আদার উপকারিতা ও অপকারিতা

আদার উপকারিতা নিয়ে লিখতে বসলে তা একটি আর্টিকেলে লিখে শেষ করা যাবে না। আদা বহুগুনাগুন-সম্পন্ন একটি মশলা , যা বছরের পর বছর ধরে ভারত উপমহাদেশ,মধ্যপ্রাচ্য এবং পশ্চিমের জনবসতিগুলো ব্যবহার করে আসছে।

খুব সম্ভবত লাশের মমি সংরক্ষনের কাজে আদার প্রথম ব্যবহার শুরু হয়েছিলো খ্রিষ্টপূর্ব ১৯০০ অব্দের দিকে।

যেমনটা কি আমরা সবাই জানি যে,আদা একটি ঝাল-স্বাদযুক্ত মশলা এবং এক ধরণের ভেষজ ঔষধ। আমাকে বলা হয় সকল রোগের দাদা । কেননা সামান্য জ্বর-সর্দি থেকে শুরু করে হাপানী বা ব্রংকাইটিসের মতো মারাত্বক রোগ ভালো করে দিতে পারে এই “আদা”

আদায় যা যা রয়েছে

আদায় রয়েছেঃ

তো চলুন,জেনে নেওয়া যাক আদার এমনই কিছু উপকারিতা যা আপনাকে বিস্মিত করবে !

জ্বর-জ্বর ও বমি বমি ভাব নিরাময়ে আদার জাদুকরী ফর্মুলা

সাধারনত ঋতু পরিবর্তনের সময় মানুষের মাঝে সামান্য জ্বর-জ্বর ভাব ও বমি-বমি ভাবের মাত্রা অনেকটাই বেড়ে যায়। এই সমস্যা থেকে পরিত্রান দিতে পারে আদা।

প্রতিদিন সকালে ১ গ্লাস গরম পানিতে ,এক চা চামচ আদার রস মিশিয়ে খেলে এই সমস্যা থেকে দ্রুত পরিত্রান পাওয়া সম্ভব।

পানি অবশ্যই উষ্ম গরম হতে হবে – তা না হলে আদার গুনাগুন নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে।

হাড়ের জয়েন্টের ব্যথা

৫০-৭০ বছর বয়সের নারী-পুরুষেরা এই সমস্যায় বেশী ভোগেন। হাড়ের জয়েন্টের ব্যাথা নিরাময়ে অনেকে ভাইটামিন সাপ্লিমেন্ট নিয়ে থাকেন বটে,কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না । তাদের জন্য আদার রস অমৃতের মতো কাজ করবে।

এবং আপনিও যদি হাড়ের জয়েন্টের ব্যাথায় ভোগেন তবে,প্রতিদিন সকালে সামান্য গরম পানিতে এক চামচ আদার রস,কিছুটা হলুদ এবং কিছুটা মধুর মিশ্রণে একটি পানীয় তৈরী করে খেতে পারেন।

যেহেতু আদায় প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ডি ও আয়রণ রয়েছে – সুতরাং এটি আপনার জয়েন্টের ব্যাথা নিরাময় করতেও ভূমিকা রাখবে।

হৃদরোগ নিরাময়ে আদা

হৃদরোগ নিরাময়ে আদা খুবই কার্যকর।তবে খেয়াল রাখতে হবে,হৃদরোগ নিরাময়ে আদা ভূমিকা রাখলেও এটি উচ্চরক্ত চাপের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।

সুতরাং যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নেই, তবে হৃদরোগের মতো জটিল ভয়াবহ রোগে কাতর, তাদের জন্য আদা খুব উপকারী একটি মশলা।

দুবেলা আদার রস মিশ্রিত পানি খেলে শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল বা লো ডেনসিটি লিপোপ্রটিন বের হয়ে যায়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসে।

এবং শুধু তাই নয়, আদার ভেতরে থাকা “সলামন মোডিয়া” মানক এক ধরণের এনজাইম রয়েছে যা হৃদপিন্ডের টিউনিকা মিডিয়া নামক স্তরটিকে শক্তিশালী করে তোলে এবং হৃদপেশীর কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সহায়ক৷

শুধু পানির সাথে খেতে অসুবিধে হলে চায়ের সাথে খাওয়া যেতে পারে। তবে চা খেতে হবে পরিমিত।

কাশি ও কফ দূর করে

ছোটো বেলায় খুশখুশে কাশির সমস্যা দেখা দিলেই গ্রামের দাদি-নানিরা আদা গিলিয়ে দিতো৷ বিষয়টা নিতান্তই বিরক্তকর বটে৷ কিন্তু খুব ইফেক্টিভ!

