পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি? আমাদের জীবনদশায় কখনো না কখনো আমাদের আন্ত্রিক গলোযোগ দেখা দিয়েছে। আর এই ধরণের আন্ত্রিক গোলযোগের মূল উপসর্গ হলো পাতলা পায়খানা।
অনেক সময় এই পাতলা পায়খানা একজন মানুষের জীবনে মৃত্যু বইয়ে আনতে পারে। কাজেই পাতলা পায়খানা শুরু হলে কোনো অবস্থাতেই হেলা করা যাবে না৷ বরং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে যতো দ্রুত সম্ভব এই রোগের পরিত্রানের জন্য চেষ্টা করতে হবে।
আমাদের দেশে এখনো অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চল রয়েছে,যেখানে মানুষ পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি তাই জানেনা৷
পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি?
পাতলা পায়খানা বন্ধ করার জন্য কিছু ঘরোয়া পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে যেমন:
ঘরে তৈরি খাবার শস্য স্যালাইন
এটিকে শস্য স্যালাইন বলা হয়ে থাকে । মাত্র ৫০ গ্রাম সিদ্ধ চালের কর এক লিটার পানিতে মিশালেই তৈরি হয়ে যাবে খাবার সশ্য স্যালাইন ।
এছাড়া,এক লিটার পানিতে এক মুঠো গুড় ও এক চিমটি লবন যোগ করেও বাড়িতে তৈরি খাবার স্যালাইন প্রস্তুত করা যেতে পারে ।
সরিষা বীজ
মূলত সরিষার বীজে কিছু এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে সেগুলো পাতলা পায়খানা বন্ধ করতে বিশেষভাবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
এক চামচ চলে মাত্র ১/৪ চামচ সরিষার বীজ মিশিয়ে প্রথমে সেটাকে আধা ঘন্টার জন্য রেখে দিতে হবে ।
এবার ধীরে ধীরে এই পানি পান করতে হবে । সাধারণত দুই থেকে তিনবার এ পানি পান করলে পাতলা পায়খানা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
অবশ্যই এই ঘরোয়া টোটকার পাশাপাশি, আধুনিক চিকিৎসা চাল রাখা প্রয়োজন । কোন অবস্থাতেই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন বন্ধ করা যাবে না ।
লেবুর পানি
অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন, যে জিনিস পেটের আঞ্চলিক গোলযোগ বাড়িয়ে দিতে পারে সেই জিনিস আবার কি করে এটি প্রশমন করবে?
এর উত্তর হল:
লেবুর রসে প্রচুর পরিমাণে এনটি ইনফ্লামেটরি উপাদান রয়েছে। এটি মূলত আমাদের পাকস্থলীর পেশীর কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে ।
পাতলা পায়খানা থেকে পরিত্রাণ পেতে লেবুর রস অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে ।
প্রথমত একটি লেবু থেকে সম্পূর্ণ রস বের করে আনতে হবে । এবং তার সাথে এক চা চামচ পরিমাণ লবণ ও সামান্য চিনি যোগ করতে হবে । এরপর সেটাকে ভালো করে মেশাতে হবে এবং রোগীর সুবিধা অনুযায়ী তাকে খাওয়াতে হবে ।
সাধারণত দু থেকে তিনবার এই পন্থা অবলম্বন করলে পাতলা পায়খানা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
তবে পাতলা পায়খানার সাথে যদি রোগের এসিডিটি সমস্যা থেকে থাকে তাহলে কোন অবস্থাতেই লেবুর রস খাওয়ানো যাবে না।
যদি অসুস্থতার কারণে রোগী লেবুর রশিতে সাতসন্দ বোধ না করেন তাহলে সেই ক্ষেত্রে শরবত করে খাওয়ানো যেতে পারে।
অবশ্যই তার পাশাপাশি রোগীর স্বাভাবিক খাবার এবং ওষুধ চলমান থাকবে ।
আরো পড়ুনঃ গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকা
ডালিম
ডালিম শুধু পাতলা পায়খানা নয় শরীরের যে কোন আন্তরিক-লোচক এর জন্য বিশেষভাবে কার্যকরী একটি ফল।
ফলটি খাওয়ালে পাতলা পায়খানা থেকে দ্রুত রেখে পাওয়া যায়। ডালিমে প্রচুর পরিমাণে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টি ফাঙ্গাস রয়েছে যা পাতলা পায়খানা থেকে রেহাই পেতে সর্বাপেক্ষা বেশি কার্যকর।
অসুস্থতাকালীন রোগীকে যতটা সম্ভব ডালিম খাওয়াতে হবে। এতে করে রোগীর শরীর থেকে দ্রুত ক্ষতিকর বর্জ্য অপসারিত হবে । এবং রোগী ধরে ধরে সুস্থ হয়ে উঠবে ।
মেথি বা মেথি বীজ
ডালিম এর মত মেথিতেও প্রচুর পরিমাণে এন্টিব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টি ফাঙ্গাস রয়েছে যা পাতলা পায়খানার উপশম ঘটাতে সহায়তা করে।
মেথির বীজ অপেক্ষা মেথির বীজের গুড়ো আরো বেশি কার্যকর।
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস মেথির বীজের গুঁড়ো মিশ্রিত পানি খেলে পাতলা পায়খানা সহজে কোন আন্তরিক গোলযোগ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব ।
ঘোল
