তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম,ফজিলত, নিয়ত ও সময়

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছি যারা তাহাজ্জুদ নামাজ কিভাবে পড়তে হয় জানিনা। তাই আজকে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, নিয়ত, ফজিলত, সময় ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে বিস্তারিত লিখার চেষ্টা থাকবে আমাদের এই আলোচনায়। তাহাজ্জুদ নামাজের রাকাত সংখ্যা সাধারণত দুই। এটি নফল নামাজের একটি ধরণ। এই নামাজের রুকু, সজদা এবং তশহুদ পর্যন্ত সাধারণত সমস্ত নামায এর মতই।

তাহাজ্জুদ নামাজ কি

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম জানার আগে আমাদের জানতে হবে তাহাজ্জুদ নামাজটা আসলে কি। এটা কি অন্যান্য নামাজের মতই নাকি আলাদা। তাহাজ্জুদ নামাজ আসলে একটি নফল নামায যা রাতের অন্তর্ভুক্ত সময় পড়া হয়। এটি সাধারণত ইশার নামায়ের পরে ভোর হওয়ার আগের সময়। নামাজের সময়টি আরবি ক্যালেন্ডারের নির্ধারিত রাতের অন্তর্ভুক্ত সময় হল মীম নাইট।

তাহাজ্জুদ (تهجد‎‎) শব্দের অর্থ ঘুম থেকে জাগা। ফরয নামাজের পর অন্যান্য সুন্নাত ও নফল সব নামাযের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ফজিলত সবচেয়ে বেশী বলে গন্য করা হয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর ওপর এটি বাধ্যতামূলক ছিল।

তাই রাসুলুল্লাহ (সাঃ) জীবনে কখনো তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকেন নি। তবে উম্মতে মুহাম্মদির জন্য এটা সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা অর্থাৎ এ নামাজ আদায় করলে অশেষ পুণ্য লাভ করা যায়। তবে আদায় করতে না পারলে কোনো গুনাহ হবে না।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

এটি রাতের শেষ পর্যন্ত পড়া যায়। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সাধারন নামাজের মতই।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাহাজ্জুদ নামাজ দুই রাকাত দুই রাকাত করে আদায় করতেন। তিনি কখনো ৪ রাকাত, কখনো ৮ রাকাত এবং কখনো ১২ রাকাত পড়েছিলেন। কিন্তু কেউ যদি এই নিয়ম এ বা ২ রাকাত আদায় করেন, তাহলেও তার তাহাজ্জুদ আদায় হবে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি এশার পর দুই বা ততোধিক রাকাত নামাজ পড়ে নেয়, সে হবে তাহাজ্জুদের ফজিলতের অধিকারী।”

যে কোনো সুরা দিয়েই এ নামাজ পড়া যায়। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যথাসম্ভব লম্বা কেরাত, লম্বা রুকু ও সেজদা সহকারে একান্ত নিবিষ্ট মনে আদায় করতেন। তাই লম্বা কেরাতে আদায় করা উত্তম। কেরাত উঁচু বা নিচু উভয় আওয়াজে পড়া জায়েজ আছে। তবে কারও কষ্টের কারণ হলে চুপিচুপি পড়া কর্তব্য।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সমূহ: 

  • প্রথমে তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নিয়ত বাঁধতে হবে।
  • এরপর ছানা পড়তে হবে।
  • এরপর সুরা ফাতেহা পড়তে হবে।
  • এরপর সুরা যেকোনো পড়া। তথা কেরাত পড়া।
  • অন্যান্য নামাজের ন্যায় রুকু, সেজদা আদায় করতে হবে।
  • এভাবেই দ্বিতীয় রাকাআত আদায় করে তাশাহহুদ, দরূদ ও দোয়া মাছুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করতে হবে।

এভাবে দুই দুই রাকাআত করে ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা উত্তম। (বিঃদ্রঃ– যদি এশার নামায পরে বিতরের নামায পড়ে থাকেন, তবে তাহাজ্জুত নামায পড়ার পড়ে বিতর নামায পড়ার দরকার নেই। তখন ২ রাকাত থেকে শুরু করে ৮রাকাত

আরো জানুন;- শবে বরাতের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত


মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া পুরুষ ও মহিলা দুজনেই করতে পারে। তবে মহিলাদের নিজেদের সামনের সমস্যার জন্য এর নিয়ম কিছুটা পুরুষের তুলনায় ভিন্ন হতে পারে। মহিলারা নামাজের সময় পরদা পরিধান করে রাখতে হবে। এছাড়া মহিলাদের জন্য নিচে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম দেওয়া হলোঃ

