মোবাইল ব্যাংকিং বলতে মোবাইলের সাহায্যে যাবতীয় আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করাকে বোঝায়। গ্রাহকরা তাদের হাতে থাকা স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটে ইন্টারনেট সংযোগ করে খুব সহজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় টাকা আদান-প্রদান করতে পারবে।
অনেক ক্ষেত্রে ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াও শুধুমাত্র সিম দিয়েও লেনদেন এর কাজটি সম্পন্ন করা যায়। তবে অ্যাপসের মাধ্যমে লেনদেন করতে গেলে গ্রাহককে উক্ত প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট অ্যাপ ব্যাবহার করতে হয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের উদ্দেশ্যে এই অ্যাপ সরবরাহ করে এবং এই অ্যাপের মাধ্যমে সাধারণত গ্রাহকদের ২৪/৭ সেবা দিয়ে থাকে।
যার মাধ্যমে একজন গ্রাহক অ্যাকাউন্টের বর্তমান ব্যালেন্স ও সর্বশেষ লেনদেনের তালিকা থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক বিল পরিশোধ, রিমোট চেক ডিপোজিট, ব্যক্তি-ব্যক্তি লেনদেন, কোনও গ্রাহক বা অন্যের অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তর এবং কোন পণ্য ক্রয় করলে তার মূল্য পরিশোধ করতে পারে।
বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
বর্তমান যুগে আমরা ব্যাংক না গিয়েও আর্থিক লেনদেনের সাথে সম্পর্কিত যাবতীয় কাজ মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে করতে পারি, যেটি গত দু’দশক আগেও চিন্তা করা যায় নি।
নব্বই এর দশকে যখন বাংলাদেশে প্রথম মোবাইল ফোনের ব্যাবহার শুরু হয় তখনও দেশের সাধারণ জনগোষ্ঠী এটা ভাবতেই পারেনি যে, এই মোবাইল ফোনই একসময় আর্থিক লেনদেনের বড় মাধ্যম হয়ে উঠবে। তাছাড়া এক দশক আগেও যখন মোবাইল ব্যাংকিং চালু হয়, তখন এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠে।
তবে বর্তমান দৃশ্যপট হচ্ছে, বিকাশ, রকেট, নগদ এখন আর্থিক পরিষেবার অপরিহার্য অংশ। বাংলাদেশে মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিক সেবার যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালের মার্চ মাসে। বেসরকারি খাতে ডাচ-বাংলা ব্যাংক প্রথম এই সেবা চালু করে।
পরে এটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় রকেট। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই সেবা চালু করে বিকাশ। পরবর্তী সময়ে অনেক ব্যাংক এই সেবায় আসলেও গ্রাহকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে নি।
বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং এর বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে বিকাশ, রকেটের পাশাপাশি মাই ক্যাশ, এম ক্যাশ, উপায়, শিউর ক্যাশসহ ১৫টি ব্যাংক এই সেবা দিচ্ছে। তবে এ বাজারে একচেটিয়া চলছে বিকাশের রাজত্ব। প্রায় ৭০ শতাংশের বেশি রয়েছে বিকাশের নিয়ন্ত্রনে, এরপরই আছে রকেট। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেন ততটা চোখে পরার মত নয়।
তবে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে ডাক বিভাগ এই সেবা চালু করে, যার নাম দেয়া হয় নগদ। বাজারে আসার পর থেকেই তারা গ্রাহক টানতে নানা রকম প্রচার প্রচারনার পাশাপাশি সার্ভিস চার্জ কম করে দেয়। এতে করে বেশ কিছু গ্রাহক সৃষ্টি করতে পারলেও বিকাশের মতো নিজেদের অবস্থান এখনো শক্ত করতে পারে নি।
