কিভাবে টেনশন বন্ধ করতে হয় তার উত্তর আপনার বন্ধু ও পরিবার থেকে পেতে পারেন। সেসব টেনশনগ্রস্ত বন্ধুর সঙ্গ এড়িয়ে চলুন, যাদের আপনার মতোই অতিচিন্তার প্রবণতা রয়েছে। হার্ভার্ডের ৮০ বছরের গবেষণায় পাওয়া যায়, ভালো সম্পর্ক মানুষকে সুস্থ ও সুখে রাখে। ইতিবাচক লোক আপনাকে ইতিবাচক ভাবনায়ও সাহায্য করতে পারে।
টেনশন দূর করার উপায়
মেডিটেশন: মানসিক চাপ দূর করে মনকে শান্ত করার জন্য মেডিটেশন একটি অত্যন্ত কার্যকরী ব্যায়াম। কার্নেগী মেলন বিশ্ববিদ্যালয় এর এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ২৫ মিনিট করে টানা ৩ দিন মেডিটেশন করলে তা হতাশা এবং দুশ্চিন্তা অনেকখানিই দূর করতে সহায়তা করে। ড. হেফনার বলেন, “ইয়োগা, ধ্যান ইত্যাদি শরীরে দুশ্চিন্তা সৃষ্টিকারী হরমোনের পরিমাণ কমিয়ে ফেলে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়
নিজেকে ব্যস্ত রাখুন: দুশ্চিন্তাকে মাথা থেকে দূরে রাখতে হলে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। আপনার মস্তিষ্ক এবং হাত ব্যস্ত থাকে এমন কোন কাজ করুন যেমন গেম খেলুন বা কোন হস্তশিল্প তৈরি করুন। বলা হয়ে থাকে, “অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।” এটি কিন্তু বাস্তবিকই সত্য। আপনি কোনো কাজ না করে অলসভাবে শুয়ে বসে থাকলে হতাশা আর দুশ্চিন্তা আপনাকে ঘিরে ধরবে- এটাই স্বাভাবিক। তাই যে কোনো প্রোডাক্টিভ কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।
ক্ষোভ ঝেড়ে ফেলুন: মনের মধ্যে ক্ষোভ জমা করে রাখার অভ্যাস কখনোই হৃদযন্ত্রের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। নিউরোসায়েন্স এর এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ক্ষমা করার পরিবর্তে ক্ষোভ জমা করে রাখলে মানসিক চাপ বেড়ে যায় এবং সেই করণে হৃদরোগে আক্রান্তর হার বাড়ে যায়।
সচেতন হোন: টেনশন থামানোর প্রথম পদক্ষেপ হলো, যখন কোনোকিছু করবেন তা সম্পর্কে জানা। মানসিক চাপ অথবা উদ্বিগ্নতা অনুভব করলে ঠান্ডা মাথায় পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে আপাতত কাজটি বন্ধ রাখুন। মনোবিজ্ঞানী অ্যামি মরিন সাইকোলজি টুডেতে লিখেন, ‘আপনি অবশ্যই এ ধরনের ভাবনাকে অপ্রয়োজনীয় বা নিষ্ফলা হিসেবে স্বীকৃতি দেবেন।’ আপনার টেনশন শনাক্ত করতে পারলে প্রায়সময় দুশ্চিন্তা থামাতে সক্ষম হবেন।
কারো মতামত গ্রহণ করুন: আপনি কোনো কাজ বা পরিকল্পনার ব্যাপারে নিজের মতো করে চিন্তা করতে অভ্যস্ত। যে বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন সে বিষয়ে অন্য কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারেন এবং তিনি কি বলেন দেখতে পারেন। দুশ্চিন্তা শিকড় উপড়ে ফেলতে চাইলে আপনার জন্য থেরাপিস্ট প্রয়োজন হতে পারে। হেলথলাইনের প্রতিবেদন অনুসারে, একজন থেরাপিস্ট কোনোকিছু নিয়ে আপনার অতিচিন্তার মূল কারণ শনাক্তকরণে সাহায্য করতে পারেন।
মনের অস্থিরতা দূর করার উপায় খুঁজুন: আপনাকে দুশ্চিন্তা গ্রাস করতে থাকলে কোথাও থেকে ঘুরে আসুন অথবা বাড়ির ছাদ, মাঠের সবুজ দৃশ্য দেখতে যান। গবেষণায় পাওয়া গেছে, নতুন ভ্যান্টেজ পয়েন্ট (যেখানে থেকে দৃষ্টি ফেলে অনেক কিছু দেখা যায়) অথবা আকর্ষণীয় স্থানে ভ্রমণ নিষ্ফলা চিন্তার প্রক্রিয়া ধ্বংস করতে যথেষ্ট। আপনার মনের বিক্ষিপ্ততা দূর করতে নতুন কোনো শখেও ব্যস্ত হতে পারেন, যেমন- দৌঁড়ানো, নৃত্য করা, কাপড় বোনা অথবা কোনো যন্ত্র সম্পর্কে জানা। দুশ্চিন্তা যত বেশি এড়ানোর চেষ্টা করবেন, মনের অশান্তি তত কমে যাবে। আপনার শক্তিকে ইতিবাচক ভাবনায় প্রবাহিত করার একটি ভালো উপায় হলো কোনো বিশেষ কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকা।