১। নামাজ শুরু করার আগে ও নিয়ত করার সময় মহিলারা নামাজ সম্পূর্ণ করতে পারে তবে দুটি পাদ নামাজ একসাথে না পড়তে হবে।

২। পরে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে।

৩। তারপরে সূরা আল-মুজাদিলা পড়তে হবে।

৪। পরে তাহাজ্জুদ নামাজের দুরুদ শরীফ পড়তে হবে।

৫। মহিলাদের জন্য নামাজ শেষে তাসবীহ পড়া প্রস্তাবিত নয়।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে মিজানুর রহমান আজহারী এর ভিডিও

তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পর্কে মিজানুর রহমান আজহারী ভিডিও তে মূল্যবান তথ্য দিয়েছেন। তাহাজ্জুদ নামাজ ইসলামিক নামাজের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নামাজ। এটি রাতের শেষ পর্যন্ত পড়া যায়।

ভিডিও

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে মিজানুর রহমান আজহারী এর ভিডিও

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার আগে সম্মান এবং ভাবগুলো মনে রাখতে হবে যেন প্রতিটি নামায় সঠিক নিয়ম এ আদায় করা যায়। আপনি নিচের নিয়তটি পাঠ করতে পারেন:

আরবি নিয়ত: نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ رَكَعَتِى التَّهَجُّدِ – اَللهُ اَكْبَر

অর্থ : দুই রাকাআত তাহাজ্জুদের নিয়ত করছি.. অতঃপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নিয়ত বেঁধে নামাজ পড়া।

তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত

বাংলা নিয়ত: “নাওয়াযে সল্লা্তুল তাহাজ্জুদি সুন্নাহ আদায় করছি আল্লাহর জন্য যার মাধ্যমে আমি জান্নাতের পথে আগাম করতে চাই।”

আপনি যদি এই নিয়ত না জানেন তবে আপনি শুধুমাত্র মনে রাখতে পারেন যে আপনি তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ছেন আল্লাহর জন্য।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত আরবিতে বাংলা উচ্চারণ

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত করা হলে নিম্নলিখিত উপযুক্ত ফরমুলা ব্যবহার করা হয়:

“أُصَلِّيَ رَكْعَتَيْنِ التَّهَجُّدِ سُنَّةً لِلَّهِ تَعَالَى”

উচ্চারণঃ উসলিযা রাকাঅতাইনি তাহাজ্জুদি সুন্নতালিল্লাহি তাআলা।

অর্থঃ আমি আল্লাহর জন্য তাহাজ্জুদ নামাজের দুটি রাকাত সুন্নত পাঠ করছি।

এটি নামাজের প্রথম রাকাতে পড়া হয়। নামাজের দ্বিতীয় রাকাতে আপনার ইচ্ছে মত সূরা পাঠ করতে পারেন। তবে আমরা সাধারণত সূরা আল-ইখলাস বা সূরা আল-কাফিরুনি পাঠ করি।

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত 

তাহাজ্জুদ নামাজ ইসলামিক ধর্মে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নামাজের মধ্যে একটি। এর ফজিলত এবং গুরুত্ব নিম্নরূপঃ

  • আল্লাহ তাআলা তাহাজ্জুদ নামাজের পড়নকে বেশি পছন্দ করেন। হাদীসে শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “তাহাজ্জুদ নামায নিশাব্দ পথের মতো, নাকি ব্যস্ত পথের মতো”।
  • তাহাজ্জুদ নামাজের পড়ন মানুষকে দুনিয়াও এবং আখিরাতও সম্পর্কে সচেতন করে তুলে দেয়।
  • তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার মাধ্যমে মুসলিম আল্লাহর কাছে নিজের বিপদ, সমস্যা ও ইচ্ছা সম্পর্কে প্রার্থনা করতে পারে এবং তাকওয়ার প্রতিবেদন করতে পারে।
  • তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া মানুষকে আল্লাহর নিকট অবস্থানে তুলে দেয় এবং তাকওয়ারের মাধ্যমে আল্লাহর দয়া ও করুণার উপকারও লাভ করতে পারে।

