সমাস কাকে বলে ও সমাস কত প্রকার?

সমাস কথাটির অর্থ সংক্ষেপণ বা একাধিক পদের একপদীকরণ। আমাদের সবার জন্য সমাস কাকে বলে ও কত প্রকার? বিষয়টি জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ। niyoti.com ওয়েবসাইটে আপনি বিভিন্ন প্রশ্নের উক্তর খুঁজে পাবেন, যা  জেনে অনেক উপকৃত হতে পারেন। আশা করছি এটি আপনাকে খুব ভালোভাবে সাহায্য করবে।

সমাস

সমাস হল দুই বা একাধিক শব্দের যুক্তিকরণ যা একক শব্দ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এই শব্দগুলির মধ্যে অবশ্যই একটি মুখ্য শব্দ থাকে এবং অন্য শব্দগুলি তার সাথে সমন্বয় করে একটি নতুন শব্দ উত্পন্ন করে।

সমাস কাকে বলে – অর্থের দিক থেকে মিল আছে এমন দুই বা ততোধিক শব্দ মিলে একটি শব্দ হওয়ার প্রক্রিয়াকে সমাস বলে।

এভাবেও বলা যেতে পারে সমাস কাকে বলে ,বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত অর্থসম্বন্ধযুক্ত একাধিক পদের একটি পদে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়াকে সমাস বলে। সমাসের রীতি সংস্কৃত থেকে বাংলায় এসেছে। যেমন: দোয়াত ও কলম = দোয়াতকলম, পীত অম্বর যার = পীতাম্বর।

সমাসের সংক্ষিপ্ত সংজ্ঞা হলো – দুই বা ততোধিক পদ মিলিত হয়ে এক পদে পরিণত হওয়াকে সমাস বলে।

পরিশেষে বলা যায় যে সমাস কাকে বলে বিষয়টি সুন্দরভাবে বুঝতে পারছেন । এছাড়া বুঝতে সমস্যা হলে  নিচে কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে কমেন্ট করে সমস্যাটি জানানোর অনুরোধ রইলো। আর যদি সমাস কাকে বলে এটি ভালো ভাবে বুঝে থাকেন তা হলেও মন্তব্য করতে পারেন।

আয়তক্ষেত্র কাকে বলে

সমাসের প্রকার

সমাস কত প্রকার তা নিম্নরুপঃ সমাস ছয় প্রকার যথা:

১. দ্বন্দ্ব সমাস

যে সমাসে দুই বা ততোধিক পদের মিলন হয় এবং সমস্যমান পদের অর্থ প্রধান থাকে তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমন: মা ও বাবা = মা-বাবা; দা ও কুমড়া= দা-কুমড়া; জন্ম ও মৃত্যু= জন্ম-মৃত্যু।

সমাসের একটি ধরণ যেখানে দুটি শব্দ একসাথে যুক্ত হয়ে একটি নতুন শব্দ উত্পন্ন করে। এই ধরণের সমাসে উভয় শব্দের অর্থ একই থাকে এবং শব্দের সাথে সমান্তর অর্থ থাকে। কিছু উদাহরণ নিচে দেয়া হলোঃ

  1. রাম-শ্যাম (Ram-Shyam)
  2. জর্জ-মার্থা (George-Martha)
  3. আলু-দম (Alu-Dam)
  4. আম-পেঁপে (Am-Pepe)
  5. সিঁড়ি-নাচ (Sinduri-Nach)
  6. চা-বিস্কুট (Cha-Biscuit)
  7. খাম-চাচা (Kham-Chacha)
  8. সুবর্ণ-সিঁদুর (Subarna-Sindur)
  9. আবহ-বিক্রি (Abhobhikri)
  10. বাকা-খাওয়া (Baka-Khawa)

উপরে উল্লেখিত শব্দগুলি সমস্ত দ্বন্দ্ব সমাসের উদাহরণ। উদাহরণস্বরূপ সিঁড়ি-নাচ শব্দটি দুটি বাংলা শব্দের যুক্তিকরণ হয়ে একটি নতুন শব্দ উত্পন্ন করে এবং এর অর্থ হল ‘সিঁড়ি নাচ করা’। একইভাবে, বাকা-খাওয়া শব্দটি দুটি।