আদায় রয়েছে এন্টি ইনফ্লামেটরি এজেন্ট৷ যা খুশখশে কাসির উপসর্গ থেকে রেহাই দেবে৷

কফ নিরাময়ে আদার জুড়ি মেলা ভার। আদা কফের অম্লীয়ভাব দূর করে আপনাকে অসহ্যকর কফ থেকে নিরাময় দিতে পারে।

বদহজমে আদার উপকারিতা

বদহজমে আদার উপকারিতা জানতে হলে,প্রথমে বদ-হজম কেনো হয় সেটি জানা প্রয়োজন। যখন আমাদের দেহের পৌষ্টিকতন্ত্র ঠিকঠাক মতো কাজ করে না, বা যখন পৌষ্টিকতন্ত্রের উৎসেচকগুলোর নিঃসরণ ধীর-গতি সম্পন্ন হয়, ঠিক তখনই মূলত বদ-হজম হয়ে থাকে।

বদ হজম থেক নিরাময় পেতে হলে, বদ-হজমের সিনড্রম দেখা দেওয়া মাত্রই আদার রস সেবন করতে হবে।

এক কাপ স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে সামান্য আদার রস মিশিয়ে,পান করলে বদ-হজম থেকে সাথে-সাথে নিরাময় পাওয়া সম্ভব।

আদা মূলত পৌষ্টিকতন্ত্রের উৎসেচকগুলোর নিঃসরণ হার বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে খাবার পরিপাক দ্রুত হয়৷

যাত্রাপথে বমির আশঙ্কা দূর করতে আদার উপকারিতা

আমাদের ভেতরে অনেকেই আছেন, দূর-পাল্লার যানবাহনগুলোতে একদমই ভ্রমন করতে পারেন না। বমি তাদের যাত্রাপথের প্রধান বাধা।

এইসকল যাত্রীদের জন্য আদার রস অনেক কার্যকারী একটি ফর্মুলা। যাত্রা শুরুর কিছুক্ষন আগে, সামান্য আদার রস খেয়ে নিলেই তা বমি প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করবে।

অনেকে আদার চূর্ন খেয়ে থাকেন। তবে আদার চূর্ন অপেক্ষা আদার রস আরো বেশী কার্যকর।

মাদকাসক্তি নিরাময়ে আদা

আপনি হয়তো জেনে অবাক হবেন যে, আদার উপকারিতা’র ভেতরে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট হলো মাদকাসক্তি নিরাময়।

আরো অবাক করার বিষয় হলো,আমাদের দেশে রিহ্যাবগুলোতে গাজা বা তামাক পাতায় আসক্ত ব্যক্তিদেরকে নিয়মিত আদা চূর্ন খাওয়ানো হয়৷

যেনো তারা ক্ষতিকর মাদক থেকে নিজেদের সড়িয়ে নিয়ে, আদার প্রতি আলাদা একটা ঝোক সৃষ্টি করতে পারে।

এবং যেহেতু আদা, নেশাযুক্ত দ্রব্যাদি নয়, কাজেই আসক্ত হওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই।

উল্লেখ্য, মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের মাদকসেবন হঠাত করে বন্ধ করে দেওয়া হলে, তাদের শারীরিক বিপর্যয় ঘটতে পারে। সে কারণেই মূলত রিহ্যাবে এই মোক্ষম পন্থা অবলম্বন করা হয়৷

শরীরর রক্ত জমাট বাধা দূর করতে আদার কার্যকারীতা

আদা শরীরের বেসোফিল রক্ত কনিকার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়৷ যার ফলে শরীরে রক্ত-জমাট বাধতে পারে না৷ 

