ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম

দৈনন্দিন জীবনে চলাচল করার সময় আমরা প্রায় সকলেই গাড়ি বা অন্যান্য মোটরযান ব্যবহার করে থাকি। যাত্রী হিসেবে এবং চালক হিসেবে আমরা মোটরযান ব্যবহার করে থাকি। রাস্তায় গাড়ি চালাতে হলে একজন চালক হিসেবে ভালোভাবে ড্রাইভিং শেখার কোন বিকল্প নেই। আর রাস্তায় গাড়ি চালানোর অনুমতিপত্রই হলো ড্রাইভিং লাইসেন্স। ড্রাইভিং লাইসেন্স একজন চালকের দক্ষতার পরিচয় দিয়ে থাকে। ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরী করা একটি বেশ সময়সাপেক্ষ ও কিছু ক্ষেত্রে জটিল একটি প্রক্রিয়া। আজকে আমরা জানবো কিভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স কিভাবে সহজে ও নির্ভুলভাবে করা যায়।

ড্রাইভিং লাইসেন্স কি

ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম
ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম

লাইসেন্স অর্থ নির্দিষ্ট কোন একটি অভিজ্ঞতা। যা কোন নির্দিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে কর্তৃত্ব প্রদান করে, কর্তৃপক্ষ অনুমতি প্রদান করে দলিল প্রদান করেন তাকে লাইসেন্স বলে।

ড্রাইভিং লাইসেন্স অর্থ নির্দিষ্ট কোন একটি মোটরযান যা কোন নির্দিষ্ট শ্রেণীর মোটরযান চালানোর জন্য কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে কর্তৃত্ব প্রদান করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) দ্বারা প্রদত্ত দলিলকে ড্রাইভিং লাইসেন্স বলে।

ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রয়োজনীয়তা

মোটর‍যান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ধারা ৩ অনুযায়ী, কোন ব্যক্তি গাড়ি চালানোর জন্য তাকে কর্তৃত্বদান করে প্রদত্ত কার্যকর একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স ধারণ না করে সর্বসাধারণের ব্যবহার্য কোন স্থানে কোন মোটরযান চালাবে না এবং কোন ব্যক্তি তার ড্রাইভিং লাইসেন্সে নির্দিষ্টরূপে তদ্রুপ অধিকার প্রদত্ত না হলে বেতনভোগী কর্মচারী হিসেবে কোন মোটরযান চালাবে না অথবা কোন পরিবহনযান চালাবে না সে জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন।

ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রকারভেদ

ড্রাইভিং লাইসেন্স দুই প্রকার।

১। পেশাদার ২। অপেশাদার।

পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স: যে লাইসেন্স দিয়ে একজন চালক বেতনভোগী কর্মচারী হিসেবে কোন মোটরযান চালিয়ে থাকেন তাকে পেশাদার লাইসেন্স বলে। এই লাইসেন্সের মেয়াদ ৫ বছর এবং লাইসেন্স পেতে পুলিশ ভেরিকেশন রিপোর্ট প্র‍য়োজন। ৫ বছর পর নবায়নের জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয় এবং ব্যবহারিক পরিক্ষা দিতে হয়।

অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স: যে ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে কোন চালককে বেতনভোগী কর্মচারী না হয়ে হালকাযান চালানো অথবা পরিবহনযান ভিন্ন অন্যান্য মোটরযান চালানোর কর্তৃত্ব জন্য প্রদান করা হয় তাকে অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স বলে। এ লাইসেন্সের মেয়াদ ১০ বছর। অপেশাদার লাইসেন্স পেতে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্র‍য়োজন হয়না। মেয়াদ উত্তীর্ণের পর নবায়ন পরীক্ষা দেয়ার প্রয়োজন হয় না। অপেশাদার লাইসেন্স দিয়ে মাঝারিযান বা ভারীযানবাহন চালাতে পারবেন না।

ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্যতা

ড্রাইভিং লাইসেন্সের পূর্বশর্ত হলো লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স।

ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনকারীর ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ৮ম শ্রেণী পাশ। 

অপেশাদার এর জন্য ন্যূনতম ১৮ বছর এবং পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য বয়স ন্যূনতম ২১ বছর হতে হবে।

মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে।

লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স কিভাবে পাবেন

১/ প্রথমে লাইসেন্স প্রত্যাশীকে তার স্থায়ী ঠিকানা বা বর্তমান ঠিকানা (প্রয়োজনীয় প্রমাণাদিসহ) বিআরটিএ’র যে সার্কেলের আওতাভূক্ত তাকে সেই সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে। সার্কেল অফিস কর্তৃপক্ষ তাকে একটি শিক্ষানবিস বা লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করবে যা দিয়ে আবেদনকারী ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবে।

২/৩ মাস প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর তাকে নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে নির্ধারিত কেন্দ্রে লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট-এ অংশ গ্রহণ করতে হবে। এসময় প্রার্থীকে তার লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স (মূল কপি) ও লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য কলম সাথে আনতে হবে।

লাইসেন্স প্রাপ্তির বয়সসীমাঃ অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য ন্যূনতম ১৮ বছর এবং পেশাদার ন্যূনতম ২০ বছর বয়স্ক ব্যক্তি আবেদন করতে পারবেন।

লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষা পদ্ধতি

লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স-এ ড্রাইভিং এর পরীক্ষা দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট তারিখ ও স্থান উল্লেখ করা থাকে। নির্দিষ্ট পরীক্ষার দিনে কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক এই তিন ধরনের পরীক্ষা দিতে হবে। সাধারণত পরীক্ষার তারিখটি লার্নার লাইসেন্স নেয়ার ২ থেকে ৩ মাস পর হয়ে থাকে।

নিচে পরিক্ষা পদ্ধতি আলোচনা করা হলঃ

  • নির্দিষ্ট দিনে নির্ধারিত পরীক্ষা কেন্দ্রে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স ও কলম সহ উপস্থিত হতে হবে।
  • প্রথমে লিখিত পরীক্ষা হবে। পরীক্ষার প্রশ্নে মূলত ড্রাইভিং ও গাড়ির রক্ষনাবেক্ষন সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্ন আসবে। প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য সাধারণত ২৫-৩০ মিনিট সময় দেয়া হয়। পরীক্ষায় পাশ করতে নূন্যতম ৬৬% নম্বর লাগবে।
  • এরপর মৌখিক পরীক্ষা হবে। মৌখিক পরীক্ষায় রাস্তার বিভিন্ন চিহ্নের সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে।
  • সবশেষে ব্যবহারিক পরীক্ষা হবে। ব্যবহারিক পরীক্ষায় আপনাকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে গাড়ি বা মোটরসাইকেল চালিয়ে দেখাতে হবে। সাধারণত এই পরীক্ষায় পার্কিং করা, জিগজ্যাগ করা চালানো, একটি নির্দিষ্ট লাইন ধরে গাড়ি চালানো সহ আরো কিছু ড্রাইভিং-এর দক্ষতা দেখাতে হয়।

ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান

স্মার্ট কার্ডের জন্য আপনাকে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ছবি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং স্বাক্ষর করতে হবে। এই ধাপটিকে বলা হয় বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান।

১. প্রাপ্তি স্বীকার রশিদে উল্লেখিত তারিখে সেই রশীদটি সাথে নিয়ে BRTA অফিসে চলে যান। অবশ্যই রশিদটির কয়েকটি ফটোকপি সাথে রাখবেন।

২. প্রথমে আপনাকে টোকেন সংগ্রহের লাইনে দাড়াতে হবে। সেখান থেকে আপনার জমাকৃত ফর্ম ও একটি টোকেন দেয়া হবে।

৩. বায়োমেট্রিক কাউন্টারের বাইরের স্ক্রীণে আপনার টোকেনের নম্বর ভেসে আসলে ভেতরে প্রবেশ করুন। বাইরে লাইনে দাড়িয়ে মারামারি করার দরকার নেই। টোকেন সিরিয়াল অবশ্যই রক্ষা করা হয়।

৪. প্রথমেই একজন আপনার কাছ থেকে ফর্মটি নিয়ে তথ্যগুলো সার্ভারে টাইপ করবেন। উনি ভুল করবেন এইটাই স্বাভাবিক। তাই, টাইপ শেষ হলে আপনি চেক করে দেখুন। ভুল পেলে তাকে বলুন। উনি সাথে সাথে তা শুধরে নিবেন।