২. দ্বিগু সমাস

যে সমাসের পূর্ব পদে সংখ্যাবাচক শব্দ সমাহার বা মিলন অর্থে থাকে এবং তারপর বিশেষ্য পদের সঙ্গে মিলে যে সমাস হয় তাকে দ্বিগু সমাস বলে। যেমন: চৌ রাস্তার সমাহার = চৌরাস্তা; তিন মাথার সমাহার= তেমাথা; সপ্ত অহের সমাহার= সপ্তাহ।

দুইটি শব্দের যুক্তিকরণ দ্বারা একটি শব্দ উত্পন্ন হয় যা দুইটি শব্দের মধ্যে গুণফলসূচক অর্থ নিয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ কিছু দ্বিগু সমাস হলঃ

১. শ্বেতপদার্থ (শ্বেত + পদার্থ) – যা মাথার একটি ধরণ এবং এর উপর পড়া হয়।

২. সমুদ্রতট (সমুদ্র + তট) – যা সমুদ্রের সীমানান্তর অংশ বোঝায়।

৩. অগ্নিকুন্ড (অগ্নি + কুন্ড) – যা অগ্নির ব্যবহারের জন্য নির্মিত একটি পিঠ।

৪. বিষধারা (বিষ + ধারা) – যা বিষ নিয়ে কথা বোঝায়।

৫. আকাশপাতাল (আকাশ + পাতাল) – যা আকাশের উপর এবং এর নীচের অংশকে বোঝায়।

৬. মৃত্যুশমাশান (মৃত্যু + শমাশান) – যা শব নিয়ে কথা বোঝায়।

উপরে উল্লিখিত সমস্ত উদাহরণগুলি দ্বিগু সমাসের উদাহরণ। এখানে দুইটি শব্দের যুক্তিকর।

৩. কর্মধারয় সমাস

যেখানে বিশেষণ বা বিশেষণভাবাপন্ন পদের সঙ্গে বিশেষ্য বা বিশেষ্যভাবাপন্ন পদের সমাস হয় এবং পরপদের অর্থ প্রধান থাকে তাকে কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন: যিনি দাদা তিনি সাহেব= দাদা-সাহেব; মহান যে নবী = মহানবী; সিংহ চিহ্নিত আসন= সিংহাসন।

যেখানে প্রথম শব্দটি কর্মকে বোঝায় এবং দ্বিতীয় শব্দটি সম্প্রসারণ করে। কর্মধারয় সমাসের কিছু উদাহরণ হলঃ

১. সেচবন্দী (সেচ + বন্দী) – যা সেচ করা যায় এবং বন্দীবদ্ধ করা যায়।

২. লেখপত্র (লেখ + পত্র) – যা লেখা এবং প্রেরণকৃত পত্রকে বোঝায়।

৩. দুগ্ধপান (দুগ্ধ + পান) – যা দুগ্ধ পান করা যায়।

৪. চক্ষুদান (চক্ষু + দান) – যা চোখের দ্বারা দেখা দেওয়া এবং দান করা যায়।

৫. সমাচারপত্র (সমাচার + পত্র) – যা সমাচার বিষয়ক পত্রিকা বোঝায়।

৬. নিবন্ধকর্তা (নিবন্ধন + কর্তা) – যা নিবন্ধন করা এবং নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

৪. তৎপুরুষ সমাস

পূর্বপদের বিভক্তি লোপ পেয়ে যে সমাস হয় এবং যে সমাসের পরপদের অর্থ প্রধান থাকে তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন: মধু দিয়ে মাখা= মধুমাখা; মেঘ থেকে মুক্ত= মেঘমুক্ত।

যেখানে প্রথম শব্দটি উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি বা জীবন্ত পদার্থকে বোঝায় এবং দ্বিতীয় শব্দটি প্রধান বাক্যের অন্য অংশকে সংযুক্ত করে। কিছু তৎপুরুষ সমাসের উদাহরণ নিচে দেওয়া হলঃ

