাপ ২০২৩ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত হবে।
১৯৭৫ সালে ইংল্যান্ড উদ্বোধনী ক্রিকেট বিশ্বকাপ আয়োজন করতে সক্ষম হয়। ১৯৭৫ সালের ৭ই জুন টুর্নামেন্ট শুরু হয়। প্রথম তিনটি বিশ্বকাপ ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে প্রুডেনশিয়াল কাপ নামে পরিচিতি পায়। ম্যাচে প্রতি দল ছয় বলে ৬০ ওভার করে ব্যাটিং লাভের সুযোগ পায়। সাদা পোশাকে ও লাল বলে দিনের বেলা খেলা অনুষ্ঠিত হত।
প্রথম টুর্নামেন্টে আটটি দল অংশগ্রহণ করে। দল গুলো হল অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ (সে সময়ের ছয়টি টেস্ট খেলুড়ে দেশ), শ্রীলঙ্কা এবং পূর্ব আফ্রিকার একটি যৌথ দল। বর্ণবাদের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হওয়ায় তারা বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেনি
১৯৭৯ সালে প্রথমবারের মতো আইসিসি বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব শুরু হয়। শ্রীলঙ্কা ও কানাডার জাতীয় ক্রিকেট দল বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। ফাইনালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে ৯২ রানে পরাজিত করে টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তারপর আইসিসি প্রতি চার বছর পরপর বিশ্বকাপের আয়োজনের পরিকল্পনা করে।
ইতিহাসে ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফরম্যাটটি ব্যাপকভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রথম চারটি টুর্নামেন্টে আটটি দল প্রত্যেক গ্রুপে ৪টি দলে বিভক্ত হয়ে খেলত। প্রতিযোগিতায় দুটি পর্যায়ে খেলা অনুষ্ঠিত হত। প্রতিযোগিতাটি গ্রুপ পর্যায় এবং নক আউট মঞ্চ নিয়ে খেলা হত।
প্রতিযোগিতায় চারটি দল রাউন্ড-রবিন গ্রুপ পর্বে একে অপরের মুখোমুখি হত। প্রতিটি গ্রুপের শীর্ষ দুটি দল সেমিফাইনালে উঠত। সেমিফাইনালের বিজয়ীরা ফাইনালে একে অপরের বিপক্ষে খেলত। বর্ণবাদ বয়কটের সমাপ্তির পর ১৯৯২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা পঞ্চম টুর্নামেন্টে ফিরে আসে।
এ বিশ্বকাপে নয়টি দল গ্রুপ পর্বে একবার একে অপরের সাথে খেলেছিল এবং শীর্ষ চারটি দল সেমিফাইনালে উঠেছিল। ছয় দলের দুটি গ্রুপ নিয়ে ১৯৯৬ সালে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি গ্রুপের শীর্ষ চারটি দল কোয়ার্টার ফাইনাল উঠে। কোয়ার্টার ফাইনালে বিজয়ী দলগুলো সেমিফাইনালে খেলত।
১৯৯৯ এবং ২০০৩ বিশ্বকাপে নতুন ফরম্যাট চালু করা হয়েছিল। দলগুলোকে দুটি পুলে বিভক্ত করা হয়েছিল। প্রতিটি পুলের শীর্ষ তিনটি দল সুপার সিক্সে খেলার সুযোগ পায়। সুপার সিক্সে খেলা শীর্ষস্থানীয় চারটি দল সেমিফাইনালে উঠত। বিজয়ীরা ফাইনাল খেলত।
২০০৭ বিশ্বকাপে প্রতি গ্রুপে ৪টি করে ১৬টি দল অংশগ্রহণ করে। প্রতিটি গ্রুপের মধ্যে দলগুলো একে অপরকে রাউন্ড-রবিন ফর্ম্যাটে খেলত। দলগুলো জয়ের জন্য ১ পয়েন্ট এবং টাই হলে জন্য আধাপয়েন্ট পেত। প্রতিটি গ্রুপের শীর্ষ দুটি দল সেরা আটে খেলত। সেরা আটে প্রতিটি দল অন্য গ্রুপের ৬টি দলের সাথে খেলত।
দলগুলো গ্রুপ পর্বের মতো একইভাবে পয়েন্ট অর্জন করেছিল। সেরা আটে শীর্ষ চারটি দল সেমিফাইনালে উঠত। সেমিফাইনালের বিজয়ীরা ফাইনালে একে অপরের মুখোমুখি হত।
