সামান্তরিক কাকে বলে?

যে চতুর্ভুজের বিপরীত বাহুগুলো সমান ও সমান্তরাল কিন্তু কোনগুলো সমকোণ নয় তাকে সামান্তরিক বলে।আবার, এভাবে সামান্তরিকের সংজ্ঞা দেওয়া যায়, চতুর্ভূজের বিপরীত বাহুগুলো পরস্পর সমান ও সমান্তরাল হলে তাকে সামান্তরিক বলে।তাহলে সামান্তরিক কাকে বলে – প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর বা সংক্ষেপে সামান্তরিকের সংজ্ঞা হলো – চতুর্ভূজের বিপরীত বাহুগুলো পরস্পর সমান্তরাল হলে তাকে সামান্তরিক বলে।

সামান্তরিকের বিপরীত বাহুগুলো পরস্পর সমান্তরাল। আবার, সামান্তরিকের বিপরীত বাহুগুলো পরস্পর সমান। সামান্তরিকের বিপরীত কোণগুলোও পরস্পর সমান।

আবার, সামান্তরিকের সন্নিহিত কোণ দুইটি পরস্পর সম্পূরক কোণ। অর্থাৎ, সামান্তরিকের যেকোনো সন্নিহিত কোণদ্বয়ের সমষ্টি দুই সমকোণ বা ১৮০°।
সামান্তরিকের কর্ণ দুইটি একে-অপরকে সমদ্বিখণ্ডিত করে।
সামান্তরিকের যেকোনো কর্ণ সামান্তরিকটিকে যে দুইটি ত্রিভুজে বিভক্ত করে তারা পরস্পর সর্বসম ত্রিভুজ।

সামান্তরিকের চারটি বাহুর উপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রগুলোর সমষ্টি তার কর্ণ দুইটির উপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্র দুইটির সমষ্টির সমান।

সম্পর্কিত আর্টিকেল;- জ্যামিতি কাকে বলে ? কত প্রকার ও কি কি?

সামান্তরিকের বৈশিষ্ট্য

  • সামান্তরিকের বিপরীত বাহুগুলো পরস্পর সমান্তরাল।
  • সামান্তরিকের বিপরীত বাহুগুলো পরস্পর সমান।
  • সামান্তরিকের বিপরীত কোণগুলো পরস্পর সমান।
  • সামান্তরিকের কর্ণদ্বয় অসমান অর্থাৎ সমান নয়।
  • সামান্তরিকের যেকোনো সন্নিহিত কোণদ্বয়ের সমষ্টি দুই সমকোণ বা ১৮০°।
  • সামান্তরিকের কর্ণদ্বয় পরস্পরকে সমদ্বিখণ্ডিত করে।
  • সামান্তরিকের যে কোন কর্ণ সামান্তরিকটিকে দুইটি সর্বসম ত্রিভুজে বিভক্ত করে।
  • সামান্তরিকের চারটি বাহুর উপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রগুলোর সমষ্টি তার কর্ণদ্বয়ের উপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্র দুইটির সমষ্টির সমান।

সামান্তরিকের পরিসীমা

সামান্তরিকের বাহুগুলোর দৈর্ঘ্যের সমষ্টিকে সামান্তরিকের পরিসীমা বলে। অন্যভাবে বললে, সামান্তরিকের চারটি বাহুর যোগফলকে সামান্তরিকের পরিসীমা বলে। যেকোনো সামান্তরিকের সন্নিহিত যেকোনো দুইটি বাহু দেওয়া থাকলে সামান্তরিকের পরিসীমা নির্ণয় করা যায়।

মনে করি, একটি সামান্তরিকের সন্নিহিত বাহু দুইটির দৈর্ঘ্য a একক এবং b একক।

সুতরাং, সামান্তরিকের পরিসীমার সূত্রটি হবে-

সামান্তরিকের পরিসীমা = (a+b+a+b) একক

বা, সামান্তরিকের পরিসীমা = (2a+2b) একক

∴ সামান্তরিকের পরিসীমা = 2(a+b) একক

∴ সামান্তরিকের পরিসীমা = ২ ⨯(সন্নিহিত বাহুদ্বয়ের সমষ্টি) একক

সামান্তরিকের সন্নিহিত বাহু দুইটির দৈর্ঘ্য a একক এবং b একক হলে,
সামান্তরিকের পরিসীমা = 2(a+b) একক

উদাহরণ: একটি সামান্তরিকের সন্নিহিত বাহুদ্বয়ের দৈর্ঘ্য ৯ সেমি ও ৫ সেমি হলে সামান্তরিকের পরিসীমা নির্ণয় কর।

উত্তর: মনেকরি, সামান্তরিকটির সন্নিহিত বাহু দুইটি a = ৯ সেমি এবং b = ৫ সেমি।

আমরা জানি,
সামান্তরিকের পরিসীমা = ২ ⨯(সন্নিহিত বাহুদ্বয়ের সমষ্টি) একক।

∴ সামান্তরিকের পরিসীমা = 2(a+b) একক

বা, সামান্তরিকের পরিসীমা = ২(৯+৫) সেমি

বা, সামান্তরিকের পরিসীমা = (২ ⨯ ১৪) সেমি

∴ সামান্তরিকের পরিসীমা = ২৮ সেমি।

আরো পড়ুন ;- রেখা কাকে বলে? রেখা কত প্রকার ও কি কি?

