ওমরাহ করার নিয়ম: ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মক্কা প্রাঙ্গনে কাবা শরীফ জিয়ারতকে বলা হয় ওমরাহ। মুসলমানরা হজ্জের মৌসুমে হজ্জ করে থাকেন । সামরথ্যবান মুসলমানদের জন্য একবার হজ্জ করা ফরজ হলেও, সে তার জীবনদশায় যতোবার খুশী ওমরাহ করতে পারবেন। ওমরাহ করার কিছু বিধিবদ্ধ নিয়ম রয়েছে। রাসুল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই নিয়মগুলি তার উম্মতের জন্য রেখে গিয়েছেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক ওমরাহ করার নিয়ম সমূহ !
ওমরাহ করার নিয়ম-
ওমরাহ হজ্জের মোট ৪ টি কাজ বিধিবদ্ধ। তার মধ্যে ২ টি ফরজ ও ২টি ওয়াজিব।
ওমরাহর ফরজ-
নিম্নে ফরজগুলো বর্ননা করা হলোঃ
ইহরাম পরিধান করাঃ
ইহরাম শব্দের অর্থ সংকল্প করা । ইহরামের মাধ্যমেই হজ্জ বা ওমরাহ হজ্জের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ওমরাহ হজ্জের প্রথম ফরজ হলো ইহরাম বাধা।
ইহরাম বাধার আগে বেশ কিছু কাজ রয়েছে যেগুলো সুন্নাত বলে বিবেচিত। যেমনঃ
- গোসল করা
- হাত পায়ের নোখ যদি বড় হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই সেগুলো কর্তন করতে হবে ।একজন মুসলমান হিসেবে এগুলো সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
- নাভির নিচের লোমগুলো পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
- চুল ছাটতে হবে , অথবা মাথার সমস্ত চুল ফেলে দিতে হবে। ২য় টা করা সর্বোত্তোম। নারীরা তাদের চুলের গোড়ার দিকের অংশ ছেটে ফেলবেন।
- ইহরাম বাধার অর্থই হলো সাদা সেলাইবিহীন কাপড় পরিধান করা। তার আগে কাবা শরীদের দিকে মুখ করে ওমরার নিয়ত করতে হবে।
- কেও চাইলে ওমরার পোষাক পরিধান করার পূর্বে দাড়িতে অথবা শরীরে খুশবু ব্যবহার করবে।
- ওমরাহর উদ্দেশ্যে ইহরাম করার একটি দোয়া রয়েছে। দোয়াটি হলোঃ اللهم إني أريد العمرة فيسرها لي و تقبلها مني (আল্লাহুম্মা ইন্নি উরিদুল উমরাতা ফা-ইয়াসসিরহা লি ওয়া তাকাব্বালহা মিন্নি।)
- এর পর বলতে হবে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা ওমরতান/ওমরাহ (অর্থ হে আল্লাহ, ওমরাহকারী হিসেবে আপনার দরবারে হাজির)।
ইহরাম বাধার পর থেকে কোনো রূপ প্রানী হত্যা করা যাবে না। এবং কোনো যৌন উত্তেজক কথা বার্তা বলা যাবে না।
কাবাঘর তাওয়াফ করা
যেমনটা কি আমরা প্রথমেই বলেছিলাম যে, উমরাহ করার মূল উদ্দেশ্য হলো কাবাঘর জিয়ারত করা। উমরাহ হজ্জের ২য় ফরজ হলো কাবাঘর তাওয়াফ করা ।
- প্রথমে মাসজিদুল হারামে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করতে হবে।
- এরপর থেকেই পড়তে হবে এই দুয়াটিঃ বিসমিল্লাহি ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহ। আউজু বিল্লাহিল আজিম ওয়া বি-ওয়াজহিহিল কারিম, ওয়া সুলতানিহিল কাদিম; মিনাশ শায়তানির রাজিম। আল্লাহুম্মাফ তাহলি আবওয়াবা রাহমাতিকা।’
- এরপর থেকে তাওয়াফ শুরু করতে হবে। ধিরে ধিরে হাজরে আসওয়াদের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
- চেষ্টা করতে হবে আজরে আসওয়াদে চুমু খাওয়ার। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে অন্তত তা হাত দিয়ে স্পর্শ করতে হবে। সেটিও যদি সম্ভপর না হয় তবে হাজরে আসওয়াদের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করতে হবে।
এরপর ডান দিকে তাওয়াফ করতে হবে। রুকনে ইয়ামেনিতে আসার পর সেখানে হাত দিয়ে স্পর্শ করতে হবে। তবে যদি তাও সম্ভব না হয় তাহলে তাওয়াফ চালিয়ে যেতে হবে,কিন্তু কোনো অবস্থাতেই ভির করা যাবে না। এ সময় এই দোয়াটি পড়া যেতে পারে ‘রাব্বানা আতিনা ফিদদুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াক্বিনা আজাবান নার।’
শুক্রবারের আমল ও জুম্মার জন্য কিছু সুন্নত !
উমরাহ এর ওয়াজিব
সাফা মারওয়া সাঈ করতে হবে
- তাওয়াফ শেষ করে ধিরে দিরে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হতে হবে। সেখানে সাফা ও মারওয়া পাহাড় মোট ৭ বার প্রদক্ষিন করতে হবে। সেখানে পৌছে বলতে হবে,নাবদাউ বিমা বাদাআল্লাহু বিহি। অর্থ : আল্লাহ যা দিয়ে শুরু করেছেন আমরাও তা দিয়ে শুরু করছি।
- প্রথমে সাফা পাহাড়ে যেতে হবে। এরপর কাবা শরীফের দিকে মুখ করে বলতে হবে আলহামদুলিল্লাহি আল্লাহু আকবার।
- কাবা নজরে এলে এই দোয়া পড়তে হবে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহ। লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহ, আনজাজা ওয়াদাহ, ওয়া নাসারা আবদাহ, ওয়া হাজামাল আহজাবা ওয়াহদা।
- এরপর মারওয়া পাহাড়ের দিকে রওনা হতে হবে।
- মারওয়া পাহাড়ে পৌছোনের পরে সাফা পাহাড়ে যা যা বলা হয়েছে – মারওয়া পাহাড় তাই তাই বলা লাগবে।
- এভাবেই ৭ বার প্রদক্ষিন করে সাফা মারওয়া প্রক্ষিন সম্পন্ন করতে হবে।
মাথা মুন্ডন করা বা চুল ছোটো করে ফেলা
এটি হলো উমরাহ হজের সর্বশেষ ধাপ বা ওয়াজিব।
- সাতবার সাই বা চক্কর দেওয়া শেষ হলে পুরুষ হলে মাথার সব ফেলে দিতে হবে,অর্থাত মাথা মুন্ডন করতে হবে । আর মেয়ে হলে আঙুলের এক কর পরিমান মাথার চুল কেটে ফেলতে হবে।
- এবং এভাবেই ওমরা হজ্জের সমাপ্তি ঘটবে।
আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে এই পবিত্র উমরা পালনের তৌফিক দান করুন – আমিন !
সূচীপত্র