২০১১ এবং ২০১৫ বিশ্বকাপে রাউন্ড-রবিন ফরম্যাটে সাতটি দলের দুটি গ্রুপ করে খেলত। প্রতিটি গ্রুপ থেকে শীর্ষ চার দল কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল এবং অবশেষে ফাইনালের মাধ্যমে বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা শেষ হত।
২০১৯ বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দলের সংখ্যা কমে ১০ টিতে দাঁড়ায়। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপের মতো সেমিফাইনালে প্রবেশের আগে প্রতিটি দল উন্ড রবিন ফরম্যাটে একে অপরের বিপক্ষে খেলে।
বর্তমান বিশ্বকাপের ট্রফিটি রৌপ্য এবং গিল্ড দ্বারা থেকে তৈরি। এতে তিনটি রৌপ্য কলাম দ্বারা আবৃত সোনার গ্লোব রয়েছে। কলামটি স্ট্যাম্প ও বেইল আকৃতির। তিনটি রৌপ্য কলাম দ্বারা ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিংকে বোঝানো হয়েছে। সোনার গ্লোব দ্বারা বলকে বোঝানো হয়েছে।
বলের সেলাইটি পৃথিবীর আক্ষিক আনতির দিকে ঘুরে থাকে। ট্রফির উচ্চতা প্রায় ৬০ সেন্টিমিটার ও এর ওজন প্রায় ১১ কেজি। পূর্ববর্তী চ্যম্পিয়নদের নাম ট্রফির উপর খোদাই করা থাকে। আইসিসি মূল ট্রফিটা নিজেদের কাছে রাখে। কেবল শিলালিপির তৈরি পৃথক প্রতিলিপি স্থায়ীভাবে বিজয়ী দলকে প্রদান করা হয়।
ক্রিকেট বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন, রানার্সআপ দল আয়োজক দেশসমূহ
- সাল: ১৯৭৫
- আয়োজক দেশ: ইংল্যান্ড
- চ্যাম্পিয়ন: ওয়েস্ট ইন্ডিজ
- রানার্সআপ: অস্ট্রেলিয়া
- সাল:, ১৯৭৯
- আয়োজক দেশ: ইংল্যান্ড
- চ্যাম্পিয়ন: ওয়েস্ট ইন্ডিজ
- রানার্সআপ: ইংল্যান্ড
- সাল: ১৯৮৩
- আয়োজক দেশ: ইংল্যান্ড
- চ্যাম্পিয়ন: ভারত
- রানার্সআপ: ওয়েস্ট ইন্ডিজ
- সাল: ১৯৮৭
- আয়োজক দেশ: ভারত-পাকিস্তান
- চ্যাম্পিয়ন: অস্ট্রেলিয়া
- রানার্সআপ: ইংল্যান্ড
- সাল: ১৯৯২
- আয়োজক দেশ: অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড
- চ্যাম্পিয়ন: পাকিস্তান
- রানার্সআপ: ইংল্যান্ড
- সাল: ১৯৯৬
- আয়োজক দেশ: পাকিস্তান-ভারত-শ্রীলংকা
- চ্যাম্পিয়ন: শ্রীলঙ্কা
- রানার্সআপ: অস্ট্রেলিয়া
- সাল: ১৯৯৯
- আয়োজক দেশ: ইংল্যান্ড-ওয়েলসচ্যাম্পিয়ন: অস্ট্রেলিয়া
- রানার্সআপ: পাকিস্তান
- সাল: ২০০৩
- আয়োজক দেশ: দক্ষিণ আফ্রিকা
- চ্যাম্পিয়ন: অস্ট্রেলিয়া
- রানার্সআপ: ভারত
- সাল: ২০০৭
- আয়োজক দেশ: ওয়েস্ট ইন্ডিজ
- চ্যাম্পিয়ন: অস্ট্রেলিয়া
- রানার্সআপ: শ্রীলঙ্কা
- সাল: ২০১১
- আয়োজক দেশ: ভারত-শ্রীলংকা
- চ্যাম্পিয়ন: ভারত
- রানার্সআপ: শ্রীলঙ্কা
- সাল: ২০১৫
- আয়োজক দেশ: অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড
- চ্যাম্পিয়ন: অস্ট্রেলিয়া
- রানার্সআপ: নিউজিল্যান্ড
- সাল: ২০১৯
- আয়োজক দেশ: ইংল্যান্ড-ওয়েলস
- চ্যাম্পিয়ন: ইংল্যান্ড
- রানার্সআপ: নিউজিল্যান্ড
টিভিতে ক্রিকেট সম্প্রচার
ক্রিকেট টুর্নামেন্ট বিশ্বের সর্বাধিক দেখা একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। ২০১১ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ সম্প্রচার২০০ এরও বেশি দেশে ২০০ কোটির বেশি দর্শক টেলিভিশনে দেখেছেন। মূলত ২০১১ এবং ২০১৫ বিশ্বকাপের জন্য, ১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি টেলিভিশন স্বত্ব বিক্রি হয়েছিল। এছাড়া আরও ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে স্পনসরশিপ স্বত্ব বিক্রি হয়েছিল।