সামান্তরিকের ক্ষেত্রফল

সামান্তরিকের ভূমি ও উচ্চতার গুণফলকে সামান্তরিকের ক্ষেত্রফল বলে।

মনে করি, একটি সামান্তরিকের ভূমি b একক এবং উচ্চতা h একক।
সুতরাং, সামান্তরিকের ক্ষেত্রফল =( ভূমি × উচ্চতা ) বর্গ একক অর্থাৎ,

সামান্তরিকের ক্ষেত্রফল = (b × h) বর্গ একক

ভূমি ও উচ্চতা বিশিষ্ট সামান্তরিক চিত্র
সামান্তরিকের ভূমি ও উচ্চতা
সামান্তরিকের ক্ষেত্রফল =( ভূমি × উচ্চতা ) বর্গ একক
সামান্তরিকের ভূমি b একক এবং উচ্চতা h একক হলে,
সামান্তরিকের ক্ষেত্রফল এর সূত্র = (b × h) বর্গ একক।

উদাহরণ: একটি সামান্তরিকের ভূমি ২৪ সেমি এবং উচ্চতা ১৬ সেমি হলে সামান্তরিকের ক্ষেত্রফল নির্ণয় কর।

সামান্তরিক এবং রম্বস এর পার্থথক্যঃ

রম্বসঃ যে সামান্তরিকের দুইটি সন্নিহিত বাহু সমান, তাকে রম্বস বলে। প্রকৃতপক্ষে, রম্বস এমন একটি সামান্তরিক যার বাহুগুলো পরস্পর সমান।যার একটি কোণও সমকোণ নয়। রম্বস কে অনেক সময় ডায়মন্ড বলা হয় কারণ এটি দেখতে অনেকটা ডায়মন্ডের মত। চারটি বাহুর দৈর্ঘ্য পরস্পর সমান হওয়ার কারণে এটি কে সমবাহু চতুর্ভুজও বলা হয়। রম্বসের কর্ণদ্বয় পরস্পরকে সমকোণে সমদ্বিখণ্ডিত করে। রম্বসের বিপরীত কোণগুলো পরস্পর সমান। কর্নদ্বয় কোণগুলোকে সমদ্বিখন্ডিত করে।

সামান্তরিকঃ যে চতুর্ভুজের বিপরীত বাহুগুলো সমান ও সমান্তরাল কিন্তু কোনগুলো সমকোণ নয় তাকে সামান্তরিক বলে। সামন্তরিক সমতল জ্যামিতিতে এক অনস্বীকার্য ধারণা।এটি সেই চতুর্ভুজকে নির্দেশ করে যার বিপরীত বাহুদ্বয় পরস্পর সমান ও সমান্তরাল।সে হিসেবে বলা যায় যে,আয়তক্ষেত্র,বর্গ,রম্বস -প্রত্যেকে এক একটি সামন্তরিক;কেননা এদের প্রত্যেকটির নিজস্ব বিপরীত বাহুদ্বয় পরস্পর সমান ও সমান্তরাল হয়।সদিক রাশির লব্ধি নির্ণয়ে সামন্তরিকের ব্যবহার বহুল প্রচলিত।

পার্থক্য

এটি সেই চতুর্ভুজকে নির্দেশ করে যার বিপরীত বাহুদ্বয় পরস্পর সমান ও সমান্তরাল। নিম্নে রম্বস ও সামান্তরিকের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হলো-

১। যে সামান্তরিকের দুইটি সন্নিহিত বাহু সমান, তাকে রম্বস বলে। অন্যদিকে যে চতুর্ভুজের বিপরীত বাহুগুলো সমান ও সমান্তরাল কিন্তু কোনগুলো সমকোণ নয় তাকে সামান্তরিক বলে।

২। রম্বসের বিপরীত কোণ গুলো পরস্পর সমান। অন্যদিকে সামান্তরিকের বিপরীত কোণগুলো সমান।

৩। রম্বসের সকল বাহু সমান হয়। অন্যদিকে সামান্তরিকের বিপরীত বাহুগুলো সমান্তরাল।

৪। রম্বসের কর্ণদ্বয় অসমান অর্থাৎ সমান নয়। অন্যদিকে সামান্তরিকের কর্ণদ্বয় পরস্পরকে সমদ্বিখন্ডিত করে।