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সম্পর্কে কোরআনের বাণী

পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন সূরায় এ নামাজের প্রতি তাগিদ দেয়া হয়েছে। যারা বিনা হিসেবে জান্নাতে যেতে পারবেন, তাদের মধ্যে একশ্রেণির মানুষ হলেন তারা, যারা যত্নের সঙ্গে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন।

কুরআন কারীমের মহান আল্লাহতালা রব্বুল আলামীন প্রিয়র নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর উদ্দেশ্যে বলেছেন যে, “ রাত্রের কিছু অংশক তাহাজ্জুদ,ইহা তোমার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করি  তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠা করবে প্রশংসিত স্থানে।- মাকামে মাহমুদে” ( সূরা- ১৭ ইসরা, আয়াতঃ ৭৯)।

আল্লাহ তায়ালা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লামকে বিশেষভাবে রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে চাদর আবৃত, রাতের সালাতে দাঁড়াও কিছু অংশ ছাড়া।’ (সূরা: মুজাম্মিল, আয়াত: ১-২)।

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসের বাণী

হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ইসলামের প্রাথমিক যুগে ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের নির্দেশ দেন। প্রিয় নবীর (সা.) প্রতি কিছু সময় নামাজ পড়ার নির্দেশ ছিল না বরং রাতের কিছু অংশ ছাড়া সারারাত জেগে তাহাজ্জুদ আদায়ের নির্দেশ ছিল।

তাহাজ্জুদ নামাজ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর শ্রেষ্ঠ নামাজ। মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, ‘রমজানের পর সর্বশ্রেষ্ঠ রোজা হলো আল্লাহর মাস মুহাররমের রোজা। আর ফরজ নামাজের পর সর্বশ্রেষ্ঠ নামাজ হলো রাতের (তাহাজ্জুদের) নামাজ।’ (মুসলিম, হাদিস নম্বর : ১১৬৩)।

তিনি আরো বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা প্রতিদিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে নিচের আসমানে অবতরণ করেন এবং বলেন, কে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব! কে আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে দান করব! আর কে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব!’ (বুখারি ও মুসলিম)।

প্রিয়নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পর সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ি, তাবে-তাবেয়িসহ সব যুগের ওলি ও বিদ্বানরা তাহাজ্জুদ নামাজে রাত কাটিয়ে দিয়েছেন।

সালাতুল লাইল বা তাহাজ্জুদ এশার নামাজ আদায়ের পর থেকে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত পড়া যায়। তবে অর্ধ রাতের পর থেকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া ভালো। শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা সর্বোত্তম।

ফজিলত ১

পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতের পরে  আরো যত অন্যান্য সালাত রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম সালাত হচ্ছে তাহাজ্জুদ সালাত। কারণ এই সালাতের ফজিলত অনেক বেশি এবং এই সালাতের উপকারিতা বলে সবার মত নয়। বান্দারা যদি প্রতিদিন তাহাজ্জুদ সালাত পাঠ করে তাহলে সেই বান্দা মহান আল্লাহতায়ালার নিকট যা চাইবে তাই পাওয়া যাবে।

কারণ তাহাজ্জুদ সালাতের সময় পড়া হয় ঠিক সেইসময় মহান আল্লাহতালা সাত আসমানের নিচে বান্দাদের জন্য অপেক্ষা করেন। আর ঠিক সেই সময় যদি তাহাজ্জুদ সালাতের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাআলার নিকট এবং অর্থপূর্ণ প্রার্থনা করেন তাহলে সেটি মহান আল্লাহতালা তাদেরকে পুরস্কারস্বরূপ প্রদান করে থাকেন।

ফজিলত ২

তাছাড়া রমজান মাস হচ্ছে রহমতের শ্রেষ্ঠ মাস। আর এই শ্রেষ্ঠ মাসে তাহাজ্জুদের সময় আরো বরকতময় হয়ে ওঠে। কারণ প্রত্যেক ঈমানদারগণ রোজা রাখার উদ্দেশ্যে সেহেরী জন্য ঘুম থেকে উঠে থাকেন। তাই আপনারা চাইলে সেই সেহরির পূর্বমুহূর্তে ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করার পর সেহরির খাবার খেয়ে ফজরের সালাত আদায় করে নিতে পারেন।

সাধারণভাবে বলতে গেলে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করার সুবর্ণ একটি সুযোগ হচ্ছে রমজান মাস। এই মাসে আপনারা নিয়মিত সালাত আদায় করতে পারবেন এবং নিজেদের ইচ্ছাগুলো মহান আল্লাহ তাআলার নিকট পোষণ করতে পারবেন।