২০০৩ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপ ম্যাচে মোট ৬,২৬,৮৪৫ মানুষ উপস্থিত ছিল। ২০০৭ ক্রিকেট বিশ্বকাপ ৬৭২,০০০ টিকেট বিক্রি হয়। ২০১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপ ১.১ মিলিয়ন টিকেট বিক্রি হয় যা রেকর্ড ছিল। ওয়ানডে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আরও প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ধারাবাহিক বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টগুলো মিডিয়ায় মনোযোগ বাড়িয়ে তুলেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০০৩ বিশ্বকাপ প্রথম মাস্কটের নাম ছিল দাজলার দ্য জেব্রা। ২০০৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের মাস্কট মেলো নামের একটি বেজি ছিল। স্টাম্পি নামের একটি নীল হাতি ২০১১ বিশ্বকাপের মাস্কট ছিল।
১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সালে টুর্নামেন্টের উদ্বোধনে গুগল ডুডল প্রকাশ করা হয়। ইংল্যান্ড ২০১৯ সালে ফাইনাল ম্যাচ করার কারণে, স্থানীয় টেলিকাস্টার স্কাই স্পোর্টস সম্প্রচার স্বত্ব চ্যানেল ফোর থেকে ম্যাচে পরে মোর ফোরের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আরো পড়ুন ;- সরাসরি খেলা দেখার সফটওয়্যার ও লিংক
জনপ্রিয় ক্রিকেট লীগ
বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বে বিভিন্ন দেশে ফ্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক ক্রিকেট টুনার্মেন্ট অনুষ্ঠিত হয়৷ যা ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে৷ ২০০৮ সালে ভারতে এর প্রচলন শুরু হয়। এগুলো মূলত টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হয়ে থাকে। জনপ্রিয় কিছু ক্রিকেট লীগ হলো:
১. আইপিএল
দেশ: ভারত
শুরুর বছর ২০০৮
২. বিগ ব্যাশ
দেশ: অস্ট্রেলিয়া
শুরুর বছর: ২০১১
৩. বিপিএল
দেশ: বাংলাদেশ
শুরুর বছর: ২০১২
৪. সিপিএল
দেশ: ওয়েস্ট ইন্ডিজ
শুরুর সাল: ২০১৩
৫. পিএসএল
দেশ: পাকিস্তান
শুরুর বছর: ২০১৫
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের কিছু রেকর্ড
সর্বোচ্চ রান: শচীন টেন্ডুলকার (১৯৯২-২০১১)
ক্রিকেটে সর্বোচ্চ গড় (ন্যুনতম ১০ ইনিংস): ল্যান্স ক্লুজনার ১২৪.০০(১৯৯৯,২০০৩)
ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর: মার্টিন গাপটিল বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৩৭* (২০১৫)
এক ইনিংসে সর্বোচ্চ জুটি: ক্রিস গেইল এবং মারলন স্যামুয়েলস
(২য় উইকেট) বনাম জিম্বাবুয়ে ৩৭২ (২০১৫)
এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান: শচীন টেন্ডুলকার ৬৭৩ (২০০৩)
সর্বাধিক শতক: রোহিত শর্মা ও শচীন টেন্ডুলকার- ৬ টি
এক বিশ্বকাপে সর্বাধিক শতরান: রোহিত শর্মা ৫ টি (২০১৯)
সর্বাধিক উইকেট : গ্লেন ম্যাকগ্রা- ৭১ টি (১৯৯৬–২০০৭)
ন্যুনতম উইকেট গড় (ন্যূনতম ৪০০ বল): মিচেল স্টার্ক- ১৪.৮১ (২০১৫–২০১৯)
বোলিংয়ে সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট: (ন্যূনতম ২০ উইকেট) মোহাম্মদ শামি-১৮.৬ (২০১৫–২০১৯)
