কেন্দ্রীয় প্রবণতা কাকে বলে?

কেন্দ্রীয় প্রবণতার অর্থ হল কেন্দ্রের দিকে যাওয়ার ঝোক। একগুচ্ছ স্কোরে পৃথক মানের স্কোর থাকলে তাদের ভরকেন্দ্র যাওয়ার ঝোঁক বা প্রবণতা থাকে। এটাই হলো কেন্দ্রীয় প্রবণতা। অর্থাৎ যে সমস্ত বন্টনের প্রতিনিধি স্বরূপ কাজ করে। কেন্দ্রীয় প্রবণতা বা কেন্দ্রীয় অবস্থানের সূচক একটি বন্টনের বিভিন্ন স্কোরের মধ্যে পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও তাদের মাঝামাঝি যাওয়ার একটি প্রবণতা থাকে।

পরিসংখ্যানিক তথ্য উপাত্যে কেন্দ্রীয় প্রবণতা খুবি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কেন্দ্রীয় প্রবণতা সম্পর্কে সঠিক ধারনার্জনের মাধ্যমে পরিসংখ্যানে তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ, তথ্য উপাত্তের মাননির্ণয়, অনুধাবন ও গাণিতিক সমস্যা সমাধান সহ বাস্তবিক জীবনে পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব সম্পর্কে অনুধাবন করা সম্ভব হয়। আমাদের আজকের আলোচনা কেন্দ্রীয় প্রবণতা সম্পর্কে।

আজকের আলোচনার মাধ্যমে আশাকরি কেন্দ্রীয় প্রবণতার সংজ্ঞা, প্রয়োগ, কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপের পদ্ধতি ও প্রকারভেদ নিয়ে সকল অজানা তথ্য জেনে ও বুঝে, গাণিতিক সমস্যা সমাধান পূর্বক বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগ করতে পারবো।

আরো পড়ুন ;- গুনিতক কাকে বলে? উদাহরণ সহ

কেন্দ্রীয় প্রবণতা সম্পর্কে জানার পূর্বে যা জানা প্রয়োজনঃ


কেন্দ্র বা কেন্দ্রিয় বলতে কি বোঝায় – আমরা নিশ্চয় বৃত্তের কেন্দ্র সম্পর্কে জানি। বৃত্তের মাঝে অবস্থিত যে বিন্দুকে ঘিরে বৃত্তের পরিধি গঠিত হয় সেই বিন্দু কে বৃত্তের কেন্দ্র বিন্দু বলে। অর্থাৎ ঠিক মাঝের বিন্দু। আমরা নিশ্চয় টিকাদান কেন্দ্রের নাম শুনেছি।

যে জায়গাকে মাঝে রেখে এর আশেপাশের জনগণের টিকা প্রদান করা হয়, সেই জায়গাকে টিকাদান কেন্দ্র বলে। অর্থাৎ মাঝের জায়গা। এমন অনেক উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ কেন্দ্র বলতে ঠিক মাঝের জায়গা বা মাঝামাঝি স্থান কে বোঝানো হয়ে থাকে।

কেন্দ্র বলতে যেহেতু মাঝামাঝি স্থান কে বোঝায়, কেন্দ্রীয় বলতে তাই মাঝের বা মাঝের দিকে বোঝায়। কোনো কিছু মাঝ বরাবর থাকা কে কেন্দ্রীয় বলা হয়ে থাকে। পরীক্ষা কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ভোটদান কেন্দ্র ইত্যাদি কেন্দ্র সম্পর্কিত উদাহরণ। ইংরেজী Center শব্দের অর্থ কেন্দ্র এবং Central শব্দের অর্থ কেন্দ্রীয়।


প্রবণতা- প্রবণতা বলতে অধিক ইচ্ছা কে বোঝানো হয়। কোনো কিছু পাবার বা কোথাও যাওয়ার অধিক ঝোক বা ইচ্ছা কে প্রবণতা বলে। রহিমের সংবাদপত্র পড়ার ঝোক বা খুব ইচ্ছা রয়েছে এটা না বলে, রহিমের সংবাদপত্র পড়ার প্রবণতা রয়েছে, এটাও বলা যেতে পারে।

অর্থাৎ প্রবণতা বলতে অধিক ঝোক বা অধিক ইচ্ছা কে বা কিছু করার অভ্যাস কে বোঝানো হয়ে থাকে। বর্তমানে ছেলে মেয়েদের গেম খেলার নেশা বা ঝোক রয়েছে না বলে গেম খেলার প্রবণতা রয়েছে বলা যেতে পারে। অর্থাৎ প্রবণতা হলো এক ধরনের অভ্যাস বা ইচ্ছা বা কিছু করার ঝোক। ইংরেজী Tendency শব্দের বাংলা আভিধানিক অর্থ প্রবণতা।