ফজিলত ৩

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাহাজ্জুদ সালাত রাতে আদায় করতেন। আর এই সালাত রাতে আদায় করা সুন্নত এবং অতিরিক্ত হিসাবে নফল। তবে নবীজী (সাঃ) এর ওপর তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করা ছিল অতিরিক্ত দায়িত্ব। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে  তাহাজ্জুদ সর্বোকৃষ্ট একটি আমল। হযরত আলী (রা.) বলেছেন যে, “ যে সকল ব্যক্তি রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়েছেন, তারাই আধ্যাত্মিক জগতের আল্লাহর নৈকট্য লাভের  ঊর্ধ্ব আহরণ করেছেন”।

সুতরাং পরিশেষে তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সম্পর্কে এটি বুঝা যায় যে, সকল মুমিনগণ সালাত আদায় করার সময় অবশ্যই যত্ন সহকারে এবং সতর্ক হয়ে এর সালাত আদায় করতে হবে। যদি আপনারা নিয়মিত সালাত আদায় করতে পারেন তাহলে এটি আপনাদের জন্য অতি উত্তম কাজ হবে।

৪০ দিন তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার ফজিলত

টানা ৪০ দিন পড়েন, যা চাবেন, তাই পাবেন।

চাকরি নাই।

টাকা নাই।

বিপদে আছেন।

কি দরকার আপনার, ইন শা আল্লাহ সব পাবেন।

৪০ দিন তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসের বাণী

রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কেউ যদি তার কোনো ইচ্ছে আল্লাহর নিকট পেশ করতে চায়, আল্লাহর থেকে কিছু পেতে চায়, সে যেনো টানা ৪০ দিন তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে আল্লাহর নিকট তার ইচ্ছে চেয়ে নেয়। অবশ্যই অবশ্যই তার যে কোন হালাল ইচ্ছে আল্লাহ তায়ালা কবুল করেই নিবেন৷ (বুখারী)

তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা

তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা হলো সূরা আল-মুজাদিলা (Surah Al-Mujadila)। এই সূরা কোরআনের পঞ্চম পারায় রয়েছে এবং সংখ্যা ৫৮।

তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা পড়ার নিয়ম

নীচে তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা পড়ার নিয়ম দেওয়া হলোঃ

১। প্রথমে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত করতে হবে। নিয়ত করার সময় বলতে হবে, “আমি তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ছি দুরুদ শরীফ সহ সূরা আল-মুজাদিলা পড়ে।”

২। পরে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে।

৩। তারপরে সূরা আল-মুজাদিলা পড়তে হবে। পড়ার সময় ধ্যান দিতে হবে যে, সূরা টি সম্পূর্ণ পড়া হবে এবং কোন অংশ ছাড়া না হবে।

৪। পরে তাহাজ্জুদ নামাজের দুরুদ শরীফ পড়তে হবে।

তাহাজ্জুদ নামাজের তাসবিহ

তাহাজ্জুদ নামাজের তাসবিহ হলো “سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ، سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيمِ” এটি আরবি লিখিত রূপে ।

এই তাসবিহটি হাদিসে উল্লেখিত এবং এটি আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.) এর উপদেশ অনুযায়ী।

এই তাসবিহটি সাবেক প্রফেত হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু হয়েছে এবং মুসলিম সমাজে এটি প্রচলিত হয়েছে। এটি আল্লাহর মহিমা ও প্রশংসার উপযোগী হওয়ায় এটি বেশ কিছু প্রচলিত দোয়ার মধ্যে একটি।

তাহাজ্জুদ নামাজের দোয়া হলো:

“اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا، وَرِزْقًا طَيِّبًا، وَعَمَلاً مُتَقَبَّلاً”

এর অর্থ হলো, “হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে অনুরোধ করছি যে, আমাকে উপকারপ্রদ জ্ঞান, ভালো রয়েছে রিয়ায়তযোগ্য রিজক, এবং স্বীকৃত করা কাজ দান করুন।”

তাহাজ্জুদ নামাজের শেষে এই দোয়াটি পড়া হয়। এটি আপনার জীবনে সফলতা এবং আখিরাতে জান্নাত প্রাপ্তির জন্য আল্লাহর দরবারে অনুরোধ জানায়।

তাহাজ্জুদ নামাজের তাসবিহ পড়ার নিয়ম :