অনেক সময় শরীরের রক্ত জমাট বেধে হার্ট-এটাক,স্ট্রোকের মতো মরণঘাতি ব্যাধির সৃষ্টি হতে পারে। সুতরাং নিয়মিত আদা খেলে এ ভয় আর থাকবে না৷ 

আরো পড়ুনঃ

জিমের পর আদার উপকারিতা 

জিম সেড়ে এসে অনেকে টায়ার্ড হয়ে পড়েন৷ আবার অনেকের গা হাত পা ব্যাথা করতে শুরু করে৷ এই সমস্যা থেকে পরিত্রান পেতে জিম শেষ করে এসে আদার রস মিশ্রিত পানি খেতে পারেন৷ 

আদায় থাকা এন্টি-অক্সিডেন্ট ব্যাথা নিরাময়ে সাহায্য করে। চাইলে,গ্রীন টি’র সাথেও খেতে পারেন আদার রস৷ এটি আরো বেশী কার্যকর পন্থা৷ 

এছাড়া, সর্দি-জ্বরের সাথে যদি গা ব্যাথা হয়, তাহলে আদার রস খাওয়া যেতে পারে। 

এটি জ্বর-সর্দি ও গা ব্যাথে উভয় থেকে পরিত্রান দেবে। 

মেদ কমাতে আদা 

আদা শরীরের মেদ ঝড়াতে সাহায্য করে।

সুতরাং যারা স্থুলতায় ভুগছেন, তারা নিয়মিত কাচা আদা খেতে পারেন৷এছাড়া প্রতিদিন সকালে সামান্য মধু,লেবুর রস এবং আদার চূর্ন মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যেতে পারে।  

যদিও বলে রাখা দরকার, এক আদা খেয়ে একদিনেই আপনার এই মেদ ঝড়বে না। এর জন্য প্রচুর এক্সারসাইজ করতে হবে এবং ব্যালেন্সড ডায়েট চার্ট অনুযায়ী খাবার খেতে হবে৷ 

ক্যান্সার প্রতিরোধে আদা 

বলা হয়ে থাকে ২০২৪ সালের ভেতরে ক্যান্সার সাড়া পৃথীবিতে মহামারীর আকার ধারণ করবে।

সুতরাং এই মহামারীকে আগে থেকেই মোকাবেলা করতে হবে। 

আদা ক্যান্সার নিরাময়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

আদা শরীরের ব্লাড সার্কুলেশন স্বাভাবিক রাখে, ফলে ব্লাড সেলে বড় কোনো বিপর্যয় ঘটার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে এই সামান্য আদা। 

শেষকথা, 

তবে হা, সব জিনিসের যেমন কিছু খারাপ গুন রয়েছে, তেমনই  কিছু ভালো গুন রয়েছে।

আদা শরীরে হিস্টামিনের পরিমান কমিয়ে দিতে পারে৷ হিস্টামিন একটি চুলকানী প্রতিরোধক হরমোন৷ সুতরাং যাদের এলার্জির সমস্যা আছে তাদের আদা না খাওয়াটাই ভালো৷ 

আদা ব্লাড প্রেসার এবং ডায়বেটিকস কমিয়ে দিতে পারে।

সুতরাং যারা লো ব্লাড প্রেসারে ভোগেন তাদের খাবারে আদা না রাখাটাই সর্বাপেক্ষা উত্তম৷ 

তবে আদার উপকারিতা সত্যি বিস্ময়কর৷ বর্তমানে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের রোষানলে ধিরে-ধিরে হারিয়ে যাচ্ছে এই ঘরোয়া টোটটাগুলো৷ 

মানুষ প্রাকৃতিক পন্থা থেকে, কৃত্তিম পন্থায় ঝুকছে বেশী৷ যার দরুন, এই টোটকাগুলোকে বলতে গেলে এক রকমের অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। 

তাই আসুন,আমরা সকলে মিলে পুরোনো দিনের হারিয়ে যাওয়া ঘরোয়া চিকিৎসাগুলোকে আবার পুনরাজ্জিবিত করি৷ প্রকৃতির সাথে বাচি, অকৃত্তিম ভাবে বেড়ে উঠি৷

Leave a Comment