পুঞ্জিভূত – পুঞ্জিভূত শব্দের অর্থ একত্রিত করা বা জমানো। ইংরেজী Accumulated শব্দের অর্থ পুঞ্জিভূত। চারিদিক থেকে এসে এক জায়গাতে এসে জড়ো হওয়া কে পুঞ্জিভূত বলে। শীতের দিনে আগুনের পাশে এসে জড়ো হয়ে বসা কে পুঞ্জিভূত হয়ে বসা বলা যেতে পারে। অর্থাৎ পুঞ্জিভূত বলতে চারিদিক থেকে এসে কোনো স্থানে জড়ো হওয়াকে বোঝানো হয়ে থাকে।


তথ্য উপাত্তে মাঝা মাঝি মানের গণসংখ্যা সবসময় বেশি হওয়ার প্রবণতা রয়েছে। যাকে আমরা কেন্দ্রীয় প্রবণতা বলে থাকি। কেন্দ্রীয় প্রবণতা বা গণসংখ্যার মাঝামাঝি অবস্থান নির্ণয় করার ৩ টি পদ্ধতি রয়েছে।

কেন্দ্রীয় প্রবণতা কাকে বলে

কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপ ৩ টি, যথা-

১. গড়
২. মধ্যক
৩. প্রচুরক

গড়, মধ্যক এবং প্রচুরক কি কারণে কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপ পদ্ধতি সে সম্পর্কে নিচে আলোকপাত করা হলো।

গড় কেন কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপের একটি পদ্ধতিঃ

ইংরেজী Average বা Mean শব্দের অর্থ গড়। এখানে গড় বলতে গড়ের দরে বা কম বেশি না ধরে মাঝা মাঝি মান কে বোঝানো হয়ে থাকে। ছোট বড় মিশিয়ে মাঝামাঝি দামে কিছু কেনা কে গড়পড়তা বা গড় দামে কেনা বলে। অর্থাৎ গড় বলতে মাঝামাঝি স্থানের মানকে বোঝায়। গণসংখ্যার মাঝামাঝি স্থান কে কেন্দ্র করে বেশি হওয়ার ঝোক কে কেন্দ্রীয় প্রবণতা বলে এবং গড় পদ্ধতির মাধ্যমে মাঝামাঝি মান নির্ণয় করা হয়। সুতারং গড় পদ্ধতিকে কেন্দ্রীয় প্রবণতার একটি পরিমাপক পদ্ধিতি বলে।

প্রচুরক কেন কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপের পরিমাপকঃ
ইংরেজী Mode শব্দের অর্থ প্রচুরক। প্রচুরক বলতে প্রচুর বা বেশি সংখ্যাক বোঝায়। তথ্য উপাত্ত তথা গণসংখ্যায় সর্বদা প্রচুর বা বেশি সংখ্যাক একি ধরনের গণসংখ্যা থাকে ঠিক মাঝামাঝি বা কেন্দ্রের দিকে। তাই প্রচুরক পদ্ধতিকে কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপক বলা হয়ে থাকে।

কেন্দ্রীয় প্রবণতা সম্পর্কে মূল কথাঃ


১. তথ্য উপাত্তের কেন্দ্রের দিকে পুঞ্জিভূত হওয়ার প্রবণতা কে কেন্দ্রীয় প্রবণতা বকে।
২. কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপের পদ্ধতি তিনটি।
৩. কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপ গুলো হলো, গড়, মধ্যক ও প্রচুরক।
৪. গড় মাঝামাঝি মান নির্ণয়ে ব্যবহার করা হয় বলে এটি কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপের পদ্ধতি।
৫. মধ্যক মাঝামাঝি মান নির্ণয় করতে ব্যবহার করা হয়। তাই মধ্যক কেন্দ্রীয় প্রবণতার একটি পরিমাপক।
৬. প্রচুরক সবসময় মাঝামাঝি স্থানে থাকে তাই প্রচুরক পদ্ধতি কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপের অন্যতম একটি পদ্ধতি।

গাণিতিক গড়ের শিক্ষামূলক গুরত্ব

শিক্ষার্থীদের দুটি দলের মধ্যে তুলনামূলক বিচার কোন শিক্ষার্থীর যোগ্যতা বিচার করতে গড়ের প্রয়ােজন হয়।(১) প্রকৃত কেন্দ্রীয় প্রবণতার মানটি জানা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। ব্যাপক তাংপর্য নির্ণয় করা হয়।
বিভিন্ন ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পারদর্শিতার মান সম্পর্কে তথ্য নি্ণয় করা যায়। ছাত্রছাত্রীদের সাফল্যের গড় মান নির্ণয় করা সম্ভব। সহ-সম্পর্ক নির্ণয়ের মাধ্যমে দুটি বিষয়ের মধ্য সম্পর্ক খুঁজে বের করা হয়। এই গাণিতিক সমাধানে গড়-এর ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ।

Visit Product Buy Sell Website

Leave a Comment