তাহাজ্জুদ নামাজের তাসবিহ পড়ার নিয়মঃ

সময়: তাহাজ্জুদ নামাজের শেষে তাসবিহ পড়া শুরু করতে হবে।

সংখ্যা: তাসবিহ পড়তে হবে তিনশত বার। এটি তিনশত বার পড়ার পরে তাসবিহ সমাপ্ত হবে।

উচ্চারণ: তাসবিহ পড়ার সময় সঠিক উচ্চারণ করতে হবে। উচ্চারণ করার জন্য আল্লাহর নাম সঠিক উচ্চারণ করতে হবে। সাথে সাথে আল্লাহর প্রশংসা ও প্রকৃতির মহিমা উল্লেখ করতে হবে।

অংশগ্রহণ: তাসবিহ পড়া শেষ হলে অবশ্যই আমীন বলতে হবে।

তাহাজ্জুদ নামাজের দোয়া পড়ার নিয়মঃ

১. তাহাজ্জুদ নামাজের শেষে উত্তরদায়ী দোয়া পড়া হয়।

২. দোয়া পড়ার আগে সামনে পাকস্থলের দিকে মুখ করে উদ্ধার করতে হবে।

৩. হাথ উঠিয়ে তিন বার সুবহানাল্লাহ পড়তে হবে।

৪. তারপর উপরের উক্তি পড়তে হবে:

اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا، وَرِزْقًا طَيِّبًا، وَعَمَلاً مُتَقَبَّلاً

৫. দোয়া পড়ার পর আবার তিন বার সুবহানাল্লাহ পড়তে হবে।

এইভাবে তাহাজ্জুদ নামাজের উত্তরদায়ী দোয়া পড়া হয়।

তাহাজ্জুদ নামাজের পর আমল

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার পর করতে আমল পারেন।

আরও কিছু আমল হলো:

  1. নামাজের পরে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক এবং সূরা নাস পড়তে পারেন। এই সূরাগুলি পড়ার ফয়েজিলত বেশি ।
  2. আপনি তাহাজ্জুদ নামাজের পরে দোয়া করতে পারেন ।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, ফজিলত, নিয়ত ও সময় সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর

নিচে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন এবং তাদের উত্তর দেওয়া হয়েছে:

১। তাহাজ্জুদ নামাজ কখন পড়া হয়?

উত্তর: তাহাজ্জুদ নামাজ রাতের অন্তবাঁশে পড়া হয়। সাধারণত এটি ইশা নামাজের পর পড়া হয়।

২। তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য কত রাকাত পড়া হয়?

উত্তর: তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য মোট ৮ রাকাত পড়া হয়।

৩। তাহাজ্জুদ নামাজে কোন সূরা পড়া হয়?

উত্তর: তাহাজ্জুদ নামাজে কোনও নির্দিষ্ট সূরা পড়া হয় না। তবে নির্দিষ্ট সূরা পড়তে পড়তে তাহাজ্জুদ নামাজ করে থাকেন।

৪। তাহাজ্জুদ নামাজ কেন পড়া হয়?

উত্তর: তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া হয় কারণ এটি একটি নফল নামাজ এবং রাতের অন্তবাঁশে পড়া হয়। এটি ইমান এবং বিশ্বাসের প্রতিক এবং আল্লাহর প্রতি ভক্তি এবং তাকওয়ার একটি প্রতিবেদন হিসাবে সম্পর্কিত। একজন মুসলমান আল্লাহর কাছে তার দুঃখ, সমস্যা এবং ইচ্ছার প্রতি প্রত্যক্ষ হয় এবং আল্লাহর দয়া এবং করুণার প্রতি প্রার্থনা করতে পারে।

৫। তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লে কি হয়?

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার ফয়েজিলত অনেক বেশি। তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার ফয়েজিলত সম্পর্কে কিছু উদাহরণ হলো:

  • তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার মাধ্যমে মুসলিম আল্লাহর নিকট আরজন প্রদর্শন করে এবং তাঁর কাছে দুআ করতে পারে।
  • তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার মাধ্যমে মুসলিম তাঁর মনের শান্তি পাবে এবং তাঁর দৈনন্দিন জীবনের চারপাশে কি ঘটছে তা মনিব্রত করতে পারবে।
  • তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার মাধ্যমে মুসলিম তাঁর আখিরাতের জন্য তায়ারি হতে পারে। এটি তাঁর জীবনের অন্যতম মাধ্যম হতে পারে যা তাঁর জীবনের শেষ পর্যন্ত সাথে থাকবে।

প্রশ্ন: তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত না নফল ?

