খাদ্যের উপাদান কয়টি | খাদ্যের সহায়ক উপাদান কয়টি

খাদ্যের উপাদান কয়টি এ বিষয়ে এই আর্টিকেলে সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। খাদ্যের উপাদান অসংখ্য সংখ্যক জিনিস থাকতে পারে, তবে মৌলিকভাবে নিম্নলিখিত প্রধান ছয়টি উপাদান থাকে, যথা- শর্করা, আমিষ বা প্রোটিন, স্নেহপদার্থ, ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ, খনিজ লবণ এবং পানি।

খাদ্যের উপাদান বা সহায়ক উপাদান

খাদ্য উপাদান হলো সেই সব বস্তু বা দ্রব্য যেগুলি খাবার বানানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এই উপাদানগুলি মানবদেহের প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেল, প্রাণিজাত পদার্থ ইত্যাদির সমন্বয়ে তৈরি হয় এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং শক্তি সরবরাহ করে। খাদ্যের ছয়টি উপাদান  যথা:- শর্করা, আমিষ, স্নেহ, পানি,  ভিটামিন এবং খনিজ লবণ। নিম্নে খাদ্যের উপাদান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করো হলো ।

 

আমিষ( Protein):

আমিষ দেহের বৃদ্ধিসাধন এবং ক্ষয়পূরণ করে। আমিষের উৎস  মাছ , মাংস , ডিম , দুধ , ডাল , শিমের বীচি , শুঁটকি মাছ , চিনাবাদাম ইত্যাদি । পুষ্টিবিজ্ঞানে আমিষকে খাদ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আমিষে শতকরা ১৬ ভাগ নাইট্রোজেন থাকে । আমিষে সামান্য পরিমাণে সালফার , ফসফরাস এবং আয়রনও থকে । নাইট্রোজেন এবং শেষোক্ত উপাদানগুলোর উপস্থিতির কারণে আমিষের গুরুত্ব শর্করা ও স্নেহ পদার্থ থেকে আলাদা।

প্রাণিজ আমিষ: মাছ, মাংস, ডিম, পনির, ছানা, কলিজা বা যকৃৎ ইত্যাদি প্রাণিজ আমিষ। এসব খাদ্যে দেহের প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো এসিড পাওয়া যায়।

উদ্ভিজ্জ আমিষ: ডাল, চিনাবাদাম, শিমের বীচি ইত্যাদি উদ্ভিজ্জ আমিষ।

 

শর্করা (Carbohydrate):

শর্করা দেহে শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে। শর্করার মৌলিক উপাদান কার্বন , হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন । উদ্ভিদের মূল , কাণ্ড , পাতা , ফুল , ফল ও বীজে শর্করা বিভিন্নরূপে জমা থাকে । ফলের রসে গ্লুকোজ , দুধে ল্যাকটোজ , গম , আলু , চাল ইত্যাদিতে শ্বেতসার ( স্টার্চ ) ইত্যাদি শর্করাজাতীয় খাদ্যের উপাদান বা সহায়ক উপাদান।

 

 স্নেহ ও চর্বিজাতীয় খাদ্য (Fats):

স্নেহ ও চর্বিজাতীয় খাদ্য দেহে তাপ এবং শক্তি উৎপাদন করে। স্নেহজাতীয় খাদ্য ( Fats ) বা চর্বি একটি প্রয়োজনীয় খাদ্যের উপাদান । তেল, ঘি, মাখন স্নেহ বা চর্বিজাতীয় খাবার। বিশেষত হেলদি ফ্যাট, যেমন: অলিভ, সরিষা, সানফ্লাওয়ার বা বাদামের তেলকে প্রতিদিনের খাবারের মাঝে প্রাধান্য দেয়া প্রয়োজন।

উদ্ভিজ্জ স্নেহপদার্থ: সয়াবিন, সরিষা, তিল, বাদাম, সূর্যমুখী এবং ভুট্টার তেল ভোজ্যতেল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ভোজ্যতেলের মধ্যে সয়াবিন তেল প্রধান।

প্রাণিজ স্নেহপদার্থ: চর্বি, ঘি, ডালডা ইত্যাদি প্রাণিজ স্নেহপদার্থ।

 

খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন (Vitamins):

খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায় এবং বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উদ্দীপনা যোগায়। দেহের বৃদ্ধির জন্য ও সুস্থ থাকার জন্য ভিটামিন অত্যাবশ্যক ।  খাদ্যে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উপাদান থাকে বলে সুষম খাদ্য থেকে প্রচুর ভিটামিন পাওয়া যায় । শাক-সবজি ও ফলমূল ভিটামিন ও খনিজ লবণের প্রধান উৎস। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে খাদ্যের এই দুটি  উপাদান আমাদের জন্য খুব জরুরি।

ভিটামিন A: দুধ, মাখন, চর্বি, ডিম, গাজর, আম, কাঁঠাল, রঙিন শাকসবজি, মলা মাছ ইত্যাদিতে ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যায়।

ভিটামিন B: ইস্ট, ঢেকিছাঁটা চাল, জাঁতায় ভাঙা আটা বা লাল আটা, অঙ্কুরিত ছোলা, মুগডাল, মটর এবং প্রাণিজ স্নেহপদার্থ। ফুলকপি, চিনাবাদাম, শিমের বীচি, কলিজা বা যকৃৎ, হৃৎপিণ্ড, দুধ, ডিম, মাংস, সবুজ শাকসবজি ইত্যাদিতে ভিটামিন ‘বি’ থাকে।

ভিটামিন C: পেয়ারা, বাতাবি লেবু, কামরাঙা, কমলা, আমড়া, বাঁধাকপি, টমেটো, আনারস, কাঁচামরিচ, তাজা শাকসবজি ইত্যাদি থেকে ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া যায়।

ভিটামিন D: দুধ, ডিম, কলিজা বা যকৃৎ, দুগ্ধজাত দ্রব্য, মাছের তেল, ভোজ্য তেল ইত্যাদিতে ভিটামিন ‘ডি’ থাকে।

ভিটামিন E এবং K: উপরে উল্লিখিত সব খাবার থেকে ভিটামিন ‘ই’ এবং ‘কে’ পাওয়া যায়।

আরো পড়ুন – খাদ্য কাকে বলে? খাদ্য উপাদান কাকে বলে?

 

খনিজ লবণ (Mineral salts):

খনিজ লবণ বিভিন্ন জৈবিক কাজে অংশ নেয়। দেহকোষ ও দেহের তরল অংশের জন্য খনিজ লবণ খাদ্যের অত্যাবশ্যকীয় উপাদান । মানুষের শরীরে ক্যালসিয়াম , লৌহ , সালফার , দস্তা , সোডিয়াম , পটাশিয়াম , আয়োডিন ইত্যাদি থাকে । খনিজ লবণ দেহ গঠন ও দেহের অভ্যন্তরীণ কাজ নিয়ন্ত্রণ করে । হাড় , দাঁত , পেশি , এনজাইম এবং হরমোন গঠনের জন্য খনিজ লবণ খাদ্যের একটি অপরিহার্য উপাদান ।

 

পানি (Water):

দেহে পানি এবং তাপের সমতা রক্ষা করে, এছাড়া কোষের কার্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে এবং কোষ ও তার অঙ্গাণুগুলোকে ধারণ করে। মানবদেহে পানির কাজগুলোকে তিন ভাগ করা যায় , দেহ গঠন , দেহের অভ্যন্তরীণ কার্য নিয়ন্ত্রণ এবং দেহ থেকে দূষিত পদার্থ নির্গমন ।

দেহের পুষ্টির কাজে পানি খাদ্যের একটি উপাদান । পানির প্রধান উৎস হচ্ছে খাবার পানি,  ডাবের পানি,  দুধ,  ফলের রস, সুপ  ইত্যাদি। এছাড়া ও বিভিন্ন ধরনের রসালো ফল যেমন লিচু, জামরুল, তরমুজ এ প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে।

 

উল্লেখ করা খাদ্য উপাদানের বাইরে আরও একটি উপাদান রয়েছে, যেটি কোনো পুষ্টি না জোগালেও একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যের উপাদান।

খাদ্য আঁশ (Fiber) বা রাফেজ:

খাদ্য আঁশ বা রাফেজ পানি শোষণ করে এবং মলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ও বৃহদন্ত্র থেকে মল নিষ্কাশনে সাহায্য করে। শস্যদানার বহিরাবরণ, সবজি, ফলের খোসা, শাঁস, বীজ এবং উদ্ভিদের ডাঁটা, মূল ও পাতায় আঁশ থাকে। এগুলো মূলত কোষপ্রাচীরের সেলুলোজ এবং লিগনিন। হাড় যেমন মানবদেহের কাঠামো তৈরি করে, সেলুলোজ এবং রাফেজ তেমনি উদ্ভিদের কাঠামো তৈরি করে।

Leave a Comment