১. নদীমুখ (নদী + মুখ) – যা নদীর মুখ বোঝায়।

২. গোপীমণি (গোপী + মণি) – যা গোপীদের মণি বোঝায়।

৩. ভৃষ্টিপাত (ভৃষ্টি + পাত) – যা বৃষ্টিকে পাত বলে বোঝায়।

৪. মধুপুরী (মধু + পুরী) – যা মধুর পুরী বোঝায়।

৫. চিত্রময় (চিত্র + ময়) – যা চিত্রময় বলে বোঝায়।

৬. সৌরজগত (সৌর + জগত) – যা সৌরজগত বলে বোঝায়।

উপরে উল্লিখিত সমস্ত উদাহরণ তৎপুরুষ সমাসের উদাহরণ। এখানে প্রথম শব্দটি উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি বা জীবন্ত পদার্থক

৫. অব্যয়ীভাব সমাস

যে সমাসে পূর্বপদে অব্যয় থাকে এবং অব্যয়ের অর্ধ প্রধান হয় তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে। যেমন: কূলের সমীপে= উপকূল; গ্রহের ক্ষুদ্র= উপগ্রহ; মরণ পর্যন্ত= আমরণ।

যেখানে প্রথম শব্দটি অব্যয়ের প্রকার বোঝায় এবং দ্বিতীয় শব্দটি প্রধান বাক্যের অন্য অংশকে সংযুক্ত করে। কিছু অব্যয়ীভাব সমাসের উদাহরণ নিচে দেওয়া হলঃ

১. নির্বাচনপত্র (নির্বাচন + পত্র) – যা নির্বাচনের পত্র বোঝায়। এখানে ‘নির্বাচন’ শব্দটি অব্যয়।

২. নিষ্কর্ষণকারী (নিষ্কর্ষণ + কারী) – যা নিষ্কর্ষণকারী বলে বোঝায়। এখানে ‘নিষ্কর্ষণ’ শব্দটি অব্যয়।

৩. নিয়ন্ত্রকবিহীন (নিয়ন্ত্রক + বিহীন) – যা নিয়ন্ত্রকবিহীন বলে বোঝায়। এখানে ‘নিয়ন্ত্রক’ শব্দটি অব্যয়।

৪. অচলচঞ্চল (অচল + চঞ্চল) – যা অচলচঞ্চল বলে বোঝায়। এখানে ‘অচল’ শব্দটি অব্যয়।

৫. প্রবৃদ্ধস্বরের (প্রবৃদ্ধ + স্বর) – যা প্রবৃদ্ধস্বরের বলে বোঝায়

৬. বহুব্রীহি সমাস

যে সমাসে পর্বপদ বা পরপদের কোন অর্থ না বুঝিয়ে তৃতীয় কোনো অর্থ প্রকাশ করে তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন: আশিতে বিষ যার= আশীবিষ; নীল কণ্ঠ যার= নীলকণ্ঠ; ঘরের দিকে মুখ যার= ঘরমুখো ।

যেখানে কোন একটি শব্দ দ্বারা একাধিক শব্দের সমন্বয় করা হয়। একটি উদাহরণ দেওয়া যাকঃ

কম্পিউটারবিজ্ঞান (কম্পিউটার + বিজ্ঞান) – যেখানে ‘কম্পিউটার’ ও ‘বিজ্ঞান’ দুটি শব্দের সমন্বয়ে একটি নতুন শব্দ উত্পন্ন হয়েছে যা কম্পিউটারে বিজ্ঞান প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করে।

মানবতাবাদী (মানবতা + বাদী) – যেখানে ‘মানবতা’ ও ‘বাদী’ দুটি শব্দের সমন্বয়ে একটি নতুন শব্দ উত্পন্ন হয়েছে যা মানবতাবাদী ব্যক্তি নিয়ে সম্পর্কিত।

সাহিত্যচর্চাবিশারদ (সাহিত্য + চর্চা + বিশারদ) – এখানে ‘সাহিত্য’, ‘চর্চা’ এবং ‘বিশারদ’ এই তিনটি শব্দের সমন্বয়ে একটি নতুন শব্দ উত্পন্ন হয়েছে যা সাহিত্য নিয়ে চর্চা করতে বিশারদ ব্যক্তি বুঝায়।