৫. এর পর আপনার বায়োমেট্রিক প্রদান করুন। হিজাব পরিহিতাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই হিজাব খুলতে হবে। কানের অলংকারও গ্রহণযোগ্য নয়।

৬. বায়োমেট্রিক তথ্য দেয়া হয়ে গেলে আপনাকে একটি সাদা রঙের প্রিন্ট করা কাগজ দেয়া হবে। সেখানে আপনার লাইসেন্স ডেলিভারীর তারিখ লেখা থাকবে। এই তারিখ সাধারণত অনেক দেরিতে দেয়া থাকে। কিন্তু, মাত্র ১৫ দিনের মধ্যেই আপনার লাইসেন্স তৈরি হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে তারা আপনার মোবাইলে SMS করে জানিয়ে দিবে। আপনি চাইলে নিজের ফোন থেকে বার্তা পাঠিয়েও লাইসেন্সের অবস্থা জানতে পারবেন। এজন্য 6969 নম্বরে এই ফরম্যাটে SMS করুন: DL DMXXXXXX (এই X চিহ্নিত স্থানে আপনার প্রাপ্তি স্বীকার রশীদে উল্লেখিত রেফারেন্স নম্বরটি লিখবেন।) ফিরতি বার্তায় তারা আপনাকে লাইসেন্সের অবস্থা জানিয়ে দিবে।

লার্নারের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে করণীয়

লার্নারে ইস্যু তারিখ ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ দেয়া থাকে। অধিকাংশ সময় পরীক্ষার্থী সংখ্যার অধিক হওয়ায় মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখের মধ্যে পরিক্ষা নেয়া সম্ভব হয়না। সেক্ষেত্র, পরিক্ষার তারিখ পর্যন্ত মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ বলবৎ থাকবে। পরীক্ষার আগে আপনাকে লার্নার নবায়ন করতে হবে না।

আপনি পরিক্ষার তারিখে অনুপস্থিত থাকলে আপনাকে ব্যাংকে ৮৭ টাকা জমা দিয়ে ঐ লার্ণার নবায়ন করে নিতে হবে। উল্লেখ্য পরিক্ষা যদি ৬ মাস পর অনুষ্ঠিত হয় এবং আপনি উক্ত তারিখে অনুপস্থিত থাকেন তাহলে আপনাকে নতুন করে লার্নার নিতে হবে।

ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রক্রিয়া

গ্রাহককে প্রথমে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ অনলাইনে (bsp.brta.gov.bd)-এর মধ্যমে আবেদন করতে হবে। অনলাইন সিস্টেম থেকে তার লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু হবে এবং গ্রাহক সাথে সাথেই সিস্টেম থেকেই তার শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্ট করে নিতে পারবেন। এরপর ২/৩ মাস প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর তাকে নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে নির্ধারিত কেন্দ্রে লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট-এ অংশ গ্রহণ করতে হবে। এসময় প্রার্থীকে প্রয়োজনীয় প্রমাণক, তার লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স (মূল কপি) ও লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য কলম সাথে আনতে হবে।

লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

১। নির্ধারিত ফরমে আবেদন অনলাইনে আবেদন।

২।  আবেদনকারীর ছবি [ছবির সাইজ সর্বোচ্চ ১৫০ কেবি (৩০০ x ৩০০ পিক্সেল)]

৩।  রেজিষ্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট (সর্বোচ্চ ৬০০কে.বি)। 

৪।  জাতীয় পরিচয়পত্রের স্ক্যান কপি (সর্বোচ্চ ৬০০কে.বি)।

৫।  ইউটিলিটি বিলের স্ক্যান কপি (সর্বোচ্চ ৬০০কে.বি), [ আবেদনকারীর বর্তমান ঠিকানা এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা যদি ভিন্ন হয় তবে বর্তমান ঠিকানার ইউটিলিটি বিল সংযুক্ত করতে হবে ]

৬।  বিদ্যমান ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্ক্যান কপি [ ড্রাইভিং লাইসেন্সের নবায়ন/শ্রেণী পরিবর্তন/শ্রেণী সংযোজন/ লাইসেন্সের ধরণ পরিবর্তণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ] (সর্বোচ্চ ৬০০কে.বি)