বাংলাদেশ ব্যাংক এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের শেষ নাগাদ এ সেবার গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১০ কোটি ৫ লাখ। এর মধ্যে সক্রিয় গ্রাহক ৩ কোটি ২৪ লাখ। আর দেশ জুড়ে এ সেবা দিতে এজেন্ট রয়েছেন ১০ লাখ ৪৪ হাজার। সুতরাং এটা খুব সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে যে, মানুষের জীবনের সঙ্গে কতটা মিশে গেছে নতুন এই সেবা।
মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা
মোবাইল ব্যাংকিং এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, এর মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন করার জন্য বাইরে বের হবার কোন প্রয়োজন পড়ে না। আপনি ঘরে বসেই সুবিধাজনক সময়ে যাবতীয় আর্থিক লেনদেন করতে পারবেন। মোবাইল ব্যাংকিং এর যে সকল সুবিধাগুলো উল্লেখ করার মতো সেগুলো হল –
১. মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে গ্রাহকরা তাদের হাতে থাকা স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটে ইন্টারনেট সংযোগ করে খুব সহজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় টাকা আদান-প্রদান করতে পারে।
২. প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে যেসব নাগরিক বসবাস করে স্বাভাবিক ভাবেই তাদের ইন্টারনেট দুর্বল হয়ে থাকে, এমন পরিস্থিতিতে তারা যাতে মোবাইল ব্যাংকিং থেকে বঞ্চিত না হয়, সেই কারণে তারা চাইলে USSD কোডের মাধ্যমেও আর্থিক লেনদেন করতে পারবেন।
৩. সাধারণত ব্যাংগুলোর কার্যক্রম সকাল ৯-৫ টা পর্যন্ত হয়ে থাকে। আর সেই সময় অতিবাহিত হওয়ার পর গ্রাহকদের জন্য লেনদেন কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে আপনি দিনের ২৪ ঘণ্টা বছরে ৩৬৫ দিন অবিরাম আর্থিক লেনদেন করতে পারবেন।
৪. আমাদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ আছে যারা ব্যাংক লেনদেন ই পারদর্শী নয়, তবে মোবাইল ব্যাংকিং সহজ ও সুরক্ষিত হওয়ার কারণে তারা খুব সহজে ঘরে বসে নিজের হাতে থাকা মোবাইল ফোন দিয়ে টাকা লেনদেন করতে পারে। যখন তখন ব্যাংক যাওয়ার কোন ঝামেলা পোহাতে হবে না।
৫. নিরাপত্তার দিক দিয়েও মোবাইল ব্যাংকিং ইতোমধ্যেই গ্রাহকদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পেরেছে। কারণ আর্থিক লেনদেন করার জন্য PIN CODE, Transaction Code এসব দেওয়ার প্রয়োজন হয়ে থাকে। যার ফলে আপনার অনুমতি ব্যতীত কেউ আপনার মোবাইল থেকে কোন লেনদেন করতে পারবে না, এমনকি আপনার অ্যাকাউন্টের কোন ধরনের তথ্য জানতেও পারবে না।
৬. আগে অ্যাকাউন্টের বর্তমান ব্যালেন্স ও সর্বশেষ লেনদেনের তালিকা জানতে হলে ব্যাংক যেতে হত, কিংবা মনে রাখতে হত। কিন্তু এখন মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে যেকোনো সময় অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স চেক করে নিতে পারবেন।
- বর্তমানে প্রচলিত মোবাইল ব্যাংকিং গুলোর একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা নিচে দেওয়া হল
মোবাইল ব্যাংকিং এর নাম | সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান | হেল্প লাইন |
বিকাশ | ব্র্যাক ব্যাংক | ১৬২৪৭ |
নগদ | ডাক বিভাগ | ১৬১৬৭ |
রকেট | ডাচ-বাংলা ব্যাংক | ১৬২১৬ |
উপায় | UCB ব্যাংক | ১৬২৬৮ |
মাই ক্যাশ | মার্কেন্টাইল ব্যাংক | ১৬২২৫ |
এম ক্যাশ | ইসলামি ব্যাংক | ১৬২৫৯ |
শিউর ক্যাশ | রূপালি ব্যাংক | ০৯-৬১৪০১৬৪৯৫ |
প্রিয় পাঠক আশা করছি আপনি কিছুটা হলেও মোবাইল ব্যাংকিং এর ধারণা পেয়েছেন।