৫। রম্বসের একটি কোনও সমকোণ নয়। অন্যদিকে সামান্তরিকের বিপরীত কোণগুলো পরস্পর সমান।

৬। রম্বসের কর্ণদ্বয় পরস্পরকে সমকোণে সমদ্বিখন্ডিত করে। অন্যদিকে সামান্তরিকের কর্ণদ্বয় অসমান অর্থাৎ সমান নয়।

সামান্তরিক এর ৩ টি বৈশিষ্ট্য ছাড়াও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যঃ

  • সামান্তরিকের বিপরীত বাহুদ্বয় পরস্পর সমান।
  • সামান্তরিকের সবগুলো কোণের যোগফল চার সমকোণ  বা ৩৬০
  • সামান্তরিকের বিপরীত কোণদ্বয় পরস্পর সমান।
  • সামান্তরিকের ভূমিকে উচ্চতা দিয়ে গুণ করলে সামান্তরিকের ক্ষেত্রফল পাওয়া যায়।
  • সামান্তরিকের যেকোনো দুইটি সন্নিহিত কোণের যোগফল দুই সমকোণ বা ১৮০
  • সামান্তরিকের ক্ষেত্রফল এর যে কোন কর্ণদ্বারা গঠিত ত্রিভুজক্ষেত্রের ক্ষেত্রফলের দ্বিগুণের সমান।
  • সামান্তরিকের বিপরীত বাহুদ্বয় পরস্পর সমান্তরাল।
  • সামান্তরিকের কর্ণদ্বয় সবসময়ই সামান্তরিকের অভ্যন্তরে অবস্থান করে।
  • সামান্তরিকের কোণগুলো সূক্ষকোণ এবং সমান । কখনও তা সমকোণ বা প্রবৃদ্ধ্য কোণ নয়।
  • সামান্তরিকের কর্ণদ্বয় পরস্পর অসমান।
  • সামান্তরিকের বৃহত্তর কর্ণ সংলগ্ন কোণ দুইটি সূক্ষ্মকোণ।
  • সামান্তরিকের সন্নিহিত কোণ দুইটি পরস্পর সম্পূরক কোণ।
  • সামান্তরিকের প্রত্যকটি কোণ সমকোণ হলে তখন এটি আয়তক্ষেত্র আকার ধারণ করে।
  • সামান্তরিকের ক্ষুদ্রতর কর্ণ দ্বারা সামান্তরিকটি যে দুইটি ত্রিভুজে বিভক্ত হয় সেই ত্রিভুজ দুইটির উভয়ই সূক্ষ্মকোণী ত্রিভুজ।
  • সামান্তরিকের কর্ণদ্বারা সামান্তরিকটি দুইটি সর্বসম ত্রিভুজে বিভক্ত হয়।
  • সামান্তরিকের কর্ণদ্বয় পরস্পরকে সমদ্বিখণ্ডিত করে।
  • সামান্তরিকের কর্ণদ্বয়ের উপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রদ্বয়ের সমষ্টি এর বাহুগুলোর উপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রগুলোর সমষ্টি সমান।
  • সামান্তরিকের সবগুলো বাহুর দৈর্ঘ্য পরস্পর সমান হলে তখন এটি রম্বস হয়ে যায়।
  • সামান্তরিকের বিপরীত কোণ দুইটির সমষ্টি একটি সূক্ষ্মকোণ বা স্থুলকোণ।
  • সামান্তরিকের বৃহত্তর কর্ণ দ্বারা সামান্তরিকটি যে দুইটি ত্রিভুজে বিভক্ত হয় সেই ত্রিভুজ দুইটির উভয়ই স্থুলকোণী ত্রিভুজ।
  • সামান্তরিকের কর্ণদ্বয় সামান্তরিকটিকে চারটি সমান ক্ষেত্রফলবিশিষ্ট ত্রিভুজে বিভক্ত করে।
  • সামান্তরিকের একটি কোণের পরিমাপ জানা থাকলে অপর কোণগুলোর পরিমাপ নির্ণয় করা যায়।
  • সামান্তরিকের সন্নিহিত বাহু দুইটি a এবং b হলে পরিসীমা = 2(a+b).
  • সামান্তরিকের কোণগুলো সমকোণ হলে এবং বাহুগুলো পরস্পর সমান হলে তখন এটি বর্গক্ষেত্র আকার ধারণ করে।
  • সামান্তরিকের ক্ষুদ্রতর কর্ণ সংলগ্ন কোণ দুইটি স্থুলকোণ।
  • সামান্তরিকের বাহুচারটির উপর অন্তঃস্থ বা বহিঃস্থভাবে অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রগুলোর কেন্দ্র হবে কোনো একটি বর্গক্ষেত্রের চারটি শীর্ষবিন্দু।
  • সামান্তরিকের কর্ণদ্বয় পরস্পর সমান হলে তখন এটি আয়তক্ষেত্র হয়ে যায়।

Leave a Comment