সমাস কাকে বলে ও সমাস কত প্রকার

সমাসের পরিচিতি

সমাস মানে মিলন, সংক্ষেপ,একাধিক পদকে একপদীকরণ করা। আর উদাহরণ দেওয়ার পর তা পরির্পূণ বুঝে আসবে।

যেমন: নেই পরোয়া যার = বেপরোয়া।

দেশের সেবা = দেশসেবা। ইত্যাদি

উপরের উদাহরণ গুলো লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, একটি শব্দ অন্য শব্দের সাথে মিলিত হয়েছে। এবং সমাস নিস্পন্ন পদটি সংক্ষেপ হয়েছে ও একাধিক পদ মিলে একটি পদ হয়েছে।

আর সমাস দ্বরা দুই বা ততোধিক শব্দ মিলে নতুন শব্দ সৃষ্টি করে।

পদ পরিচিতি

রাজার কুমার = রাজকুমার

সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন

সমাসবাক্য/ব্যাসবাক্য

রাজার কুমার, সিংহ চিহ্নিত আসন

সমস্যমান পদ

রাজা কুমার, সিংহ আসন

সমস্ত পদ

রাজকুমার, সিংহাসন

র্পূবপদ উত্তরপদ বা পরপদ

রাজা = কুমার

সিংহ = আসন

সমাস সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তরঃ

সমাস আর এক কথায় প্রকাশ এই দুইটার মধ্যে পার্থক্য কী বা কোথায়?

সরাসরি উত্তরে চলে যাচ্ছি।

একটা উদাহরণ দিই বুঝতে সুবিধা হবে।

মনে করুন, আমি আপনাকে একটি শব্দ বললাম। আর সেটা হচ্ছে

“সিংহাসন”

প্রথমে এই শব্দটাকে সমাসের মাধ্যমে লিখি।

তাহলে এমনটা দাঁড়ায়-সিংহ চিহ্নিত আসন।

এবার, এক কথায় প্রকাশে আসি।

তাহলে ঐ একই শব্দ “সিংহাসন” কে বোঝায় এমন কিছু যেখানে সম্রাট /রাজা/ শাসক এর বসার স্থান এরকম কিছু।

তাহলে কী দাঁড়ালো?

দুই ক্ষেত্রেই সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করা হলেও,

এক কথায় প্রকাশের মাধ্যমে সরাসরি একটি বাক্যকে এক শব্দে প্রকাশ করা হয়েছে।

অপরদিকে, সমাসের মাধ্যমে অন্তর্নিহিত ভাব বা রূপক অর্থকে এক শব্দে প্রকাশ করা হয়েছে।

দ্বন্দ সমাস চেনার উপায় কি?

১. দ্বন্দ্বসমাসের প্রধান ও অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে জোড়া শব্দ। যেমন: চাচাচাচী, ভাইবোন ইত্যাদি।

২. এক্ষেত্রে বাক্যের পূর্বপদ ও পরপদ একই বিভক্তিযুক্ত হয়ে থাকে। যেমন: পড়াশুনা। (আ বিভক্তি যুক্ত)

৩. প্রায় সমার্থক যেসকল জোড়া শব্দ থাকে সেগুলোও দ্বন্দ্বসমাস হয় । যেমন: হাটবাজার।

৪. বিপরীতার্থক শব্দ থাকলে তা দ্বন্দ্বসমাস হতে পারে। যেমন: ছেলে- মেয়ে ।

৫.দুটি জোড়া সর্বনাম দিয়েও দ্বন্দ্বসমাস প্রকাশ করা হয়ে…

পরিশেষে বলা যায় যে সমাস কাকে বলে ও কত প্রকার? বিষয়টি সুন্দরভাবে বুঝতে পারছেন । এছাড়া বুঝতে সমস্যা হলে  নিচে কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে কমেন্ট করে সমস্যাটি জানানোর অনুরোধ রইলো। আর যদি সমাসকাকে বলে ও কত প্রকার? এটি ভালো ভাবে বুঝে থাকেন তা হলেও মন্তব্য করতে পারেন।

Leave a Comment