উত্তর: তাহাজ্জুদ নামাজ একটি নফল ইবাদত। তাহাজ্জুদের নফল ইবাদাতকে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শ্রেষ্ঠ নফল ইবাদত হিসাবে অ্যাখ্যায়িত করেছেন। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার পূর্বে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উপর তাহাজ্জুদ নামাজ বাধ্যতামূলক ছিল। তাই তিনি জীবনে কখনো তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া থেকে বিরত হননি । তাঁর সাহাবীদেরকেও এটা পালনে উৎসাহিত করতেন।

তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত না নফল সম্পর্কে হাদিসের বাণী

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সা্ল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ফরজ নামাজের পর সব নফল নামাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো তাহাজ্জুদ নামাজ তথা রাতের নামাজ।’ (মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ)

প্রশ্ন: তাহাজ্জুদ নামাজের সময় কখন?

উত্তর: হজরত আলী (রা.) বলেন: যাঁরাই আল্লাহর নৈকট্য লাভে ঊর্ধ্বারোহণ করেছেন । তাঁরাই সাহার বা শেষ রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়েছেন। (দিওয়ানে আলী (রা), নাহজুল বালাগা)। তাহাজ্জুদ নামাজের আগে-পরে কোরআন শরিফ তিলাওয়াত করা খুবই উপকারী।

এ সময় সুরা মুজাম্মিল ।

সুরা মুদ্দাচ্ছির।

সুরা মুলক।

সুরা ওয়াকিআহ।

সুরা দুখান।

সুরা আর রহমান।

সুরা ইয়াসিন।

সুরা হাশর ও সুরা কাহাফ এবং অন্যান্য সুরা তিলাওয়াত করা অত্যন্ত বরকতময় ও ফলদায়ক।

এটি দোয়া কবুলের সর্বশ্রেষ্ঠ সময়।

প্রতি রাতে এ সময় আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং বান্দার ফরিয়াদ শোনেন।

মধ্যরাতের পরে বা রাতের দুই-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হলে তাহাজ্জুদ নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয়।

রাত দুইটার পর থেকে ফজরের নামাজের ওয়াক্ত আরম্ভ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত।

সাহরির সময় শেষ হলে তথা ফজরের ওয়াক্ত শুরু হলে তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত শেষ হয়।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জমানায় তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য আলাদা আজান দেওয়া হতো।

এখনো মক্কা শরিফে ও মদিনা শরিফে এই নিয়ম চালু আছে।

তাহাজ্জুদের আজানের পরেও (ফজরের আজানের আগ পর্যন্ত) সাহরি খাওয়া যায়।

তাহাজ্জুদ নামাজ একা পড়াই উত্তম।

তাই অন্য সব সুন্নত ও নফল নামাজের মতো তাহাজ্জুদ নামাজের সুরা কিরাআত নিম্ন স্বরে পড়তে হয় ।

এর জন্য ইকামাতেরও প্রয়োজন হয় না।

তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত; অতিরিক্ত হিসেবে একে নফলও বলা হয়।

প্রশ্ন: তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত?

উত্তর: তাহাজ্জুদ নামাজ ২ থেকে ১২ রাকাআত পর্যন্ত পড়ার বর্ণনা পাওযা যায়।

সর্ব নিম্ন ২ রাকাআত আর সর্বোচ্চ ১২ রাকাআত।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়তেন।

তাই ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়াই ভালো।

তবে এটা পড়া আবশ্যক নয়। সম্ভব হলে ১২ রাকাআত তাহাজ্জুদ আদায় করা।

তবে ৮ রাকাআত আদায় করা উত্তম। সম্ভব না হলে ৪ রাকাআত আদায় করা।

যদি তাও সম্ভব না হয় তবে ২ রাকাআত হলেও তাহাজ্জুদ আদায় করা ভালো।

তবে তাহাজ্জুদ নামাজের কোনো কাজা নেই।

শেষ কথা:

কোরআন মাজিদে উল্লেখিত নফল।

সুন্নত নামাজ গুলোর মধ্যে তাহাজ্জুদের নামাজ একটি। তাহাজ্জুদের নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই আমাদের উচিত বেশি বেশি তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া। আল্লাহ পাক আমাদের সেই তৌফিক দান করুক। আমিন।

সূচীপত্র

Leave a Comment