৭।  অনলাইনে আবেদন দাখিলের সময় ভুয়া তথ্য প্রদান করা হলে তার লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স ও স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিলসহ তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি

(ক) ০১ (এক) ক্যাটাগরি-৩৪৫/-টাকা (শুধু মোটরসাইকেল অথবা শুধু হালকা মোটরযান অর্থাৎ যে কোনো এক ধরণের মোটরযান)

(খ) ০২ (দুই) ক্যাটাগরি-৫১৮/-টাকা  (মোটরসাইকেল এবং হালকা মোটরযান একসাথে অর্থাৎ মোটরসাইকেলের সাথে যে কোনো এক ধরণের মোটরযান)

লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর পুনরায় একটি নির্ধারিত ফরমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফী প্রদান করে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য সংশ্লিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে। গ্রাহকের বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ) গ্রহণপূর্বক স্মার্ট কার্ড ইস্যু করা হয়। স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রন্টিং সম্পন্ন হলে গ্রাহককে এসএমএস এর মাধ্যমে তা গ্রহণের বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়।

স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার নিয়ম

লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর পুনরায় একটি নির্ধারিত ফরমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফী প্রদান করে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য সংশ্লিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে। গ্রাহকের বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ) গ্রহণপূর্বক স্মার্ট কার্ড ইস্যু করা হয়। স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্টিং সম্পন্ন হলে গ্রাহককে এসএমএস এর মাধ্যমে তা গ্রহণের বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়।

স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন করার পর বিআরটিএ একটি প্রাপ্তি রিসিট গ্রাহককে দিবে। যা স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স না পাওয়া পর্যন্ত ঐ স্লিপটি ড্রাইভিং লাইসেন্স হিসেবে গণ্য করা হয়।

স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

১। নির্ধারিত ফরমে আবেদন।

২। রেজিষ্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট।

৩। ন্যাশনাল আইডি কার্ড এর সত্যায়িত ফটোকপি।

৪। নির্ধারিত ফী (পেশাদার- ১৬৭৯/-টাকা ও অপেশাদার- ২৫৪২/-টাকা) বিআরটিএ’র নির্ধারিত ব্যাংকে জমাদানের রশিদ।

৫। পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন।

৬। সদ্য তোলা ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।

পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের ধরণ

(১) পেশাদার হালকা (মোটরযানের ওজন ২৫০০কেজি-এর নিচে) ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ২০ বছর হতে হবে।

(২) পেশাদার মধ্যম (মোটরযানের ওজন ২৫০০ থেকে ৬৫০০ কেজি) ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ২৩ বছর হতে হবে এবং পেশাদার হালকা ড্রাইভিং লাইসেন্সের ব্যবহার কমপক্ষে ০৩ বছর হতে হবে।

(৩) পেশাদার ভারী (মোটরযানের ওজন ৬৫০০ কেজির বেশী) ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ২৬ বছর হতে হবে এবং পেশাদার মধ্যম ড্রাইভিং লাইসেন্সের ব্যবহার কমপক্ষে ০৩ বছর হতে হবে।

[বি:দ্র: পেশাদার ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য প্রার্থীকে প্রথমে হালাকা ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে হবে এর ন্যূনতম তিন বছর পর তিনি পেশাদার মিডিয়াম ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য আবেদন করতে পারবেন এবং মিডিয়ম ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার কমপক্ষে ০৩ (তিন) বছর পর ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। ]

অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করার নিয়ম

গ্রাহককে প্রথমে নির্ধারিত ফি ( মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিনের মধ্যে হলে ২৪২৭/- টাকা ও মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিন পরে প্রতি বছর ২৩০/- টাকা জরিমানাসহ) জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিআরটিএর নির্দিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্র ও সংযুক্ত কাগজপত্র সঠিক পাওয়া গেলে একইদিনে গ্রাহকের বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ) গ্রহণ করা হয়। স্মার্ট কার্ড wপ্রন্টিং সম্পন্ন হলে গ্রাহককে এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়।

পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করার নিয়ম

পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সধারীদেরকে পুনরায় একটি ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষায় উত্ত্তীর্ণ হওয়ার পর নির্ধারিত ফি ( মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিনের মধ্যে হলে ১৫৬৫/- টাকা ও মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিন পরে প্রতি বছর ২৩০/- টাকা জরিমানাসহ ) জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিআরটিএর নির্দিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে। গ্রাহকের বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ) গ্রহণের জন্য গ্রাহককে নির্দিষ্ট সার্কেল অফিসে উপস্থিত হতে হয়। স্মার্ট কার্ড wপ্রন্টিং-এর সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে গ্রাহককে এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

১। নির্ধারিত ফরমে আবেদন।

২। রেজিষ্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট।

৩। ন্যাশনাল আইডি কার্ড -এর সত্যায়িত ফটোকপি।

৪। শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ;

৫। নির্ধারিত ফী জমাদানের রশিদ।

৬। পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন।

৭। সদ্য তোলা ১ কপি পাসপোর্ট ও ১কপি স্ট্যাম্প সাইজ ছবি।

ড্রাইভিং লাইসেন্সে নতুন মোটরযান সংযোজন

আপনার মোটরসাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে। আপনি হালকা মোটরযান (প্রাইভেটকার/জীপ/মাইক্রোবাস) চালাতে চান। আপনাকে যা করতে হবে তা হলো:

আপনাকে পূর্বের ড্রাইভিং লাইসেন্সের সাথে নতুন মোটরযান সংযোজন (Addition) করতে হবে। এজন্য হালকাযানের লার্ণার করে ডিসিটিবি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। মূল আবেদনপত্র জমা দেয়ার সময় পূর্বের লাইসেন্স জমা দিতে হবে এবং ফরমের addition to DL ঘরে টিক চিহ্ন দিতে হবে। এরপর ফি জমা দিয়ে বায়োমেট্রিক প্রদান করতে হবে।

ডুপ্লিকেট লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রক্রিয়া

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

১। নির্ধারিত ফরমে আবেদন।

২। জিডি কপি ও ট্রাফিক ক্লিয়ারেন্স।

৩। নির্ধারিত ফী (হাই সিকিউরিউটি ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ক্ষেত্রে ৮৭৫/-টাকা) বিআরটিএ’র নির্ধারিত ব্যাংকে জমাদানের রশিদ।

৪। সদ্য তোলা ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।

আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম

বিআরটিএ থেকে সাধারণ স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করে আপনি সেটি ব্যবহার করে দেশের ভেতরের যেকোনো রাস্তায় মোটরযান চালাতে পারবেন। কিন্তু এই ড্রাইভিং লাইসেন্সটি দেশের বাইরে ব্যবহার করতে পারবেন না। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে বাংলাদেশ থেকে আলাদা ভাবে আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরী করার পদ্ধতি রয়েছে। যে ড্রাইভিং লাইসেন্সটি দেশের বাইরেও একইভাবে কার্যকর। 

আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে আপনাকে নির্ধারিত কিছু ধাপ পূরণ করতে হবে। ধাপগুলো হলো:  

  • স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করুন।
  • আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর ফরম ডাউনলোড  করে প্রিন্ট করিয়ে নিন।
  • ফরমটি পূরণ করুন।
  • ফরমের সাথে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর সত্যায়িত ফটোকপি, ১ কপি পাসপোর্ট ও ৪ কপি স্ট্যাম্প সাইজ ছবি এবং পাসপোর্টের ১ থেকে ৪ নং পাতার ফটোকপি যুক্ত করুন।
  • আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর অফিসে ফরম ও কাগজপত্র জমা দিন।
  • আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর অফিসে ফি জমা দিয়ে একটি রশিদ গ্রহণ করুন। 
  • রশিদে উল্লেখিত তারিখে অফিস থেকে আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করুন।

তবে মনে রাখা প্রয়োজন যে, ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স অন্যান্য বিআরটিএ অফিস থেকে দেয়া হয় না। ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে আপনাকে বিআরটিএ-এর ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার আলাদা অফিসে যেতে হবে। যার সারাদেশে একটি মাত্র শাখা রয়েছে। অফিসটির ঠিকানা: ৩বি, আউটার সার্কুলার রোড, মগবাজার, ঢাকা।

সূচীপত্র

Leave a Comment