ঘোল বা মাঠা হলো স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এক ধরনের পানীয় যা পরিপাকতন্ত্র সুস্থ রাখতে খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
ঘরে থাকা ব্যাকটেরিয়া এবং এসিড গুলো রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এবং পাচনতন্ত্র সুস্থ রাখতে ও বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে ।
সাবুদানা
সাবুদানাতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট রয়েছে এবং এটি আমাদের পেটের ব্যথা প্রশমনে সহায়তা করে তার পাশাপাশি হজম শক্তি বৃদ্ধিতেও সাবুদানা কার্যকর ।
প্রতিদিন সকালবেলা সাবুদানা অন্ততপক্ষে তিন ঘন্টা পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে ।
এরপর একটি ছাকনি দিয়ে ছেঁকে সাবুদানা ও পানি আলাদা করতে হবে। চাইলে আপনি এই সাবুদানা আলাদাভাবে রেধেও খেতে পারেন ।
তবে পাতলা পায়খানা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে সাবুদানা মিশ্রিত এই পানি ।
সাবুদানাতে প্রচুর পরিমাণে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে । যা দেহের দূষিত বর্জ্য পদার্থগুলো নিষ্কাশনের সহায়তা করে ।
প্রচুর পরিমাণে তরল পান
সাধারণত যখন কেউ পাতলা পায়খানা বা এ ধরনের আন্ত্রিক গোলযোগে ভোগে তখন তার শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায়। এর জন্য অনেক সময় শরীরে পানি শুন্যতার সৃষ্টি হয় যাকে আমরা বলে থাকি ডিহাইড্রেশন ।
ডিহাইড্রেশন খুবই মারাত্মক একটি সমস্যা । যখন কোন ব্যক্তি ডিহাইড্রেশনে ভোগে তখন সে ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যেতে থাকে এবং এক পর্যায়ের মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ।
পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি ? এই প্রশ্নের সবচেয়ে সহজতর উত্তর হল প্রচুর পরিমাণে ।
পাতলা পায়খানার সমস্যা রোধ করতে প্রতিদিন 8 থেকে 12 প্লাস পানি পান করতে হবে । চাইলে স্বাস্থ্যকর স্যুপ এবং বিভিন্ন ফলের রস পান করা যেতে পারে ।
চাইলে গ্লুকোজ মিশ্রিত পানিও খাওয়া যেতে পারে । যেকোনো ধরনের সফট ড্রিংক থেকে বিরত থাকতে হবে ।
পাতলা পায়খানা নিরাময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবারটি হল ডাবের জল । ডাবের জলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং মিনারেলস রয়েছে ।
যা শরীরকে চাঙা রাখতে সহায়তা করে।
মধু ও পুদিনা
প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ পাতলা পায়খানা অথবা শরীরে পানির ঘাটতি দূর করার জন্য পুদিনা ও মধু ব্যবহার করে আসছে।
মধু ও পুদিনা প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে যা হজমের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে ।
পাতলা পায়খানা থেকে পরিত্রাণ পেতে-
- প্রথমে তাজা পুদিনা পাতা বেটে পুদিনা পাতার রস বের করে নিতে হবে ।
- এরপর তাতে এক চা চামচ মধু এবং এক চা চামচ লেবুর রস যোগ করে, কার সাথে ধিরে ধীরে পানি যোগ করে একটি পানীয় তৈরি করা যেতে পারে । এবং এ পানীয় পাতলা পায়খানা প্রতিরোধ ও ডিহাইড্রেশন থেকে রেহাই পেতে বিশেষভাবে কার্যকর ।
বেলের পাতার পাউডার
আপনার বাসার আশপাশে যদি বেলের গাছ থেকে থাকে তাহলে সেখান থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বেলের পাতা সংগ্রহ করে বেলের পাতার পাউডার তৈরি করতে পারেন । ভবিষ্যতে বেলের পাতার এই পাউডার আপনাকে পাতলা পায়খানার মত ভয়াবহ ব্যাধি থেকে উদ্ধার করতে পারে ।
পাতলা পায়খানা থেকে পরিত্রাণ পেতে দুই চা চামচ বেলার পাতার পাউডার পানির সাথে মিশিয়ে তা নিয়মিত পান করলে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
শুকনো আদার পাউডার
আদায় প্রচুর পরিমাণে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে যা পেট ব্যথা কমাতে সাহায্য করে ।
ঘোলের সাথে শুকনো আদার গুঁড়া মিশিয়ে খেলে তা আরো বেশি কার্যকর হয় ।
পাতলা পায়খানা দেখা দিলে, প্রতিদিন চারবার শুকনো আদার পাউডার সেবন করলে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব ।
যদি কেউ আন্তরিক গোলযোগের কারণে পাতলা পায়খানায় আক্রান্ত হয় তাহলে কোন অবস্থাতেই অবহেলা করা যাবে না। ঘরোয়া চিকিৎসা দেওয়ার পরেও যদি রোগের অবস্থার উন্নতি না ঘটে তাহলে সে ক্ষেত্রে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
সূচীপত্র