ক্যাটায়ন কাকে বলে?

যখন পরমাণুতে ইলেকট্রনের চেয়ে বেশি প্রোটন থাকে এবং ইতিবাচকভাবে চার্জ হয় তাকে ক্যাটায়ন বলে। অর্থাৎ তারা এক বা একাধিক ইলেকট্রন হারাবে এবং কোনও প্রোটন হারাবে না। অতএব তারা নেট পজিটিভ চার্জের অধিকারী। ক্যাটায়ন এর উদাহরণ  হল ক্যালসিয়াম (Ca2+), পটাসিয়াম (K+). ক্যাটায়নঃ ধনাত্মক চার্জযুক্ত পরমাণুকে ক্যাটায়ন বলে।

আয়ন কাকে বলে?

সাধারণ অবস্থায় যে-কোনো পরমাণু নিস্তড়িৎ। অর্থাৎ পরমাণুর মধ্যে প্রোটন সংখ্যা ইলেকট্রন সংখ্যা । যখন কোনো পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের কক্ষ থেকে এক বা একাধিক ইলেকট্রন গৃহিত হয়, তখন ওই পরমাণুটি তড়িৎগ্রস্থ কণায় পরিণত হয় । এই তড়িৎগ্রস্থ পরমাণুকে আয়ন লে । পরমাণুর চেয়ে আয়ন বেশি সুস্থিত ।

অ্যানায়ন

ঋণাত্মক চার্জযুক্ত পরমাণু সমূহকে অ্যানায়ন বলে। অর্থাৎ যখন পরমাণুতে প্রোটনের চেয়ে বেশি ইলেকট্রন থাকে এবং নেতিবাচকভাবে চার্জ করা হয় তাকে অ্যানায়ন বলে। তারা এক বা একাধিক ইলেকট্রন অর্জন করে এবং কোনও প্রোটন হারাবে না। সুতরাং তারা নেতিবাচক চার্জের অধিকারী। যেসব পরমাণুর শেষ কক্ষপথে ৫/৬ বা ৮টি ইলেকট্রন থাকে সে সব পরমাণু অন্য পরমাণু থেকে ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক আয়নে পরিণত হয় অর্থাৎ অ্যানায়ন গঠন করে। অ্যানায়ন হলো ক্লোরিন (Cl–), হাইড্রোক্সাইড (OH–). অ্যানিয়ন এর উদাহরণঃ Fluoride (F-), Hydroxide anion (OHˉ), Chloride (Cl-)

ক্যাটায়ন এবং অন্যায়ন এর পার্থক্যঃ

ধনাত্মক চার্জযুক্ত পরমাণুসমূহ কে ক্যাটায়ন বলে। অর্থাৎ যখন পরমাণুতে ইলেকট্রনের চেয়ে বেশি প্রোটন থাকে। ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

১। যখন পরমাণুতে ইলেকট্রনের চেয়ে বেশি প্রোটন থাকে এবং ইতিবাচকভাবে চার্জ হয় তাকে ক্যাটায়ন বলে। অন্যদিকে, যখন পরমাণুতে প্রোটনের চেয়ে বেশি ইলেকট্রন থাকে এবং নেতিবাচকভাবে চার্জ করা হয় তাকে অ্যানায়ন বলে।

২। ধনাত্মক চার্জযুক্ত পরমাণুসমূহ ক্যাটায়ন। অন্যদিকে, ঋণাত্মক চার্জযুক্ত পরমাণু সমূহ অ্যানায়ন।

৩। যেসব পরমাণুর শেষ কক্ষপথে 1, 2 বা 3 টি ইলেকট্রন থাকে, সে সকল পরমাণু অন্য পরমাণুর সাথে যুক্ত হওয়ার সময় ইলেকট্রন ত্যাগ করে ধনাত্মক আয়নে পরিণত হয় অর্থাৎ ক্যাটায়ন গঠন করে। অন্যদিকে, যেসব পরমাণুর শেষ কক্ষপথে 5, 6 বা 7টি ইলেকট্রন থাকে সে সব পরমাণু অন্য পরমাণু থেকে ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক আয়নে পরিণত হয় অর্থাৎ অ্যানায়ন গঠন করে।

৪। ক্যাটায়ন ধাতু । অন্যদিকে, অ্যানায়ন অধাতু।

৫। ক্যাটায়নে, ইলেকট্রনের সংখ্যা প্রোটনের সংখ্যার চেয়ে কম হয়। অন্যদিকে, অ্যানিয়নে, প্রোটনের সংখ্যার চেয়ে ইলেক্ট্রনের সংখ্যা বেশি।৬। ক্যাটায়ন এর উদাহরণঃ Calcium (Ca2+ ), Hydronium (H3O+ ), Ammonium (NH 4+), Silver (Ag+ ) etc. অন্যদিকে, অ্যানিয়ন এর উদাহরণঃ Fluoride (F-), Hydroxide anion (OHˉ), Chloride (Cl-) etc.

পরমানু এবং আয়ন এর পার্থ ক্যঃ ইলেকট্রনের যুক্ত হওয়া বা বর্ধিত হওয়া আয়ন পরমাণুর রাসায়নিক ধর্মের কিছু পরিবর্তন ঘটায়। অর্থাৎ পরমাণু ও আয়নের মধ্যে পার্থক্য তৈরী হয়। নিচে পরমাণু ও আয়নের মধ্যে পার্থক্যঃ

১। মৌলিক পদার্থের যে ক্ষুদ্রতম কণার মধ্যে মৌলটির সমস্ত ধর্ম উপস্থিত থাকে এবং যেটি রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে, তাকে পরমাণু বলে। অন্যদিকে আয়ন হলো পরমাণু বা অণু, যখন পরমাণু ইলেকট্রন গ্রহণ বা বর্জনের মাধ্যমে ধনাত্মক বা ঋনাত্মক চার্জগ্রস্থ হয়, তখন সেই পরমাণুকে আয়ন বলে।

২। পরমাণু হচ্ছে মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা, যার কোন স্বাধীন অস্তিত্ব নেই। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ক্ষুদ্রতম একক হিসাবে অংশগ্রহণ করে। অন্যদিকে আয়ন হচ্ছে ধনাত্মক বা ঋণাত্মক চার্জিত পরমাণু বা যৌগমূলক।

৩। পরমাণু আধান নিরপেক্ষ হয়। অন্যদিকে আয়ন ধনাত্মক বা ঋণাত্মক চার্জিত হয়।

৪। পরমাণুর যোজনী শূন্য হতে পারে। যেমনঃ নিয়নের যোজনী শূন্য হয়। অন্যদিকে আয়নের যোজনী শূন্য হয় না।

৫। পরমাণুসমূহ আয়নিক ও সমযোজী বন্ধন গঠন করতে পারে। অন্যদিকে আয়নসমূহ শুধু আয়নিক বন্ধন গঠন করে।

৬। পরমাণুর ক্ষেত্রে কোন জারণ সংখ্যা থাকেনা। অর্থাৎ শূণ্য হয়। অন্যদিকে আয়নসমূহের নির্দিষ্ট জারণ সংখ্যা বিদ্যমান থাকে। যা শূণ্য নয়।

৭। সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ক্লোরিন, অক্সিজেন প্রভৃতি মৌলের পরমাণুকে যথাক্রমে Na, Ca, Cl, O, চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয়। অন্যদিকে সোডিয়াম ক্যালসিয়াম ক্লোরিন অক্সিজেন প্রভৃতি মৌলের আয়নকে বোঝাতে যথাক্রমে Na+, Ca+, Cl-,O-2 চিহ্ন ব্যবহার করা হয়।

Leave a Comment