সর্বোচ্চ ইকোনমি রেট(ন্যূনতম ১০০০ বল): অ্যান্ডি রবার্টস-৩.২৪ (১৯৭৫–১৯৮৩)
সেরা বোলিং ফিগার: গ্লেন ম্যাকগ্রা- ৭/১৫ (২০০৩)
এক টুর্নামেন্ট সর্বাধিক উইকেট: মিচেল স্টার্ক-২৭ (২০১৯)
ডিসমিসাল (উইকেট-রক্ষক): কুমার সাঙ্গাকারা- ৫৪ টি (২০০৩-২০১৫)।
বেশি ক্যাচ(ফিল্ডার): রিকি পন্টিং- ২৮ টি (১৯৯৬–২০১১)
সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর: অস্ট্রেলিয়া- ৪১৭/৬ (২০১৫)
সর্বনিম্ন স্কোর: কানাডা- ৩৬ (২০০৩)
সর্বোচ্চ জয় %: অস্ট্রেলিয়া- ৭৪.৭৩%(ম্যাচ ৯৪, জয় ৬৯)
সবচেয়ে ধারাবাহিক জয়: অস্ট্রেলিয়া- ২৭ টি
সবচেয়ে ধারাবাহিক টুর্নামেন্ট বিজয়ী: অস্ট্রেলিয়া- ৩ বার(১৯৯৯–২০০৭)
সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপ জয়ী: অস্ট্রেলিয়া – ৫ বার।
ক্রিকেট বিশ্বের কয়েকজন সেরা খেলোয়াড়
১. নাম:.স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান
দেশ: অস্ট্রেলিয়া
২. নাম: শচীন টেন্ডুলকার
দেশ: ভারত
৩. নাম: স্যার গ্যারিফিল্ড সোবার্স
দেশ: ওয়েস্ট ইন্ডিজ
৪. নাম: ইমরান খান
দেশ: পাকিস্তান
৫. নাম: স্যার ইয়ান বোথাম
দেশ: ইংল্যান্ড
৬. নাম: শেন ওয়ার্ন
দেশ: অস্ট্রেলিয়া
৭. নাম: স্যার ভিভ রিচার্ডস
দেশ: ওয়েস্ট ইন্ডিজ
৮. নাম: ব্রায়ান লারা
দেশ: ওয়েস্ট ইন্ডিজ
৯. নাম: জ্যাক ক্যালিস
দেশ: দক্ষিন আফ্রিকা
১০. নাম: এম এস ধোনি
দেশ: ভারত
১১. নাম: ওয়াসিম আকরাম
দেশ: পাকিস্তান
১২. নাম: বিরাট কোহলি
দেশ: ভারত
১৩. নাম: জেমস এন্ডারসন
দেশ: ইংল্যান্ড
১৪. নাম: এলিস্টার কুক
দেশ: ইংল্যান্ড
১৫. নাম: মুরালিধরন
দেশ: শ্রীলঙ্কা
১৬. নাম: কুমার সাঙ্গাকারা
দেশ: শ্রীলঙ্কা
১৭. নাম: কপিল দেব
দেশ: ভারত
১৮. নাম: স্যার রিচার্ড হ্যাডলি
দেশ: নিউজিল্যান্ড
১৯. নাম: এডাম গিলক্রিস্ট
দেশ: অস্ট্রেলিয়া
২০. নাম: ক্রিস গেইল
দেশ: ওয়েস্ট ইন্ডিজ
২১. নাম: গ্লেন ম্যাকগ্রা
দেশ: অস্ট্রেলিয়া
২২. নাম: রিকি পন্টিং
দেশ: অস্ট্রেলিয়া
২৩. নাম: স্টিভ ওয়াহ
দেশ: অস্ট্রেলিয়া
২৪. নাম: রাহুল দ্রাবিড়
দেশ: ভারত
২৫. নাম: সুনীল গাভাস্কার
দেশ: ভারত
২৬. নাম: শোয়েব আকতার
দেশ: পাকিস্তান
২৭. নাম: স্যার কার্টলি এমব্রোস
দেশ: ওয়েস্ট ইন্ডিজ
২৮. নাম: মাহেলা জয়াবর্ধনে
দেশ: শ্রীলঙ্কা
২৯. নাম: ডেল স্টেইন
দেশ: দক্ষিণ আফ্রিকা
৩০. নাম: অ্যালান ডোনাল্ড
দেশ: দক্ষিন আফ্রিকা
পরিশেষে বলা যায়, বর্তমানে সারা বিশ্বব্যাপী ক্রিকেট একটি অন্যতম জনপ্রিয় খেলা হিসেবে পরিগণিত। এই খেলায় নিয়মকানুন কৌশল যেমন প্রয়োজন তেমনি বুদ্ধির প্রখরতা ও আবশ্যিক। শারীরিক গঠন, ধৈর্য, সহিষ্ণুতা সতর্কতা ও সহযোগিতার মতো কিছু বিশেষ গুণ আয়ত্ব করা যায় এ খেলার মাধ্যমে।
জাতিধর্ম নির্বিশেষে ক্রিকেট বিশ্বের দরবারে সকল মানুষকে একসূত্রে বেঁধে রেখেছে এবং বিভিন্ন দেশের মধ্যে মৈত্রী ও সখ্যতা স্থাপন করেছে যা ভবিষ্যতে বিশ্ব শান্তির দ্বার উন্মোচিত করবে এবং আগামী প্রজন্মেকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
আশা করি, এই লেখাটি পড়ে আপনারা ক্রিকেটের ইতিহাস, ক্রিকেটের নিয়ম-কানুন এবং এর বিশ্বকাপ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
লিখেছেন: রাকিব খান
সূচীপত্র