দুশ্চিন্তা না করার বিষয়টি লিখে রাখুন: দুশ্চিন্তার দুষ্টু চক্র থেকে বের হওয়ার উদ্দেশ্যে আপনার ডেস্ক অথবা বাথরুমের আয়নার ওপর অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা না করার বিষয়টি লিখে রাখতে পারেন। সহজেই চোখে পড়ায় এটি দুশ্চিন্তা হ্রাস করতে সাহায্য করবে।
ট্রাপিজিয়াম কাকে বলে? ট্রাপিজিয়ামের বৈশিষ্ট্য ও প্রকার
নিখুঁতবাদী হবেন না: পরিকল্পনা মতো সবকিছু হুবহু একই রকম হয় না এবং এমনটা আমাদের সবার ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। সবকিছু নিখুঁত হতে হবে এমন ভাবনা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। সবকিছু নিখুঁত হওয়ার চেয়ে কাজ বা পরিকল্পনার অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট হতে পারাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নিখুঁতবাদিতার স্বভাব বর্জনে কেন, কিভাবে ও উচিত চক্র থেকে রেহাই পাবেন, যা মানসিক প্রশান্তি আনয়নে ভূমিকা রাখে, আমেরিকার উদ্বেগ ও বিষণœতা সংস্থার (এডিএএ) মতে। যদি আপনি নিখুঁতবাদী হয়ে থাকেন, তাহলে সম্ভবত কিভাবে দুশ্চিন্তা থামাতে হয় তা নিয়েও সবসময় চিন্তা করবেন!
সন্তোষজনক সমাপ্তি কল্পনা করুন: কোনো ইতিবাচক ফলাফলের জন্য প্রার্থনা করলে অথবা ধ্যানে ইতিবাচক ফলাফলের মনছবি দেখলে বিভ্রান্তিকর বা নেতিবাচক ভাবনা প্রতিরোধ হয়। ভবিষ্যতে সন্তোষজনক ফলাফলের কথা কল্পনা করলে উদ্বেগ হ্রাস পায় ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। এডিএএ উলেখ করেছে, মনের অস্থিরতা দূর করার একটি চমৎকার উপায় হলো প্রার্থনা বা ধ্যান।
ভুলকে মেনে নিন: মাঝেমাঝে আপনি মনে করেন যেন একাজটি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ না করলে সঠিক হবে না। এটি আপনার কাঁধের ওপর খুব বেশি দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়। এটা মেনে নিন যে ভুল হওয়া স্বাভাবিক। ভুল হওয়া মানেই ধ্বসে যাওয়া নয়। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ রয়েছে। আপনি অবশ্যই অ্যানালাইসিস প্যারালাইসিস এড়িয়ে যাবেন। কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে অত্যধিক বিশ্লেষণ বা ভাবনার ফলে কাজ শুরু করতে যে অক্ষমতা সৃষ্টি হয়, তাকে অ্যানালাইসিস প্যারালাইসিস বলে। গবেষণা বলছে যে, এটি সবধরনের সমস্যা-সমাধানে হস্তক্ষেপ করে। তাই ভুল হতেই পারবে না এমন ধারণা থেকে বেরিয়ে আসুন।
টেনশনমুক্ত বা দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে যা যা করবেনঃ
১। ধারণ করুন: আপনার খুব বেশি পরিমাণে টেনশন হয়ে থাকলে আপনি কখনই এটিকে বাদ দিয়ে চিন্তা করতে পারবেন না। এ কারণে যতটা সম্ভব প্রথমে টেনশন গুলোকে ধারণ করুন। বোঝার চেষ্টা করুন যে, এই টেনশন গুলো কেন হচ্ছে, কী কারণে হচ্ছে এবং এটি থেকে কিভাবে মুক্ত হওয়া যায়? ঠান্ডা মাথায় সেই ভাবে অগ্রসর হন।
২। আলোচনা করুন: কারও সাথে যদি আপনার দুশ্চিন্তার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন তাহলে দেখা যাবে যে আপনার মন অনেক হালকাবোধ হবে। অন্যের পরামর্শ সমালোচনায় আমরা টেনশন বিষয়গুলোর সমাধান পেতেও পারেন
৩। বিশ্রাম নিন: দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষ সাধারণত বিশ্রাম নিতে পারেন না। কেননা তাদের টেনশনে ঘুমই আসে না, এমনকি শুয়ে থেকেও ছটফট করেন। এমতাবস্থায় মনটাকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এনে বিশ্রাম নিতে পারেন। মনোযোগ রেখে বিশ্রাম নিলে এটি কিছুটা হলেও মানসিকভাবে প্রশান্তি পাওয়া যাবে।
৪। নিজের সাথে কথা বলুন: নিজেই যদি নিজের সাথে কথা বলেন তাহলে অনেক জটিল প্রশ্নেরও উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়। এ কারণে আপনার দুশ্চিন্তার সমাধানে নিজের সাথে নিজেই অনেক্ষণ কথা বলুন। যেকোনো বিষয় নিয়েই কথা বলতে পারেন। এতে ভালো ফলাফল পাবেন। এছাড়া টেনশনের কোনো ঔষধ আবিষ্কৃত হয় নাই।